উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি। ভারতীয় উপমহাদেশে বিজ্ঞানচর্চা তখনও মাতৃগর্ভে। অথচ সারা বিশ্বে তখন পরীক্ষানির্ভর আধুনিক বিজ্ঞান অনেকটাই এগিয়ে। বিশেষত পাশ্চাত্যে বিজ্ঞান গবেষণার জন্য, বিজ্ঞানীদের জন্য রয়েছে অসংখ্য বড় বড় নামকরা বিখ্যাত অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও গবেষণাগার। কেবলমাত্র ভারতীয় উপমহাদেশে নেই কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠান, নেই বিজ্ঞান শিক্ষার তেমন ভালো কোনো ব্যবস্থা। আর এই যে নেই, অথবা এই যে অভাব তা বোধহয় সব চাইতে বেশি অনুভব করেছিলেন একজন বাঙালী চিকিৎসাবিদ। ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার তাঁর নাম।
বেকনীয় বিজ্ঞানদর্শনের অন্যতম অনুসারী ছিলেন ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার। তিনি বুঝেছিলেন, বিজ্ঞান বস্তুটি হাতেকলমে করে দেখবার বিষয় ; বিজ্ঞানচর্চা, ধর্মচর্চা অথবা পুরাণ-উপনিষদ চর্চার মতো কেবলমাত্র চর্বিতচর্বণ নয়। জ্ঞনভাণ্ডারে নব নব তথ্য সংযোজন করতে না পারলে ; প্রতিনিয়ত তত্ত্বকে বাস্তবে প্রতিফলিত করতে না পারলে বিজ্ঞানচর্চার ধারা শুকিয়ে যায়, যেমনটি ভারতবর্ষে গিয়েছিল। মহেন্দ্রলালের মতে হিন্দু দার্শনিক চিন্তাধারা বলে যা প্রচারিত তার অধিকাংশ হল, "যাবতীয় বিষয়ে স্থুল, হজম না-হওয়া কতকগুলো ভিত্তিহীন মতামতের পিণ্ড।" [১] এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হল আধুনিক বিজ্ঞানের চর্চা। মহেন্দ্রলাল দেখেছিলেন ১৮৫৭ সালে দেশে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ার পরেও ছাত্ররা বিজ্ঞানটা হাতেকলমে শিখতে পারছে না। এর জন্য তিনি কারণ ঠাউরান - সুযোগের অভাব, উপায়ের অভাব এবং উৎসাহদানের অভাব। হাতেকলমে তালিম দেওয়ার জন্য তিনি ইংল্যান্ডের রয়াল ইনস্টিটিউশন ও ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর দা অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্সের আদলে এক নুতন ধাঁচের বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরি করবার কথা ভাবেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে এর মাধ্যমে একদল ভারতীয় বিজ্ঞানীর সৃষ্টি হবে, যাঁরা জাতীয় পুনর্গঠনে নিজেদের উৎসর্গ করবেন। সকল প্রকার কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের মাধ্যমে লড়াই করবেন। উন্নত, আধুনিক এবং বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ উপহার দেবেন পুরো মানবজাতিকে। এর জন্য প্রয়োজন ছিল তখনকার দিনে কম করে হলেও একলাখ টাকা। ১৮৬৯ সালে তিনি কাজ আরম্ভ করেন।
১২৭৯ বঙ্গাব্দের 'বঙ্গদর্শন'এ ভাদ্র সংখ্যায় 'ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা' শীর্ষক প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যগুলি নিয়ে কিঞ্চিৎ আলোচনা করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানপত্রের ধারাগুলি উক্ত প্রবন্ধে উদ্ধৃত হয়েছে। ৪ নং এবং ৫ নং ধারায় বলা হয়েছিল, "ভারতবর্ষীয়দিগকে আহ্বান করিয়া বিজ্ঞান অনুশীলন বিষয়ে প্রোৎসাহিত এবং সক্ষম করা এই সভার প্রধান উদ্দেশ্য আর ভারতবর্ষ সম্পর্কীয় যে সকল বিষয় লুপ্তপ্রায় হইয়াছে, তাহা রক্ষা করা (মনোরম ও জ্ঞানদায়ক প্রাচীন গ্রন্থসকল মুদ্রিত ও প্রচারিত করা) সভার আনুষঙ্গিক উদ্দেশ্য।" "সভা স্থাপন করিবার জন্য একটি গৃহ, কতকগুলি বিজ্ঞানবিষয়ক পুস্তক ও যন্ত্র এবং কতকগুলি উপযুক্ত ও অনুরক্ত ব্যক্তি বিশেষের আবশ্যক। অতএব এই প্রস্তাব হইয়াছে যে কিছু ভূমি ক্রয় করা ও তাহার উপর একটি আবশ্যকানুরূপ গৃহ নির্ম্মাণ করা, বিজ্ঞানবিষয়ক পুস্তক ও যন্ত্র ক্রয় করা এবং যাঁহারা এক্ষণে বিজ্ঞানুশীলন করিতেছেন, কিংবা যাঁহারা এক্ষণে বিদ্যালয় পরিত্যাগ করিয়াছেন, অথচ বিজ্ঞানশাস্ত্র অধ্যয়নে একান্ত অভিলাষী, কিন্তু উপায়াভাবে সে অভিলাষ পূর্ণ করিতে পারিতেছেন না, এরূপ ব্যক্তিদিগকে বিজ্ঞানচর্চ্চা করিতে আহ্বান করা হইবে।" [২] মহেন্দ্রলালের এই আবেদনের ছয়মাস পরে দেখা যায় মাত্র সাড়ে তেরো হাজার টাকা ফান্ডে জমা পড়েছে। বিদ্যাসাগর নিজে এক হাজার টাকা দেওয়া ছাড়াও মহারাজ কালীকৃষ্ণের থেকে পাঁচ হাজার টাকা সংগ্রহ করে দেন। অক্ষয়কুমার তাঁর উইলে একটা বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন। তবে ঠাকুরবাড়ির দেবেন্দ্রনাথ-রবীন্দ্রনাথের এই বিষয় উৎসাহ ছিল বলে জানা যায় নি। সম্ভবত মহেন্দ্রলালের প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মবিরোধী চিন্তাধারা তাঁদেরকে বিরক্ত করে তুলেছিল। ওই একই প্রবন্ধে আক্ষেপ করে বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছেন, "এই অনুষ্ঠানপত্র আজ আড়াই বৎসর হইল প্রচারিত হইয়াছে, এই আড়াই বৎসরে বঙ্গসমাজ চল্লিশ সহস্র টাকা স্বাক্ষর করিয়াছেন। মহেন্দ্র বাবু লিখিয়াছেন যে, এই তালিকাখানি একটি আশ্চর্য্য দলিল। ইহাতে যেমন কতকগুলি নাম থাকাতে স্পষ্টিকৃত হইয়াছে, তেমনি কতকগুলি নাম না থাকাতে উজ্জ্বলীকৃত হইয়াছে। তিনি আর কিছু বলিতে ইচ্ছা করেন না।" [৩]
কেবল তাই নয়, শিক্ষিত বাঙালী বিদ্বজ্জনেদের অধিকাংশই বিজ্ঞানচর্চায় আগ্রহ তো দেখানই নি, বরং বিরোধিতাই করেছেন। কলকাতার একদল খ্যাতনাম লোক প্রস্তাবিত এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগলেন। ইয়ংবেঙ্গল-খ্যাত রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ভারতীয়দের এখন উচিত ইতিমধ্যেই যে সব আবিষ্কার হয়ে গেছে সেগুলোকে কাজে লাগাবার চেষ্টা করা, নুতন আবিস্কারের কথা পরে ভাবলেও চলবে। ইন্ডিয়া লীগের সদস্য শম্ভুচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলেন, এই প্রতিষ্ঠান একটা অপ্রয়োজনীয় জিনিস, একটা বিলাসদ্রব্য মাত্র। লেফটেন্যান্ট গভর্নর রিচার্ড টেম্পল বলেছিলেন, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বদলে যদি একটি কারিগরী স্কুল করা হয় তাহলে তাঁরা অনেক টাকা দিতে রাজি। এই টেম্পল হলেন সেই গোষ্ঠীর লোক যাঁরা মনে করেন যে নিছক কতকগুলি ব্যবহারিক সুযোগসুবিধা অর্থাৎ টেকনোলজিই হল বিজ্ঞান চর্চার একমাত্র উপযোগিতা। বিজ্ঞানের মননশীল দিক এবং মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্ক মানসিকতা গড়ে তুলবার দিকগুলি নিয়ে এঁদের মাথাব্যথা থাকে না। তাই টেম্পল চেয়েছিলেন ডঃ সরকারের ওই প্রতিষ্ঠানে তাত্ত্বিক গবেষণার পরিবর্তে স্রেফ কারিগরী প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক যাতে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনটি সিদ্ধ হতে পারে। মজার কথা, টেম্পল এই কথা বলা মাত্রই বঙ্গ বুদ্ধিজীবীদের অধিকাংশ তাঁর পোঁ ধরলেন। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যাসাগর ছাড়াও মহেন্দ্রলালের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কট্টর বেকনপন্থী সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের রেক্টর এবং বিজ্ঞানের অধ্যাপক জেসুইট ফাদার ইউজিন লাফোঁ। তিনি জোরালো ভাষায় বলেন, ব্রিটিশ শাসক ও তাদের অনুগত ইন্ডিয়া লীগের উদ্দেশ্য হল ভারতীয়দের একটি মিস্তিরিদের জাতিতে পর্যবসিত করা, যাতে কোনোদিনই তারা ইউরোপীয়দের তত্ত্বাবধান ছাড়া চলতে না পারে। পক্ষান্তরে ডঃ সরকার চাইছেন তাঁর দেশবাসীকে এক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এই অসম্মানজনক বন্দিদশা থেকে মুক্তি দিতে। আশীষ লাহিড়ী যথার্থই বলেছেন, "আধুনিক বিজ্ঞানে স্বয়ংভরতা অর্জনের এই দুরপ্রসারী জাতীয়তাবাদী পরিপ্রেক্ষিতটা খুবই উল্লেখযোগ্য। বস্তুত ঐখানেই মহেন্দ্রলালের অন্যান্যতা। সেকিউলার জাতীয়তাবাদের সঙ্গে বিজ্ঞানকে সচেতনভাবে মেলাতে চেয়েছিলেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বিদ্যাসাগর-অক্ষয়কুমার পথেরই পথিক।" [৪]
তবে একরোখা মহেন্দ্রলাল কারুর কাছে নতি স্বীকার করলেন না। হাতে যেটুকু টাকা সংগ্রহ হয়েছিল তাই নিয়েই মহেন্দ্রলাল ১৮৭৬ সালের ১৫ই জানুয়ারি, মতান্তরে ২৯শে জুলাই কলকাতার ২১০ নম্বর বৌবাজার স্ট্রিটে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করলেন তাঁর স্বপ্নের ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কালটিভেশন অফ সায়েন্স। একটি উঁচু মানের ল্যাবরেটরি ও লাইব্রেরি গড়ে উঠল বটে তবে পর্যাপ্ত টাকার অভাবে উপযুক্ত অধ্যাপক নিয়োগ করা গেল না, প্রথম পঁচিশ বছর বড় আকারের কোনও গবেষণা কার্যক্রমও নেওয়া গেল না। তবে যত কষ্ট করেই হোক অত্যন্ত দীন দশায় হলেও তাঁর কালটিভেশন অফ সায়েন্স তাঁর মনমতেই চলতে থাকল। ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার আমৃত্যু এই প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ডঃ সরকারের বলেছিলেন, "I am impressed more than ever with the necessity of science cultivation by my countrymen not simply for their improvement, but as I have been saying from the very begining, for their very generation ; or I would not have sacrificed a life endeavouring to awaken them to that necessity." [৫] এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য একটি বলিষ্ঠ পরিচালক সমিতি গঠিত হয়। এই সমিতিতে যোগ দিয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কেশবচন্দ্র সেন, দ্বারিকানাথ মিত্র প্রমুখ। এছাড়া নিয়মিত পরামর্শ দান করে চলতেন গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। অর্থের অভাবে প্রথমদিকে সক্রিয় গবেষণার বদলে কালটিভেশনের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল একদল শিক্ষক তৈরী করা, যাঁরা বৈজ্ঞানিক বিষয় অধ্যাপনা করতে পারবেন। তাই এর কাজকর্ম সীমাবদ্ধ ছিল মুলত বক্তৃতাদান ও আলোচনাসভার মধ্যেই। ঠিক এইসময়ে মাঠে নামলেন রবীন্দ্রনাথ। স্বদেশীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি জাতীয়তাবাদী প্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়াবার পরিবর্তে তিনি তিক্ত সমালোচনায় বিদ্ধ করে তুললেন কালটিভেশন অফ সায়েন্সকে।
১৮৭৬ সালে রবীন্দ্রনাথের পনেরো বছর বয়সে, ভারতীয়দের প্রথম বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান কালটিভেশন অফ সায়েন্স প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯৮ সালে, অর্থাৎ বাইশ বছর পর, প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক সভার সভাপতি তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর ম্যাকেঞ্জির সামনে মহেন্দ্রলাল বিজ্ঞানের প্রতি এদেশের মানুষের আকর্ষণ কম বলে দেশবাসীর উদাসীনতাকে প্রবল সমালোচনা করেন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, "অল্পকাল হইল বাংলাদেশের তৎসাময়িক শাসনকর্তা ম্যাকেঞ্জিসাহেবকে সভাপতির আসনে বসাইয়া মান্যবর শ্রীযুক্ত ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার মহাশয় তাঁহার স্বপ্রতিষ্ঠিত সায়ান্স অ্যাসোসিয়েশনের দুরবস্থা উপলক্ষে নিজের সম্বন্ধে করুণা, স্বদেশ সম্বন্ধে আক্ষেপ, এবং স্বদেশীয়দের প্রতি আক্রোশ প্রকাশ করিয়াছেন।" [৬] এর প্রতিক্রিয়ায় ১৩০৫ বঙ্গাব্দে 'ভারতী' পত্রিকায় প্রকাশিত 'প্রসঙ্গকথা ১' শীর্ষক রচনায় সাঁইত্রিশ বছর বয়সি রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত জ্বালাময়ী ভাষায় পঁয়ষট্টি বছরের বৃদ্ধ মহেন্দ্রলালকে আক্রমণ করে বলেন, "তাঁহার সমস্ত বক্তৃতার মধ্যে একটা নালিশের সুর ছিল। বাদী ছিলেন তিনি, প্রতিবাদী ছিল তাঁহার অবশিষ্ট স্বজাতিবর্গ এবং জজ ও জুরি ছিল ম্যাকেঞ্জিপ্রমুখ রাজপুরুষগণ।" [৭] কালটিভেশন অফ সায়েন্সের যে নিজস্ব ভবন আছে, অর্থসম্বল আছে তার প্রতি শ্লেষ করে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য, "ডাক্তার সরকারকে জিজ্ঞাসা করি, আজ পর্যন্ত সমস্ত বঙ্গদেশে এমন কয়টা অনুষ্ঠান আছে যে নিজের ঘর-দুয়ার ফাঁদতে পারিয়াছে, বহুব্যয়সাধ্য আসবাব সংগ্রহ করিয়াছে, যাহার স্থায়ী অর্থের সংস্থান হইয়াছে, এবং যাহার সভাপতি দেশের ছোটলাট বড়লাট সাহেবকে সম্মুখে বসাইয়া নিজের মহৎ ত্যাগস্বীকার ঘোষণাপূর্বক অশ্রুপাত করিবার দুর্লভ ঐ অবসর পাইয়াছে।" [৮] মহেন্দ্রলাল যে বিজ্ঞান প্রসারের জন্য অনেক কিছু করেছেন তা ব্যাঙ্গার্থে স্বীকার করে রবীন্দ্রনাথ আরও বললেন, "কিন্তু অনেক করিয়াছেন বলিয়া বিলাপ না করিয়া তাঁহাকে যে আরো অনেক করিতে হয় নাই সেজন্য কৃতজ্ঞতা অনুভব করা উচিত ছিল। বিজ্ঞানপ্রচারের উৎসাহে কোনো মহাপুরুষ জেলে গিয়াছেন, কোনো মহাপুরুষকে অগ্নিতে দগ্ধ হইতে হইয়াছে। বড়োলোক হইয়া বড়ো কাজ করিতে গেলে এরূপ অসুবিধা হইয়া থাকে।" [৯] বুঝতে পারা কঠিন যে সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে রবীন্দ্রনাথের অভিযোগের অভিমুখটা ঠিক কি? - নিজস্ব ভবন তৈরী করা? নাকি মহেন্দ্রলালকে অগ্নিতে দগ্ধ হতে হয় নি, তাই? কোনটি? বঙ্গদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার উন্নতির জন্য নিজে এক পয়সাও খরচা না করা রবীন্দ্রনাথের এই অহেতুক উষ্মা ও বক্রোক্তির মানে কি? মহেন্দ্রলালের নাস্তিক মনোভাবই এই প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী নয় তো?
বিজ্ঞানসভা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের শ্লেষের এখানেই শেষ নয়। বিজ্ঞানসভার নিজস্ব ভবন ও মুল্যবান যন্ত্রপাতি নিয়ে রবীন্দ্রনাথ পুনরায় ব্যঙ্গাত্মক হলেন,
"আজ প্রায় সিকি শতাব্দিকাল বাংলাদেশে বিজ্ঞানের জন্য একখানা পাকা বাড়ি, কতকগুলি আসবাব এবং কিঞ্চিৎ অর্থ আছে বলিয়াই যে বিজ্ঞান আপনা-আপনি গোকুলে বাড়িয়া উঠিতে থাকিবে এমন কোনো কথা নাই। আরো আসবাব এবং আরো টাকা থাকিলেই যে বিজ্ঞান আরো ফুলিয়া উঠিবে এমনও কোনো বৈজ্ঞানিক নিয়ম দেখা যায় না।" এবং, "এখানে সায়ান্স অ্যাসোসিয়েশন নামক একটি কল জুড়িয়া দিলেই যে বিজ্ঞান একদমে বাঁশি বাজাইয়া রেলগাড়ির মতো ছুটিতে থাকিবে, অত্যন্ত অন্ধ অনুরাগীও এরূপ দুরাশা পোষণ করিতে পারে না।" [১০]
অবশ্য এইসব কটুক্তিতে অসীম মনোবলের অধিকারী ডঃ সরকার মোটেই বিচলিত হন নি। তিনি বলেছিলেন, "দেশে বিজ্ঞান আলোচনা মোটেই আরম্ভ হয় নাই। এ অবস্থায় আমাদের প্রধান কর্তব্য, দেশে বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তি গঠনে সাহায্য করা। তবেই আমরা দেখিতে পাইব, আমাদের উদ্ভাবনী শক্তি জাগ্রত হইয়াছে এবং শিল্প-বাণিজ্যাদি নানা ক্ষেত্রে উহার প্রয়োগ চলিতেছে। কিন্তু সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন হইতে কতকগুলি কারিগর তৈরী করাই আমাদের লক্ষ্য নয়। বিজ্ঞানের নব নব জ্ঞানবিভবে জাতীয় মনীষাকে সম্বুদ্ধ করিয়া তোলাই ইহার প্রধানতম উদ্দেশ্য।" [১১]
মজার কথা হল, রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে প্রায় সাড়ে তিনশো পাতার একটি গ্রন্থ রচনা করে ফেললেও 'প্রসঙ্গকথা ১' প্রবন্ধে সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতি রবীন্দ্রনাথের বক্রোক্তিগুলি সম্পর্কে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে নীরব রবীন্দ্রভক্ত দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় ! গোটা বইতে বিজ্ঞানসভা সম্বন্ধে তিনি মাত্র একটি বাক্য লিখেছেন, "এই 'বিজ্ঞানসভা'র উন্নতি কিভাবে করা যায় একসময় সে-বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ একটি প্রবন্ধ রচনা করেন।" [১২] এখন দেখা যাক, কি সেই প্রবন্ধ এবং তাতে রবীন্দ্রনাথ ঠিক কি লিখেছেন।
মহেন্দ্রলালের মৃত্যুর পর ১৩১২ বঙ্গাব্দে 'বিজ্ঞানসভা' শীর্ষক রচনায় রবীন্দ্রনাথ আবার সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতি আক্রমণ আরম্ভ করলেন, "বিজ্ঞানচর্চাসম্বন্ধে দেশের এমন দুরবস্থা অথচ এই বিদ্যাদুর্ভিক্ষের মাঝখানে বিজ্ঞানসভা তাঁহার পরিপুষ্ট ভাণ্ডারটি লইয়া দিব্য সুস্থভাবে বসিয়া আছেন।" [১৩] রবীন্দ্রনাথের সমস্যাটা কি বিজ্ঞানসভার 'পরিপুষ্ট ভাণ্ডার'টি নিয়ে? বোধহয় তা নয়। বিজ্ঞানসভার কাছে রবীন্দ্রনাথের দুটি প্রত্যাশা - (১) "যদি জগদীশ ও প্রফুল্লচন্দ্রের শিক্ষাধীনে দেশের কয়েকটি অধ্যবসায়ী ছাত্রকে মানুষ করিয়া তুলিবার ভার বিজ্ঞানসভা গ্রহণ করেন, তবে সভা এবং দেশ উভয়েই ধন্য হইবেন।" এবং (২) "স্বদেশে বিজ্ঞান প্রচার করিবার দ্বিতীয় সদুপায়, স্বদেশের ভাষায় বিজ্ঞান প্রচার করা। যতদিন পর্যন্ত না বাংলাভাষায় বিজ্ঞানের বই বাহির হইতে থাকিবে, ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের মাটির মধ্যে বিজ্ঞানের শিকড় প্রবেশ করিতে পারিবে না।" এই দুটি কাজ বিজ্ঞানসভা করছে না বলে রবীন্দ্রনাথের অভিযোগ। আর সেজন্য তাঁর বক্তব্য, "বিজ্ঞানসভার মতো কর্মশূন্য সভা আমাদের জাতির পক্ষে লজ্জার বিষয়। ইহা আমাদের জাতির পক্ষে নিত্য কুদৃষ্টান্ত ও নিরুৎসাহের কারণ।" [১৪]
মহেন্দ্রলাল কিন্তু স্পষ্টভাবেই বিজ্ঞানসভার উদ্দেশ্যটি ব্যক্ত করেছিলেন। এখন প্রশ্ন হল, বিজ্ঞানসভা কি আদৌ কর্মশূন্য ছিল? বোধহয় রবীন্দ্রনাথের এই উক্তির ভ্রান্ততা প্রমাণের জন্যেই চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামনের পদার্পণ ঘটেছিল কলকাতার এই প্রতিষ্ঠানে ১৯০৭ সালে। শিক্ষকতার অবসরে তিনি এখানে নিরলস গবেষণা চালিয়ে যেতেন। এখানে গবেষণা করেই ১৯২৮ সালে তিনি 'রামন এফেক্ট' আবিষ্কার করলেন যা তাকে নোবেল পুরস্কার এনে দিল। পরবর্তীকালে এই প্রতিষ্ঠানের নিকট নিজের চিরকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রামন বলেছিলেন, "It was the late Dr. Mahendralal Sarkar, who, by founding Indian Association for the cultivation of Science, made it possible for the scientific aspirations of my early years to continue burning brightly." [১৫] রবীন্দ্রনাথের সমালোচনার এর থেকে বড় জবাব বোধহয় আর হয় না।
এখানে আর একটা ব্যাপার অনুধাবনযোগ্য। মাতৃভাষায় বিজ্ঞান জনপ্রিয় কখন হয়? আশীষ লাহিড়ী এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচমা করেছেন। তাঁর মতে, উৎপাদনশিল্পের কাছে হার্ড সায়েন্স আগে প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে, তারপর বিজ্ঞান জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয় হয়। বিজ্ঞানে উন্নত সব দেশেই তাই হয়েছে। সমাজের মধ্যে বিজ্ঞানের চাহিদা তৈরী না হলে বিজ্ঞান কোনোকালে কোনোদেশেই জনপ্রিয় হয় নি। "অর্থাৎ, রবীন্দ্রনাথের মতে, অ্যাসোসিয়েশন যে কাজ করবার জন্য গঠিত হয় নি, সেই কাজটাই তার সাফল্যের একমাত্র মানদণ্ড !" [১৬]
যাইহোক, যে কথা বলছিলাম। ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত রামন এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। এরপর একে একে কালটিভেশনের সঙ্গে জুড়তে থাকেন বহু প্রথিতযশা বিজ্ঞানী। ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা পদ চালু করা হলে প্রথম অধিকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্যারিমোহন মুখোপাধ্যায়। তার পর পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করেছেন চিকিৎসক নীলরতন সরকার, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু, আরেক বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী, বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান তত্ত্বের জনক। এছাড়া ১৯২৮ সালে আরেক বিখ্যাত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর এই প্রতিষ্ঠানে এলেন। তখন এখানে তৎকালীন প্রথিতযশা বিজ্ঞানীদের সাথে পরিচিত হন যার মধ্যে ছিলেন মেঘনাদ সাহা, শ্রীনিবাস কৃষ্ণান প্রমুখ। এখানে এসেই তিনি নক্ষত্রের অভ্যন্তরীন ঘটনাবলী এবং জীবনচক্র নিয়ে তিনি চিন্তা করতে শুরু করেন এবং জীবনের প্রথম গবেষণামূলক প্রবন্ধটি লেখেন। এই গবেষণাপত্রের নাম ছিল 'Thermodynamics of the Compton Effect with Reference to the Interior of the Stars'। এই গবেষণাপত্রটি পরবর্তী বছর তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগেসের বার্ষিক অধিবেশনে পাঠ করেছিলেন। ১৯২৮ সালেই বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী আর্নল্ড সমারফেল্ড ভারত ভ্রমণে এসে আইএসিএস-এ বক্তৃতা দেন।
১৯৪৬ সালে মেঘনাদ সাহা এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বভার গ্রহণ করে প্রশংসনীয় কিছু উদ্যোগ নেন। তিনি একটি সক্রিয় গবেষণা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে মূলত এক্স রশ্মি, আলোকবিজ্ঞান, চুম্বকত্ব এবং রমন ক্রিয়া সংক্রান্ত মৌলিক গবেষণা পরিচালিত হতো।পরবর্তীকালে যাদবপুরে প্রতিষ্ঠানের আরেকটি প্রাঙ্গণ প্রতিষ্ঠা করা হয় যেখানে শিক্ষাগত গবেষণা ও শিল্প কারখানা স্থাপনের উপযোগী জ্ঞানের সমন্বয় ঘটানো হয়। পরবর্তীতে আইএসিএস-এর মূল গবেষণাগার বৌবাজার স্ট্রিট থেকে সরিয়ে যাদবপুরের বর্তমান অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, ঔপনিবেশিক শাসনকালে যে কোনও গঠনমূলক কাজ করতে গেলেই ব্রিটিশ শাসকদের সঙ্গে ইচ্ছে বা অনিচ্ছায় কিছু না কিছু আপোষ করতেই হত। এটা রামমোহনকে করতে হয়েছিল, বিদ্যাসাগরকেও করতে হয়েছিল, এমনকি শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠার সময় রবীন্দ্রনাথকেও করতে হয়েছিল। এগুলো যুগের সীমাবদ্ধতা। এমনকি আজ ২০২০ সালের স্বাধীন ভারতে কিছু গঠনমুলক কাজ করতে গেলে হয়তো আপনাকেও করতে হবে। তবু সেই পরিপ্রেক্ষিতেও ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার ব্রিটিশ শাসকদের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে সম্পুর্ণ দেশীয় সহায়তায় এতবড় প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেছিলেন। মহেন্দ্রলাল কোনও বৈজ্ঞানিক আবিস্কর্তা নয়, কোনও মৌলিক গবেষণায় তাঁর যশ অর্জিত হয় নি। কিন্তু এদেশে বিজ্ঞান চর্চার আদি গুরু বলে তিনি চিরকাল সকল বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের নমস্য থাকবেন। কালটিভেশন অফ সায়েন্স কিভাবে অর্থ সংগ্রহ করেছিল, ব্রিটিশ শাসনযন্ত্রের প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েও প্রবল অর্থসংকটে পড়েও ডঃ সরকার কিভাবে জাতীয় বিজ্ঞানচর্চার দীপটি টিমটিম করে হলেও সযত্নে জ্বালিয়ে রেখেছিলেন, এ তথ্য তো রবীন্দ্রনাথের অজানা থাকবার কথা নয়। "তা সত্ত্বেও বিজ্ঞানসভার অনেক টাকা ও স্থাবর সম্পত্তি নিয়ে, বিশেষ করে রাজপুরুষদের অকৃপণ দাক্ষিণ্য নিয়ে, বার বার তাঁর বক্রোক্তি আমাদের অস্বস্তি জাগায়।" [১৭] তাই প্রশ্ন জাগে, রবীন্দ্রনাথের মতো স্বদেশপ্রেমিক মানুষ কেন মহেন্দ্রলালের এত বড় কর্মপ্রয়াস সম্পর্কে আর একটু বিবেচনাপরায়ণ হলেন না?
এ বিষয়ে আমার একটু অন্য থিয়োরী আছে। রবীন্দ্রনাথ নাস্তিকদের ঠিক পছন্দ করতেন না। আমরা দেখতে পাই, ঠাকুরবাড়ির পত্রিকা তত্ত্ববোধিনীকে জনপ্রিয় করবার জন্য বিশাল অবদান রাখা সত্ত্বেও অক্ষয়কুমার দত্ত সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ চরম নির্লিপ্ত। অক্ষয়কুমারের মতো ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকারও কিন্তু ঘোষিত নাস্তিক ছিলেন !
তথ্যসূত্র :
১) পৃষ্ঠা ৬৮, অন্য কোনো সাধনার ফল, আশীষ লাহিড়ী, পাভলভ ইনস্টিটিউট
২) পৃষ্ঠা ১০২৪, বঙ্কিম রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড, যোগেশচন্দ্র বাগল সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ
৩) প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১০২৮
৪) পৃষ্ঠা ৪৫, রবীন্দ্রনাথ : মানুষের ধর্ম মানুষের বিজ্ঞান, আশীষ লাহিড়ী, অবভাস
৫) পৃষ্ঠা ১৪, বিজ্ঞানে বাঙালী, অনিল চন্দ্র ঘোষ, প্রেসিডেন্সি লাইব্রেরী
৬) পৃষ্ঠা ৫০৫, রবীন্দ্র রচনাবলী দ্বাদশ খণ্ড, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত, বিশ্বভারতী প্রকাশন
৭) প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫০৫
৮) প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫০৬
৯) প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫০৬
১০) প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫০৭
১১) পৃষ্ঠা ১৮, বিজ্ঞানে বাঙালী, অনিল চন্দ্র ঘোষ, প্রেসিডেন্সি লাইব্রেরী
১২) পৃষ্ঠা ১৮, রবীন্দ্রনাথ ও বিজ্ঞান, দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, আনন্দ পাবলিশার্স
১৩) পৃষ্ঠা ৫১৮, রবীন্দ্র রচনাবলী দ্বাদশ খণ্ড, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত, বিশ্বভারতী প্রকাশন
১৪) প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫১৯
১৫) পৃষ্ঠা ১৯, বিজ্ঞানে বাঙালী, অনিল চন্দ্র ঘোষ, প্রেসিডেন্সি লাইব্রেরী
১৬) পৃষ্ঠা ৪৯, রবীন্দ্রনাথ : মানুষের ধর্ম মানুষের বিজ্ঞান, আশীষ লাহিড়ী, অবভাস
১৭) প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৪৫
ভাল লেখা।
"রবীন্দ্রনাথ নাস্তিকদের ঠিক পছন্দ করতেন না।" - তা হবে হয়তো।
মহেন্দ্রলাল কি নাস্তিক ছিলেন?
সমরেন্দ্রনাথ সেন লিখেছেন বটে, "যে বিজ্ঞানের বলে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কাণ্ডকারখানা অন্যধাবন করা সম্ভব সেই বিজ্ঞানই তাঁর ধর্মচেতনার মূল উৎস, ঈস্বর-উপলব্ধির প্রধান প্রেরণা।" তবে সমরেন্দ্র ভুল লিখতে পারেন। তবে মহেন্দ্র যে গানগুলি লিখেছিলেন সেগুলি বিশুদ্ধ ভক্তিগান, কেবল 'সাঁওতাল মাগী' বলে দেবীকে অভিহিত করা মহেন্দ্রকে একমাত্র ভাবার কারণ নেই।
"সয়না, রোগের যাতনা আর সয়না,
কোথায়, নাথ, তোমার অসীম করুণা।"
==========
জানি প্রভু, যা কর তুমি, তা সবে হয় মঙল সাধনা,
তবু কাতর হয়ে করিয়াছি যে প্রার্থনা।"
মুক্তচিন্তার পথিক, এটুকু পড়ে দেখবেন নাকি?
মুক্তচিন্তার পথিক (একটু ছোট নিক নেওয়া যায়?) খুব ভালো। আরও লিখতে থাকুন।
কথামৃতে ঠাকুর রামকৃষ্ণের সঙ্গে ডঃ সরকারের কথোপকথন আছে । সেটাও দেখা জরুরি।
সেই সময়ে সত্যিকারের নাস্তিক তখন বোধহয় অক্ষয় কুমার দত্ত যাঁর ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে 'বাহ্যজগতের সঙ্গে মানবপ্রকৃতির সম্পর্ক' খোঁজার প্রতিক্রিয়ায় দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বিচলিত হয়ে পড়েন এবং দত্তমশায়কে তত্ত্ববোধিনী সভা থেকে সরে যেতে হয় ; এবং অবশ্যই বিদ্যাসাগর । রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীও বেকন অনুসারী ইন্ডাক্টিভ লজিক পদ্ধতির গুরুত্ব বুঝেছিলেন। মনে হয় বিদ্যাসাগরের মত অজ্ঞেয়বাদী ছিলেন ।
এলেবেলে ধন্যবাদ। আপনার উৎসাহ না পেলে হত না।
@মু. পথিক, আপনার লেখাটিতে তথ্য সংক্রান্ত কোনও ভুলই নেই, কিন্তু ভুল আছে বিশ্লেষণে। আমার ধারণা, আপনি অতি মাত্রায় আশীষ লাহিড়ীর 'অন্য কোনও সাধনার ফল' -এ প্রভাবিত হয়েছেন।
আপনি প্রশ্ন তুলেছেন --- "বুঝতে পারা কঠিন যে সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে রবীন্দ্রনাথের অভিযোগের অভিমুখটা ঠিক কি? - নিজস্ব ভবন তৈরী করা? নাকি মহেন্দ্রলালকে অগ্নিতে দগ্ধ হতে হয় নি, তাই? কোনটি? বঙ্গদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার উন্নতির জন্য নিজে এক পয়সাও খরচা না করা রবীন্দ্রনাথের এই অহেতুক উষ্মা ও বক্রোক্তির মানে কি? মহেন্দ্রলালের নাস্তিক মনোভাবই এই প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী নয় তো?"
এর একটাও ঠিক নয়। প্রথমত, ব্যক্তি মহেন্দ্রলালকে আক্রমণ করার লোকই রবীন্দ্রনাথ নন। বরং রবীন্দ্রনাথ বিপিন পাল, চিত্তরঞ্জন, দ্বিজেন্দ্রলাল, প্রফুল্লচন্দ্র প্রমুখের দ্বারা একাধিকবার আক্রান্ত হলেও তাঁর স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ বিসর্জন দেননি। তাঁর আপত্তিটা মহেন্দ্রলালের কর্মপদ্ধতি নিয়ে।
ওই একই প্রবন্ধে (প্রসঙ্গকথা) রবীন্দ্রনাথ লিখছেন --- "বড়োলোকেরা বড়ো কাজ করিয়া থাকেন কিন্তু তাঁহারা আলাদিনের প্রদীপ লইয়া জন্মগ্রহণ করেন না। কাজেই তাঁহারা রাতারাতি অসাধ্য সাধন করিতে পারেন না। আমাদের দুর্ভাগ্য দেশে উচ্চপদস্থ রাজপুরুষদের নাম ছোটোখাটো আলাদিনের প্রদীপবিশেষ। সেই প্রদীপের সাহায্যে এবং ডাক্তার সরকারের নিজের নাম ও চেষ্টার জোরে এই বিজ্ঞানচর্চাবিহীন বঙ্গদেশে অকস্মাৎ পাকা ভিত এবং যন্ত্রতন্ত্রসহ এক সায়ান্স অ্যাসোসিয়েশন উঠিয়া পড়িল। ইহাকে একপ্রকার ভেলকি বলা যাইতে পারে।
কিন্তু বাস্তবজগতে আরব্য উপন্যাস অধিক দূর অগ্রসর হইতে পারে না। ভেলকির জোরে জনসাধারণের মনে বিজ্ঞানের প্রতি অনুরাগ সঞ্চার করা সম্ভব নহে। আজ প্রায় সিকি শতাব্দীকাল বাংলাদেশে বিজ্ঞানের জন্য একখানা পাকাবাড়ি, কতকগুলি আসবাব এবং কিঞ্চিৎ অর্থ আছে বলিয়াই যে বিজ্ঞান আপনা-আপনি গোকুলে বাড়িয়া উঠিতে থাকিবে এমন কোনো কথা নাই। আরো আসবাব এবং আরো টাকা থাকিলেই যে বিজ্ঞান আরো ফুলিয়া উঠিবে এমনও কোনো বৈজ্ঞানিক নিয়ম দেখা যায় না।"
এই ভেলকিবাজির বিরুদ্ধাচরণ রার পরেই তিনি আসল রোগটা ধরছেন এবং লিখছেন --- "এখানে সায়ান্স অ্যাসোসিয়েশন নামক একটা কল জুড়িয়া দিলেই যে বিজ্ঞান একদমে বাঁশি বাজাইয়া রেলগাড়ির মতো ছুটিতে থাকিবে, অত্যন্ত অন্ধ অনুরাগও এরূপ দুরাশা পোষণ করিতে পারে না। গাড়ি চলে না বলিয়া দেশাধিপতির নিকট দেশের নামে নালিশ রুজু না করিয়া আপাতত রাস্তা বানাইতে শুরু করা কর্তব্য।
রাস্তা বানাইতে গেলে নামিয়া আসিয়া একেবারে মাঢিতে হাত লাগাইতে হয়। আমাদের দেশের বড়োলোকদের নিকটে সে-প্রস্তাব করিতে সংকোচ বোধ করি, কিন্তু অগত্যা না করিয়া থাকা যায় না। বিজ্ঞান যাহাতে দেশের সর্বসাধারণের নিকট সুগম হয় সে-উপায় অবলম্বন করিতে হইলে একেবারে মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার গোড়াপত্তন করিয়া দিতে হয়। সায়ান্স অ্যাসোসিয়েশন যদি গত পঁচিশ বৎসর এই কার্যে যত্নশীল হইতেন তবে যে-ফললাভ করিতেন তাহা রাজপুরুষবর্গের সমুচ্চ প্রাসাদবাতায়ন হইতে দৃষ্টিগোচর না হইলেও আমাদের এই বিজ্ঞানদীন দেশের পক্ষে অত্যন্ত মহার্ঘ হইত।
... অধিকাংশ জ্ঞানবিজ্ঞান ইংরেজিভাষার কড়া পাহারার মধ্যে আবদ্ধ।
তাহার ফল এই, বিদ্যালয়ে আমরা যাহা লাভ করি সমাজে তাহার কোনো চর্চা নাই। সুতরাং আমাদের বিদ্যা আমাদের প্রাণের সহিত রক্তের সহিত মিশ্রিত হয় না। বিদ্যার প্রধান গৌরব দাঁড়াইয়াছে অর্থোপার্জনের উপায়রূপে।
সায়ান্স অ্যাসোসিয়েশন সেই স্বল্পসংখ্যক আধুনিক ব্রাহ্মণস্থানীয়দের জন্য আপন শক্তি নিয়োগ করিয়াছে। যে-কয়জনা ইংরেজিতে বিজ্ঞান শেখে সভা তাহাদের নিকট ইংরেজিভাষায় বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করে ; বাকি সমস্ত বাঙালির সহিত তাহার কিছুমাত্র সংস্রব নাই।
... যেমন পাথুরে জমির উপর আধহাতখানেক পুষ্করিণীর পাঁক তুলিয়া দিয়া তাহাতে বৃক্ষ রোপণ করিলে গাছটা প্রথম প্রথম খুব ঝাড়িয়া মাথা তুলিয়া ডালেপালায় গজাইয়া উঠে, অবশেষে শিকড় যেমনি নীচের কঠিন স্তরে গিয়া ঠেকে অমনি অকস্মাৎ মুষড়িয়া মরিয়া যায়– আমাদের দেশের বিজ্ঞানশিক্ষারও সেই অবস্থা।
ঘরে-বাইরে চারি দিকে বিজ্ঞানের আলোককে সাধারণভাবে পরিব্যাপ্ত করিয়া দিলে তবেই বিশেষভাবে বিজ্ঞানের চর্চা এ দেশে স্থায়ীরূপে বর্ধিত হইতে পারিবে। নতুবা আপাতত দুইদিনের উন্নতি দেখিয়া অত্যন্ত উৎফুল্ল হইবার কারণ নাই– কেননা, চারি দিকের দিগন্তপ্রসারিত মূঢ়তা দিনে নিশীথে অলক্ষ্যভাবে আকর্ষণ করিয়া সংকীর্ণমূল উচ্চতাকে আপনার সহিত সমভূম করিয়া আনিবে।"
এই প্রবন্ধের কোনও খানে মহেন্দ্রলালকে আক্রমণ নেই, বদলে সঠিক রোগনির্ণয় আছে। পাথুরে জমিতে বৃক্ষ রোপণ করে যে আদতে এ দেশে বিজ্ঞানচর্চার পথ সুগম হবে না, সে কথা বলা আছে। কিন্তু শুধু অভিযোগ করেই থেমে যাননি রবীন্দ্রনাথ। বরং ঠিক পথের দিশাও দেখিয়েছেন একই প্রবন্ধে। তিনি লিখেছেন, "বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষৎ বাংলার বৈজ্ঞানিক পরিভাষাসংকলনে প্রবৃত্ত হইয়াছেন। কিন্তু তাঁহাদের উদ্দেশ্য নানা শাখায় বিভক্ত হওয়ায় কার্য যথোচিতরূপে অগ্রসর হইতেছে না। এই কার্যে সাহিত্যপরিষদের সহিত সায়ান্স অ্যাসোসিয়েশনের যোগ দেওয়া কর্তব্য। বাংলায় বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ প্রচার, সাময়িক পত্র প্রকাশ, স্থানে স্থানে যথানিয়মে বক্তৃতা দিবার ব্যবস্থা করা আবশ্যক। নিজের উপযোগিতা উপকারিতা সর্বতোভাবে প্রমাণ করা আবশ্যক। তবেই দেশের সহিত সভার দান-প্রতিদানের সম্বন্ধ স্থাপিত হইবে, কেবলমাত্র বিলাপের দ্বারা তাহা হইতে পারে না। এমন-কি, রাজপ্রতিনিধির মধ্যস্থতা দ্বারাও বেশি কিছু হইবে না। রাজা সায়ান্স অ্যাসোসিয়েশনের অর্থাগমের সুযোগ করিয়া দিতে পারেন, কিন্তু তাহাকে সফল করিতে পারেন না।"
আর "বঙ্গদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার উন্নতির জন্য নিজে এক পয়সাও খরচা না করা রবীন্দ্রনাথ" বলতে লেখক কী বোঝাতে চাইলেন? রথীন্দ্রনাথকে কৃষিবিজ্ঞান পড়তে পাঠানো, পতিসরে তার প্রয়োগ, শ্রীনিকেতন বঙ্গদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার উন্নতি করেনি নাকি তাতে রবীন্দ্রনাথের এক পয়সাও খরচ হয়নি?
মহেন্দ্রলালের নাস্তিক মনোভাব নিয়ে রবীন্দ্রনাথের আপত্তি কোথাও লিপিবদ্ধ আছে কি? রবীন্দ্রনাথ অনেক ক্ষেত্রেই সংশয়বাদী। তাহলে নাস্তিকতা নিয়ে তাঁর আপত্তির কারণ কী? মহেন্দ্রলাল যে নাস্তিক সেটাই বা কোথা থেকে জানা গেল? রবীন্দ্রনাথ এই প্রবন্ধেই প্রফুল্লচন্দ্র-জগদীশচন্দ্রর নামোল্লেখ করেছেন। সুতরাং তাঁর ব্রাহ্মপ্রেমও তো ধোপে টেকে না! তাহলে?
মনে রাখুন, এই প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল ১৩০৫ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে। এর মাত্র তিন বছর পরে ১৩০৮ বঙ্গাব্দের আষাঢ়ের বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর আচার্য্য জগদীশের জয়বার্ত্তা প্রবন্ধটি। পারলে প্রবন্ধটি একবার পড়ে দেখবেন। আর মহেন্দ্রলালের বিজ্ঞানসভা সম্পর্কে আর একটি প্রবন্ধে তিনি অভিযোগের সুরে জানান --- আমাদের দেশে অধ্যাপক জগদীশ, অধ্যাপক প্রফুল্লচন্দ্র দেশবিদেশে যশোলাভ করিয়াছেন, বিজ্ঞানসভা কি তাঁহাদিগকে কাজে লাগাইবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করিতেছেন?" প্রসঙ্গত, প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয় ১৩১২বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ৭ বছরে অশ্বডিম্ব প্রসব!!!
"অবশ্য বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকলের খুঁত ধরে বেড়ানো 'এলেবেলে' যে গুরুদেবের বিরুদ্ধে একটা কথাও শুনতে রাজি নয় - সার্কিটে আমরা সকলেই জানি।" @মু. পথিক আপনি বুঝি জ্যোতিষচর্চাও করেন? এই সাইটেই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটি টই আছে, সেখানে এই অধ্ম কিছু লিখেছিল-টিখেছিল অনেক দিন আগে। মার্কা মেরে দেওয়ার আগে সেটা একবার পড়ে নিলে হয় না? যেহেতু আপনার উত্তর এখনও অসম্পূর্ণ তাই আপাতত এর চেয়ে বেশি কিছু লিখছি না।
@জ,
আমার মূল বক্তব্য ছিল মহেন্দ্রলাল 'বনাম' রবীন্দ্রনাথ ( যে চেষ্টা লেখক করতে চেয়েছেন)-এর বিরোধিতা করা।
১. মু. প লিখেছেন --- "১২৭৯ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৮৭৩ সালে 'বঙ্গদর্শন' পত্রিকায় 'ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা' শীর্ষক প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, "এই অনুষ্ঠানপত্র আজ আড়াই বৎসর হইল প্রচারিত হইয়াছে, এই আড়াই বৎসরে বঙ্গসমাজ চল্লিশ সহস্র টাকা স্বাক্ষর করিয়াছেন। মহেন্দ্র বাবু লিখিয়াছেন যে, এই তালিকাখানি একটি আশ্চর্য্য দলিল। ইহাতে যেমন কতকগুলি নাম থাকাতে স্পষ্টিকৃত হইয়াছে, তেমনি কতকগুলি নাম না থাকাতে উজ্জ্বলীকৃত হইয়াছে। তিনি আর কিছু বলিতে ইচ্ছা করেন না।"
নিঃসন্দেহে এই যে "কতকগুলি নাম না থাকাতে উজ্জ্বলীকৃত হইয়াছে", তার মধ্যে দুটি নাম দেবেন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ।"
এখানে রবীন্দ্রনাথ আসছেন কীভাবে? তখন তিনি সাকুল্যে বারো কি তেরো!
২. ভেলকির ব্যাপারটা লেখক বুঝতেই পারেননি (অথবা বুঝতে চাননি)। যদিও আমার আগেই এ ব্যাপারে @অনিকেত পথিক তা বিস্তারে বুঝিয়েছেন।
৩. রবীন্দ্রনাথের মূল বিরোধিতার জায়গাটা কিন্তু তাঁর প্রবন্ধেই আছে স্পষ্টভাবে। তিনি আগে জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রসার চাইছেন, সেটা চাইছেন মাতৃভাষায়। এই কাজটাকে তার বেস মনে হচ্ছে। আর সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন হবে সুপারস্ট্রাকচার। পাশাপাশি অ্যাসোসিয়েশন যে প্রফুল্লচন্দ্র-জগদীশচন্দ্রকে কাজে লাগাতেই পারছে না এবং তখনও অবধি মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে পারছে না সে ব্যাপারে হতাশা ব্যক্ত করছেন তাঁর দ্বিতীয় প্রবন্ধে।
এখানে লেখক-কথিত মহেন্দ্রলালের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিবিরোধ এবং সেই বিরোধও মূলত নাস্তিকতার কারণে - এমন দাবির কোনও সারবত্তা আমি অন্তত খুঁজে পাইনি।
@একক,
রবি ঠাকুরের মেকানোফোবিয়া ছিল বলাটা খুব সহজ, প্রমাণ করা যথেষ্ট কঠিন। যন্ত্র যাতে মানুষকে যান্ত্রিক না করে তোলে এ ব্যাপারে তিনি সতর্ক ও সচেতন ছিলেন। চ্যাপলিনের মডার্ন টাইমসও কিন্তু তা-ই নিয়েই। তাহলে কি চ্যাপলিনও মেকানোফোবিক?
দ্বিতীয়ত, শুধু জগদীশচন্দ্রকে আর্থিক সাহায্য করতে চেয়ে রবীন্দ্রনাথ ত্রিপুরা গিয়েছিলেন এবং দশ হাজার টাকা এককালীন অনুদানের বন্দোবস্তও করেছিলেন। মেকানোফোবিয়া থাকলে তা করতেন কি?