এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আয়লার স্মৃতি

    R
    অন্যান্য | ৩০ এপ্রিল ২০১৫ | ৬৭৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • R | 127.194.***.*** | ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ১৭:৫৯678364
  • আমার এক বন্ধুর লেখা, তাঁরই অভিজ্ঞতা। তুলে দিলাম।

    ------------------------------------------

    আয়লার স্মৃতি

    নীলাংশু গায়েন

    স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করার সুবাদে নানা বিচিত্র স্থানে ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে বা হচ্ছে। নানান অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হচ্ছে মনন। বন্ধুজনের সাথে আড্ডার সময় না পেয়ে, একজন বন্ধুর চাপাচাপিতে লেখা শুরু করলাম ও শেয়ার করছি সব বন্ধুজনের সাথে ফেসবুকে। আমার আবোলতাবোল লেখালিখিঃ

    ২৩শে মে, ২০০৯, আমার বন্ধু প্রতীক গোয়েল এসেছে কানপুর আই। আই। টি। থেকে আমাদের ছোট্ট স্বনির্ভর এর কাজের সাথে পরিচিত হতে। সে সদ্য এম।এস।সি। করেছে কেমিস্ট্রি নিয়ে। আমি ও নিশম্ভুদা তখন কাজ করি উঃ২৪ পরগণার সুন্দরবনে। নিশম্ভুদা ও আমি সারাদিন ঘুরে বেড়াই হিঙ্গলগজ্ঞের মাঠেঘাটে আর আলাপ করি নানান চাষিদের সাথে। তাদের নানা চাষের সমস্যা লিপিবদ্ধ করি, পরে তা রিপোর্ট আকারে লিখি, নিশম্ভুদা কিছু সমাধান দেন আর বাকি সব নানা কৃষি বিষেশজ্ঞদের কাছে পাঠাই। প্রতিক আবদার করল সুন্দরবনে যাবে। সাথে জুটল মিজানুর, সেও যাবে আর সেই চালাবে বাইক প্রতীককে নিয়ে, আমি আর নিশম্ভুদা অন্য বাইকে।
    ২৪শে মে, যাত্রা শুরু হল সকাল ৯টায়। না থেমে সোজা পৌঁছালাম হাসনাবাদ বাজারে। সেখানে মোড়ের মুখেই মিস্টির দোকানে খুবই ভাল পরোটা ও ছোলার ডালের স্বাদ আজও মনে আছে, সাথে ছানার জিলাপি! ভরপেট খেয়ে খেয়াঘাটে এসে দেখি আকাশ মেঘলা, মাঝে মাঝে দমকা বাতাস জলে হালকা ঢেউ তুলে মিলিয়ে যাচ্ছে। একটি নৌকা ভাড়া করে বাইকদুটি তুলে আমরাও উঠলাম। মাঝি বলল "বাবু, কাল রাত্তিরে বাদাবন থেকে আইলাম, নদী কথা শুনছে না রাত থেকে!"
    পারহাসনাবাদে পৌঁছে চেনা গুমটির চা খেয়ে আবার পথচলা।।।।
    এসে পড়লাম হিঙ্গলগজ্ঞের থানার মোড়ে, আবার চা পান তার পর একজন চাষীর বাড়িতে বসে আসন্ন আমন চাষ ও তার সমস্যা নিয়ে আলাপ হচ্ছে। একজন আনলেন দো-মালা নারকেল, ভাবনা দূর হল দুপুরের আহারের। মিটিং শেষে আবার চললাম হেমনগরের উদ্দেশ্যে। পথে আবার পার হলাম নদী। হেমনগর পৌঁছাতে বিকাল হয়ে গেল। হেমনগর লজে আগে থেকে বলাছিল, কেয়ারটেকার এর নাম প্রকাশ, বেশ চতুর ছেলে, অনেকদিন ধরে আছে এখানে, স্থানীয় বাসিন্দা, বাবা আগে পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন। রাতে ভাত ও জেলেদের কাছে বিকালে কেনা আমুদে মাছের ঝাল করতে বলে আমরা বেরিয়ে পড়লাম নদীর দিকে।
    হেমনগরে একমাত্র থাকার জায়গা হল এই দ্বিতল লজটি। জেলাপরিষদ এর সম্পত্তি কিন্তু একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এটি চালায় নামমাত্র অর্থ দিয়ে।
    কথিত আছে- রাজা চন্দ্রকেতুর শেষ সময়ে নাকি রানী হেমপ্রভা তাদের দারুবিগ্রহ নিয়ে পালিয়ে আশ্রয় নেন এই স্থানে। ঘাটের ধারেই গোলপাতার জঙ্গলে লুকিয়ে রাখা হয় দারুদেবতাকে; রাতেই হানাদেন দক্ষিণরায় আঁচড়ে কামড়ে ক্ষত-বিক্ষত হয় কাঠের ঠাকুর। এই ব্লকের জনপদের শেষে এই হেমনগরের ঘাট। সামনে রায়মঙ্গল নদী ও তার দক্ষিণে বাদাবন। ওই বনের পূর্বে লট এইট এর জঙ্গল, পশ্চিমে সন্দেশখালী ও দঃ২৪ পরগণার বিস্তৃত বনাঞ্চল।গত শীতে এই লজে বসে সন্ধ্যায় বাঘের ডাক শুনেছি।
    এখন গরমকাল, নদীর পাড় পড়ন্তবেলায় বেশ মনোরম, কেওড়ার গাছে ফল এসেছে, কাঁকড়া, বাইন প্রভৃতি লবনাম্বু গাছে দলে দলে বনের পাখীদের কলতান শুনছি, তারা বাসায় ফিরে দিনের নানা ঘটনা বলছে উত্তেজিত হয়ে। বকেরা আবার অনেকে ফিরেই ঘুমানোর আয়োজন করছে ক্যাওড়ার ডালে বসে। আস্তে আস্তে আঁধার নামছে, পশ্চিম আকাশ লালে লাল, তার লাল রং পিছলে পড়ছে নদীর জলে।
    মাঝে মাঝে দুই একটি বাঁদরের ডাক ও কিছু নাম না জানা ছোট কালো কালো পাখীদের কিচির মিচির এর সাথে সাথে কালো চাদর মুড়ি দিচ্ছে চারপাশ। নদীর পাড়ে ঘুরে ঘুরে আমরাও ফিরে চলেছি লজের দিকে। এই জায়গায় সন্ধ্যার পর বাঘের চেয়েও বিপদজনক হল কালাচ ও কেউটে। সুন্দরবনে বেশী প্রাণঘাতী হল এই দুই প্রাণী। প্রতীক ভয় পেয়ে প্রায় দৌড়িয়ে চলল লজের দিকে। একটা দিন শেষে সব চুপচাপ, পশ্চিমের লালরং ফিকে হয়ে এখন কালো চাদরে ঢাকা, মাঝে মাঝে নদীর বুকে জেলে ডিঙাতে জ্বলে উঠছে কেরোসিন এর শিখা।
    চকম ভাঙ্গল কেয়ারটেকারের ডাকে, "দাদারা খেতে আসুন।।।।।।।খাবার দিয়ে রান্নার মাসি ফিরে যাবে, জল দেওয়া আছে দুই ঘরেই। ছাদে যাবেননা কাল রাতে কেউটের বাচ্চা মেরেছি।।।।বিপদে এখানে কেউ নেই, খেয়ে শুয়ে যান, দিনের আলোতে সববুদ্ধি বাঁটুন।।।।আঁধারে ঘুমদিন"।
    বললাম "প্রকাশ, একটা হারিকেন দাও।।। ভাড়াদেব, এখন ঘুম আসবেনা, তাস খেলব চারজনে।"
    নিস্তব্ধ রাত, মাঝে মাঝে জল পাড়ে এসে আঘাত করে ছলাত ছল শব্দ তুলেই ফিরে যাচ্ছে। রাতচোরা পাখীদের ডাকে কেঁপে উঠছে চারদিক। বাইরে দুই একটি জোনাকিপোকা খুবই এলোমেলো ভাবে ঘুরপাক দিচ্ছে বাতাসে। তারা আবার কখনো ছুটে যাচ্ছে নদীর ঘাটে, আবার নৃত্যের ভঙ্গিমায় ফিরছে পাড়ে। একফালি চাঁদ অলস ভাবে এই সব দেখছে, কখন আবার আড়চোখে মেঘের শোভাতে মৌতাত হয়ে যাচ্ছে। সারাদিনের ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে আমরাও ঘুমে পড়লাম ঢুলে।
    ২৪শে মেঃ
    ঘুম ভাঙল খুবই ভোরে, আকাশ কালো করে আছে। নদীর পাড় ধরে হাঁটছি, কিন্তু কেউ নেই। মেঘের ফাঁকে একটু উঁকিঝুঁকি মারছে সূয্যিমামা। হঠাৎ দেখি নদী যেন দূরে সরে যাচ্ছে, আর সারি বেঁধে সামুদ্রিক সাপ যারা এই নদীতে থাকে যাদের লেজ চ্যাপ্টা তারা উঠে আসছে পাড়ে। দলে দলে লাল পিঁপড়ে চলেছে অজানা দেশে আর তার সাথে পশ্চিমাকাশ কাল নিকষকালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। নদীর ঘাটের পাশে একটা কুঁড়ে ঘর তারমধ্যে মাঝিরা মাঝে মাঝে তামাক খায়, সেই কুঁড়েতে ঢুকে দেখি একটি প্রকান্ড দাঁড়াশ ও কয়েকটি ইঁদুর কাঁপছে। আকাশে উড়ছে বকের পাল, পাগলের মত তারা চক্কর কাটছে আকাশে। হঠাৎ ওই পশ্চিমের কাল নাগীনী মাথা তুলল, শুরু হল ঝড়! আমরা সবাই লজের দিকে দৌড়াচ্ছি, বাতাস পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে। মিজান পড়ে গেল পাড় থেকে, প্রতীক ছুটছে, সবাই অবশেষে গিয়ে উঠলাম লজের দোতলার ছাদে।
    সেদিন প্রথম দেখলাম কিভাবে ঝড়ে বক মরে, আমার পায়ের কাছেই দুটি বক মারা পড়ল বাতাসের সাথে পেরে না উঠে। নীচে তাকিয়ে দেখি নদী উত্তাল, প্রবল ঢেউ আছড়ে পড়ছে পাড়ের উপর। কয়েক জন ছুটে এসেছেন ভেড়ি মেরামত করতে। হঠাৎ শুরু হল মুষল বৃষ্টি সাথে প্রবল বাতাস। একের পর এক গাছ ভেঙ্গে পড়ছে, ভেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে জল ঢুকছে জনপদে। বেলা আটটা থেকে এগারোটা অবধি প্রবল বাতাস ও আকাশ ভাঙ্গা বারিপাত। এগারোটার পর দেখি লজের দিকে এগিয়ে আসছে জলের ধারা চারপাশ দিয়ে অবরুদ্ধ হচ্ছি আমরা।
    নিচে এলাম পালাব বলে, হঠাৎ লজের পাঁচিল ভেঙ্গে পড়ল, আর তার তলা দিয়ে অল্প জলে ফনা তুলেছে এক বিরাট আকারের কিং কোবরা। একটু পরে লাঠি নিয়ে বেরুলাম আমি ও মিজানুর।
    একটু দূরে দেখা মিলল একটি পরিবার তারা পালিয়ে এসেছেন, গ্রামের পর গ্রাম জলে অবরুদ্ধ। হঠাৎ ওই দলের বৃদ্ধ ফজের মোল্লার মনে পড়ল দলিল এর ব্যাগ ও খুচরা পয়সার থলে আনা হয়নি। উনি, ওনার ছেলে আব্দুল্লাহ কে নিয়ে আমি ও মিজানুর চললাম। ফজের নানা কোমর জল ভেঙ্গে ঘরে ঢুকলেন, হঠাৎ জল এর স্রোত প্রায় দশগুণ বেড়েগেল, পয়সার ব্যাগ হাতে নিয়ে রায়মঙ্গলে ভেসে ধরা ছোঁয়ার বাইরে গেলেন ফজের মোল্ল্যা। আমরা এখন তিনজন যে পথে সকালে হেঁটেছি সেই পথে সাঁতার দিয়ে এলাম লজে ফিরে।
    এসে দেখি আরও ৫টি পরিবার এসেছে তাদের বিলাপে বাতাস ভারি। হাল্কা বৃষ্টি হচ্ছে, বাতাস এখন শান্ত, ঘড়িতে চোখ পড়তে দেখলাম বেলা ৩টা। আকাশ অন্ধকার হয়ে আসছে। চারিদিকে জল আর জল, আর আমরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত আটকে আছি। প্রকাশ এর পরিবারের সবাই এসেছে আশ্রয় নিতে। বুঝতে পারলাম আসেপাশের সব গ্রামই জলের তলায়। আজ আর খাওয়া হবেনা, কাছে জল আছে মাত্র এক বোতল।

    আস্তে আস্তে সন্ধ্যা নামছে, আজ রায়মঙ্গলের বুকে কোন নৌকা নেই, পাড়ে থাকা সবকটিকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে এই সর্বনাশা ঝড়। হেমনগর লজের পাঁচশো মিটার দূরে জনপদ সেখান থেকেও আলোকরশ্মি আসছে না। আমি ছাদের এক কোনে বসে আছি, নীচে থেকে মাঝে মাঝে কান্নার সুর ভেসে আসছে। একটু পরে মিজান এল প্রতীককে নিয়ে, বলল, "দাদা রাতে কি খাবেন, সারাদিন কিছুই খাইনি।" বললাম, "আজ খাবার হবেনা, কাল সকালে পালাতেই হবে, নয়তো সবাই মারা পড়ব!"। সারারাত ভাল করে ঘুম হয়নি, সকালে উঠে খুবই ক্লান্তি অনুভূত হচ্ছে। ছাদের উপর সবাই বসে আছি, চারিদিকে জল আর জল, রায়মঙ্গল এর পাড় ভেঙ্গে মিশে গেছে চারপাশ। বেলা ১০টায় সেনা কপ্টার ক'বার চক্কর দিল আমাদের মাথার উপর। সবাই চাইছে পানীয় জল আর খাবার। বেলা ১২টায় দেখলাম সবাই কেমন হাল ছেড়ে দিয়েছে, আসন্ন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি সবাই।
    আমি প্রস্তাব করলাম সবাইকে ডেকে, " এই লজে আমরা ২১ জন আছি, এখান থেকে একজন অন্তত যাক ৮ কিমি দুরের যোগেশগঞ্জ বাজারে। উদ্ধারকারী দল আনতে হবে, পঞ্চায়েত জানুক আমরা বিপন্ন, বলুন কে কে যাবেন।" কেউ যেতে রাজি নয়, কারণ রায়মঙ্গলের জল গ্রামে ঢুকছে, কুমীর কামট তাতে থাকবে, আর নয়তো মাঠ ঘাট ভেসেছে সাপে কাটবে। আর দুদিনের খিদে পেটে আট কিমি পথ সাঁতরানো অসম্ভব। হেলিকপ্টার দেখেছে, তাই আশা করছে সকলে রিলিফ আসবে।
    বললাম, "আমি যেতে চাই, আজ খাবার না এলে সবাই মরে যাব, আর তিন জন শিশু আমাদের সাথে আছে তাদের জন্যই যেতে হবে।" নিশম্ভুদা বললেন, " আমি যাব, চল সাঁতার দিই।" বেরুচ্ছি এমন সময় প্রতীক এসে বলল, " ভাই আমি সাঁতার জানিনা, আমার বাবা কানপুর আই। আই। টির সামনে চপের দোকান চালায়, একবার একটা খত লিখে দিও!"। বেরিয়ে দেখি একটু দূরেই ফজের মোল্ল্যা ভাসছেন, দেহটা আটকে আছে একটা মরা বাইনের ফাঁকে। বুকটা কেউ খুবলে খেয়েছে। লাশটা জলে টেনে আনছি, বুকে দপদপানি, কুমীরের মুখের গ্রাস যদি আক্রমণ করে। দেহ লজে আনতে, তার ছেলে আব্বা বলেই জ্ঞান হারাল। মিজান বলল, "ভাইজান এদেহ কবর হবেনা, ডাঙ্গায় নেই। পায়ে ইট বেঁধে জলে ডুবিয়ে দিচ্ছি"। একটু পরে পায়ে হাতে ইট নিয়ে মোল্ল্যা সাহেব চলে গেলেন রায়মঙ্গল এর তলদেশে।
    সাঁতার কাটছি দুজনে, একটু পরেই গ্রাম পড়ল। সবাই পালিয়েছে, আছে শুধু বৃদ্ধরা আর কিছু মা তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে। পুরুষরা কাল ফিরতে পারেনি। রাস্তা প্রায় ছয় ফুট জলের নিচে। পাকা বাড়ির ছাদে একটু জিরানো, আবার সাঁতরানো।
    সবাই বলছেন "বাবারা জল আর খাবার দাও"।
    একটু পরেই মাঠান জমি এল, কি স্রোত জলের, হাঁফ লাগছে, শুধু ভাসিয়ে রাখা শরীরকে, জল টেনে নিয়ে যাচ্ছে। প্যান্টশার্ট পরে সাঁতার কাটা কি কষ্টকর, তা কেবল ভুক্তভোগীই জানেন!
    চলেছি দুজনে, শত শত গরু ও ছাগলের মৃতদেহ ভাসছে জলে। একস্থানে দেখা হল, এক বাবার সাথে তার কোলে বাচ্চা, হাতে একটা ধামা। বাচ্চাকে ধামায় বসিয়ে পার করবেন তীব্র জলস্রোত। আমরাও তাকে নিয়ে চললাম। পথে দুজন বধূ আমাদের সঙ্গ নিলো।
    প্রায় চার কিমি পথ পার হয়ে জলের গতি কমে এল। আমরা বসেছি একটা টিলার পরে। আসেপাশের জল তখনো প্রায় চার ফুট গভীর। বসে হাঁফ ছাড়ছি, সাথে সাথে অসংখ্য কেউটের গজরানি। তারাও বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছে সেখানে। আবার চলা তবে এবার হেঁটে কখনো বুক সমান বা কখনো কোমর সমান জলে।
    আবার বসেছি দেখি দূরে খালের পাশেই দুটি কুমীর নাক ভাসিয়ে আছে। আর এক কিমি চলার পর দেখলাম এক অন্য জগত।
    কিছু গাছ ঝড়ে পড়ে গেছিল, কিন্তু কিছু মানুষ রাস্তার দুই ধারের সব কটি গাছ কুঠার দিয়ে কাটছেন। আমাদের কাছে জানতে চাইলেন, "ওদিকে গাছের খবর কি!" জানলাম বন্যার সময় এই সব গাছ ঝড়ে পড়েছে বলে বন দপ্তর কোন ব্যবস্থা নেবেনা। ওই সময় সুন্দরবনের প্রায় ৯০% গাছ যা বনসৃজন প্রকল্পে প্রায় ১০-১৫বছর ধরে বড় হয়ে উঠেছিল, তা কাটা পড়ে যায়।
    একটু যেতেই দেখা হল একটি দলের সাথে, তারা নৌকা নিয়ে যাবে হেমনগরের ও কালীনগরের দিকে। যাদের বাড়িতে এখনও গরু বা ছাগল আছে তারা খাদ্যাভাবে মরার আগে,সেগুলিকে কিনবে বলে। পরে দেখেছি গরু একশো টাকায় ও খাসী ৩০টাকায় বিক্রি হতে।
    আর একটু যেতে দেখলাম মাথায় ফেজ টুপি দিয়ে একদল মানুষ নাও নিয়ে আসছেন। আমাদের জল দিলেন, বললেন আজ বর্ডার খোলা বি।এস।এফ। জল দেবে শুনে আসতে দিয়েছে। তারা সবাইকে জল ও বাতাসা দিচ্ছেন। এরা এসেছেন ইছামতীর অপর পাড়ে বাংলাদেশের কালীগঞ্জ থেকে। জল খেয়ে প্রণাম করলাম হাত জোড় করে। প্রায় ৩।৩০এ এলাম যোগেশগঞ্জ বাজারে। আমরা তখন হিরো, পুলিশ, নেতা, বি।এস।এফ এর কম্যান্ডার সবাই আসছেন আর এক কথা কেউ বেঁচে আছে দাদা। উদ্ধারকারী দলের নৌকাতে নিশম্ভুদা আবার চলে গেলেন বাকিদের আনতে। আমি বাজারে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাঠের অফিসের উপর বসে বিশ্রাম করতে লাগলাম।

    -------- চলবে
  • R | 127.194.***.*** | ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ১৮:০০678373
  • ছবি;



    <
  • R | 127.194.***.*** | ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ১৮:১৪678374
  • Correction: লেখকের নাম নীলাংশু গাইন।
  • R | 127.194.***.*** | ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ২৩:৪৮678375
  • নীলাংশুর পরবর্তী কিস্তি;

    সন্ধ্যায় ফিরে এল সবাই। ক্লান্তি, খিদে সব মিলিয়ে শ্রান্ত মুখগুলো আশ্রয় নিল যোগেশগঞ্জ হাই স্কুলে। শিশুরা দুধ খেয়েই চাঙ্গা, বল খেলছে। তাদের বাবা কাকারা খুঁজছে তামাক ( পরে একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার প্রতিনিধিদলকে তারা প্রয়োজনীয় লিস্টে বিড়ির নাম লিখে দেয় )। মহিলাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়, বিশেষত তরুণী বা যুবতী বধূদের, যারা সদ্য রজঃস্বলা হয়েছেন। ন্যাপকিন বা কাপড় না থাকার ফলে, তাদের পায়ে শোনিতধারা সকলেরই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।
    এসব দেখে ভাবলাম একটু আসেপাশে ঘুরে দেখি। দেখলাম, সর্দার পাড়া ঘাটে সারাদিন ধরে কাটা গাছের গুড়ি বড় বড় নৌকায় তুলছে স্থানীয় সর্দাররা। আর তার বখরা নিচ্ছে একই সাথে সব দলের নেতারা। সারাদিন ধরে কেনা সস্তার গরু, ছাগল, গাঁড়ল, হাঁস, মুরগির নৌকাও দেখলাম হিসসা বুঝিয়ে দিচ্ছে।
    অনেকের খাওয়া হয়নি গতকাল থেকে, তারাও দেখলাম বিকালবেলায় বাটি নিয়ে যাচ্ছেন স্কুলের দিকে।
    আমাদের বন্ধু বিষ্ণুপদ, তার সংস্থায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। সেখানে রান্না হচ্ছিল আমাদের। চারিদিকে গুজবে কান রাখা দায়, নাকি দক্ষিণ ২৪ পরগণার কেউ আর বেঁচে নেই, এই সময় মাছ খেলেই মড়ক লাগবে! রাতে গেলাম ত্রাণ শিবিরে, কিছুই জানিনা, এক স্বাস্থ্যকর্মীকে সাহায্য করলাম গরম জল ও সাবান দিয়ে, সাবুরা বিবি ও প্রতিমা হালদার জন্মদিলেন একটি করে কন্যা সন্তানের। মৃত্যুর উপত্যাকায় দুজন ভাবী মা জন্ম নিল। অবাক লাগছে স্বাস্থ্যদপ্তর ছাড়া আর কোন লাইন ডিপার্টমেন্ট এর খবর নেই! এরই মধ্যে এসেছেন ব্লক মেডিকেল অফিসার, ডাঃ বিদ্যুত গাঙ্গুলী মহাশয়। ঈশ্বর আছেন হয়ত! আসলে তিনি এত কাছেই আছেন যে আমাদের চোখ তাকে ফোকাস করতে পারেনা। সেই সময় ডাঃ গাঙ্গুলীকে তারই রূপে অনুভব করি। জানলাম ২২ বছর ধরে সুন্দরবন ভালবেসে আছেন এই ব্লকে! ( বর্তমানে ইনি কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত)।
    ভোর বেলায় কয়েকজন ডাইরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে সেই সময় উঃ ২৪ পরগণার চীফ মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সুকান্ত শীল, সহকারী চীফ মেডিক্যাল অফিসার- বসিরহাট, ডাঃ আসিত পান্ডে ও ডাঃ গাঙ্গুলীর জন্যই, আমি হলফ নিয়ে বলছি এতবড় বিপর্যয়ে মাত্র একজন মারা গিয়েছিলেন। তাও তাঁর চিকিৎসা শুরু হতে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এদের কাজ কোন স্বীকৃতি বা সম্মান পায়নি। ডাক পাননি ইউনিসেফ বা অন্য ইউ এন সংস্থা থেকে। বুঝেছিলাম, এই দেশে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থারা কোনদিনই পারবেনা এমন বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে, তাদের সেই পরিকাঠামোই নেই,স্বেচ্ছাসেবীদের উচিত স্থায়ী সরকারি ব্যবস্থাকেই আরও শক্তিশালী করে তোলা।
    রাতে বি।এস। এফ এর কম্যান্ডার আমাদের ডাকলেন, ডাকাত ধরেছেন তারা, দেখি পিছমোড়া করে বাঁধা সকালের সেই বাংলাদেশীদল। তারা সকালে জল দিতে এসে এলাকা রেইকি করেছেন, পরে জঙ্গলে লুকিয়ে ছিলেন বাংলাদেশে ফেরেননি, রাতে বাড়ি বাড়ি ডাকাতি করে যেটুকু আছে তা লুঠ করছিলেন, রাতে সীমান্তরক্ষীরা যখন বাংলাদেশে গরু পাচারকারীদের কাছথেকে কমিশন (ঘুষ) নেবার জন্য টহল দিচ্ছিলেন, তখন এরা ধরা পড়ে!
    তৃতীয় দিন থেকে ত্রাণ আসা শুরু হল,
    সরকারি ত্রাণ আর তার সাথে বেসরকারি ত্রাণদল।
    তদানীন্তন, সহকারী জেলাশাসক, ওবেদুর রহমান কে মনে আছে তিনি চেষ্টা করেছিলেন তার একদল কর্মবিমুখ সরকারি কর্মী নিয়ে ত্রাণ করতে!
    বেসরকারি ত্রাণ দলের মিছিল লাগল, একদল আসেন, হাসনাবাদ বা খুলনাঘাটে এসে নৌকা নেন। কিছুটা গিয়ে নদীর পাড়ে থাকা লোকদের খাবার, জল ও পোষাক ছুড়ে দেন, ছবি নেন জলে নেমে। তারপর নিজেদের আনা খাবার খান তৃপ্তির সাথে নৌকাতে বসে, ফিরে ক্লান্ত শরীরে কলিকাতাবাসীকে গল্প বলেন।
    আরেক দল আসেন, গ্রামে যান, হাতে হাতে ত্রানসামগ্রী দেন।
    আরেকদল আসেন, তারা নামী সংস্থায় কাজ করেন, মাল দেন, মাস্টার রোল মেন্টেন করে চলে যান। ত্রানের সময় পরিচয় হয়েছিল, মহারাজ থেকে মহাজনী কারবারে ফুলে ফেঁপে ওঠা মানুষদের সাথে। এই ভাবে দেখা হয়েছিল, ডঃ অনিরুদ্ধ দে মহাশয়ের সাথে। পরে অনেক কাজ করেছি, শিখেছি এনার কাছে।
    সেই সময়, প্রায় সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ত্রাণ হিসাবে দিতেন, মুড়ি, চিঁড়ে ও গুড়। আমার মাধ্যমে এই মাল কিনেছিলেন প্রায় ১৮টি সংস্থা, তখন এই জিনিসের কালোবাজারিরা কেজি প্রতি ৫টাকা দাম বৃদ্ধি করেছিলেন, কিন্তু আমার পরিচিত দুই প্রস্তুতকারী দাম একই রেখেছিলেন। আজও মনে এলে লজ্জা পাই, কলিকাতার সার্ভিস সেন্টারের শ্রী সুজিত মিত্র ছাড়া সবাই কম দামে কিনে দাম বাড়িয়ে বিল করতেন সেই সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে! এজন্য এদেশে ণ মানে সাধারণ এর ধারণা ধান্দাবাজি!
    মুসলিম ধর্ম গুরুদের এখানে দেখিনি, তবে ব্যতিক্রম ছিলেন আমার বন্ধু আব্দুল মাতিন,তিনি তার সামান্য ক্ষমতা নিয়েই ঝাঁপিয়েছিলেন সকল মানুষের জন্য। তার উদ্যোগেই নানান মসজিদে সব ধর্মের মানুষেরা খাবার ও ঔষধ পেয়েছিলেন।
    একটি সংস্থা ছাড়া কেউ কিন্তু মায়েদের ন্যাপকিন দেয়নি, পুরুষদের কন্ডোম দেয়নি, দেয়নি হাত ধোবার তরল সাবান, আমার মনে হয় এগুলি তখন খাবার এর মতই দরকারি ছিল।
    চলবে..........
  • achintyarup | 24.99.***.*** | ০১ মে ২০১৫ ০০:৫৩678376
  • পড়ছি।

    কিন্তু ঝড়টা ২৫ তারিখ হয়েছিল না?
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ০১ মে ২০১৫ ০২:০২678377
  • পড়ছি, অসাধারণ দলিল।
  • sosen | 24.139.***.*** | ০১ মে ২০১৫ ১৫:১৭678378
  • বাপরে
  • R | 127.194.***.*** | ০৪ মে ২০১৫ ০০:০৮678379
  • পরের কিস্তি;

    ২৫শে জুনের পর ১৫ দিন ধরে চলল ত্রাণের কাজ। নানান মানুষজন, তাদের নানান মত, নানান পথ ও নানা কাজের ধরণ, বেশ চলল দিন পনের।
    আস্তে আস্তে ত্রাণ কমে এল, লোকজন শিবির ছেড়ে বাড়ি ফিরলেন। সরকারী লোকজন সব আসা বন্ধ করেদিল। আমি তখন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজে সুন্দরবনেই থাকি, সারাদিন নৌকো চেপে ঘোরাঘুরি আর রাতে কখনও নৌকো বা কখনো হিঙ্গলগজ্ঞের ব্লক হাসপাতালে থাকি।
    ত্রাণ এর সাথে তখন কয়েকটি মাত্র স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভাবছেন পুনর্বাসন নিয়ে; এমন সময় দুজন বৃদ্ধ লোক নিজের উদ্যোগে উঠে বসলেন আমাদের নৌকায়, যাবেন সুন্দরবনে, আর. এন. বসু ও টি. কে. বসু। প্রথমজন কৃষি কমিশনে ছিলেন, তার চেয়ে বড় পরিচয় আমাদের স্যার তিনি, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, টি. কে. বসু কে নিয়ে বলা কঠিন, এই বয়সেও আমায় মারতে পারেন! তিনি ছিলেন কল্যাণীর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক। তারা এসেছেন কৃষকদের কী কী ক্ষয় ক্ষতি হল তা বুঝতে ও তার সাথে তাদের কিছু পরামর্শদান করতে। বেশ কয়েকটি গ্রামে গেলেন, তার পর জানলেন কিছু নিদারুণ ঘটনা।
    সুন্দরবন হল নোনা জলের দেশ, আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে, কিছু চাষা যারা কোন দিন স্কুলে যাননি, পড়েননি আধুনিক বিজ্ঞান তারাই নোনা সহনশীল কিছু ধান (তালমুগুর, গেঁতি, নোনাশ্রী, মাতলা ইত্যাদি) ও সব্জীর প্রজাতির সৃষ্টি করেছিলেন। গত ২০-২৫ বছর ধরে, এরা উচ্চফলনশীল বীজ ও মেডিসিন( চাষিরা আজকাল কীটনাশককে এই নামে ডাকেন) ব্যবহার করে সব বীজ হারিয়ে ফেলেছেন।
    দুই বৃদ্ধ হিসাব করে দেখলেন, প্রায় ৯০% জমি নোনা জলের তলায় আর তাতে ফলন আনতে গেলে চাই নোনা সহনশীল বীজ আর প্রচুর জৈব সার যেটা উৎপাদন করতে গেলে চাই গরু, সব বাড়ি গরু চাই, অনেক অনেক গোবর চাই, কিন্ত গরু নেই, যাছিল তা প্রায় সবই মারা পড়েছে, নাহলে জলের দরে বিক্রি হয়ে গেছে।
    তারা এও বললেন সরকার ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না। জানা গেল, কৃষি দপ্তর আছে! তারা অনেক জৈব সার বিতরণের জন্য মজুদ করেছেন ধামাখালী ঘাটে। দুজন বললেন আরে দেখতে হবে, এ যে অবিশ্বাস্য! আয়লার মাত্র ১৫দিনের মাথায় এত সার এল কেমন করে। গেলাম ধামাখালী ঘাটে, দেখা গেল আসলে পোল্ট্রির লিটার যা সবচেয়ে বেশি ক্যেমিকেলে ভরা তাই ব্যাগে করে আনা হয়েছে জৈব সার হিসাবে। এরপর তারা দেখা করেন তাদেরই প্রাক্তন ছাত্রদের সাথে যারা ব্লকগুলিতে কৃষি আধিকারিক হিসাবে কর্মরত ; ছাত্রদের সাথে শিক্ষকদের আবেগময় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুনেছিলাম সেদিন। পরে তারা নানা কর্মশালা করে কি ভাবে নোনা সহনশীল চাষ হতে পারে তার নানা পদ্ধতি শিখিয়েছেন, আর তারি সাথে কি কি গাছ লাগাতে হবে তারও নিদান দিয়েছিলেন। কলিকাতায় একাধিক কর্মশালাতে এদের সাথেই যোগ দিলেন আর এক বৃদ্ধ, অর্ধেন্দুশেখর বাবু। তিনজনেই চাষের সাথে প্রানী ও মৎসচাষে, উদ্যান পালনে উৎসাহ দিলেন। বলে দিলেন কিকি প্রজাতি চলবে, কি কি প্রজাতি নুনজল সহনশীল।
    নানা সংস্থা দিল বীজ, চাষের নানা সহায়তা। কেউ ব্যবস্থা করলেন মহিলাদের নানা ভাবে উদ্যমী করতে। শিশুদের জন্য নানা কল্যাণমুখী কাজ হল।
    কয়েকটি সংস্থা পুকুরগুলির সংস্কার করলেন, পতিত জমিকে উদ্ধার করলেন ল্যান্ডশেপিং এর মাধ্যমে পুকুর কেটে, জমি উঁচু করে। কেউ লাগালেন ম্যানগ্রোভের জঙ্গল। পুকুরচুরি কিছু হলেও এই কাজগুলি আজও দেখতে পাবেন।
    গর্ভবতী ও শিশুদের টিকাকরণ বন্ধ ছিল মাত্র এক সপ্তাহ! এই কাজে নবউদ্যমে ঝাঁপাতে বললেন সেই ডা: সুকান্ত শীল, চীফ মেডিক্যাল অফিসার, উঃ২৪ পরগণা।
    আর ছিলেন, উঃ ২৪ পরগণার জেলা রিলিফ অফিসার, অসম্ভব ভাল মানুষ, সবার কথা শুনতেন, চেষ্টা করতেন!
    এর মাঝে আমিও নৌকা থেকে নেমে এলাম, সারাদিন সুন্দরবন পায়ে হেঁটে ঘুরতে লাগলাম। দেখলাম, বাড়িতে আর মায়েরা থাকেনা, তারা বনে যান, কিছু মা শহরে গেলেন রান্না ও ঘরদোরের কাজে, কিছু মা হারিয়ে গেলেন অন্ধকার জগতে, এর ফলে বাড়ির বড় মেয়েটি স্কুল ছেড়ে বাড়ির রান্না ও ভাই বোনের দ্বায়িত্ব নিল। শিক্ষকরা এই পরিবর্তন নিরবে মেনে নিলেন।
    প্রায় ৫০শতাংশ বাবারা পাড়ি দিলেন ভিনরাজ্য আর ২৫ শতাংশ পুরুষ হয়ে গেলেন বারাসাতের মত শহরতলির রিক্সা চালক বা ঠিকে শ্রমিক!
    সুন্দরবন ভরে গেল আড়কাঠি তে যারা মহিলা বা যুবতীদের নানা রাজ্যে কাজদেবার ব্যবস্থা করার নামে, আসলে নারী পাচারকারী।
    সবচেয়ে অপরাধী মনে হয়েছে সেচ দপ্তরের অফিসারদের। এক নদীর পাড় বাঁধানোর নামে কতবার যে বস্তা ফেলেছেন, বাঁশের খাঁচা ফেলেছেন!( বাংলাদেশের নদীর পাড়ে বাস চলে জাপানী বাস্তুকারদের প্রযুক্তিতে আর এদেশে নদীর পাড় বাঁধানো যায়না, পারেনা ঝড়রোধী বাড়ি বানাতে। এদেশের হবু বাস্তুকাররা যেতে পারেন বাংলাদেশে শিখতে!, দেখা করেছিলাম শিবপুরের নামী বাস্তুকার অধ্যাপকদের সাথে, আবেদন করেছিলাম এই সময় সাধারণ মানুষ ঘর পুনঃনির্মাণ করছেন, আপনারা ড্রয়িং দিন, প্রশিক্ষণ দিন, জানলাম ওনাদের মাটির বাড়ি বানানোর কোন ধারণাই নেই। আসলে এদেশের ইঞ্জিনিয়াররা কোনদিন মাটির বাড়ি বানাননি অথচ এতেই থাকে দেশের ৫০শতাংশ মানুষ , বিদেশের লেখা বই পড়ে এদেশের উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হয় তাই এই অবস্থা! আমেরিকার মাটির বাড়ি নেই তাই ভারতের সিলেবাসে নেই; সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের মাটির, বাঁশের, কাঠের ও পাথরের বাড়ি নির্মাণ পড়ান উচিত)
    এর সাথে দেখলাম, নেতাদের পকেট ভরে উঠছে, আয়লার পর সেচদপ্তর, পঞ্চায়েতগুলিতে কাজের নামে টাকার নয়ছয়!
    তখন দলবদলের সময়; আখের গোছাতে দল পাল্টাচ্ছে নোনাজলের নেতারা, সাদা ধুতিতে কাদা লাগানোর দিন চলেছে তখন সেখানে।
    আস্তে আস্তে তাও থামল, সুন্দরবন একই থাকল, কিছুই পাল্টাল না, মাঝখানে আয়লার নোনাজল দিল চাষের জমিকে বন্ধ্যা করে। অনেকে কাজে গেল বাইরে, সংসার এর বন্ধন গেল ছিন্ন হয়ে।
    অনেক সাধারণ নেতা, সাপ্লায়ার ও ঠিকাদাররা শ্বেতপাথরের প্রাসাদোপম বাড়ি করলেন আয়লার পরপরই।
    সুন্দরবনের এই হাঙ্গররা ফি সনে চান বাদাবন যাক ভেসে!
    চলবে.......
  • pi | 192.66.***.*** | ০৪ মে ২০১৫ ০০:১৩678380
  • পড়ছি।
    আপনার বা আপনার বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করা যাবে ?
  • pi | 192.66.***.*** | ০৪ মে ২০১৫ ০০:১৪678365
  • পড়ছি।
    আপনার বা আপনার বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করা যাবে ?
  • R | 131.24.***.*** | ০৪ মে ২০১৫ ১৮:৫৯678366
  • নীলাংশুকে ফেবু তে পাওয়া বেশ সোজা। Nilangshu Gain বলে খুঁজলেই পেয়ে যাবেন। বারাসাতে থাকে।
  • xyz | 125.112.***.*** | ০৬ মে ২০১৫ ১৫:৫৪678367
  • ছবির মত লেখা পড়ছি
    "বুঝেছিলাম, এই দেশে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থারা কোনদিনই পারবেনা এমন বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে, তাদের সেই পরিকাঠামোই নেই,স্বেচ্ছাসেবীদের উচিত স্থায়ী সরকারি ব্যবস্থাকেই আরও শক্তিশালী করে তোলা।" - খুব সত্যি
  • byaang | 233.227.***.*** | ০৬ মে ২০১৫ ১৬:২৭678368
  • খুবই মন দিয়ে পড়ছি। পরবর্তী কিস্তির অপেক্ষায় থাকলাম।
  • de | 69.185.***.*** | ০৬ মে ২০১৫ ১৬:৩৭678369
  • অসাধারণ!!
  • pi | 24.139.***.*** | ০৭ মে ২০১৫ ১৯:৩৩678370
  • আচ্ছা, ধন্যবাদ !
  • Wasim Bari | 116.76.***.*** | ১০ মে ২০১৫ ১৯:৩২678371
  • Darun lagce.
  • R | 127.194.***.*** | ১০ মে ২০১৫ ২৩:৪৮678372
  • পরের অংশ;

    সুন্দরবন নতুন করে সাজতে লাগল, ভাঙা ঘর নতুন করে গড়ে তুলছে মানুষ। আস্তে আস্তে স্মৃতি ভুলে মানুষের কলরবে ভরে উঠল বসতি। কিছু জমি যা অনেক অনেক দিন নোনাজলের তলায় ছিল, তাতে এমন লবণ জমা হল যে তা ঊষর হয়ে গেল প্রায় চিরতরে। আজও তাতে ধানি ঘাস ছাড়া কিছুই জন্মায় না।
    সেই সময় সারাদিন সুন্দরবনে ঘুরে ঘুরে আমার যেন নেশা হয়ে গেল, কিছুএকটা খবর পেলেই ছুটে যাই, আর বাকী সময় নৌকাতে।সেই সব দেখা ও শেখার টুকরো টুকরো ঘটনা গুলি একটু সংক্ষেপ করে লিখছি।
    স্থানীয় জ্ঞান ও প্রযুক্তির বিলোপঃ
    নৌকা সারাইঃ
    উত্তর ২৪ পরগণার হিঙ্গলগজ্ঞ, সন্দেশখালী ব্লক এর বেশী অংশ, আর মিনাখাঁ ও হাসনাবাদের সামান্য অংশে বাদাবন। প্রায় সর্বত্র নৌকাজীবী মানুষ, অনেক নৌকা, অজস্র ডিঙা, কিন্তু যারা সুন্দরবন গেছেন তারা জানেন, এছাড়া একধরনের নৌকা যাকে চলতি কথায় বলে 'বোট ' তাতে কামরা থাকে উপরে পাটাতন, এই সবগুলি চলে ৪ সিলেন্ডারের ইঞ্জিনে, সেই নৌকা বানাবার কোন মিস্ত্রী কিন্তু এখানে নেই! মিস্ত্রীরা আসেন নদীয়া জেলা থেকে। আসেন অনেক লোক জন নিয়ে, এদেশীয় যোগাড়ে মজুরও তারা নেন না। বংশ পরম্পরাগত ভাবেই তারা এই পেশাতে তাদের একচেটিয়া আধিপত্য ধরে রেখেছেন। সুন্দরবনের অর্থনীতি সামগ্রিকভাবে জলপথ নির্ভর, হাইস্কুল গুলিতে যদি ভোকেশনাল বিভাগে অন্তত নৌকা বানাবার বিজ্ঞানটুকু পড়ান যায়, তার ব্যবস্থা করা দরকার। সামান্য ঝড়ে নৌকা ভেঙে কত জেলে, মাঝি ও মউলির হাহাকার শুনেছি তার ইয়ত্তা নেই।
    পানীয় জলঃ
    যারা সুন্দরবন বেড়াতে যান, তারা মূলত দক্ষিণ ২৪ পরগণার নদী ঘাট থেকে নৌকায় উঠে যান, আবার বন ঘুরে ফিরে আসেন। তাদের সাথে সাধারণ মানুষের দেখা সাক্ষাৎ কমই হয়।
    যারা একটু অন্যভাবে ঘুরতে চান তাদের বলব, একবার হিঙ্গলগজ্ঞের কালীতলা পঞ্চায়েত ঘুরে আসুন। সামসের নগর অঞ্চলে আমার প্রায় দুই বছর কাটানোর অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এ এক অন্য জগৎ। ঝিঙেখালি বিটের ঘন জঙ্গল এর পাশেই মানুষের জনপদ, মাঝে ব্যবধান শুধু ৫ ফুট চওড়া সরু খাল। এই বনে প্রায় ৫ টি বাঘ থাকে। তাদের ডাক সন্ধ্যার সময় শুনতে পাওয়া যায়। আয়লার পর, আরও বেশী সংখ্যায় গ্রামবাসী ঘর হারিয়ে অস্থায়ী ঘর বেঁধে ছিলেন এই খালের পাড়ে। তাদের শিশুসন্তানদের নিয়ে একটা সমীক্ষা করা জানা যায়, শিশুরা সন্ধ্যা থেকেই বাঘ এর আতঙ্কে ভীত থাকে। রাতে গ্রামবাসীরা বাইরে আসেনা, শৌচাগার না থাকায়, তারা ঘরের এক কোনেই তা করে থাকেন। এদের মূলত সমস্যা হল পানীয়জল ও দুবেলা খাবার যোগাড় । চিকিৎসা সংকট, জীবিকার অনিশ্চয়তা থেকে বিশ্ব-উষ্ণায়ন এদের স্পর্শ করে না। সামসের নগরের এই বনের পাশের জনপদে একটি মাত্র টিউবওয়েল। এর জলই সকলে পান করেন। তবে এই টিউবওয়েল এর জলে দেশালাই জ্বালিয়ে ছুঁড়ে দিলে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে। বিশুদ্ধ জলপান নিয়ে এদেরকে সচেতন করার কাজ করা খুবই দরকার।
    সাধারন মানুষ তাদের জীবনে পানীয়জলের গুরুত্ব বোঝেন। কিন্তু তারাও এন।জি।ও দের কাছ থেকে পাত্র পেয়েছেন, তাতে জল ধারণ করেন, কিন্তু সেই জলে ১৫ দিন পর থেকেই কালো কালো পোকা জন্মায় । এজন্য বৃষ্টিজল আর কেউই ধরতে চান না। এই নিয়ে যারা কাজ করতে চান, তাদের অনুরোধ করব একবার এই সব অঞ্চল ঘুরে আসতে।
    বন্য প্রাণীদের উপর আয়লার প্রভাবঃ
    আয়লার পর স্পীড বোটে চেপে সারা সুন্দরবন ঘুরেছি। অনেকাংশে অনুমতিপত্র ছাড়াই। তখন সবাই পালাচ্ছে আতঙ্কিত হয়ে। মনে হল আরে এত বড় বিপর্যয়ে প্রাণীকূল কি অবস্থায় আছে জানা দরকার। সারা বাদাবন চষে ফেলেও বাঘ দূরে থাক, কোন হরিণ বা বাঁদরের মৃতদেহ দেখিনি। আজও ভাবি কিভাবে এইসব প্রাণীরা হাজার হাজার বছরের অভিযোজনের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় আগাম অনুধাবন করতে সক্ষম হয়।
    বৃদ্ধ চাষি ও মাঝি দের অভিজ্ঞানঃ
    বেশ কয়েক মাস সুন্দরবনের বয়স্ক চাষি ও মাঝিদের সাথে সময় কাটিয়ে বুঝেছি। এরা কিছু বিষয় আগাম অনুধাবন করতে সক্ষমঃ
    আগামীকাল বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা,
    ঝড়ের আগাম পূরভাবাস,
    নদীর জোয়ারভাটার হিসাব,
    নোনা সহনশীল ধান ও সব্জীর প্রজাতি নির্বাচন করা,
    মাটিতে নুনের পরিমাপ অনুমান করা, মাটি অনুযায়ী ফসল নির্বাচন করা,
    নদীতে কোথায় জলের গভীরতা কেমন তা অনুধাবন করা, চড়া পড়েছে কিনা তা বোঝা।
    নদীতে মাছের সাম্ভাব্য অবস্থান অনুমান করা।
    জঙ্গলে মধু কোথায় পাওয়া যাবে তা অনুমান করা।
    ভাটিয়াল গান গাইতে পারেন তারা।
    যেগুলি এরা পারেন নাঃ
    বনবিবির কাছে কোন দাবী আদায় করা।
    দক্ষিণরায়কে সন্তুষ্ট করা।
    বনবন্ধ করা।
    সাপের বিষ নামান।
    স্ত্রীকে বশীকরণ, মারণ উচাটন, ঝাঁড় ফুঁক!
    কিন্তু নতুন প্রজন্ম আর জেলে, মাঝি বা চাষি হতে চায় না। এসব কাজে তাদের মন নেই। তারা সবাই চান অফিসের কাজ করতে। এদেরই পূর্বপুরুষ একদিন বনকেটে আবাদ করেছিল। নোনাঘাসের সাথে প্রচলিত ধানের মিলন করিয়ে, বানাল নানা প্রজাতির নোনা সহনশীল ধানের প্রজাতি। একই কাজ তারা করেছিল নানা সব্জীর প্রজাতির উদ্ভাবনে। সেই মানুষগুলির হয়ত প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা কিন্তু তারা যে কাজ করেছেন সেই মানের গবেষণা আজও করে উঠতে পারেনি আন্তর্জাতিক রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশ্বখ্যাত গবেষকরা।
    স্কুলে গিয়ে আমরা বেশীরভাগই আমাদের জীবনে সবচেয়ে ভাল দিনগুলি অপচয় করি, স্কুলগুলি অন্তত সুন্দরবনের জন্য উপযুক্ত কিছু ভোকেশনাল বিষয় হিসাবে পড়ালে তা তাদের জীবনের পাথেয় হবে বলে মনে হয়।
    পবিত্র থানঃ
    জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করার লক্ষ্যেই গড়ে ওঠে পবিত্র থান ব্যবস্থা। এই সব অঞ্চলে নানা দৈব ভয় দেখিয়ে শিকার নিষিদ্ধ ছিল। প্রানীরাও আসত, তাদের শান্তিময় মিলন ও সন্তান উৎপাদন এর জন্য। তারপর তারা পরে বড় হলে চলে যেত গভীর বনে। অর্থাৎ থান ছিল বর্তমানকালের অভয়ারন্য, আর বাকী বন হল রিজার্ভ ফরেস্ট। কলিকাতার কালিঘাট, ঠনঠনে কালিবাড়ি, নিমতলা এসব কিন্তু আসলেই নানান পবিত্র থান! মজার ব্যপার এই সব যেকটি থান আজও বেঁচে আছে সেখানে না বিলুপ্ত প্রায় প্রানী বা উদ্ভিদ দেখা যায়। ইংরেজিতে বলে 'সেক্রেড গ্রেভ', এখনও অনেকে কেরল বা অরুণাচল এ গেলে অসংখ্য থান দেখতে পাবেন। (কলিকাতার পাশে দেগঙ্গার চাকলাতে অনেকে আসেন লোকনাথ মন্দিরে, এর পাশেই আছে পবিত্র থান, লোকে বলে পীরের দরগা। এখানে নাকি তারা দেখেছেন শিয়াল মুরগি খেলে বেড়াচ্ছে। আমি এই দরগাতে গেছি কয়েকবার, বুঝেছি ১০০ বছর আগে এই স্থান বাঘ, শঁজারু, হরিণে ভরা ছিল।এদের জন্যই নিরাপদ অভয়ারণ্য হিসাবে এই থান করা হয়েছিল।)
    কিছুদিন থেকেছি সুন্দরবনের খুলনা পঞ্চায়েত এলাকায়, এটি ধামাখালী ঘাট এর ঠিক অপর পাড়ে, রায়মঙ্গলের পাড়ে। এখানে খুলনা হাসপাতালের পাশেই আছে একটি থান। সেখানে অনেক হাঁড় গোড়, বিশেষ করে বুনো মহিষ ও গন্ডারের হাড় গোড় দেখতে পাওয়া যায়। আগে সুন্দরবনে কিন্তু এদের দেখা পাওয়া যেত। কিন্তু নানা ভাবে অনেক বিশেষজ্ঞদের জানিয়েও তাদের রাজি করতে পারিনি এই সব থানগুলি নিয়ে অনুসন্ধান বা সমীক্ষার কাজ চালাতে।
    চলবে।।।।।।।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন