lcm | 99.0.80.158 | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৫৩
এই সেদিন পর্যন্ত ভেবেছি, সব ঠিক হয়ে যাবে।
কবে কখন কেমন করে, কি ভাবে ঠিক হবে,
এবং সত্যি সত্যি কি ঠিক হবে, এবং ঠিক না হলেই বা কি হবে,
সে বিষয়ে অবশ্য কোনো চিন্তা করিনি
কোনো ধারণাও ছিলো না।
শুধু কোথায় কেমন একটা আলগা বিশ্বাস ছিলো,
মনে মনে ধরে রেখেছিলাম,
একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমলকি গাছের ভেতর থেকে কোনো কোনো রাতে
যে রকম ঝিরিঝিরি বাতাস ও বাতাসের শব্দ আসে,
যেভাবে লেবুপাতা ছিঁড়ে হাতে ঘষলে
এক হারিয়ে যাওয়া অরণ্যের গন্ধ ভেসে আসে,
যেভাবে ঘুলঘুলির এলোমেলো বাসায়
ডিমের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে
চড়ুইয়ের ছানারা তাদের মাকে চিঁ-চিঁ করে ডাকে,
যেভাবে ভুল ঠিকানার চিঠিও একদিন
কোথাও না কোথাও, কারো না কারো কাছে পৌঁছে যায় যেভাবে
একটা ক্ষীণ ভরসা ছিলো এই সেদিন পর্যন্ত,
যেভাবে এইসব ঘটে, এই সব ঘটে যায়
সেইভাবে একদিন সব ঠিকঠাক হবে।
আমার কিছু করণীয় নেই, শুধু বসে থাকার অপেক্ষা।
(সব ঠিক হয়ে যাবে - তারাপদ রায়)
পুরোনো শহরতলিতে
তারাপদ রায়
আবার ফিরে এলাম,
আর একটু খোঁজ নিয়ে এলেই ভাল হত।
বাড়ির সামনের দিকে
একটা কয়লার দোকান ছিল
কাঠ, কয়লা, কেরোসিন – খুচরো কেনা বেচা,
কেউ চিনতে পারল না
দু’জন রাস্তার লোক বলল,
‘এদিকে কোনো কয়লার দোকান নেই
গলির এপারে রাধানাথ দত্তের গ্যাসের দোকান
সেখানে খোঁজখবর নিয়ে দেখুন।
‘মনে আছে কয়লার দোকানের পিছনে ছিল বড় উঠোন,
কয়েকটা আম কাঁঠাল গাছ, ভাঙা বারান্দা, ঘর দোর।
এখন তো কিছুই নেই,
শুধু একটা নেমপ্লেট, ‘নাগরিক’।
চারতলা বাড়ি, ষোলটা ফ্ল্যাট,
এরই মধ্যে কোনওটায় আমি ফিরে এসেছি।
কিন্তু কয়তলায়, কাদের ফ্ল্যাট?
স্বর্গীয় রূপকবাবুর পদবিটা যেন কী ছিল,
তাঁদের নতুন বাসাবাড়িতে এখন কে থাকে –
কোনও খোঁজখবর রাখি না,
শুধু মনে আছে তাঁর ভাইঝি টুলটুলি।
না। সেই বাড়িটা জগৎসংসারে আর নেই,
টুলটুলিকে কেউ চেনে না।
পুরনো শহরতলির নতুন পাড়ায় বোকার মতো ঘুরি।
ANTIDOTES TO FEAR OF DEATH
by Rebecca Elson( কবি ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী, মাত্র ৩৯ বছর বয়সে মারা যান )
Sometimes as an antidote
To fear of death,
I eat the stars.Those nights, lying on my back,
I suck them from the quenching dark
Til they are all, all inside me,
Pepper hot and sharp.Sometimes, instead, I stir myself
Into a universe still young,
Still warm as blood:No outer space, just space,
The light of all the not yet stars
Drifting like a bright mist,
And all of us, and everything
Already there
But unconstrained by form.And sometime it’s enough
To lie down here on earth
Beside our long ancestral bones:To walk across the cobble fields
Of our discarded skulls,
Each like a treasure, like a chrysalis,
Thinking: whatever left these husks
Flew off on bright wings.
পিতামহ, আমি এক নিষ্ঠুর নদীর ঠিক পাশে
দাঁড়িয়ে রয়েছি। পিতামহ,
দাঁড়িয়ে রয়েছি আর চেয়ে দেখছি রাত্রির আকাশে
ওঠেনি একটা তারাও আজ।
পিতামহ, আমি এক নিষ্ঠুর মৃত্যুর কাচাকাছি
নিয়েছি আশ্রয় । আমি ভিতরে বাহিরে
যেদিকে তাকাই , আমি স্বদেশে বিদেশে
যেখানে তাকাই------শুধু অন্ধকার, শুধু অন্ধকার
পিতামহ, আমি এক নিষ্ঠুর সময়ে বেঁচে আছি।
এই এক আশ্চর্য্য সময়।
যখন আশ্চর্য্য বলে কোনো কিছু নেই।
যখন নদীতে জল আছে কি না আছে
যখন পাহাড়ে মেঘ আছে কি না আছে
কেউ তা জানে না।
পিতামহ, আমি এক আশ্চর্য সময়ে বেঁচে আছি।
যখন আকাশে আলো নেই,
যখন মাটিতে আলো নেই
যখন সন্দেহ জাগে, পৃথিবীর যাবতীয় আলোকিত ইচ্ছার উপরে
রেখেছে নিষ্ঠুর হাত পৃথিবীর মৌলিক নিষাদ ---- এই ভয়।
পিতামহ, তোমার আকাশ
নীল ---- কতখানি নীল ছিল ?
আমার আকাশ নীল নয়।
পিতামহ, তোমার হৃদয়
নীল ---- কতখানি নীল ছিলো?
আমার হৃদয় নীল নয়।
আকাশের, হৃদয়ের যাবতীয় বিখ্যাত নীলিমা
আপাততঃ কোনো-এক স্থির অন্ধকারে শুয়ে আছে।
পিতামহ, আমি সেই ভয়ের দারুণ অন্ধকারে
দাঁড়িয়ে রয়েছি। পিতামহ
দাঁড়িয়ে রয়েছি আর চেয়ে দেখছি, রাত্রির আকাশে
ওঠেনি একটাও তারা আজ।
মনে হয়, আমি এক অমোঘ মৃত্যুর কাছাকাছি
নিয়েছি আশ্রয়। আমি ভিতরে বাহিরে
যেদিকে তাকাই, আমি স্বদেশে বিদেশে
যেখানে তাকাই ----শুধু অন্ধকার, শুধু অন্ধকার।
অন্ধকারে জেগে আছে মৌলিক নিষাদ , এই ভয়।
*******************************************************
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী / ৩রা ভাদ্র, ১৩৬৭