২ নম্বর প্রশ্নের "অহিংসা পরমো ধর্মঃ" নিয়ে আলাদা করে দুটো কথা বলব।
কারণ, একজনকে বড় করতে গেলে আরেকজনকে ছোট করতে হয় যে!
তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় সাভারকরকে উঁচু আসন দিতে গিয়ে ক্রমান্বয়ে গান্ধী ও নেহরুকে গাল পাড়া হচ্ছে। আর সাভারকরের "হিন্দুত্ব" বইয়ের থিসিস মেনে বলা হচ্ছে বৌদ্ধধর্ম নাকি আমাদের রাষ্ট্রকে দুর্বল এবং বীর্যহীন করে দিয়েছে।
অশোকের নীতির ফলে নাকি চন্দ্রগুপ্তের অনেক কষ্টে তৈরি বিশাল সাম্রাজ্য ভেঙে পড়েছিল!
সত্যিটা কী?
ইতিহাস এবং ম্যাপ দেখলেই বোঝা যাবে অশোকের সময় ভারতের কেন্দ্রীয় সাম্রাজ্য সবচেয়ে বড় আকার নিয়েছিল অনেকটাই মৈত্রী ও কূটনীতির ফল। এবং তাঁর ছেলের সময়েও সাম্রাজ্য ভেঙে পড়েনি। তাই বর্তমান সরকার নতুন সংসদ ভবনের অলিন্দে ভারতের যে ম্যাপটি অংকিত করেছেন--তা অশোক সাম্রাজ্যের।
দুই,
অহিংসা পরমো ধর্মঃ বলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা শ্লোকের প্রথম লাইন। গান্ধী খালি এটুকু বলে জনতাকে বিভ্রান্ত করেছেন।
তাহলে পুরো শ্লোকটা কী?
জনৈক স্বামী নিত্যানন্দ বলছেন " অহিংসা পরমোধর্মঃ, ধর্মহিংসা তথৈবচ"।
অর্থাৎ অহিংসা পরম ধর্ম বটে, কিন্তু ধর্মরক্ষার্থে হিংসার আশ্রয় নেয়া আরও বড় কর্তব্য। এটা নাকি গীতায়ও আছে।
শ্লোক সংখ্যা? প্রসংগ? দেয়া নেই।
কারণ, এটা ফ্রড। অমন কোন শ্লোক মহাভারত বা গীতাতে নেই। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যুদ্ধে প্রেরিত করছেন বটে, কিন্তু সমগ্র গীতায় তিনবার বলা হয়েছে--অহিংসা পরমোধর্মঃ। কোথাও বলা হয় নি "ধর্মহিংসা তথৈবচ"!
আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, গীতা বা মহাভারতে কোথাও "ধর্মহিংসা তথৈবচ" নেই। --এটা স্বামী নিত্যানন্দ বানিয়েছেন।
একে সন্ন্যাসী নাম, তায় সংস্কৃত শ্লোক! ব্যস, পাব্লিক কনভিন্সড। অনেকের বাড়িতেই গীতা আছে, রাজশেখর বসুর সারানুবাদ আছে। ধর্মব্যাধ প্রসঙ্গ এবং ভীষ্মের প্রসঙ্গ আছে। কেউ ক্রসচেক করেন না। নির্বিচারে মেনে নেন।
এইধরণের কাজ সাভারকরও তাঁর বিখ্যাত "হিন্দুত্ব" বইয়ে করেছেন।
যেমন, ভবিষ্যপুরাণে '' হিন্দু" শব্দ আছে বলে একটি কাল্পনিক শ্লোক তৈরি করে বিনা শ্লোক সংখ্যা জোর করে চালিয়ে দেয়া।