একাকী ভ্রমণে আমি কিছু পর্যটকবিরল জায়গা বাছি। ২০২৩শের জানুয়ারিতে গেছিলাম মধ্যপ্রদেশের তেমনই এক ছোট জনপদে। সেখানে থাকার কোনো হোটেল নেই। তবে ছিল এক প্রাচীন জৈন তীর্থ। তারই নবনির্মিত ঝকাস ধর্মশালায় আলাপী ম্যানেজার সাহেব দুটি রাত থাকতে দানের রসিদ কাটলেন মাত্র পাঁচশো টাকার - তাও আমায় জিজ্ঞাসা করে, অসুবিধা হবে না তো? M S Garments এর দেড়শো টাকার পাজামা আর কলপ না করা পাকা চুলের সৌজন্যে। ভাবি, আহা, কেন এই বসুন্ধরা হয়না এমন মানবিক ম্যানেজারে ভরা?
তিনি শুধিয়েছিলেন, ধার্মিক টান ছাড়া এখানে বেড়াতে বিশেষ কেউ আসে না, আপনি কোলকাতা থেকে এতোদূরে এখানে একা এলেন কেন? বলি, পৈতেহীন বামুন আমি, ধর্মের টানে অবশ্যই নয়, তবে প্রাচীন, ভগ্নপ্রায় হলেও কেল্লা আমায় টানে। এখানের কেল্লাটা গুগল ম্যাপে দেখে মনে হয়েছে বেশ বড় এবং অরণ্যময় - এসেছি ঐ কেল্লার টানে। তবে ম্যাপে এই প্রাচীন জৈনতীর্থটাও চোখে পড়েছে। আপনাদের তীর্থে ধর্মশালা তো থাকেই। তাই ভেবেছি, একটা রাত কোনোভাবে মাথা গোঁজার ঠাই পেয়ে যাবো। আসার পর আপনার উষ্ণ বদান্যতার কারণে দুটো রাত থেকে গেলাম। আমার অকপট সত্যভাষণে ম্যানেজার সাহেব দৃশ্যত খুশি হলেন।একটু লজ্জাও পেলেন। বললেন, আসবেন আবার।
বাকি কথা এখন থাক। হয়তো কখনো তা ছবিছবা সহ আসতেও পারে আমার “একা বেড়ানোর আনন্দে” সিরিজে। এতো জায়গায় গেছি, সব কি আর লেখা হবে? যেজন্য এখানে এটুকু লিখছি - তা হোলো - ঐ কেল্লার পূব কোনে ছিল (আছে) একটি পুঁচকে প্রাচীন হনুমান মন্দির। এমন বহু হনুমান মন্দির কয়েক হাজার রয়েছে দেশ জুড়ে। কিন্তু ঐ মন্দিরটির কী মান্যতা জানা নেই, তবে ঐ ছোট্ট প্রাচীন মন্দিরটিকে (ছবিতে সবুজ তীর) উপরে / চারপাশে কভার করে RCC Frame Structure করে তৈরি হচ্ছে নতুন ধাঁচা। দামি ৪x৪ Marbo-Granite Tiles এসেছে থাকে থাকে। তৈরী হচ্ছে নতুন যাত্রী নিবাস, যজ্ঞশালা, রান্নার জায়গা।
সেদিন ছিল মঙ্গলবার। হনুমানজীর দিন। তবু ভক্তসমাগম নেই। একে তো জায়গাটাই দুরে তায় মন্দিরটাও কেল্লার একান্তে, জনপদ থেকে অনেকটাই হেঁটে আসতে হবে। তাও এতো নির্মাণের আয়োজন! এতো বেশ খরচের ব্যাপার। চৌকিদারটি স্থানীয় নয়, এজেন্সির মারফত এসেছে। বিহারের লোক। জিজ্ঞাসা করি, এই নির্মাণের খরচ আসছে কোথা থেকে? এপাশ ওপাশ দেখে, সন্তর্পণে বলে, বুজুর্গ মানুষ আপনি, বুঝদার, বুঝতেই পারছেন কোথা থেকে আসছে। আমি কী বলবো?
হুমমম, কথায় বলে, সমঝদার কে লিয়ে ইশারা হি কাফি হ্যায়। আমি খুব বেশী সমঝদার নই তবে এই ইশারাটা বুঝলাম।
যাকগে, এসব চলবে। যা হওয়ার হবে। তবে সর্বক্ষণ এসব নিয়ে ভাবলে পাগল হয়ে যেতে হবে। তাই ভারী মনেও প্রায়শই হালকা চালে থাকার চেষ্টা করি। জায়গাটার নাম এখন বললাম না। পাখির চোখে কেল্লার টোপো ভিউটা রাখলাম। আপনারাই বলুন, ট্যূর প্ল্যানিংয়ের হোম ওয়ার্ককালে আচমকা এমন জায়গা দেখলে, যেতে ইচ্ছে করে কি না?
এখানে IT’র অনেক দক্ষ লোকজন আছেন। যদি কেউ এটা দেখে রিভার্স সার্চ বা অন্য কোনো কলকাঠি নেড়ে কেল্লার নাম বলে দিতে পারেন - সেই সাইবার শার্লককে স্যালুট করবো।
অরিজিনাল পুঁচকে মন্দির চলছে বিরাট নির্মাণ কর্মকাণ্ড সবুজ উপবৃত্তের মাঝে নদীর ধারে সেই কেল্লা - যা ম্যাপে দেখেই মন উচাটন হয়ে উঠেছিল এবং তথায় গিয়ে কেল্লা প্রাচীর ধরে পুরোটা চক্কর মেরে হয়েছি ফিদা, অতঃপর ক্লান্ত হয়ে গোলাপি তীর চিহ্নিত আর একটি মন্দিরের লনে নিয়েছি খানিক বিশ্রাম। গেরুয়া তীর চিহ্নিত অংশে হচ্ছে পুঁচকে হনুমান মন্দিরের বিরাট নবীকরণ।
জনহীন মন্দিরের লনে প্লাস্টিক বিছিয়ে নিয়েছি খানিক বিশ্রাম - আমার ফেভারিট পাস্টাইম। কেউ সাথে ছিল না বলে শায়িত অবস্থায় আমার ছবি আসেনি - আমিই চলে আসার আগে নিয়েছি - শূণ্য ভূমিশয্যার ছবি