এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  স্মৃতিচারণ   স্মৃতিকথা

  • এল ডোরাডো

    যোষিতা লেখকের গ্রাহক হোন
    স্মৃতিচারণ | স্মৃতিকথা | ৩০ নভেম্বর ২০২৩ | ১০০৬৪ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৬ জন)
  • এখানে লিখব সোনার দেশ সুইটজারল্যান্ডের নানান অভিজ্ঞতা ও মানুষের কথা।
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যোষিতা | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:০৮741704
  • বাসস্থানের প্রয়োজনে আমাকে একটা ফ্ল্যাট কিনতে হয়েছিল। কোলকাতা একজন মহিলাকে ঘর ভাড়া দেয় না। বলে লেডিজ হোস্টেলে গিয়ে থাকো। সেই ফ্ল্যাট কিনবার মতো যথেষ্ট টাকা আমার কাছে জমা ছিল না, দেড় লক্ষ টাকা কম পড়েছিল। সিটিব্যাংক থেকে মাইক্রোক্রেডিট নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। অত বড়ো কর্পোরেট হাউজ লোন দেয় নি। দেড় লাখ নিলে ফেরৎ দিতে হয় সব মিলিয়ে সাড়ে চার লাখ। জাস্ট তিনগুণ। সেই দেনা শোধের জন্য শুধু কলমি শাক ও ভাত খেয়ে থাকতাম আমরা মা মেয়ে। দেড় বছরেরো বেশি সময় পরে সেই ঋণ শোধ করবার পরে, আর কেনও পিছুটান ছিল না যা আমাকে আটকাতে পারে। তখনও আইএনেস কম্পিউটারাইজড হয় নি, খবর পাচ্ছিলাম যে চাকরিতে সিলেক্টেড হয়েছি। এইচওয়ান বি এর জন্য কোম্পানীরা আবেদন করেছে, একটু সময় লাগবে। মধ্যে ইয়োরোপে গোটা তিনেক অ্যাপ্লিকেশন করেছিলাম, দুটো জায়গা থেকে বাড়িতে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছিল যে ইয়োরোপিয় নাগরিক ছাড়া তাদের চাকরিতে নেবার উপায় নেই। তিন নম্বরটা ছিল এখানে। ওরা ইন্টারভিউ নিতে চাইল। টেলিফোনে নয়, গিয়ে দিতে হবে ইন্টারভিউ। আমি আমার অফিসের এক কোলিগ মহিলাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সুইটজারল্যান্ডের এয়ারপোর্ট কোনটা? সে বলেছিল জেনিভা।
    আমি তখন নতুন কোন্পানিকে লিখছি, কোলকাতা থেকে জেনিভা যাবার টিকিটের ভাড়া অনেক, তোমরা কি আমাকে এই টাকা পাঠাতে পারবে?
    তারা উত্তর দিচ্ছে, জেনিভা নয়, আমরা জুরিখে। তোমাকে টাকা পাঠাতে পারছি না, কিন্তু টিকিট কিনে দিতে পারি। 
    আমি ট্র্যাভেল এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। যেদিন ইন্টারভিউ, তার আগের দিন পৌঁছনোর জন্য একটাও টিকিট নেই কোলকাতা থেকে ইকোনমি ক্লাসে। শেষে থাই এয়ারওয়েজের বিজনেস ক্লাসে রফা হলো। দিল্লিতে গিয়ে ভিসা নিয়ে এলাম। ট্রেনে গেছলাম, ট্রেনে ফিরেছিসাম ভিসা নিয়ে। ২০০১ সালের মার্চ মাসে, দোলের পরদিন আমি শাড়ি পরে জুরিখ গিয়েছিলাম বিজনেস ক্লাসে চড়ে। 
    দুটো রাত পাঁচতারা হোটেলের ব্যবস্থা করেছিল তারা আমার জন্য। পৌঁছনোর পরের দিন সারাটা দিন ধরে তিনটে ইন্টারভিউ হয়েছিল আমার। ওরা হ্যাঁ, না কিচ্ছু বলে নি। বলেছিল পরে জানাবে।
    কোলকাতায় ফেরার পরে আমার মেয়ের পাসপোর্ট বানানো নিয়ে চরম নাটক হলো।
    তার সাতদিন পরে ফেডেক্স নিয়ে এলো মোটা প্যাকেট, জুরিখের চাকরি হয়ে গেছে, তবে আনলিমিটেড ওয়ার্ক পারমমিটের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সেটা হতে কত সময় লাগবে কেউ জানে না। আমি অপেক্ষা করতেই লাগলাম, করতেই লাগলাম। কোনও চিঠি এলো না। এদিকে আমেরিকায় তিনটে জায়গা থেকে এইচওয়ান বি হয়ে গেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার একটা কোম্পানী, মূলতঃ দালাল, আরেকটা পেনসিলভানিয়া, এও দালাল। তিননম্বর ইলিনয়। দালাল কিনা বোঝা গেল না। শিকাগোর এম্পলয়ার তখুনি যাবার জন্য চাপ দিচ্ছে। একপিঠের টিকিট কাটার মত টাকা তখন রয়েছে কুড়িয়ে বাড়িয়ে। আমি ভিসা নিয়ে শুটকেস গুছিয়ে শিকাগো চলে গেছলাম। সে বলেছিল যে ওখানে গেলে ভাড়ার টাকাটা দিয়ে দেবে। দেয় নি। আমি যতক্ষণে বুঝেছিলাম যে ট্র্যাফিকড হয়ে গেছি, ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে।
  • যোষিতা | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:২৬741705
  • পাচার জিনিসটা নিয়ে সিএনএন কি আলজাজিরা বা আরও নানান সংবাদমাধ্যম যেগুলো দেখায় বা লিখে থাকে, সেটা ক্ষুদ্র এবং আংশিক ছবি। টিআরপি বাড়ানোর জন্য, বিক্রি এবং বিজ্ঞাপনের রেভিনিউ বাড়ানোর একটা উপায় স্বরূপ। আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় যেটুকু জানি, ফোর্সড লেবার এমন অনেকেই আছে, যারা বের হবার উপায় খোঁজার চেষ্টাটুকুও করে না নানান সমস্যা এড়াতে।
    তবে আমার ক্ষেত্রে তা হয় নি। ভয়ডর কম থাকার কারণে আমি চেষ্টা করি মুক্ত হবার। কিছু যোগাযোগ কাজে লাগাই, সাহায্য পেয়েও যাই, বলাই বাহুল্য পুলিশের সাহায্য নয়।
    মুক্ত হবার ঘটনায় রোমাঞ্চ ও অ্যাড্রিনালিনের প্রাবল্য প্রচুর। সে নিয়ে লিখতে গেলে বিশাল করে লিখতে হবে। তবে মুক্তির পরে যেটা হয়েছিল তা আমার জীবনে পুরষ্কারের মত। প্রায় আরও দুমাস ছিলাম আমেরিকায়। টেক্সাস থেকে শুরু করে অ্যারিজোনা ক্যালিফোর্নিয়া শুধু বেড়িয়েছি। অসংখ্য সুন্দর সুন্দর জায়গায় ঘুরেছি যেগুলো নিজের ক্ষমতায় সম্ভব হতো না কখনই। কয়েকটা চাকরিও পেয়ে গেলাম। জয়েন করবার সময় এগিয়ে আসছে, এমন সময় ইমেইল এলো জুরিখ থেকে, তোমার ওয়ার্ক পারমিট হয়ে গেছে, চলে এসো। পয়লা জুলাই জয়েন করতে হবে। 
    ——কিন্তু আমি তো এখন আমেরিকায়। এখান থেকে কেমন করে ভিসা নেব?
    একটু পরে আবার ইমেই আসে, তোমার মাইনে বাড়িয়ে দিচ্ছি এবং তুমি পয়লা আগস্ট থেকে আমাদের কর্মচারী। রাজি?
    আর রাজি না হয়ে উপায়?
    আমি জুলাইয়ের ন তারিখ অবধি ওদেশে ছিলাম। দশই জুলাই ২০০১ আমার জীবনে আসে নি। ইন্টারন্যাশানাল ডেট লাইনে  ঐ দিনটা হারিয়েছি।
    কোলকাতায় ফেরার পরে জীবনে আরও আরও চমক। ঘুঁটেকুড়ুনি দাসীর রাজরাণীতে উত্তরণ।
    আগে ছিলাম রাস্তার খানকির তুল্য, এখন আমাকে বিয়ে করার জন্য মানুষ পাগল।
    এমন গুণ সুইটজারল্যান্ডের। সাধে বলি এল ডোরাডো?
    আটেরোই জুলাইয়ের ব্যাক ডেট বসিয়ে বিয়ে হলো একুশ তারিখ। বিয়ে না করে আমার আর কোনও উপায় ছিল না। বিয়ের গল্পও হেবি মজার এবং রোমাঞ্চকর। কিন্তু এখানে সেসব গল্প অপ্রাসঙ্গিক। 
    ফের রাজধানী এক্সপ্রেসে চড়ে আমি দিল্লি চললাম। এবার দিল্লি থেকে মস্কো হয়ে সস্তার টিকিটে জুরিখ। পৌঁছলাম তিরিশে জুলাই। পয়লা আগস্ট এদেশে ছুটি। দোসরা থেকে আমি চাকরিতে জয়েন করলাম।
    আমাকে এরা একমাসের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট দিয়েছে। তারপরে খুঁজে নিতে হবে নিজের ঘর। আমার হাতে রয়েছে দেশ থেকে  আনা একশো ডলার। সেই দিয়ে আমার খাবার খরচ, রাহা খরচ সব চালাতে হবে মাইনে পাওয়া পর্যন্ত। ডলারটা এয়ারপোর্টে ভাঙিয়ে সুইস ফ্রাংক করলাম, কীসব চার্জ কেটে নিল॥ তারপরে ট্রেন ভাড়া দিলাম প্রায় দশ ফ্রাংক। হাতে রয়েছে একশোরও কম। 
    অঙ্কটা সহজ নয় জানি। তবে পারব না বলে কোনও কাজ আছে নাকি?
    এই কি প্রথম? এর আগে সাতশো টাকারও কমে মাস চালিয়েছি। আমি পারব। আমার মন বলছে এটাই আমার ফাইনাল ঠিকানা।
     
     
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:545a:2d45:902a:***:*** | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:১৭741706
  • গোল্ডিজির লাইফ স্টোরি খুব ভালো লাগলো। গোল্ডিজির স্ত্রী আর পুত্রের কথাও ভালো লাগলো পড়তে। 
  • দীমু | 223.19.***.*** | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৩০741707
  • টানটান
  • বকলম -এ অরিত্র | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৪৩741708
  • ওঃ দারুণ লেখা! 
     
    "আমি ভিসা নিয়ে শুটকেস গুছিয়ে শিকাগো চলে গেছলাম। সে বলেছিল যে ওখানে গেলে ভাড়ার টাকাটা দিয়ে দেবে। দেয় নি। আমি যতক্ষণে বুঝেছিলাম যে ট্র্যাফিকড হয়ে গেছি, ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে।
    ... আমি চেষ্টা করি মুক্ত হবার। কিছু যোগাযোগ কাজে লাগাই, সাহায্য পেয়েও যাই, বলাই বাহুল্য পুলিশের সাহায্য নয়।"
     
    ভিসা সমেত গিয়ে পরাধীন হলেন কি করে, ট্রাফিকড বলছেন কেন? কাজ ছিল না গিয়ে খোঁজার কথা ভেবেছিলেন এরকম কিছু? কিভাবে মুক্ত হলেন, বলা গেলে একটু খুলে বলবেন শেষ করে নিয়ে। জাস্ট জানতে আগ্রহ হল। অভিজ্ঞতাগুলো অসাধারণ, অনেক জানলো এই কুঁয়োর ব্যাঙ।
  • যোষিতা | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০২:২৫741709
  • এইবারের বার বিদেশে থাকতে পারার জন্য, ভারত নামক দেশটা থেকে বেরতে পাবার জন্য, মুক্তির ছাড়পত্রের জন্য যে ছোট্ট পুস্তিকাটির দরকার হয় সেটির নাম পাসপোর্ট। পাসপোর্টের কিছু গল্প হয়ত আগে অন্যত্র লিখেছি, তবু আর এক বার এখানে লেখা প্রাসঙ্গিক। আরও প্রাসঙ্গিক নামোল্লেখ না করেও সেই মানুষটিকে ধন্যবাদ দেওয়া, যিনি লবিবাজির সাহায্য না করলে হয়ত আমি পরবর্তীতে আমার কন্যাকে এদেশে নিয়ে আসতে পারতাম না। অর্থাৎ এদেশে বেশিদিন বা চিরটাকাল থেকে যাবার চিন্তাটা মাথা থেকে বের করে দিতে হত। শুধু এই দেশই নয়, আমি চিরটাকালের জন্য আমার মেয়েকে আঁকড়ে পড়ে থাকতাম ঐ যন্ত্রণাদায়ক পরিবেশে, ঐ সমাজে।
    সে ব্যাপারে একটু পরে লিখছি।
  • যোষিতা | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৪৫741710
  • সে এক যুগসন্ধিক্ষণ। তখন সেই নামকরা কোম্পানীতে কাজ করি কোলকাতায়। অফিস সেক্টর ফাইভে হলেও, প্রজেক্টের কাজে কখনও দিল্লি, কখনও রাজস্থান, কখনও হলদিয়া, কখনও কোলকাতার মধ্যেই নানান মেগা মেগা কোম্পানীতে গিয়ে কাজ করতে হতো। বিশাল দলবল নিয়ে প্রজেক্টের কাজ হতো। কাজ, হাসি, পরচর্চা, টিটকিরি, এসবের বাইরেও নিত্যপ্রথা মেনে নিয়মিত ইন্টারনেটে চ্যাটে ব্যস্ত থাকতাম সকলে। কেউ কম, কেউ বেশি। গত শতকের শেষ থেকেই উদ্দাম চ্যাটের জন্য বিখ্যাত ছিল ইয়াহু এবং আইসিকিউ। এসবে সকলেরই নিক নেম ছিল।আমি গোটা দুতিনজন অচেনা মানুষের সঙ্গে চ্যাট করেছি। তাদের কেও দেশি কেউ বিদেশি। 
    অদ্ভূত এক নিকনেমের এক চ্যাট বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা হতো। ক্রমে যা হয়, নিজেদের নাম পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়ে। ভদ্রলোক তখন সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমদিকের কোনও একটি জেলার জেলাশাসক। বয়সেও আমরা সমবয়সী। তো দীর্ঘ বহুমাস আমরা আড্ডা দিয়েছি, নানান বিষয়ে।
    জুরিখে চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে ফেরার পরে দুটো ব্যাপার হয়েছিল। মোটে তিন দিন বাড়ি ছিলাম না। একটা চিঠি এসেছে পাসপোর্ট অফিস থেকে। ঐ ভদ্রলোক আমায় চ্যাটে খুঁজে গেছেন। তো আমি সিখলাম যে তিনদিন ছিলাম না, সুইটজারল্যান্ড গেছলাম॥ এই খবর পড়ে ওঁর তো চক্ষু চড়ক গাছ। তিনদিনের জন্য সুইটজারল্যান্ড?! ইউ মাস্ট বি স্টিংকিং রিচ!
    ঘটনাটা বিশদে বললাম। জাস্ট চাকরির ইন্টারভিউ আর কিছুই না। টেলিফোন নম্বর বিনিময় হলো। ভদ্রলোক আর জেলাশাসক পদে নেই। কোলকাতার ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রীটে এক সরকারি দফতরের প্রধান পদে বহাল হয়েছেন। এই দফতরটির উল্লেখ অনেক পরে নবারুণের কাঙাল মালসাট উপন্যাসে পেয়েছি।
    পাসপোর্ট অফিসের চিঠিতে দেখলাম মেয়ের জন্য যে আলাদা পাসপোর্টের দরখাস্ত করেছিলাম, সেই সংক্রান্ত ব্যাপারে আরও অনুসন্ধানের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে পরের দিনই সকালে ব্রেবোর্ণ রোডের অফিসে।
    মেয়েকে নিয়ে যথাসময়ের আগেই পৌঁছেছি। একটা ছোট্ট মত ঘরে জনা বিশেক লোকের লাইন। সে ঘরে কেনও জানলা নেই, একটাই দরজা, যেটা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ভেতরে একটা খুপরি মতো কাউন্টার, যেটার ওপারে অন্য ঘর আছে। সেই খুপরিটা মাঝে মাঝে খুলে নাম ধরে ডাকছে, যার নাম ডাকছে, সে নথি নিয়ে ঐ খুপরির ওপারে কাগজপত্র ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
    মার্চের মাঝামাঝি। ওপরে একটা সিলিং ফ্যান। সকলেই ঘামছে এবং শ্বাসকষ্টও হচ্ছে। আমার বাচ্চা মেয়ে শ্বাসকষ্ট সামলাতে না পেরে মাথা ঘুরে বসে পড়ল মেঝেয়। তাতে অবশ্য কারো ভ্রূক্ষেপ নেই। দমবন্ধ হয়ে অজ্ঞান না হয়ে যায়, এই ভয়ে আমি দরজাটা খুলে দিতে কয়েকজনের টনক নড়ল। খুপরির ঢাকনাটা তখন খোলা হয়েছিল, হৈ হৈ শুনে খুপরির ওপারের ভদ্রলোকটি শুধোলেন আমাকে, দেখি আপনার কী আছে?
    আমি সেই চিঠিটা বাড়িয়ে দিলাম।
    বিষয়বস্তুঃ- মাদার্স নেম।
    উনি সেটা দেখে আমাকে বললেন অফিসের ভেতরে গিয়ে একজন অফিসারের সঙ্গে দেখা করতে। সেটা চিঠির ওপর লিখেও দিলেন। নইলে গিঁটে গিঁটে দারেয়ান বা পিওন, তারা আমাদের ঐদিকটায় যেতে দেবে না। 
    সেই কাগজ নিয়ে ভেতরে উদ্দিষ্ট ঘরে সেই অফিসার লেকটির সামনে মা ও মেয়ে হাতজোড় করে দাঁড়ালাম।
    ঘরে আরও জনা তিনচারজন লোক রয়েছে।
    এখন শুরু হলো আমাদের জিজ্ঞাসাবাদের নাটক।
  • যোষিতা | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:১২741711
  • চিঠির মধ্যে নম্বর দেখে ফাইল আনা হলো। টেবিলের ওপারে যিনি, তিনি পর্যায় ক্রমে আমাদের দুজনকে আপাদমস্তক বিরক্ত চোখে দেখে বললেন — পাসপোর্ট তো হবে না বাচ্চাটার।
    — কেন?
    — বাবার পাসপোর্ট কেথায়?
    — নেই।
    — কেন নেই? 
    — মানে বাবার সঙ্গে বিয়ে হয় নি।
    এটা শুনে ঘরে যত লোক, সব হাঁ করে আমাদের দিকে চেয়ে রইল।
     
    — তাহলে আপনার বাচ্চাটা কীভাবে জন্মাল?
    এবার সবাই সাগ্রহে আমার মুখের দিকে সকৌতুকে তাকিয়ে উত্তরের অপেক্ষায়। যাকে বলে নাটকের ক্লাইম্যাক্স চলছে।
    আমি দৃঢভাবে বললাম — নরম্যাল ডেলিভারি। সেজারিয়ান সেকশন করতে হয় নি।
    সবাই একটু অসন্তুষ্ট এই উত্তরে।
    টেবিলের ওপারের লোকটি বেশ রেগে গিয়ে কাগজটা আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন — না। এভাবে পাসপোর্ট দেওয়া সম্ভব নয়। যে বাচ্চার বাবার নাম পরিচয় নেই সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট ইশু করা যায় না।
    — তাহলে ওকে বিদেশে আর নিয়েই যেতে পারব না?
    উনি কোনও উত্তর দেন নি। অন্য কাজে মন দিলেন। ঘরের লোকগুলো ফিসফিসিয়ে হাসছিল। ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল আমার আর আমার মেয়ের দিকে।
    ওখান থেকে বের হবার পর আমার দেশ ছাড়ার সংকল্প আরও দৃঢ় হলো।
    মেয়ে বলল — মা তুমি চিন্তা কোরো না। তুমি চলে যাও অন্য দেশে। আমি বড়ো হয়ে দেখব পাসপোর্ট দেয় কি না।
     
    মেয়ে এমন কথা আগে আরও অনেকবার বলেছে। একটা নদশ বছরের শিশু যখন এমন কথা বলে, তখন বুঝতে হয় দেশটার মধ্যে ব্যাপক সমস্যা আছে।
    আমি দমি নি। সেদিনই বাড়ি ফিরে সেই চ্যাটের বন্ধুকে ফোন করে বললাম এই সমস্যার কথা।
    উনি সব শুনে বললেন — এরকম করে অপমান করেছে?
    — আইনে সম্ভবত এরকম শিশুদের পাসপোর্ট দেবার অপশন নেই।
    তিনি একটু ভেবে বললেন , হোয়াট ননসেন্স!  এক কাজ করুন, কাল সকাল দশটায় আপনি আমার অফিসে আসুন। ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রীট চেনেন?
    — চিনি। আমি পৌঁছে যাব।
     
  • যোষিতা | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৩৪741712
  • যথাসময়ে পরদিন সকালে পৌঁছে গেছি সেই অফিসে। ভদ্রলোক নেই। অপেক্ষা করলাম। ঘন্টাখানেক পরে এলেন। ইডেনে ক্রিকেট দেখতে গেছলেন, খেলা বড়ই স্লো চলছে তাই অফিসে ফিরে এলেন। এই প্রথম আমাদের সাক্ষাৎ হলো।
    আইএএস অফিসারদের নিজস্ব কিছু বৃত্ত থাকে। ক্ষমতার বৃত্ত। একেই সম্ভবত লবি বলে। গতকাল সন্ধেয় এমনই এক লবির কোনও পার্টি বা গেটটুগেদার বা কিছু একটা হয়ত ছিল, কিংবা ক্লাবে দেখা হয়েছে রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসারের সঙ্গে। তিনি কার্ড দিয়েছেন, সঙ্গে আশ্বাস। 
    সেই কার্ড আমার হাতে দিয়ে বললেন, যান এঁর সঙ্গে দেখা করুন।
    ধন্যবাদ দেবার ভাষা ছিল না।
    আমি দৌড় দিলাম ব্রেবোর্ণ রোডের দিকে।
    উহ সেই ভিজিটিং কার্ডের কী মহিমা ! যাকেই দেখাই দরজা খুলে দেয়। খাতির করে আরপিওর ঘরে ঢুকিয়ে দিল পিওন।
    আরপিও ভদ্রলোকটিকে আমার চ্যাটবন্ধু আগেই মোটামুটি বিশদে সব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সেটা বোঝা গেল। বসলাম। চা কফি অফার করা হলো আমাকে। গতকালের সেই অফিসারটিকে ডাকা হলো। তিনি সেখানে এসে আমাকে দেখে একটু ভয় পেয়েছেন বোঝা যাচ্ছিল।
    তিনি ফাইল নিয়ে এলেন। একপ্রস্থ ধনক খেলেন আরপিওর কাছে। মিনমিন করতে লাগলেন — আহা আমি তো বলেছি যে হয়ে যাবে, কী ম্যাডাম, বলিনি কালকে?
     
    কিন্তু আইন অত সহজ নয়। আইনের কাগজপত্র খুঁজে বের হলো যে বেশ্যাসন্তান বা ধর্ষণের ফলে জাত সন্তানদের জন্য একটা ডিক্লারেশন করা যেতে পারে। সেসব সন্তানদের তো পিতৃপরিচয় থাকে না। তাই তাদের জন্য এই ব্যবস্থা। কিন্তু আমার প্রোফেশন অন্য, সেক্স ওয়ার্কার নই। ধর্ষণও হয় নি। এ তো মহা বিপদ। স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে ভারতীয় মেয়ে বিয়ে না করে বাচ্চা জন্মাবে কেন? তার কি সমাজের ভয়ডর নেই? এই জন্মের পেছনে কোনও বঞ্চনার স্টোরিও পাওয়া যাচ্ছে না।
    ফলতঃ এক পাতা নতুন টেক্সট ডিকটেট করে দিলেন ভদ্রলোক। সেইটে দশ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে টাইপ করে, ফার্স্ট ক্লাস মেট্রোপোলিটান ম্যাজিসট্রেটকে দিয়ে এফিডেভিট করিয়ে আনতে পারলেই পাসপোর্ট ইশু করায় আর কোনও অন্তরায় রইবে না।
    দৌড় দিলাম ব্যাংকশাল কোর্টের দিকে।
  • যোষিতা | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:০৭741713
  • ব্যাংকশাল কোর্টের টাইপিস্ট এক দিদিকে দিয়ে দশ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে জিনিসটা টাইপ করা হলো। সাধারণত একটা এফডেফিটের জন্য হিয়ারিং এর দরকার হয় না। ফ্যাকাশে কালো কোট পরা কিছু উকিল সর্বক্ষণ ঘুরঘুর করে কোর্ট চত্বরে এফডেভিট করিয়ে আনার জন্য। কিন্তু টাইপিস্ট দিদির অনেক বছরের অভিজ্ঞতা। এ কাগজ ম্যাজিস্ট্রেট সই করতে রাজি হবেন কি না সে গ্যারান্টি নেই। রাগের মাথায় কাগজ ছিঁড়ে ফেলেও দিতে পারেন। ম্যাজিস্ট্রেট বলে কি মানুষ নন? রাগ ঘৃণা কি সবসময়ে কন্ট্রোলে রাখা যায়? বিশেষ করে একজন স্বেচ্ছায় অবিবাহিতা মা কে দেখলে রাগ হবারই কথা। কোনও স্যাড স্টোরি থাকলে অনুকম্পা কাজ করত। দুঃসাহসের একশেষ!  উঁহু, নিজে অ্যাপিয়ার হতে হবে। যান, ঐ সাইড দিয়ে চলে যান কোর্ট রুমে।
    গেলাম। কাগজ আগেই জমা দেওয়া হলো। একজন পেশকার  টাইপের গুন্ডামার্কা লোক ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে একটা একটা করে কাগজ দিচ্ছে। একতাড়া এফিডেভিট।
    দিদির আশঙ্কাই ঠিক। আমার কাগজ আসতেই ম্যাজিসট্রেট ভুরু কুঁচকিয়ে তাকালেন। আমার নাম ধরে ডাকা হলো। ফার্স্ট বেঞ্চেই বসে ছিলাম। এগিয়ে গেলাম। তারপর সেখানেও একপ্রস্থ অপমান করার চেষ্টা। মনোভাব তো সকলেরই কম বেশি সমান। পুরোন পাসপোর্ট দেখান হলো। বিদেশে যদি ভারতীয় দুতাবাস পাসপোর্ট দিয়ে থাকতে পারে এই শিশুকে, মানে মায়ের পাসপোর্টে ইনক্লুড করতে পারে, তবে নতুন করে তো বিশেষ কোনও আনডিউ অ্যাডভান্টেজ নেওয়া হচ্ছে না। এটাই নরম করে বললাম। উনি আবার পাকানো করে দুতিনটে শব্দ যোগ করতে বললেন ঐ এফিডেভিটে। হাতে করেই লিখলাম। অদ্ভূত নোংরা ভাষা।  তারপরে সই হলো, সীল পড়ল অশোকস্তম্ভের।
    সেই কাগজ দৌড়ে গিয়ে পাসপোর্ট অফিসে জমা করে, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর মেয়ের পাসপোর্ট পেলাম। ফাদার্স নেমের জায়গাটা ব্ল্যাংক।
     
  • যোষিতা | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫১741724
  • জুরিখে আমি বসবাশ করতে যাচ্ছি। আমি যাচ্ছি একা। আমার নতুন বিয়ে করা স্বামী পই পই করে বলে দিয়েছেন যে গিয়েই যেন ওখানে ডিক্লেয়ার করে দিই যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে, এই নাও দ্যাখো আমার ম্যারেজ সার্টিফিকেট, আমার পদবী বদলে গেছে। আমার সঙ্গে একটিই লাগেজ, আট কিলো ওজন সেটির, দুসেট শার্ট প্যান্ট কিনবার মত টাকা আমার ছিল, তাইই কিনেছি। নিয়েছি একশো ডলার এবং যাবতীয় লেখাপড়ার শংসাপত্র। সুটকেসে আরও আছে টুকিটাকি পুরোনো জিনিস, অতি পুরাতন গরমের পোশাক সেই সোভিয়েত দেশে থাকতে যেগুলো ব্যবহার করেছিলাম। পায়ে মশমশ করছে কালো শু জুতো, খাদিম থেকে কেনা আড়াইশো টাকায়।
    তবে আমি খুশি। যাবার দিনে দুপুরেও আমার প্রচণ্ড জ্বর। স্বামী তাঁর নিজের অফিসে গেছেন। মেয়ে গেছে ইস্কুলে। পুরোন অফিসের পুরোন কোলিগের ফোন এলো। সঞ্জয়। কী খবর? কেমন আছো যোষিতা?
    — জ্বর হয়েছে।
    —  ওমা! সেকি? কীকরে?
    — আর বোলোনা, পরশু বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম, কাল থেকেই জ্বর।
    — ইশ্। বিশ্রাম নাও।
    — আচ্ছা। রাখছি...
    — দাঁড়াও দাঁড়াও....
    আমি দানি সঞ্জয় কেন ফোন করেছে, আমার জ্বর হয়েছে জেনে কেন ছদ্ম সহানুভূতি দেখাচ্ছে। আসলে ওর কৌতুহল অন্য, ও জানতে চাচ্ছে অন্য তথ্য। না, আমার বিদেশযাত্রার দিনক্ষণ নয়, ও জানতে চাচ্ছে আমার বিয়েটা হয় গেছে কি না।
    — হ্যাঁ বলো।
    — বলছি যে, তোমার বিয়ের সাক্ষী দিতে যেতে পারলাম না, এত কাজ এসে গেছল সেদিন।
    সঞ্জয় ভুলভাল বকছে আমি বুঝতে পারি। মিথ্যে বলতে গিয়ে গুছিয়ে ঠিকঠাক যুক্তি খাড়া করতে পারছে না।
    আমি বললাম, আরে না না, যাঃ, ওসব নিয়ে ভেবো না। আমি একটু ঘুমোই সঞ্জয়? মাথা সোদা রাখতে পারছি না। পরে কথা হবে। বাই।
    ফোন কেটে দেবার পর আমার মাথা সত্যিই সোজা রাখতে পারছিলাম না। তবে যে ইনফরমেশন সঞ্জয়ের দরকার ছিল, সেটা ওকে দিই নি আমি।
    গত আটেরো তারিখে আমার বিয়ের ডেট ফিক্সড ছিল। দুজন সাক্ষী লাগে। আমার স্বামী কারোকে জানাতে চান নি, নিজের বন্ধু বা পরিচিতদের। দুজন সাক্ষী আনার ভার পড়ল আমার ওপরে। সবে অ্যামেরিকা থেকে ফিরেছি, পুরোন অফিসের সঞ্জয়, যে আমার থেকে দু লেভেল ওপরে এবং অন্য ডিপার্টমেন্টে, যাকে অনেকের মধ্যে একটু ভাল বলে মনে হতো, তাকেই জানিয়েছিলাম ফিরে এসে। সঞ্জয়, আমি ফিরেছি। অ্যামেরিকা ভাল লাগল না জানো। জানো সঞ্জয় আটেরো তারিখ আমার বিয়ে। তুমি সাক্ষী হবে?
    ফোন পেয়ে সঞ্জয় চলে এসেছিল প্রিয়া সিনেমার কাছে, ওখালেই আমার হবু বরের সঙ্গে ওকে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলাম। আমরা কাছের একটি রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা দিয়েছিলাম। কখন আসতে হবে সই করতে, সমস্ত জানানো ছিল। সঞ্জয় বারংবার কনগ্র্যাচুলেট করেছিল আমাদের। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিল হবু স্বামীটির পানে। টেলিফোন নম্বর বিনিময় করেছিল ওরা।
    আমার দ্বিতীয় সাক্ষী প্রাণের বন্ধু নিভাশশী। সে তো আনন্দে ডগোমগো। অল্প দ্বিধা যদিও তার মনে।
    কিন্তু বিয়ের দিন আমার বর আর আসেই না অফিস থেকে। সই সাবুদ হবে কখন?
    সে এলো সন্ধে করে। তার মুখ গম্ভীর। কী ব্যাপার?
    সে অন্যরকম চোখে আমার সামনে এসে বসল। সেই দৃষ্টিতে অদ্ভূত অবিশ্বাস। 
    চা অথবা কফির কাপ নিয়ে আমরা মুখোমুখি।
    আজ তার সঙ্গে আমার বিয়ে হবার কথা। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করছে — সত্যি করে বলো তো, তেমার আগে কখনও বিয়ে হয় নি?
    কী উত্তর দেব এই প্রশ্নের আমি? আমার মাথা দপদপ করতে থাকে। হে ভগবান, এই দিনও দেখা বাকি ছিল?
    কেন এমন প্রশ্ন করছ তুমি? তুমি জানো না? তোমাকে তো সব বলেছি? এরকম অদ্ভূত প্রশ্নের মানে টা কী?
    শেষের দিকটায় আমার গলার স্বর চড়ে যায়, গলা কাঁপে, তবে চোখ শুকনো থেকে যায়।
    সে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে জানায়, সঞ্জয় তাকে আজ ফোন করে আমার পুরোন অফিসে মানে সল্টলেকের সেক্ট ফাইভে ডেকেছিল। বন্ধু হিসেবে কিছু পরামর্শ বুদ্ধি দিয়েছে। হয়ত এমন বুদ্ধি একজন পুরুষ আরেক পুরুষকে দেয়। সঞ্জয় তাকে বারণ করেছে আমায় বিয়ে করতে। বলেছে যে তার মনে দৃঢ় বিশ্বাস আমি বিবাহিত। ডিভোর্স হয় নি, তাই ডিভোর্সের  কাগজ দেখাতে পারি নি॥ চুপচাপ পালিয়ে বেড়াচ্ছি আমার স্বামীর কাছ থেকে। বলেছে যাচাই করে নিতে। শত হলেও একটা বাচ্চা আছে। হুট করে বলে দিল ও নিজেকে আনম্যারেড, আপনি মেনে নিলেন মুখের কথা? খতিয়ে দেখতে হবে না ব্যাপারটা? একজন অন্য পুরুষের বিবাহিতা স্ত্রীকে বিয়ে করা আইনত অপরাধ। ক্রিমিনাল অফেন্স। আপনার জেল হবে। ঐ মেয়ের যে বিয়ে হয় নি তার কোনও প্রুফ আছে? ফেঁসে যাবেন চিরতরে। বি কেয়ারফুল।
    আমি সব কথা শুনে বললাম। বেশ। তাহলে বিয়ে করার দরকার নেই। 
  • কৌতুহল | 2600:1002:b03c:c375:99df:a41c:fc36:***:*** | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:০৮741725
  •  আসল নাম দিচ্ছেন কি? জিজ্ঞেস করলাম কারন অফিসের দিল্লি কলকাতা হলদিয়া রাজস্থানের লোকজনকে তো অনেকেই চেনে! ইচ্ছে হলে খুঁজে দেখব,  তাই। 
  • যোষিতা | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৪১741726
  • আমি কথা বাড়াই নি। তুমি নিজেই বাঁটু গেড়ে প্রোপোজ করবে, নিজেই তারিখ ঠিক করবে, সাক্ষী খুঁজতে বের হবে আমি, তারপর আমার সাক্ষী তোমায় আমার নামে উল্টোপাল্টা বলবে, তোমার মাথায় বুদ্ধি জোগাবে, তুমি আমায় অবিশ্বাস করবে, এরকম করে বিয়ে হয় না।
    এর চেয়ে যেমন চলছে চলুক জীবন, বিয়ে আমি করতে চাই না।
    পরের দিন থেকে স্বাভাবিক চলছে জীবন। কিন্তু ঐ ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের অফিসে কাগজ তো তৈরি হয়ে রয়েছে। ওখানেরই দালাল গোছের ভদ্রলোক এসে উপস্থিত বাড়িতে। বিয়েটা হলে তার কিছু আমদানী হয়। বলল, কী ব্যাপার, আপনারা এলেন না কেন? বিয়ে ক্যানসেল্ড নাকি?
    আমার হবু বর বলছেন, না না ক্যানসেল্ড কেন হবে? একজন সাক্ষী আসতে পারে নি।
    দালাল মশাই ব্যাগ থেকে কাগজটা ব্র করে বললেন, তাহলে আর অফিসে যাবার দরকার নেই, ব্যাকডেটে এই খানে দুজন সাক্ষীর সই, নাম ঠিকানা লিখিয়ে নিয়ে আমার বাড়ি দিয়ে যাবেন, কেমন?
    বাহ! এভাবেও হয়?
    কেন হবে না? আপনারা তো আর নাবালক নন।
    তাও ঠিক।
    আরেকজন বন্ধু মিতা ছিল, ওকে দিয়ে একটা সই, নিভাশশী অন্যটা। সই হলো একুশ তারিখ, কিন্তু ব্যাকডেটে আটেরোর কাগজে।
    সঞ্জয় আজ আর কৌতুহল সামলাতে না পেরে লজ্জার মাথা খেয়ে ফোন করে বসেছে।
    দুটোর আগেই বের হতে হবে। বিকেলের রাজধানী এক্সপ্রেস হাওড়া থেকে। ঝমঝমে বৃষ্টি মাথায় করে আমি পেরিয়ে যাচ্ছি এই পাড়া। আজকের ট্রেন কাল পৌঁছবে দিল্লি। তারপরে ভিসা নেবো, টিকিট তো আছেই। 
    একটিবার ফ্লাইটে চড়ে বসতে পারলেই আমার সমস্ত জ্বর সমস্ত গ্লানি দূর হয়ে যাবে। 
    মেয়েটাকে রেখে এলাম। পরে পুরো সংসার আমি নিয়ে যাব। আমার মাথার ওপর অনেক দায়িত্ব। নতুন দেশটাকে চিনতে হবে, বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, তারপর নিয়ে আসব ওদের। এখন আমাকে অসুখ যেন কাবু করতে না পারে।
     
  • kk | 2607:fb90:ea91:cb70:8a96:31d1:4b20:***:*** | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৩০741727
  • এটা খুব নাড়া দেওয়া লেখা।
  • aranya | 2601:84:4600:5410:b065:ca6f:8199:***:*** | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:০৭741728
  • খুবই টাচিং। প্রতিকূল পরিস্থিতি, সমাজের  বিরুদ্ধে একা মানুষের লড়াই 
  • যোষিতা | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০১:০০741729
  • দিল্লিতে মার্কিন এমব্যাসীর বিপরীতে, স্লাইট কোণাকুনি সুইস এমব্যাসি। গেলবারেই চেনা হযে গেছে। রাস্তায় লোকে লোকারণ্য। কেউ ফুটপাথে বসে গুলতানি করছে দলবদ্ধভাবে, একদিকে লম্বা লাইন। সব চলেছে অ্যামেরিকা। অনেকেরই বিদ্ধস্থ চেহারা। শুনলাম রাত থেকেই লাইন পড়ে। 
    উল্টোদিকে ছোট্ট বাগানবাড়ি সুইস এমব্যাসির দরজায় কোনও ভিড় দূরে থাক কোনও লোক নেই। গেলবারেও এমন ছিল। টুক করে ঢুকে পড়লেই ছোট্ট ঘরে গোটা বারোজনের বসবার ব্যবস্থা, পাশে দুটো কাউন্টারের মতন। লোকজন কেউ নেই। ভিসার কাগজ জমা দিতেই একটা ফর্ম পেলাম, সেটা ফিলাপ করতেই জমা পড়ল। মিনিট দশেক পরে অন্য কাউন্টারে ডাক পড়ল, ইনি ভারতীয় মহিলা। আমাকে সরাসরি প্রশ্ন করলেন, এই ভিসা আপনি পেলেন কেমন করে?
    বললাম নতুন চাকরি পেয়েছি।
    উনি তবুও অবাক। ভেতরে গিয়ে কার সঙ্গে যেন কথা বললেন। একজন সুইস সাহেবকে নিয়ে বেরিয়ে এলেন। সাহেব কাছে এসে আমাকে ভালো করে দেখছে। কম্পিউটারেও কীসব দেখে নিল। মুখে কিছু বলল না। কাগজটা ঐ মহিলার হাতে দিয়ে চলে গেল। বডি ল্যাংগুয়েজ সম্মতিসূচক।
    মহিলাটি আমার কাছে এগারোশো টাকা চাইলেন। টাকা দেবার পরে, বললেন কাল সকালে পাসপোর্ট কালেক্ট করে নেবেন। রসিদ টসিদ কিচ্ছু পেলাম না।
    পরদিন ভোরে উপস্থিত হয়েছি এমব্যাসীর দরজার সামনে। পাশে বাগান থেকে মালি কাম দারোয়ান গেছের লোক আমায় হাতের ইশারায় ডাকল। এগিয়ে যেতেই সে আমার হাতে পাসপোর্ট টা দিয়ে দিল। পাসপোর্টটা আমার। ভেতরে আনলিমিটেড সুইস ভিসা। 
    আজ রাতে আমার ফ্লাইট। হোটেলে ফিরে বাকি সময়টুকু যেহোক করে কাটিয়ে দিতে হবে। কনট প্লেসে আমার হেটেল। সেই আশির দশক থেকে এই হেটেলে নিয়মিত থেকেছি। সকলকেই চিনি। দুপুরে স্পেশাল ছোলে বাটুরে ও মৌসান্বীর রস খেয়ে দিব্য কেটে যাবে। রাতের জন্য ট্যাক্সি এরাই ডেকে দেবে।
    হোটেলে একজন অদ্ভূত মেয়ে এসে রয়েছে। মাথায় ছিট আছে বলছে অনেকে। মেয়েটা মনে হয় সেক্স ওয়ার্কার। ওর কাছে চাকা নেই, তাই হোটেল থেকে ওকে বের হতে দিচ্ছে না। মেয়েটার সঙ্গে হোটেলের ছাদে বসে অনেক গল্প হলো সুখ দুঃখের। মেয়েটা ছিটিয়াল নয়। ওর পথ হারিয়ে গেছে। সমাজের নিষ্ঠুরতায়। তাই ও স্রোতে ভেসে চলেছে। দুশ্চিন্তা টুশ্চিন্তা ও করে না। কাল কী হবে তাই নিয়ে ভাবে না। হোটেলের ম্যানেজারকে অনুরোধ করে, মেয়েটিকে নিয়ে একটু বাইরে ঘুরে এলাম, প্লাজা সিনেমার সামনে পর্যন্ত। আবার ফিরে এলাম। মেয়েটা সবসময় হাসিখুশি।
  • যোষিতা | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৪:১৬741734
  • ফ্লাইট বেশ গভীর রাতে। রাতে হোটেল থেকে চেকাউট করার সময় মনে হলো মেয়েটিকে জানিয়ে যাই। বিদায় নিতে গিয়ে দেখি ওর ঘরের দরজার বাইরে তালা ঝুলছে। রিসেপশনের ডিউটিতে তখন এক যুবক। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ঐ মেয়েটির কথা, কোথায় গেল মেয়েটি?
    —কোন মেয়ে?
    —নাম মনে হয় সীমা, মনে করতে পারছি না।
    আমার সঙ্গে যখন ও কথা বলত, একেক সময় ওর একেকরকম নাম হয়ে যেত। সীমা নামটাও একবার নিজেকে দিয়েছিল ও। ওর আসল নকল কোনও নাম নিয়েই আমার আগ্রহ ছিল না। মজা ল্গেছিল যে, ও ক্ষণে নিজের নাম বদলে বদলে রাখে। যখন যেমন খুশি।
    রিসেপশনের ছেলেটি বুঝে ফেলেছে সীমা নামটা বলতেই। 
    জানালো কিুক্ষণ আগেই মেয়েটি চেকাউট করে চলে গেছে।
    আমি কৌতুহল সামলাতে না পেরে বললাম, কিন্তু ওর কাছে তো টাকা পয়সা কিছুই ছিল না, বিল চোকালো কেমন করে?
    জানা গেল, কয়েকজন লোক এসে ওর বিল চুকিয়ে দিয়ে, ওকে নিয়ে গেছে। ফোনের বিলও দিয়েছে তারাই। মেয়েটা হরদম নানান ক্লায়েন্টকে ফোন করত। তাদেরই কেউ হবে। রিসেপশনের ছেলেটিকে মালিক ও ম্যানেজার খুব করে বকে দিয়েছে, ওরকম মেয়েদের যেন আর এই হোটেলে রুম না দেওয়া হয়। লোকগুলো গাড়ি এনেছিল, মেয়েটির যদিও লাগেজ বলতে কিছু ছিল না।
    অজানার দিকে উড়তে উড়তে মেয়েটি কোথায় চলে গেল কে জানে।
    আমি ট্যাক্সি নিয়ে এয়ারপোর্টে চললাম।
     
    রাতের এয়ারপোর্ট গমগম করছে। আয়েরোফ্লোতের কাউন্টারে মস্ত লাইন। অল্প পরে আমার চেক ইন এর পালা। লাগেজ হাতে নিয়ে জমা দেব বলে নীচু হয়েছি, কাউন্টারের লোকটি বলল, ওয়  ওয়ে টিকিট, ওয়ান ওয়ে ভিসা আপনার, ইনকামট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স কই?
    — সেটা কী? 
    — ওয়ান ওয়ে টিকিটে ইনকাম ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স লাগবে।
    — সেটা কোথা থেকে আনব?
    এর উত্তর লোকটির জানা নেই। সে আমাকে সাইড করে দিয়ে অন্য প্যাসেঞ্জারদের ডাকতে লাগল।
    আমার তো মাথায় বাজ! এরকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি ছিলাম না। আমি আবার ঠেলেঠুলে কাউন্টারের লোকটিকে বললাম, তাহলে আমি এখন কী করব? আমি জুরিখ যাচ্ছি চাকরি নিয়ে, এরকম করলে আমি চাকরিতে জয়েন করব কী করে?
    লোকটি আমার প্রশ্নের উতিতর জানে না, বলল, আমার হাতে কিছু নেই, আমি গ্রাউন্ড ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলুন।
    — তিনি কোথায়?
    লোকটি দেখিয়ে দিল, একজন মোটাসোটা লোক ভেতরের দিকে হেঁটে চলে যাচ্ছে।
    এখান থেকে তাকে ডাকা অসম্ভব। কোনও পথও নেই ঐদিকে যাবার। একটাই ফাঁক, যেখান দিয়ে মাল তুলে তুলে ওজন করে করে সোজা কনভেয়ার বেল্টের ওপর পড়ছে। 
    আর দেরি করা যাবে না। আমি সোজা ঐ ফাঁক দিয়ে লাফিয়ে উঠে কনভেয়ার বেল্টের ওপর দিয়ে ব্যালেন্স করে দৌড়ে কিছুটা গিয়ে ভেতরে গিয়ে আবার লাফ নিয়ে ওপাশে নেমে পড়লাম। হালকা হৈহৈ  হলেও ব্যাপারটা কয়েক সেরেন্ডের মধ্যেই ঘটেছে। ম্যানেজারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। লোকটা রাশিয়ান! আমি আমার শেষ চেষ্টা করলাম। আর ইংরিজি নয়, সোজা রাশিয়ানে।
    — দেখুন না, আমাকে যেতে দিচ্ছে না, আমার টিকিট ভিসা সব আছে। কীসব ক্লিয়ারেন্স চাইছে।
    — অ্যাঁ?!
    — ইনকাম ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স চাচ্ছে।
    ম্যানেজার ধাতস্থ হতে একটু সময় নিলেন।
    — ওটা তো লাগবেই। ওটা না দিলে কেমন করে হবে?
    — এত রাতে আমি কোত্থেকে পাব বলুন তো?
    উনি চুপ করে গেলেন।
    — আপনার কি আমাকে দেখে মনে হয় আমি আয়কর ফাঁকি দিয়ে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছি?
    — নাহ। মনে হয় না। আসুন আমার সঙ্গে। টিকিট দেখি।
    টিকিট দেখালাম।
    — আপনি জুরিখ যাচ্ছেন? এত ভাল রাশিয়ান বলেন কেমন করে?
    আমি বিনয় দেখালাম। ঐ আর কি অল্পস্বল্প... ও কিছু নয়..
    ম্যানেজার কাউন্টারে দাঁড়িয়ে নিজে আমার চেক ইন করিয়ে দিলেন। সেই সঙ্গে একরাশ শুভেচ্ছা আমার নতুন চাকরির জন্যে।
    কালবিলম্ব না করে, চুড়ান্ত দ্রুততায় ইমিগ্রেশন শেষ করে, গেট নাম্বার তিনের ওয়েটিং লাউঞ্জে ঢুকে তবে শান্তি।
    এমনি সময় শুনি পাশ থেকে কে যেন বাংলায় বলছে, কী? এত ঝামেলা হচ্ছিল কেন? একসেস ব্যাগেজ নাকি?
    দেখি আমারই সমবয়সী এক সুটেড বুটেড বাঙালি লোক আমাকেই এই প্রশ্নগুলো করে মিটমিটয়ে হাসছে।
    এই লোককে আমি চিনি না, কস্মিনকালেও দেখেছি বলে মনে হয় না।
     
     
  • Gobu | 202.8.***.*** | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:১৭741735
  • Cliffhanger...
  • যোষিতা | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৩:৫৬741746
  • ইশ্! আমি যে ভুলেই গেছলাম যে ফ্লাইটটা আয়েরেফ্লোতের। এখানে সীট নম্বর যেমন নেই, তেমনি অনেক যাত্রীই গায়ে পড়ে আলাপ করে। দিল্লি থেকে সোজা মস্কো, অনেকঘন্টার টানা পথ। অচেনা মানুষের সঙ্গে অবলীলায় আলাপ জমাতে এই ফ্লাইটের মানুষজনদের জুড়ি মেলা ভার।
    লোকটি বা বলা ভাল ছেলেটির সঙ্গে চমৎকার আলাপ জমে গেল। আমার চেয়ে বছর তিনেকের সিনিয়র। গড়গড় করে নিজের কথা বলে গেল। স্ট্যান্ড করেছিল মাধ্যমিক পরীক্ষায়, মস্কো থেকে মেকানিকাল ইঞ্জিনীয়ারিং এ মাস্টার্স ডিগ্রী শেষ করেছে, তবে চাকরি করে না, ব্যবসা করে। থাকে কয়েকমাস করে মস্কোয় প্রতি বছর। ওর ছোট্ট ছেলে মস্কোয় থাকে মায়ের সঙ্গে। রুশ বৌয়ের সঙ্গে ডিভোর্সের পর ছেট্ট ছেলে মায়ের সঙ্গেই থাকে, তাই কাজের ছুতোয় ছেলেকে দেখতে বাবা এখন চলেছে মস্কোয়। তার মেজাজ ফুরফুর করছে আনন্দে। 
    গোটা বিমান যাত্রায় একফোঁটা ঘুমোই নি, আড্ডা দিতে দিতেই কেটে গেল।
    মস্কোয় নেমে আমি ছুটলাম ট্রান্সফারের পথে জুরিখের ফ্লাইট খুঁজতে। মাত্র কটা বছরে ভোল বদলে গেছে শেরেমিয়েতোভো বিমান বন্দরের। কত দোকান, কত অন্যরকম। সকালের আলোয় ঝকঝক করছে ওয়েটিং লাউঞ্জ। অপূর্ব সুন্দরী রাশিয়ান মেয়েরা অপেক্ষা করছে আমার আশে পাশে। তাদের পরণে দামীদামী পোশাক। মাথা থেকে পা পর্যন্ত ব্র্যান্ডেড জিনিসপত্রের বিজ্ঞাপন একেকজন সুন্দরী। 
    আমার তো হাঁ করে দেখার স্বভাব বরাবরের। আর কটা ঘন্টা পরে আমি জুরিখ পৌঁছব ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আজ তিরিশে জুলাই দুহাজার এক সাল। জীবনের সেকেন্ড হাফ শুরু হচ্ছে সিনেমায় ইন্টারভ্যালের পরে যেমন হয়। ফার্স্টহাফের সমস্ত ভুলত্রুটি সেকেন্ডহাফে শুধরে নেব, তবেই না সিনেমার হ্যাপি এন্ডিং হবে।
  • সমরেশ মুখার্জী | ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:১২741775
  • মাইনর চাইল্ডের পাসপোর্ট পাওয়ার এই নিয়ম তখন লাগু থাকলে আপনাকে অযথা, অবমাননাকর পরিস্থিতির মধ‍্যে দিয়ে যেতে হতো না। ঐ পর্বটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো। আপনার সৎসাহস‌কে কুর্নিশ। 
     
  • Bratin Das | ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪০741776
  • যোষিতা দি, তোমার এই লড়াই  কে কুর্ণিশ।  কোন শ্বাসরুদ্ধকর উপন্যাসের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।
  • যোষিতা | ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:০৩741777
  • এই নিয়মটাই সেদিন থেকে চালু হয়েছিল সমরেশবাবু। ভারতের সমস্ত পাসপোর্ট অফিসে ফ্যাক্স করা হয়েছিল এই নিয়ম।
  • সমরেশ মুখার্জী | ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:৪৩741778
  • এই নিয়ম কবে থেকে লাগু হয়েছে জানতাম না। আপনি বলছেন আপনাকে অপমান, হেনস্থা  (এফিডেভিট ইত‍্যকার ঝকমারি) স‌ইবার পর থেকে নিয়মের বদল হয়েছে। তাহলে পরবর্তী‌তে অবিবাহিত মায়েদের হয়রানি সহ‍্য করতে হয়নি। নিয়মে‌র এই পরিবর্তন আপনার ব‍্যক্তি‌গত লাঞ্ছনার সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে ভাবা যায়। তবে যে কারণে আপনাকে ঐ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে such mindset is highly demeaning to women. 

    পড়ছি আপনার জীবনকথা। অকপট ভঙ্গি‌র জন‍্য পুনরায় জানাই অভিবাদন।
  • যোষিতা | ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:২৯741784
  • এই নিয়ে তৃতীয়বার একই ঘটনা ঘটল এই জীবনে। লাগেজের জন্য অপেক্ষা করে করে কনভেয়ার বেল্ট থেমে গেল। লোকজন সব নিজ নিজ বাড়ির দিকে রওনা দিল, আমার সবেধন নীলমণি আটকেজির সুটকেস আসে নাই, আসে নাই। দুপুর এগারোটা বাজে। আমি কাঁদো কাঁদো মুখে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডে গিয়ে জানাচ্ছি এই ঘটনা। তারা সব লিখে টিখে নিয়ে বলল জানাবে।
    এই "জানাবে" শব্দটা একেক পরিবেশে একেকরকম। বলা যেতে পারে আপেক্ষিক।
    প্রথমবার হারিয়েছিল মস্কোয়, সম্ভবত ১৯৮৭র গ্রীষ্মে, সে লম্বা কাহিনি, সে লাগেজ আজও পাই নি, কিছু ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলাম মাত্র।
    সেকেন্ডবারের ঘটনা এই মাসেই, অ্যামেরিকা থেকে ফিরবার টাইমে। দিন চারেক পরে পেয়েছি যদিও। তাও অনেক রাঠখড় পুড়িয়ে।
  • যোষিতা | ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:২৯741785
  • কাঠখড়
  • যোষিতা | ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:৪৪741786
  • কিন্তু এবারে যে এটি না পেলে কেলো হয়ে যাবে। এক টুকরো অতিরিক্ত কাপড়জামা নেই আমার হাতব্যাগে। দোসরা অগস্ট থেকে অফিসে যাব কেমন করে?
    আমি ঐ লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড থেকে নড়তে চাচ্ছিলাম না।
    তারা অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমার বের করে দিল।
    এরপরে সুইসোতেলের অ্যাপার্টমেন্ট। সেখানে পৌঁছে দেখি এলাহি ব্যবস্থা। চমৎকার একটা অ্যাপার্টমেন্ট। মস্ত বেডরুমে বিশাল নরম বিছানা ওয়ার্ডরোব। এরটা লিভিংরুম সোফাটোফা সহ। ব্যালকনি, রান্নাঘর, চমৎকার বাথরুম।
    এক বোতল ছোট্ট ওয়াইন ছিল সঙ্গে, ফ্লাইটে নিয়েছিলাম খাওয়া হয় নি। ওই ওয়াইনটুকু খেয়ে, টানা ঘুম।
    টেলিফোনও দিয়েছে এরা। সেই নম্বর তো এয়ারপের্টে লিখে দিয়েছি। তবু ফোন আসে না।
    সন্ধের দিকে নীচে বেরিয়ে কাছের একটা দোকান থেকে কিছু খাবার কিনে আনলাম। বাইরে বের হতে পারছি না, যদি ফোন আসে তখন?
    পয়লা অগস্ট দুপুরে ফোন এলো। একজন গাড়ির ড্রাইভার খুঁজে পাচ্ছে না এই ঠিকানা। আমি রাস্তার নাম উচ্চারণ করছি ইংরিজি নিয়ম মত। বানান করে করে বলছি ইংরিজি অ্যালফাবেটের উচ্চারণমত। সে বুঝছে ভুল। য়দিও অবশেষে সে খুঁজে পেল। আমি দৌড়ে নীচে নেমে দেখলাম আমার আটকেজির ব্যাগটি অক্ষত।
    কাল আমার অফিসে প্রথম দিন। অফিস হাঁটা পথ এখান থেকে। তবে প্রথম দিন ডেকেছে মারিয়ট হোটেলের একটা মিটিং রুমে।
    সাহেবদের ব্যাপারস্যাপারই আলাদা।
  • যোষিতা | ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৪১741787
  • প্রথম মাসটা বড্ড ব্যস্ততায় কাটে।
    প্রথম দিনেই নতুন ল্যাপটপ (সেই প্রথম ল্যাপটপ আমার), নতুন কাজ , নতুন অফিস, নতুন দেশ পরিবেশ, ভাষা, কোলিগ, সব মিলিয়ে হিমশিম অবস্থা। দেশে পৌঁছ সংবাদ দিতে দিতেই দোসরা অগস্ট।
    রেজিস্ট্রেশন করতে গেলাম ফরেনারদের রেজিস্ট্রেশন অফিসে। পাসপোর্ট দেখে ওরা একটা ম্যাপ বের করে কীসব দেখে বলল হাসপাতাল থেকে বুকের এক্স রে করিয়ে আনতে। সেসব নিজস্ব খরচে। ভারতবর্ষ যক্ষারোগের দেশ, বুকের এক্স রে বাধ্যতামূলক। টাকা ক্রমশঃ কমতে কমতে তলানিতে। নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হলো। 
    এদিকে দেশ থেকে ইমেল করছে স্বামী, তার মাসতুতো দিদি  থাকে এদেশে, অবিলম্বে যেন যোগাযোগ করি।
    দৌড়োদৌড়ি করতে করতে নতুন কেনা খাদিমের জুতো পায়ের মাঝামাঝি ফেটে গেছে। কারোকে বুঝতে দিই না, কায়দা করে পা টেনে টেনে চলি।
    মেয়ে আমাকে দুএক ছত্র ইমেইল লিখতে বটে, তবে তাতে প্রাণের স্পন্দন নেই। আগে তো কখনও আমাকে চিঠি লেখে নি, এই ই প্রথম, তাই আড়ষ্ট।
    সবচেয়ে যে জিনিসটা নিয়ে চিন্তা, একটা থাকার জায়গা খুঁজে নিতে হবে। একত্রিশে অগস্টের পরে এই অ্যাপার্টমেন্টে আমায় থাকতে দেবে না এরা।
    অফিসের এইচারের জুনিয়র মেয়েটা আমায় কিছু দালালের ফোন নম্বর এবং ওয়ব সাইটের লিংক দিয়েছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমি ঘর খুঁজি। অবশেষে পেয়েও যাই একটা। ফার্নিশড অ্যাপার্টমেন্ট চাচ্ছিলাম, পাই নি। যেটা পেয়েছি, একটি অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে একটা ঘর বাথরুম এবং বাকিটা বাড়িওয়ালির সঙ্গে শেয়ার করা। যথেষ্ট সস্তায়। মাসে মাত্র হাজার ফ্রাংক। এছাড়া আরও একশো দিতে হবে বিবিধ খরচের জন্য। পয়লা সেপ্টেম্বরেই চলে যাব।
    একদিন গিয়ে দেখে এসেছি। মালকিনের নাম এরিকা। আমার চেয়ে বছর আষ্টেকের বড়ো। বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট তাঁর। পেছনে ও পাশে মস্ত বাগান। চিন্তা দূর হলো।
    আমি শুধু অপেক্ষা করি কখন মাস ফুরোবে, মাইনে পাব, মাইনে পেলেই দেখা করতে যেতে হবে সেই মাসতুতো ননদের বাড়ি ।
    আগে জানতাম তিনি থাকেন জুরিখে। এখন খোঁজ নিয়ে দেখলাম, জুরিখ থেকে একশো কিলোমিটার দূরে, উত্তরে, বাসেল শহরের বাইরে  একটু পাহাড়ি অঞ্চলে তাঁর নিবাস।
    টেলিফোনে কথাও বলেছি। তিনি বিশ্বাস করতে চাচ্ছিলেন না যে আমি ওঁর মাসতুতো ভায়ের সেকেন্ড ওয়াইফ। সংলাপে সন্দেহ ছিল। গায়ে মাখি নি। বিদেশ বিভুঁইয়ে আমি একা একা তো সবসময় পেরে উঠব না, শত হলেও আত্মীয় কুটুম্ব বলে কথা। বিপদে আপদে দরকারে কতরকম পরামর্শের দরকার হয়। ইনি বয়োজ্যেষ্ঠা। এঁর বড়োমেয়ে আমার চেয়ে বয়সে কিছু বড়ো। 
  • Avik Kumar Layek | ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:০৭741788
  • বেজায় ভালো হচ্ছে এটা। 
  • যোষিতা | ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৩741789
  • বাসস্থানের ব্যবস্থা হয়ে গেছে, আমি করণীয় কাদের লিস্টে টিক মেরেছি। ননদের সঙ্গে কথা হয়েছে, দেখা করা বাকি, অর্ধেক টিক মারা হলো। কিন্তু প্রচণ্ড দরকারি কাজটা বাকি, আমি ম্যারেড এই ব্যাপারটা অফিশিয়ালি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বিয়ের কাগজ সঙ্গে এনেছি। সেটা অফিসে দেখিয়েছি, কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয়। পাসপোর্টে স্বামীর নাম এবং পরিবর্তিত পদবী যখন জ্বলজ্বল করবে, তখন সেটা নিয়ে আবার যেতে হবে বিদেশিদের রেজিস্ট্রেশন অফিসে, তারা সেটাকে মেনে নিয়ে সিলমোহর দিলে তবেই অফিল তা মেনে নেবে। তারপরে বদলাবে আমার যাবতীয় ইনশিওরেন্সের নথি, আমার ইমেইল অ্যাড্রেস। এইটে করতে হলে আমায় যেতে হবে ভারতীয় দূতাবাসে। সেটি এদেশের রাজধানী বের্ন শহরে। প্রচুর ভাড়া বের্নের ট্রেনের। মাইনে না পাওয়া অবধি ওদিকে যেতে পারব না।
    ইচ্ছে ছিল, কোলকাতা থেকেই পাসপোর্টের পরিবর্তন করিয়ে আনার। মেয়েরটা করতে পেরেছি যখন, এটা তো জলভাত সে তুলনায়। তার ওপরে আরপিওর কার্ড আছে, লবিবাজির দৌলতে আমার ভিআইপি ট্রিটমেন্ট ঐ দপ্তরে।
    সেইমত গিয়েওছিলাম একদিন। কিন্তু আরপিও নিজেই বললেন, উঁহু এখান থেকে করাবেন না, আপনার পাসপোর্ট বিদেশ থেকে ইশু করা, এখান থেকে করালে অনেক সময় লেগে যাবে। আপনি সুইটজারল্যান্ডে গিয়ে করান এটা, অনেক সহজে হয়ে যাবে। উনি আমার ইমেইল ও জেনে নিলেন, যদি কখনও ওদেশে যান, আমি যেন হেল্প টেল্প করি।
    এবার ওঁর কার্ডেও দেখলাম ওঁর ইমেইল অ্যাড্রেস লেখা রয়েছে।  সেটা অদ্ভূত লাগল দেখে। নামডটপদবী তারপর ias লেখা এরপর @ ইয়াহু ডট কম।
    সরকারি ইমেইল ইয়াহুতে হবে কেন? আর ias লেখারই বা তাৎপর্য কী?
    কিন্তু  সব প্রশ্ন সব জায়গায় করতে নেই। 
  • যোষিতা | ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:০৯741790
  • তাশখন্দের ভারতীয় দূতাবাস, অর্থাৎ যেখান থেকে আমার সর্বশেষ পাসপোর্টটি ইশু করা হয়েছিল, যেটায় সদ্যোজাত শিশুর নামও ঢোকানো হয়েছিল, তারা পাকামো করতে কোনও গাফিলতি করে নি। সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্ম নিবন্ধ পুস্তিকায় যেহেতু শিশুর মাতা ও পিতা উভয়ের নামই ছিল, তা মাতা পিতার বিবাহ হোক বা না হোক, তাদের নিয়ম একই, তারা কোনও শিশুতেই তফাৎ করে না, তাই সেই পুস্তিকাটি হাতে পেয়ে দূতাবাস আমার পাসপোর্টে সেই নামটি ঢুকিয়ে দিয়েছিল স্বামীর নাম হিসেবে। 
    যত তাদের বলি, এমন করলেন কেন? তত তারা স্নেহবিগলিত হয়ে বলে, বেটি আজ বাদে কাল উনিই তোমার সোয়ামী হবেন। 
    ছাত্র বয়স, চেঁচামিচি করবার সাহস হতো না এমব্যাসীওয়লাদের সঙ্গে। ফলতঃ ভুলটা বয়ে বেড়াচ্ছিসাম কোনও বিবাহ না হওয়া সত্ত্বেও।
    তাই সঙ্গে করে আরেকটা কাগজ নিতে হয়েছিল কোলকাতা থেকে। নোটারি করা কিছু বক্তব্য — আমি অমুক। আগে বিয়ে হয় নি, এখন আমি তসুকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি।
    এই কাগজটা তৈরি করে নিতে বলেছিলেন আরেক আইএএস। আমি তৈরি। 
    মাসের তেইশ চব্বিশ তারিখ নাগাদ ব্যাংকে বেতন জমা পড়তেই আমি চনমনিয়ে উঠলাম। এমব্যাসিতে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলাম, কবে যেতে পারি?
    — কী দরকারে?
    — পাসপোর্টে স্বামীর নাম ...
    — সোম থেকে শুক্র যে কোনওদিন দুপুর বারোটার আগে।
    আমি পরদিনই ছুটে যেতে চেয়েছিলাম এমব্যাসী। কিন্তু একটু পরেই ফোন এল ননদিনীর। কাল শুক্রবার বিকেলে সে আমায় যেতে বলছে বাসেলে। স্টেশনের সামনে থেকেই আমাকে তুলে নেবে তার স্বামী। স্বামীর অফিস স্টেশনের বিপরীতেই। সে ব্যাংক অফ ইন্টারন্যাশানাল অ্যাফেয়ার্সের একজন বড়কর্তা। 
    আমায় সে চিনবে কেমন করে? এমনিতেই গায়ের রঙে চিনতে পারে, এদেশে সব সাদা, তবু বললাম, আমার পরনে থাকবে কালো জিন্স ও সাদা ব্লাউজ।
    অফিসের পাশেই রেল স্টেশন। শুক্রবার বিকেলে অফিস থেকেই সোজা রওনা দিলাম বাসেল অভিমুখে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন