এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আগ্রাসী হিন্দুত্ব: অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ # পর্ব ১

    Ashoke Mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ মে ২০২৩ | ২৪৭৩ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (৪ জন)
  • গত কয়েক দশক ধরে কেন্দ্রীয় ভাবে এবং একাধিক রাজ্য স্তরে গেরুয়া প্রভাব ও শাসনের বিস্তারের ফলে হিন্দুত্ববাদ তথা হিন্দু ধর্মের ক্রমশ প্রকট আগ্রাসী রূপ সম্পর্কে বিচার বিশ্লেষণ করা সমাজ কর্মী ও ভাবুকদের তরফে এই মুহূর্তের এক আদর্শগত দায় হয়ে পড়েছে। সাধারণভাবে আমরা হিন্দুধর্ম বলতে যা বুঝি এবং দেখি—ধর্ম সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদী তর্ক আপাতত পাশে সরিয়ে রেখে বলছি—তার মধ্যে সাধারণত আগ্রাসক মনোভাব বা ভূমিকা খুব একটা দেখা যায় না। বরং এক বহুত্ববাদী উদার পরমত সহিষ্ণু ন্যূনতম আচার ভিত্তিক ধর্ম হিসাবেই এর পরিচয়। এর মধ্যেকার জাত ব্যবস্থার কঠোরতার মধ্যেই উপাস্য শৈথিল্য এক রকমের স্থিতিস্থাপক সামাজিক সম্পর্কের জন্ম দেয়। তার ভালো মন্দ এবং তার সামাজিক ঐতিহাসিক কার্যকারণ নিয়ে আলোচনা অবশ্যই চলতে পারে, চলা উচিতও—কিন্তু তার নিরীহ চেহারা নিয়ে বিতর্কের বা মতান্তরের সুযোগ এমনিতে খুব বেশি নয়।
     
    ঠিক এই জায়গাটাই সঙ্ঘ পরিবার এবং বিজেপি ১৯৯০-এর দশক থেকে তার রাজনৈতিক ক্রম-উত্থানের সুযোগ নিয়ে বেশ দ্রুত পালটে ফেলেছে। অযোধ্যায় রামজন্মভূমি মন্দিরের নামে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার পর অনেকে বোধ হয় ভেবেছিলেন, এবার ওদের সুবুদ্ধির উদয় হবে এবং ধীরে ধীরে ধর্মীয় উন্মাদনার আড়ালে এক ধরনের গায়ের জোরের সংস্কৃতি যেটা মাথা তুলছিল তাকে ওরা নিয়ন্ত্রণ করে নেবে। মসজিদ ভাঙার নায়কদের অন্তত দুজন—লালকৃষ্ণ আদবানি এবং যশবন্ত সিনহা—যখন প্রায় রাজনৈতিক বাণপ্রস্থ নিয়ে সঙ্ঘের সিলেবাসের বাইরে গিয়ে মহম্মদ আলী জিন্নার সেকুলার অবস্থানের খোঁজে ব্যাপৃত হলেন, এরকম একটা বিভ্রম অনেকের মধ্যেই তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ভয়াবহ গুজরাত দাঙ্গার মধ্য দিয়ে নরেন্দ্র মোদীর এক ভয়ঙ্কর হিংস্র সাম্প্রদায়িক নেতা হিসাবে আবির্ভাব এবং ২০১৪ পরবর্তীকালে কেন্দ্রীয় শাসন ক্ষমতায় বসে আগ্রাসী হিন্দুত্বকে ক্রমাগত ধুনো দিয়ে চলা দেখে এখন নিশ্চয়ই তাদের ভুল ভেঙে গেছে। স্বভাবতই এই পরিস্থিতিতে একটা প্রশ্ন দেশের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, সঙ্ঘ পরিবার হিন্দুধর্মের এমন একটা আগ্রাসী আকার দিতে পারল কেমন করে? এ কি নিছকই ওদের রাজনৈতিক কলাকৌশল, নাকি, হিন্দুধর্মের স্বভাবের মধ্যেই এরকম একটা সুপ্ত বৈশিষ্ট্য আগে থেকেই ছিল, যা চারদিকের পরিবেশের চাপে নিজেকে খানিক গুটিয়ে নিয়েছিল, কিন্তু এখন যাকে বিজেপি আরএসএস খুঁচিয়ে আবার সক্রিয় করে তুলছে?
     
    সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তাই আমাদের এক প্রকার বাধ্য হয়েই হিন্দুধর্মের ইতিহাসে অবগাহন করতে হচ্ছে। নীচের অনুচ্ছেদগুলিতে সেই চেষ্টাই করব।

    || ১. হিন্দু নামে কোনো ধর্ম ছিল না ||
     
    প্রথমেই একটা কথা বলে নেওয়া দরকার, ভারতবর্ষের ইতিহাসে অতীতে হিন্দুধর্ম নামে কোনো ধর্মের অস্তিত্ব ছিল না। বর্তমান হিন্দুধর্ম যে ঐতিহ্য বহন করছে, প্রাচীন কালে তার পরিচয় ছিল সনাতন ধর্ম নামে। ঐতিহাসিকরা তাকে ব্রাহ্মণ্য ধর্মও আখ্যা দিয়ে থাকেন। তবে সেও কোনো একটাই মাত্র ধর্মীয় বিশ্বাস আচার প্রথা প্রকরণের সমষ্টি হিসাবে বিদ্যমান ছিল না। প্রাচীন কোনো সংস্কৃত শাস্ত্রে, শ্রুতি স্মৃতি পুরাণে, কাব্যে নাটকে, হিন্দু নামক কোনো ধর্মের বা ধর্মীয় পরিচিতির উল্লেখ দেখা যাবে না। প্রাচীন ভারত ভূখণ্ডের বিভিন্ন অংশে কোথাও সে শাক্ত, কোথাও শৈব, অন্য কোথাও বৈষ্ণব, আর এক জায়গায় গাণপত্য, ইত্যাদি অসংখ্য নামে এবং সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। এছাড়াও ছিল বৌদ্ধ ও জৈনদের নানা শাখা প্রশাখা। সেই সব গোষ্ঠীর প্রত্যেকের উপাস্য দেবতা, উপাসনা পদ্ধতি প্রকরণ, মন্ত্রতন্ত্র, নৈবেদ্য, বিধিনিষেধ, খাদ্যাখাদ্য বিচার, বিবাহ প্রকরণ, মৃতের সৎকার প্রথা, ইত্যাদি সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন রকমের। ঊনবিংশ শতাব্দে যুক্তিবাদের দিশারী অক্ষয়কুমার দত্ত যখন এরকম বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের পরিচিতি সংগ্রহ করতে দেশ ব্যাপী এক দীর্ঘমেয়াদি সমীক্ষা চালিয়েছিলেন, এবং ১৮৭২ ও ১৮৮৩ সালে দুই খণ্ডে “ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়” শীর্ষক পুস্তকাকারে সেই সমীক্ষার বিবরণ সবিস্তারে প্রকাশ করেছিলেন, তাতে তিনি সর্ব মোট ১৮২টি এরকম ধর্মীয় সম্প্রদায়ের হদিশ পেয়েছিলেন এবং নথিভুক্ত করেছিলেন। [দত্ত ১৯৮৭ এবং ১৯৯০] তার মধ্যে হিন্দু নামে কোনো উপাসক গোষ্ঠীর উল্লেখ ছিল না।
     
    তাহলে হিন্দু ধর্মের এই নাম এল কোত্থেকে? শাক্ত শৈব বৈষ্ণব আদি সম্প্রদায় সমূহ আপন আপন পরিচিতি কার্যত হারিয়ে সকলেই এক হিন্দুধর্মের পতাকাতলে সমবেত হল কীভাবে এবং কবে থেকে?
     
    সেও এক চিত্তামোদক ইতিহাস।
     
    একটা বহুল প্রচলিত গল্প—যা দীর্ঘ এবং পৌনঃপুনিক ব্যবহারে প্রায় ঐতিহাসিক সত্যের আকার প্রাপ্ত হয়েছে—হচ্ছে এরকম: ইরান থেকে যারা এক কালে ভারতে আসা যাওয়া করেছে, তারা ‘স’-কে ‘হ’-এর মতো করে উচ্চারণ করত। তাদের কাছে সিন্ধু নদীর পূর্ব তটের সকলেই ছিল সিন্ধু, ওরফে, হিন্দু। তার থেকেই ভারতীয়দের হিন্দু পরিচয় জন্ম নিয়েছিল। স্বামী বিবেকানন্দের লেখাতেও এরকম বক্তব্য আছে।
     
    যাঁরা এই ‘স’-কে ‘হ’ গল্পটির স্রষ্টা, প্রচারক এবং গ্রাহক তাঁরা সকলেই খুব অদ্ভুতভাবে কয়েকটা অত্যন্ত সুপরিচিত তথ্যকে অনায়াসে অগ্রাহ্য করে যেতে পেরেছেন। যাদের দেশের নাম পারস্য, ভাষা হচ্ছে পার্শি বা ফারসি, যাদের একটা প্রদেশের নাম সিরাজ, একটা বিখ্যাত নগরের নাম বসরা, যাদের রাজাকে বলা হত শাহ, যাদের ভাষায় শহর, শরম, শাবাস, শাদি, শিকস্ত, শিকার, শের, সওগাত, সওদাগর, সওয়ারি, সবুজ, সরখেল, সরকার, সর্দার, সরেজমিন, সরঞ্জাম, ইত্যাদি শব্দসকল সগৌরবে আছে (আমি শুধু মাত্র সেই সমস্ত স-বাহক শব্দকেই স্মরণ করছি, যারা আবার আমাদের সুপ্রিয় বাংলা ভাষাতেও নিত্য ব্যবহৃত ও সুপরিচিত), যে দেশের খুব সাম্প্রতিক কালের নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রথম শহিদের নাম মাহসা আমিনি, সেই আন্দোলনকে সমর্থন করার জন্য ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ চলাকালীন সদ্য যে খেলোয়াড়কে ইরানের মৌলবাদী শাসকরা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে তার নাম আমির নাসের আজাদিনি, সেই ইরানিরা নাকি সেকালে উচ্চারণ করতে না পেরে ‘স’-কে ‘হ’ বলত! সিন্ধু উচ্চারণ করতে গিয়ে তাদের ঠোঁট জিহ্বা কাহিল হয়ে পড়ে। এ সত্যিই এক আশ্চর্যজনক উদ্ভাবন।
     
    এই তত্ত্বকল্পটি অতএব বাতিল।
     
    বাস্তবে, ইরানের প্রাচীন অবেস্তার ভাষায় এমন অনেক শব্দের সন্ধান পাওয়া যায়, যেগুলি সংস্কৃতে ব্যবহৃত স-বাচক শব্দের অনুরূপ অথচ হ-বাচক। যেমন, সরস্বতী > হারাখাইতি; সপ্ত সিন্ধু > হপ্ত হেন্দু, অসুর > আহুর, ইত্যাদি। তার সঙ্গে ফারসি ভাষার সংযোগ থাকলেও শব্দমূলে সাদৃশ্য সামান্যই। এই কথাগুলি ভুলে গেলে মুশকিল।
     
    পক্ষান্তরে, কার্ল মার্ক্সের রচনায় পাওয়া হিন্দুস্তান দেশ-নাম, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের রচিত বইয়ের শিরোনামে A History of the Hindu Chemistry, Vols. I-II (১৯০২-০৯), আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীলের লেখা Positive Sciences of the Ancient Hindus (১৯১৫), ইত্যাদি, যাঁদের মধ্যে হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ থাকার বা স্থাপন করার কথা সুদূর কল্পনাতেও আনা যায় না, বিপরীত দিক থেকে একটা জিনিস দেখিয়ে দেয়: হিন্দু শব্দটির মধ্যে একটা বৃহত্তর স্থানবাচক সত্তার অস্তিত্বের প্রমাণ রয়েছে।
     
    আধুনিক গবেষকদের এক অংশ দেখিয়েছেন, ইরানের লোকেদের কাছে হিন্দুস্তান ছিল এমন একটা জায়গা যেখানকার লোকেরা চুরি জোচ্চুরি করে, জাদু জানে, ইত্যাদি। সেই লোকগুলোকে তারা বলত হিন্দ্‌। অনেকটা আমাদের দেশের গোয়েন্দা কাহিনিতে যেমন এক কালে চোর ডাকাত জালিয়াত চরিত্র হিসাবে “চিনাম্যান”-দের হাজির করানো হত। অষ্টম নবম শতাব্দ থেকে আফঘানিস্তান বা পারস্যের মুসলিমদের মধ্যেকার যে সুফি মতাবলম্বী ধর্মপ্রচারক দরবেশ পির এবং ব্যবসা বাণিজ্য করার জন্য যে সওদাগররা ভারতে আসতে শুরু করেন, তাঁরা কোথায় যাচ্ছেন বা কোথা থেকে ঘুরে এলেন বোঝাতে হলে বলতেন হিন্দস্তান। একাদশ শতকে আল-বেরুনি যখন ভারত ভ্রমণ শেষে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর অভিজ্ঞতা লেখেন তখন সেই গ্রন্থের নাম দেন “তারিখ আল-হিন্দ্‌”। আরও পরে—দ্বাদশ শতাব্দের শেষভাগ থেকে যখন পশ্চিম এশিয়ার আফঘান, তুর্কি, মোগল ইত্যাদি সামন্তী রাজারা রাজ্য বিস্তারে বেরিয়ে ভারতে এসে ঢুকল, তারা এই নতুন রাজত্বকে বলল হিন্দুস্তান আর এখানকার অমুসলিম অধিবাসীদের বলতে লাগল হিন্দু। সেই সঙ্গে তারা নিজেদেরও বলত হিন্দী (মহম্মদ ইকবালের সেই প্রখ্যাত গানের কলি “হিন্দী হ্যাঁয় হম” স্মরণ করুন)। শব্দটির গায়ে লেগে থাকা পুরনো দোষবাচক অর্থগুলি ধীরে ধীরে জনমানস থেকে উবে যায়।
     
    আরও পরে, এই ভাষাকে অনেকে বলতেন হিন্দুস্তানি।
     
    ইস্কনের সঙ্গে যুক্ত একজন কৃষ্ণভক্ত আধ্যাত্মিক ব্লগারের লেখা থেকে জানা যাচ্ছে, “. . . a Persian dictionary titled Lughet-e-Kishwari, published in Lucknow in 1964, gives the meaning of the word Hindu as “chore [thief], dakoo [dacoit], raahzan [waylayer], and ghulam [slave].” In another dictionary, Urdu-Feroze-ul-Laghat (Part One, p. 615) the Persian meaning of the word Hindu is further described as barda (obedient servant), sia faam (black color) and kaalaa (black). So these are all derogatory expressions for the translation of the term hindu in the Persian label of the people of India.” [Cited by Knapp on-line] ভদ্রলোক অবশ্য এতে যারপরনাই অসন্তুষ্ট হয়েছেন।
     
    আজকাল আমরা যাকে উর্দু ভাষা বলি, তার আদি নাম ছিল এই হিন্দি বা হিন্দুস্তানি। আমীর খসরু ও অন্যান্য যাঁরা এই ভাষায় প্রথম সাহিত্য সৃষ্টি করেছিলেন, তাঁরা নিজেদের হিন্দিভাষীই বলতেন। উর্দু শব্দটা ছিল তাচ্ছিল্য বাচক। সুলতান ও মোগল দরবারের আমীর ওমরাহরা নিজেরা ফারসি বা তুর্কিতে কথা বলতেন, লেখাপড়া করতেন, দলিলপত্র হুকুম ফরমান লিখতেন, তাঁরা আম জনগণের এই ভাষাকে খানিক অবজ্ঞার সুরে বলতেন উর্দু, মানে উর্দি পরিহিত অশিক্ষিত সৈনিকদের বোলচাল। আজও যদি কেউ উত্তর ভারতে যান, দেখবেন, উর্দুভাষীরা নিজেদের এখনও হিন্দিভাষীই বলেন। উল্টোদিকে, এটা তো আর নিছক সমাপতন নয় যে হিন্দি ব্যাকরণের একশ শতাংশই উর্দু ব্যাকরণের সঙ্গে মিলে যায়। দুঃখের কথা, মধ্যযুগের ভারত ইতিহাসের এই সমস্ত তথ্যগত উপাদান বর্তমান প্রজন্মের মানুষদের কাছে আর সুলভ্য নয়। তথ্যগুলি ধীরে ধীরে অনুল্লেখ ও অনুচ্চারণের মধ্য দিয়ে বিস্মৃতির গভীর অন্ধকূপে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। বাস্তবে হিন্দি ভাষা এবং হিন্দুস্তানি স্থানিক পরিচিতির মধ্যে ধর্ম কোনো জায়গাই পায়নি।

    || ২. হিন্দু (নামক) ধর্মের জন্ম ||
     
    হিন্দু নামের সঙ্গে ধর্মের স্পষ্ট যোগসূত্র স্থাপন শুরু হয় ইংরেজ বণিকদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উপনিবেশ স্থাপন ও বিস্তারের সময় থেকে। তারা এসে এই দেশে যে দুটি সুস্পষ্ট ধর্মীয় বিভাজন দেখতে পায়, তার এক দিকে ছিল সংখ্যায় ঊনতর একেশ্বরবাদী মুসলমান সম্প্রদায়, সাধারণ ভাবে হিন্দি (= উর্দু)-ভাষী, যারাই তখনও প্রধানত কেন্দ্রীয়ভাবে এবং অধিকাংশ অঞ্চলে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, আর অপর দিকে ছিল এক বিশাল সংখ্যক প্যাগান সম্প্রদায়, নানা ভাষিক গোষ্ঠী, যারা বহুদেববাদী এবং নানা রকম ট্রাইব্যাল আচার বিচারে আবদ্ধ জনগোষ্ঠী। এই দ্বিতীয় গোষ্ঠীভুক্ত জনমণ্ডলিকে তারা যখন হিন্দু বলে সনাক্ত করে, তার মৌল ভিত্তিতে থাকে এক ধর্মীয় পরিচয়।
     
    এই ভাবেই অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগ থেকে হিন্দুরা এক ধর্ম পরিচয় লাভ করতে থাকে। তথাকথিত হিন্দুধর্মের জন্ম হয়। বৌদ্ধ এবং শিখদের বাদ দিলে আঠেরো শতকোত্তর কালপর্বে দেশের মধ্যে যে সমস্ত পুরনো অমুসলিম ধর্মীয় গোষ্ঠির অস্তিত্ব আছে, তারা সকলেই এই হিন্দু ব্রাকেটের মধ্যে পড়ে। এমনকি জৈনরাও।
     
    এখানে বলা প্রয়োজন, ইংরেজ বণিকরা বাণিজ্য কুঠি বানাতে বানাতে যখন এই দেশকে তাদের বাণিজ্য ঘাঁটি তথা স্থায়ী উপনিবেশ তৈরি করবে বলে সিদ্ধান্ত নিল, তখন তাদের মাথায় একটা দুস্টু বুদ্ধি চাপল। মুসলমান জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অমুসলিম সমস্ত গোষ্ঠীকে এক সমসত্ত্ব ধর্মীয় বর্গে ফেলে এই হিন্দু মুসলিম ধর্মীয় বিভাজনকে রাজ্য শাসনের স্বার্থে ব্যবহার করা যায় কিনা দেখা। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যখন তারা এদেশে কিছু কিছু আধুনিক স্কুল কলেজ স্থাপন করতে শুরু করল, তার ইতিহাসের সিলেবাসকে তারা তাদের লুটেরা মনের মাধুরী দিয়ে সাজাতে চাইল। বিশেষ করে, যখন থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষক ও আদিবাসীদের বিদ্রোহ দেখা দিতে লাগল, অবশেষে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের লগ্ন (তখন আসলে সম্ভাবনা) যত এগিয়ে আসতে লাগল, ততই কোম্পানির পরিচালকদের বুকে কম্পন ধরে গেল। তারা মরিয়া হয়ে উঠল ভারতীয়দের ক্রমস্ফুটমান জাতীয় ঐক্যে দীর্ঘস্থায়ী ফাটল ধরানোর মতো একটা সূক্ষ্ম পরিকল্পনা বয়ন করতে।   
     
    এগুলো আমাদের কোনো অনুমান বা আন্দাজে ঢিল নয়। উনিশ শতকের সরকারি নানা নথিতে এর অজস্র সাক্ষ্য প্রমাণ ছড়িয়ে রয়েছে। যদ্দুর জানা যায়, চার্লস গ্র্যান্ট তাঁর লেখায় ১৭৮৭ সালে প্রথম “হিন্দুধর্ম” শব্দটি ব্যবহার করেন। [Cited, Sweetman 2003, 56; also see, Jha 2018, 13] ১৮৬২ সালে ভারত সচিব উড ভারতের তৎকালীন বড়লাট এলগিনকে একটা চিঠিতে খোলাখুলি বলেন, “ভারতে আমরা ক্ষমতা দখল করে আছি ভারতীয়দের এক অংশের বিরুদ্ধে অপর অংশকে লেলিয়ে দিয়ে। আমাদের এরকমটাই করে যেতে হবে। সমস্ত অংশের মধ্যে ঐক্যভাব জেগে ওঠা ঠেকানোর জন্য যা পারবেন সবই করুন।” [Cited, Pandey 1984, 35] দশ বছর পরে যখন থেকে ব্রিটিশ রাজের তত্ত্বাবধানে ভারতে প্রথম জনগণনা শুরু হয়, তাতে হিন্দু এবং মুসলমান জনসাধারণকে দুই প্রধান ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়। ১৮৮৭ সালে এক ইংরেজ অফিসার বড়লাট ডাফরিনকে রিপোর্ট করেন, “This division of religious feeling is greatly to our advantage and I look for some good as a result of your Committee of Inquiry on Indian Education and on teaching materials.” [Cited, Ibid] পরের বছরে ভারত সচিব হ্যামিলটন বাংলার ছোটলাট কার্জনকে নির্দেশ পাঠান, “শিক্ষার পাঠ্যবইগুলি আমাদের এমন পরিকল্পিত ভাবে রচনা করতে হবে যে সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে মনোমালিন্য যেন বাড়তেই থাকে।” [Cited, Ibid]
     
    ১৮৬০-এর দশক থেকেই এলিয়ট, ডসন, রবার্টসন, গ্রান্ট, জেমস মিল, কানিংহাম, প্রিন্সেপ, উইলসন, ফার্গুসন, প্রমুখ ইংরেজ লেখকগণ শাসকদের অভিপ্রায় অনুযায়ী এরকম ইতিহাস বই লিখতে থাকেন। তাঁরা ভারতের ইতিহাসকে হিন্দু যুগ, মুসলিম যুগ এবং ব্রিটিশ যুগ—এই তিন পর্যায়ে ভাগ করে দেখাতে থাকেন: প্রথম পর্যায়ে হিন্দুরা তাদের নিজস্ব ধর্ম ও সংস্কৃতির অবাধ ও শান্তিপূর্ণ বিকাশ ঘটিয়েছে; সেটা ছিল তাদের এক গৌরবময় অতীত কাল, জ্ঞান বিজ্ঞান দর্শনের চর্চা ও বিকাশের যুগ। দ্বিতীয় স্তর শুরু হল বহিরাগত মুসলমানদের আগমনের পর, যখন সেই নতুন শাসকগোষ্ঠী হিন্দুদের জবরদস্তি ইসলামে ধর্মান্তরিত করে, মন্দির ভেঙে মসজিদ বানিয়ে হিন্দুদের উপর নিষ্ঠুর ধর্মীয় নিপীড়ণ চালিয়েছে। অবশেষে এক সময় ইংরেজরা এসে মুসলমান শাসনের অবসান ঘটিয়ে হিন্দুদের আবার ধর্মীয় মুক্তির আস্বাদ এনে দিয়েছে। ভারতে আবার হিন্দুদের জন্য সুখের রাজ স্থাপন হয়েছে।
     
    দুঃখের কথা হল, ভারতের উদীয়মান জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দের অধিকাংশই এই ঔপনিবেশিক বয়ানকে প্রায় নির্বিচারে মেনে নেন এবং তাঁদের নিজেদের প্রচারেও এই সব কথার অনুরণন চালাতে থাকেন। ব্রাহ্মদের উদ্যোগে ১৮৭০-এর দশক থেকে যে স্বদেশি মেলার আয়োজন করা হত, তাকে বাচ্যান্তরে হিন্দুমেলা বলা হত, এবং তার একজন অন্যতম উদ্যোক্তা নবগোপাল ঘোষ প্রকাশ্যেই বলতে শুরু করেন, হিন্দু আর মুসলমান আলাদা জাতি, যা কিছু হিন্দুদের স্বার্থের অনুকূল, সেটাই এই দেশ ও জাতির স্বার্থ, এবম্বিধ। উত্তর ভারতে ১৮৭৫ সাল থেকে দয়ানন্দ সরস্বতীর উদ্যোগে যে আর্যসমাজ আন্দোলনের সূত্রপাত হয় তাতেও কার্যত গোরক্ষার নাম করে এই হিন্দু পুনরুত্থানের আয়োজন চলতে থাকে।
     
    এর নিরতিবিলম্ব পরাবর্ত প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম সমাজের একাংশের মধ্যেও পালটা এক স্বতন্ত্র কৌমবোধ জেগে উঠতে থাকে। যা হিন্দুর সমস্ত ঐতিহ্য থেকে আলাদা। এইভাবেই এক সময় হিন্দু মহাসভা এবং মুসলিম লিগের জন্ম হয় এবং সাম্প্রদায়িক দুই সমান্তরাল ধারায় রাজনীতির চোরাস্রোত বইতে থাকে। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী প্রচার ও আন্দোলন প্রকাশ্যে সেই হিন্দু সাম্প্রদায়িক লাইন থেকে কিঞ্চিত “চুল-ভেজাব-না” দূরত্বে বিচরণ করলেও মতাদর্শিক ক্ষেত্রে হিন্দু মহাসভা থেকে নিজেদের খুব বেশি স্বতন্ত্র বলে কখনই তুলে ধরতে পারেনি। হিন্দু ধর্মীয় ঐতিহ্যকেই জাতীয় ঐতিহ্য এবং হিন্দুদের ধর্মীয় আইকনগুলিকেই মডেল হিসাবে তুলে ধরতে থাকে। হিন্দুত্বের হ্রস্বতর অতীত শেষ হয়ে তার বর্তমান পর্যায় শুরু হয়।
     
    আরও অনেক ঘটনা আছে।
     
    বাংলায় দুটো পরিঘটনা খুব প্রোজ্জ্বলভাবে হিন্দুত্বের এই বর্তমান শরীর নির্মাণের গুরু দায়িত্ব পালন করেছিল। এক, বঙ্কিমের আনন্দমঠ; দুই, বিবেকানন্দের আন্দোলন। স্বল্প পরবর্তীকালে তিলক এবং গান্ধী বঙ্কিম-বিবেকানন্দের সৃষ্ট এই সংকীর্ণ ভাবাদর্শকে ভারতীয় জাতীয়তাবোধের মূল ভিত্তি করে ফেলেন। What Bengal thinks today, India thinks tomorrow—গোখলের সেই অমৃতবাণীর একেবারে যেন হাতেনাতে প্রমাণ পাওয়া গেল। ব্রিটিশ বিরোধিতার মধ্যেই মুসলমান বিদ্বেষ এবং দলিত ঘৃণা বাংলায় জন্ম নিয়ে অচিরেই এক ফল্গু স্রোতের মতো সারা দেশের জাতীয় চেতনার আধারে বা অন্দরে বইতে লাগল।
     
    এরই চূড়ান্ত পরিণাম হিসাবে ১৯২৫ সালে যখন আরএসএস-এর জন্ম হল, সে একেবারে গোড়া থেকেই এই চেতনায় ব্রিটিশ বিরোধিতার উপরে নির্মিত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা উপাদানকে সম্পূর্ণ অপনোদন করে কেবল মাত্র মুসলিম বিদ্বেষ ও দলিত ঘৃণার উপরে তার সমস্ত কার্যক্রমকে সাজিয়ে ফেলল। তার থেকেই জন্ম হল এক সর্বগ্রাসী হিন্দুত্বের। যার এক ভয়াল এবং কদর্য রূপ এখন আমরা প্রতিদিন প্রত্যক্ষ করে চলেছি।   
     
    তবে তথ্যের খাতিরে এখানে এটা বলে যাওয়া দরকার, ১৯৩৯ সালে মুম্বাইয়ের শাপুরশাহ হোদিওয়ালা প্রথম ইলিয়ট প্রমুখর এই সমস্ত মিথ্যা ইতিহাস কথনকে চ্যালেঞ্জ করে সবিস্তার টীকা দিয়ে মিথ্যাচারগুলিকে উন্মোচন করে দেখান। তাঁর বইটির দ্বিতীয় খণ্ড ১৯৫৭ সালে মরণোত্তর প্রকাশিত হয়। [Hodivala 2018] পরবর্তীকালে জে এস গ্রেওয়াল এই বিষয়ে আরও নানা দিক থেকে আলোকপাত করেন। [Grewal 1970] আমরা অবশ্য এক দৃঢ়চেতা জাতির মতো সেই সব সত্য ইতিহাসকে সগর্বে দূরে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
     
    [ক্রমশ]   

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • দীপ | 42.***.*** | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৪১526791
  • আপনারা আরো সুন্দর সুন্দর গল্প লিখতে থাকুন! 
    মিশন এইভাবেই আপনাদের প্রত্যুত্তর দেবে! 
    তবে এরপর‌ও প্রোপাগান্ডা থামবে না!
     
    অকর্মণ্য দাম্ভিকের অক্ষম ঈর্ষা!
  • দীপ | 42.***.*** | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৪৯526792
  • "আমরা আরম্ভ করি, শেষ করি না; আড়ম্বর করি, কাজ করি না; যাহা অনুষ্ঠান করি তাহা বিশ্বাস করি না; যাহা বিশ্বাস করি তাহা পালন করি না; ভূরিপরিমাণ বাক্যরচনা করিতে পারি, তিলপরিমাণ আত্মত্যাগ করিতে পারি না; আমরা অহংকার দেখাইয়া পরিতৃপ্ত থাকি, যোগ্যতালাভের চেষ্টা করি না; আমরা সকল কাজেই পরের প্রত্যাশা করি, অথচ পরের ত্রুটি লইয়া আকাশ বিদীর্ণ করিতে থাকি; পরের অনুকরণে আমাদের গর্ব, পরের অনুগ্রহে আমাদের সম্মান, পরের চক্ষে ধূলিনিক্ষেপ করিয়া আমাদের পলিটিকস্‌, এবং নিজের বাক্‌চাতুর্যে নিজের প্রতি ভক্তিবিহ্বল হইয়া উঠাই আমাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য।"
     
    মহাকবির অসামান্য বিশ্লেষণ!
  • দীপ | 42.***.*** | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৪৩527158
  • “এই সময় বাইবেল পড়া খুব চলিত। নরেন্দ্রনাথ শরৎচন্দ্রকে ও অপর সকলকে বাইবেল উপাখ্যান বলিতেন ও Nicodemus-এর উপাখ্যানটা সর্বদাই আবৃত্তি করিতেন। নরেন্দ্রনাথ কি এক মহাভাবে বিভোর হইয়া চক্ষু নিমীলিত করিয়া প্রায় এই কথাটি উচ্চারণ করিতেন, “Thou shalt be born again.” সময় অসময় Nicodemus-এর গল্পটি মুখে লাগিয়া থাকিত যীশু যেমন নিজের লইয়া একটা সঙ্ঘ করিয়াছিলেন এবং শিষ্যেরা যীশুর অন্তর্ধানের পর পরস্পরে প্রগাঢ় ভালবাসার সহিত একীভূত হইয়াছিলেন, নরেন্দ্রনাথও সেই দৃশ্যটি চোখে রাখিয়া আপনার অল্পবয়স্ক গুরুভাইদিগকে অজ্ঞাতভাবে শুনাইতে লাগিলেন। যীশুর জীবনটা যেন সেই সময় তাহার আদর্শ হইয়াছিল এবং শরৎ মহারাজেরও সেই ভাবটি তখন প্রবল হইয়া উঠিয়াছিল। হইবারই ত কথা। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের আত্মত্যাগ ও ভগবানের উপর নির্ভরতা, অমানুষিক ভালবাসা এবং অল্পবয়স্ক কতিপয় যুবক একত্রিত হইয়া মনপ্রাণ দিয়া ভগবান লাভের জন্য গুরুর শুশ্রূষা করিতেছে,—যীশুর সহিত এই অবস্থার সৌসাদৃশ্য খুবই হইয়াছিল। যীশুর ছবি আনিয়া দেওয়ালে রাখিতে লাগিলেন। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকে দেখিয়া যীশুর ভাব বুঝিতে লাগিলেন বা যীশুর বই পড়িয়া শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকে বুঝিতে লাগিলেন। একভাব অপর ভাবকে প্রক্ষুটত করিতে লাগিল। এই জন্যই নরেন্দ্রনাথের গল্পটি এমন ভাল লাগিত এবং নিতান্ত অনুগত শরৎচন্দ্রও সেই গল্পটি মনেপ্রাণে হৃদয়ঙ্গম করিতে লাগিলেন।”
     
    -মহেন্দ্রনাথ দত্ত
  • Ahsan ullah | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:১২527201
  •  একটি অপূর্ব সুন্দর লেখা, আপনি,গৌতম মুখোপাধ্যায় ,জয়ন্ত বন্দোপাধ্যায় প্রমুখ মহাশয়েরা জোর কদমে এগিয়ে আসুন। আপনাদের দেশের অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার , যুক্তির আশ্রয় দান করুন 
  • দীপ | 42.***.*** | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৫২527210
  • বানরসেনাদের বাঁদরামি মূলত উত্তর ও মধ্যভারতেই সীমাবদ্ধ, কিন্তু ইসলামিক মৌলবাদীদের কার্যকলাপ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। সেগুলো নিয়ে কথা না বলে যারা বঙ্কিম, বিবেকানন্দের পিণ্ডি চটকায়, তাদের মতো ধান্দাবাজ খুব কম‌ই আছে! 
    বর্তমান আফগানিস্তান, কাশ্মীর, পাকিস্তানে একসময় অসংখ্য বৌদ্ধবিহার, মন্দির ছিল। আজ সেগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত। 
    সেগুলো বোধহয় বঙ্কিম, বিবেকানন্দ করে এসেছে!
  • দীপ | 42.***.*** | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:০৩527212
  • ঢাকা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী র দাঙ্গা বোধহয় বঙ্কিম গিয়ে লাগিয়ে এসেছিল! 
    ২০২১ এ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় দাঙ্গা হয়, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ ঘটে, তাদের পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে আক্রমণ ঘটে।
    সেগুলো বোধহয় বঙ্কিম করে এসেছিল!
  • হিন্দু মোছলমান | 2600:1002:b03c:c375:99df:a41c:fc36:***:*** | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:১৪527213
  • দীপ কি মুসলমানদের ​​​​​​​বৌদ্ধমূর্তি ​​​​​​​ভাঙ্গা ​​​​​​​নিয়ে ​​​​​​​বিচলিত ​​​​​​​হয়ে ​​​​​​​পড়েছেন?  তাহলে ​​​​​​​এই ​​​​​​​লেখার দ্বিতীয়ভাগ ​​​​​​​পড়লে তো মূহ্যমান ​​​​​​​হয়ে ​​​​​​​পড়বেন।  ​​​​​​​ 
     
    "রবীন্দ্রনাথকে দিয়েই এই সমীক্ষা শুরু করি। কথা ও কাহিনীর এক কবিতায় তিনি লিখেছেন:
     
    অজাতশত্রু রাজা হল যবে
    পিতার আসনে আসি,
    পিতার ধর্ম শোনিতের স্রোতে
    মুছিয়া ফেলিল রাজপুরী হতে,
    সঁপিল যজ্ঞ-অনল-আলোতে
    বৌদ্ধ-শাস্ত্র-রাশি।
     
    ভারতে উদ্ভূত হয়ে যে বৌদ্ধধর্ম একদিন সারা এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল, তার মৌল শাস্ত্রগ্রন্থগুলির পুঁথি আর এই দেশে পাওয়া যায়নি। অনেক পরে চিন জাপান নেপাল প্রভৃতি দেশ থেকে উদ্ধার করে আনা হয়েছে এবং অনুবাদে লিখিত হয়েছে। কে বা কারা করল? সেই কালে তো আর মুসলমানরা এদেশে রাজত্ব করছিল না। অসংখ্য বৌদ্ধ বিহার ছিল বলে যে অঞ্চলটার নাম হল বিহার, সেখানে আজ বৌদ্ধ বিহার কটা টিকে আছে? পুরীর জগন্নাথ মন্দিরও এক কালে বৌদ্ধমঠ ছিল, তাকে দখল করে হিন্দু মন্দির বানিয়ে ফেলা হয়েছে। “ভারতবর্ষের এই যে সব সন্ন্যাসীর মঠফট দেখতে পাচ্ছিস—এসব বৌদ্ধদের অধিকারে ছিল, হিন্দুরা সেই সকলকে এখন তাদের রঙে রাঙিয়ে নিজস্ব করে বসেছে।” [বিবেকানন্দ ১৯৮৯, ৯, ২৭, ৭২] বৌদ্ধরা আজকাল যেগুলিকে “স্তূপ” নাম দিয়ে পবিত্র স্থল হিসাবে গণ্য করে, নামেই মালুম, এগুলোও আসলে বৌদ্ধ বিহার মঠ মন্দির প্যাগোডার ধ্বংসস্তূপেরই চলে আসা অপভ্রংশ। সেই ধ্বংসই বা কারা করেছিল সহজেই অনুমেয়। সদ্য প্রয়াত বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ দ্বিজেন্দ্রনারায়ণ ঝা বৌদ্ধদের এবং তাঁদের ধর্মস্থানের উপর শৈব বা বৈষ্ণবদের আক্রমণের পূর্ণাঙ্গ সূত্রোল্লেখ সহ এক বিশাল তালিকা এবং বিবরণ পেশ করেছেন তাঁর সাম্প্রতিক গ্রন্থে। [Jha 2018, 95-111] "
  • Ranjan Roy | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৪৫527225
  • দীপ,
    আপনি বক্তব্যের বিরোধিতা বা খণ্ডন করুন পাল্টা বক্তব্য দিয়ে। ব্যক্তি আক্রমণ বা গালিগালাজ করে নয়।
    আপনার প্রত্যেকটি পোস্ট শুরু হয় লেখককে: নির্লজ্জ, ইতর, মিথ্যাবাদী বলে।
    কেন?
    এতে আলোচনার পরিবেশ নষ্ট হয়।
    এসব না করে দুটো পয়েন্টে অশোকবাবুকে খণ্ডন করুন দেখি। আমরাও পড়ে ঋদ্ধ হই।
    এক,
    হিন্দু শব্দের প্রথম উল্লেখ কোথায় পাওয়া যায়?
    দুই,
    আনন্দমঠের সমাপ্তিতে কি মহাপুরুষের মুখে মুসলমান শাসন শেষ হয়ে ইংরেজ রাজা হওয়ায় দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। অতএব বিপ্লবের কাজ শেষ, এমন বক্তব্য নেই?
  • হে হে | 2405:8100:8000:5ca1::98:***:*** | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:১০527226
  • রঞ্জন রায় আবার ন্যাকচোপনা শুরু করেছে। দীপচাড্ডির নিজের মুখের কথা মানেই অশ্রাব্য খেস্তানো। আর আছে কপিপেস্ট। প্রসঙ্গে মিলুক না মিলুক  গাদাধরে কপ্পিপেস্ট মেরে যায়। অনেকবার তো হল বাবু রঞ্জন রায় আজও আপনেকে  ঋদ্ধ করে উঠতে পারল না চাড্ডিচো। আবারো এটাকে স্পেস দেবার চেষ্টা কি নিজের ইমেজ বাড়ানোর জন্য
  • দীপ | 2402:3a80:196b:6401:678:5634:1232:***:*** | ০৮ জুলাই ২০২৪ ১২:৩৭534375
  • বাংলাদেশের দিনাজপুরের ঘটনা।
    হিন্দুত্ববাদী রামকৃষ্ণ মিশন! 
    অবশ্য এরপরও নির্লজ্জ মিথ্যাচার থামবে না!
  • দীপ | 2401:4900:3828:739:7b18:d232:234:***:*** | ২৯ জুলাই ২০২৪ ১৮:৫৪535517
  • "আমি মুসলমানদিগের মসজিদে যাইব, খ্রিশ্চানদিগের গির্জায় প্রবেশ করিয়া ক্রুশবিদ্ধ ঈশার সম্মুখে নতজানু হইব, বৌদ্ধদিগের বিহারে প্রবেশ করিয়া বুদ্ধ ও তাঁহার ধর্মের শরণ লইব এবং অরণ্যে গমন করিয়া সেইসব হিন্দুর পার্শ্বে ধ্যানে মগ্ন হইব, যাঁহারা সকলে হৃদয়কন্দর-উদ্ভাসনকারী জ্যোতির দর্শনে সচেষ্ট। শুধু তাহাই নয়, ভবিষ্যতে যে-সকল ধর্ম আসিতে পারে, তাহাদের জন্যেও আমার হৃদয় উন্মুক্ত রাখিব।"
  • দীপ | 2401:4900:3828:739:7b18:d232:234:***:*** | ২৯ জুলাই ২০২৪ ১৮:৫৬535518
  • এরপরও নির্লজ্জ মিথ্যাবাদী থামবে না!
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন