এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  স্মৃতিচারণ   স্মৃতিকথা

  • একটি অরাজনৈতিক মৃত্যু

    যোষিতা 
    স্মৃতিচারণ | স্মৃতিকথা | ১১ এপ্রিল ২০২৩ | ৩১২৮ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • এখানে লিখব সেই মেয়েটির কথার বাইরেও অন্য কিছু ঘটনা 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Bratin Das | ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ১২:২৯740038
  • যো দি ,তোমার কাছে আগে শুনেছি ।রিলেট করতে পারছি ......
  • aranya | 2601:84:4600:5410:c4a5:c71c:9ad:***:*** | ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ০২:১৭740039
  • পড়ছি। দুঃখজনক অভিজ্ঞতা 
  • যোষিতা | ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৩:৫৯740040
  • একজন নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর মত সংবাদ সব সমাজেই মুখরোচক আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি করে। সেই নারীর যদি কোনও দুর্ঘটনাময় অতীত থাকে, যদি মৃত্যুর পূর্ব অবধি তার অ্যাফেয়ার থাকে কোনও বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে, তাহলে তো কথাই নেই। 
    শব্দের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে সেই সংবাদ। 
    (নাম পরিবর্তিত) 
    — অর্চনার মৃত্যু কি সুইসাইড? নাকি খুন?
    — সুইসাইড যদি হয়, সে কি প্রেগন্যান্ট ছিল?
    — খুনও হতে পারে, তাকে প্রেগন্যান্ট করে দিয়ে ঐ বদমাশ লম্পটটা মার্ডার করে দিয়েছে নির্ঘাৎ!
    এরকম হাজারো আলোচনা ও বিচারসভা বসে যায় নেট দুনিয়ায়, টেলিফোনে এবং বাংলাদেশিদের নানান মজলিশে। সে সব মজলিশে নানান মতামত, লোকটির স্ত্রীর জন্য অনুকম্পা, এবং সর্বোপরি ঐ সোকটিকে কেমন করে খুনি সাব্যস্ত করে তার অ্যাসাইলাম খারিজ করিয়ে, জেলবাস করিয়ে, বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো যায় — এ নিয়ে বাঙালিরা চিন্তায় চিন্তায় অস্থির।
    সামাজিক এবং আইনত পলিগ্যামি সিদ্ধ এমন দেশ থেকে আগত, বা পলিগ্যামিস্বীকৃত বাংলাদেশ থেকেও এই লোকটিকে কেমন করে সাজা দিয়ে পিষে মেরে শেষ করা যায় তার উপায় বের করতে জনতার ঘুম নেই।
    বেঁচে থাকতে যারা অর্চনার খোঁজ নেয় নি, মেয়েটা গণধর্ষনের পর বিচার পায় নি যখন, তখন কেও সাহায্য করে নি। বিদেশে বিভূঁইয়ে একা একটা বিজাতীয় ভিন্ন ভাষার সমাজে মেয়েটা কেমন আছে, কী করছে, তার অসুখ বিসুখের খোঁজ কেও নেয় নি। দিনকে দিন সে পাতের মত রোগা হয়ে যাচ্ছে জেনেও কেও তার কাছে সাহায্যের হাত বাড়ায় নি। 
    বরং সে ছিল ঘৃণার পাত্রী। বিবাহিত পুরুষকে ভালোবেসেছিল, শারিরীক সম্পর্কও ছিল। কেও তার সঙ্গে জীবদ্দশায় মেশে নি।
    সারাটা দিন ধরে মেয়েটা জারমান ভাষার ক্লাসে পড়াশোনা করত, সংস্থার মাসিক বৃত্তির টাকার সিংহভাগ পাঠাত দেশে বাবার কাছে মেজবোনের উচ্চশিক্ষার খরচ, তাদের সাধ আহ্লাদের খরচ সব মিটিয়ে, প্রেমিকের পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মাসিক টিকিটের খরচও সে ভালোবেসে মেটাতো। পরিশেষে নিজের জন্য কিছুই থাকত না। মেয়েটা প্রায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছিল। তার মেজাজ খারাপ হচ্ছিল রুগ্নতার কারনে, মানসিক চিন্তার কারনে। 
    সে খুব চাইত ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে ভাল ডিগ্রি পেয়ে স্বাধীন জীবন যাপন করতে।
    প্রেমিককে বিয়ে করা বা তার বিয়ে ভেঙে দেবার প্রস্তাব সে বারে বারে প্রত্যাখ্যান করেছে। জারমানিতে পলিগ্যামি চলে না। চললেও সে রাজি হতো না।
    এ সবই জেনেছি তার মৃত্যুর আগে পরে মিলিয়ে সেই লোকটির কথায়।
    ঐ এক ঝলক অর্চনাকে দেখেও সেরকমই মনে হয়েছিল। জেদি মেয়ে, অনেক ঝড়ের মধ্যে দিয়ে গিয়ে সে ক্লান্ত, তবে তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটা প্ল্যান আছে, তার ওপর ভরসা করে আছে তার বাবা মা বোনেরা। মেজবোন আশা করে আছে দিদি তাকে জারমানিতে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করবে।
    এই মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে কি?
    পারে না। কোনও যুক্তিই তার আত্মহত্যার স্বপক্ষে খাটে না।
    সে প্রেগন্যান্ট হলেও মরবে না, ইয়োরোপে এরকম ছেঁদো কারনে কেউ মরে না, সমাজ মুক্ত॥ সেতো এননিতেই কারোকে পরোয়া করে নি, ম্যাচিওর্ড ভাবনা চিন্তা দেখা গেছে তার লেখাপত্রে। ইমোশনাল হয়ত ছিল, কিন্তু নাহ্, হঠকারিতা করবার মত মেয়ে সে নয়।
    এদিকে পুলিশ নিয়ে গেছে দেহ। যে দেহ সাত কিংবা দশদিনের মৃতদেহ। বারোই ডিসেম্বরে মৃত্যু হয়েছে ধরে নিলে আরও পুরোন সেই লাশ।
    ময়না তদন্ত এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের ল্যাবরেটরি টেস্টের পরেই জানা যাবে এ মৃত্যুর রহস্য।
    তার মৃতদেহ পাওয়া গেছল বাথটাবে। সেই বাথটাব নভেম্বরের গোড়ায় আমরা দেখে এসেছি। বাথটাবে জল ছিল, সেই জলেই পাওয়া গেছে তাকে। সেজন্যই লোকটি চিৎকার করে বলেছিল — এত পানি কেন দিদি? এত পানি এল কোথা থেকে!
  • যোষিতা | ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৪:১৬740041
  • এ বড় অদ্ভূত জীবন। শোক পালনের পরিবেশ নেই তার। শোক দুঃখ প্রকাশ করবার জায়গা নেই। পালাবার কোনও স্পেস নেই। ক্রমাগত থ্রেট ফোন আসছে এখন ।
    — অর্চনারে খুন করছস? তোরে আমরা যদি শেষ না করি তাইলে...
    — এখন কই পালাবি? পুলিশ তোকে ধরতে আসছে।
    — তোর নামে পুলিশে রিপোর্ট গেছে, তুইই খুনি!
    — অর্চনার সর্বনাশ করেও তোর আশ মিটে নাই? খুনি!
    ক্রমাগত ফোনে ফোনে সে নাজেহাল হয়ে যায়। ব্লগার হবার থ্রেটের গল্প নয়। মৌলবাদীদের হাতে কল্পিত চাপাতির কোপে জবাই হবার থ্রেট নয়, এ সব থ্রেট আসলেই বাস্তব।
    সে ভেঙে পড়ে। আমি বলি, তুই ফোন কল রিসিভ করিস কেন? ফোন সুইচ অফ রাখ। নেট জগতে ঢুকিস না।
    কিন্তু সে অতটা সংযম করতে পারে না। বাড়ির বাইরে বের হতে আতঙ্ক, কোথায় কোন বাংলাদেশি ওৎ পেতে রয়েছে তাকে অপমান করার জন্য। ঘরেও সে কাঁদতে পারে না, ছেলেমেয়েরা যদি দেখে নেয় যে বাপ তার মৃতা প্রেমিকার জন্য কাঁদছে, তারা কীভাবে রিয়্যাক্ট করবে?
    মেয়ে এখন কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে, বৌ চুপচাপ, বাক্যালাপ অনেকদিন ধরেই বন্ধ।
    সে কেবলই ভাবতে থাকে, অর্চনা কেমনে মরল? পুলিশ কি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকবে? অর্চনার ফ্ল্যাটে সে নিয়মিত যেত। তার পায়ের ছাপ, আঙুলের ছাপ, ডিএনএ, সর্বত্র ছড়ানো। দু একটা পোশাকও থাকতে পারে ওখানে। 
    আমি জিজ্ঞাসা করতে করতেও নিজেকে সামলে নিই, আমার প্রশ্ন, তুই আসলেই কি জানিস না কেমন করে এই ঘটনা ঘটল?
    নাহ্, এরকম প্রশ্ন করা চলে না। 
  • যোষিতা | ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৪:৩১740042
  • বাঙালি কাঁকড়ার জাত — এটা প্রায় প্রবাদের পর্যায়ে পড়ে। আরও একটা ব্যাপারও সত্য, বাঙালি দলবাজিতে ওস্তাদ। মোটামুটি দুটো দলে ভাগ হয়ে গেল জারমানির বাঙালিরা। খুব অল্প সংখ্যক ওর দলে, বাকিরা বিপরীতে ক্রোধে আক্রোশে ফুঁসছে।
    দিন যায়। ময়নাতদন্ত বা ফরেনসিকের রিপোর্ট সম্পর্কে কোনও খবর নেই। দেহ তো প্রায় নষ্টই হয়ে গিয়েছিল। ডিসেম্বের শীত হলেও ফ্ল্যাটের মধ্যে তো রুম টেম্পারেচার পঁচিশ ডিগ্রির আশেপাশে। জলের মধ্যে অতদিন একটা মৃতদেহ অবিকৃত থাকে নাকি?
    রিপোর্ট যদি বেরিয়েও যায়, ওকে তো সেটা দেবে না। কাগজে কলমে ও তো সেই মেয়ের কেও নয়। 
    খবর কে দেবে তাকে? কোথা থেকে খোঁজখবর নিতে হয়, শেষ বারের মত চোখের দেখা মিলবে কিনা কিচ্ছু জানে না সে। নতুন বছর পড়ে গেল।
    মেয়েটির বাবা, বোন এরা তাকেই ফোন করে জানতে চায়, দেহ কি পাওয়া গেল? অর্চনাকে কি বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায়? অন্ততঃ শেষ দেখাটুকু যদি সম্ভব হয়।
    সে জানে না কোথা থেকে দেহ পাওয়া যায়। পুলিশের কাছে নাকি বাংলাদেশিরা ওর নামে রিপোর্ট করেছে ।
    অন্য দল, যারা সংখ্যায় কম, কিন্তু বিত্তশালী ব্যবসায়ী, তারা বলে, — চুপচাপ থাকেন, পুলিশকে রিপোর্ট করবার মত সাহস কারো নাই, সব সাহস মুখে। ছাড়ান দেন ওদের কথা। জেলাস লোকজন। ফাউল কথা কথা বলে। আপনি এত সহজে অ্যাসাইলাম পাইছেন এইটাতেই ওদের আক্রোশ।
  • ইন্দ্রাণী | ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৩৪740043
  • পড়ছি। মারাত্মক সব ঘটনা, তার অভিঘাত - বহুদিন অবধি মনে থাকবে। তারপর ফিকে হবে কালের নিয়মে। কিন্তু কোনোদিন ভুলব না ঐ পালংশাকের কড়াই কোলে নিয়ে বসে বৌটির ভাত খাওয়ার দৃশ্য । চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম ঐ অসুখী পরিবারটি, ঘরদোর, রান্নাঘরের গন্ধ অবধি নাকে এসে লাগছিল শুধু ঐ একটি বাক্যে। 
  • যোষিতা | 194.56.***.*** | ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৮:৪৩740044
  • মাসিক ওয়েবজিনের জানুয়ারি সংখ্যাটা উৎসর্গ করা হয়েছিল অর্চনার আকস্মিক মৃত্যুতে তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে। মেজ বা ছোট বোন ভালো ছবি আঁকে, সে আঁকা পাঠালো ইমেইলে, সেটাও ছিলো মনে হয় সেই সংখ্যাতে। তার লেখা কিছু প্রবন্ধ ক্রমশঃ বের হবে। সে তো একজন সম্পাদক ছিলো এই পত্রিকার।
    তবে আমার মাথায় চিন্তা ঘোরে, দেহটা এক মাসেরও বেশি সৎকার না হয়ে পড়ে রয়েছে, সেই দেহ কি দেশে পাঠানো যাবে?
    ক্রমশঃ শোকের জোয়ারে ভাটা পড়তে লাগল, ফরেনসিকের ফলাফলেও আপত্তিকর বা সন্দেহজনক কিছু মিলেছে বলে মনে হয় না।
    ঢিমে লয়ে কাজ চলছিল মনে হয়। তবে পত্রিকার কাজ সহসা আগের তুলনায় ভালো হচ্ছিল। যতই সাবস্ট্যান্ডার্ড লেখা জমা পড়ুক না কেন, ছবি ও অডিওর পালিশে সেসব ঝলমল করতে থাকে।
    আমরা তাকে নিয়মিত বলি, মন দিয়ে জারমানটা শেখ, ওটা ছাড়া জীবন অচল। ওটা না শিখলে ঐ "নির্বাসিত কবি"র মতো হাল হবে, জারমান সরকার নাগরিকত্ব দেবে না, সারাটা জীবন ওনার মতো স্টেটলেস স্টেটাস নিয়ে কাটাতে হবে, কেও চাকরি তো দেবেই না, ব্যবসা বানিজ্য করাও সহজ হবে না।
    সে বলে, শিখছি তো, কিন্তু ক্লাস কামাই হয় প্রচুর, সারাক্ষণ ঘুম পায়।
    - ওরে ওটা শয়তানি ঘুম, মনের ভেতর থেকে বাধা দেয় ক্লাসে যেতে। হোমওয়ার্ক করিস?
    করে না বোঝা গেল। যত কামাই করে, তত পরের পড়া আরও কঠিন ঠেকে, এতো সোজা হিসেব।
    টেলিফোনে পড়ানোর সাহায্য করা হোলো, হোম ওয়ার্ক করে দেওয়া, বুঝিয়ে দেওয়া, উঁহু, তার পড়ায় মন নেই।
    সম্ভবতঃ মাসের শেষে কি ফেব্রুয়ারিতে অর্চনার দেহ পাঠানোর ব্যবস্থা করা গেছল। প্রথমে এরা বলেছিল যে এখানেই দাহ করে ছাইটুকু দেশে পাঠাবে, কফিন এবং রেফ্রিজারের্শন সহ ঢাকা অবধি দেহ পাঠানো বিশাল ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার, বিশেষ করে সে দেহ বাক্স খুলে দেখা যাবে না। নিকটাত্মীয়েরা সে দৃশ্য দেখে কষ্ট পাবে বেশি।
    কিন্তু অর্চনার বাবা নাচার। মেয়েকে বাড়ির আঙিনায় কবর দিতে চান তিনি।
    এরাও আর দেরি করে নি।
    দেহ এতটাই পচে গলে গেছল, বিশেষ করে বাথটাবের জলে ফোন সহ সে ডুবে ছিল, ধরে নেওয়া হচ্ছে আকস্মিক ভাবে সে ডুবে যায় বা জ্ঞান হারায়, তার পরে হৃদযন্ত্রের বিকলতায় মৃত্যু।
    কোনও অন্য অস্বাভাবিকতা দেখা যায় নি।
    এই রিপোর্ট এবং ডেথ সার্ট্ফিকেট চলল কফিনের সঙ্গে ঢাকায়।
    ঢাকায় মেয়েটির বাবা ও বোন সম্ভবত রিসিভ করতে এসেছিলেন কফিন।
    নেত্রকোণায় বডি নিয়ে পৌঁছনোর পরে আরেক প্রস্থ নাটক।
    প্রথমে "প্রতিবেশীদের" দাবি ছিল যে, দেহ আবার "ভালো করে" ময়না তদন্ত করতে হবে। জারমান ডাক্তার কী ছাইপাঁশ রিপোর্ট পাঠিয়েছে, মৃত্যু সন্দেহজনক নয় বললেই হলো?
    এমন মুচমুচে খাস্তা সামুচার মত বিষয়ে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিলে ভালো লাগে নাকি কারো?
    অর্চনার বাবা মেয়ের মৃতদেহ আঁকড়ে থাকেন, ঝগড়া বচসা হয় অনেক সময় ধরে। ময়না তদন্ত আবার করানো মানে আরো বেশ অনেক সময়, দেহ পচে গলে শেষ হয়ে যাবে।
    তখন পাড়া প্রতিবেশীরা বাক্স খুলে দেহ দেখতে চায়। ইয়ার্কি নাকি? বাক্সের মধ্যে আদতেই বডি আছে কি না সেটা যাচাই করে নিতে হবে না? হকের বডি, প্রমাণ চাই।
    হ্যাঁ বাক্স খোলা হয়েছিল।
    এর কিছুদিন পরে মেয়েটির বাবার সঙ্গে অল্প কথা হয়েছিলো আমার। নিজেকে অর্চনার হতভাগ্য পিতা বলে পরিচয় দিয়েছিলেন সেই ভদ্রলোক।
    এর পরে ভেবেছিলাম সব ঠিক হয়ে যাবে। আসলে "ঠিক" কিছুই কখনো হয় না, শেষ চমকটার জন্য রেডি ছিলাম না।
  • যোষিতা | 194.56.***.*** | ২৬ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:৩২740046
  • যেমনটা সমস্ত মৃত্যুর ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে, স্মৃতি থেকে ব্যাপারটা ফেড আউট হতে হতে সমস্ত ঘটনা, দুঃখ, আক্রোশের তীব্রতা কমে গিয়ে গিয়ে সমস্ত লেনদেন থিতু হয়ে এককোণে পড়ে থাকে। বিশেষ করে এক যুবতী অবিবাহিতা মেয়ে, যার সম্পত্তির মালিকানা বা উত্তরাধিকারের জটিলতা নেই, ছেলেপুলে নেই, তার মৃত্যুতে কেউ অনাথ হবে না, হয়্ত আর্থিক সচ্ছলতার পরিমান কিছু কমবে, এর বেশি কিছু নয়।
    প্রথম দিকে বড়ো করে ফোটো টাঙিয়ে মালা দেওয়া হবে, স্মৃতিসংখ্যাতে গদোগদো কথা থাকবে, তারপরে সবই ম্লান হবে, এটাই দুনিয়ার নিয়ম, এতে দোষটা কোথায়?
    ঐ বাড়িটাও ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে গেছে অনেক আগেই, অন্য ভাড়াটে এসেছে, বা অন্যকোনও নির্বাসিত অ্যাসাইলাম সীকার। ঐ বাথটবেই তারা স্নান করে।
    এই লোকটিরও জীবনে জলদি পরিবর্তন এসে গেল। অর্চনার বাবা এখনো তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন প্রায় পুত্রসম স্নেহে।
    তারা এখন জারমানিতে চিরটা জীবন থেকে যাবার ছাড়পত্র পেয়ে গেছে। স্কলারশীপের মেয়াদ শেষ হলো বলে, এই বাড়ি ছেড়ে স্বামী স্ত্রী আলাদাআলাদা বাসস্থান খুঁজে নেবে, তাদের উদ্বাস্তু ভাতা ও আলাদা করে দেবার ব্যবস্থা হবে, শীঘ্রই বিবাহবিচ্ছেদ করে নিজ নিজ পথ দেখে নেবে তারা।
    যে চুড়ান্ত তীব্রতায় উঠেছিল অশান্তির ঢেউ, সেটা স্তিমিত।
    এবার আবার হঠাৎ একটা চেঁচামেচি, টাকা চুরি গেল লোকটির। পাঁচ হাজার ইউরো গোপনে আলমারিতে কাপড়জামার ফাঁকে লুকিয়ে রেখেছিল, সেটা গায়েব। বৌ চুরি করেছে, বৌকে সে চেনে।
    আগেও চাকরিস্থলের উপরির টাকা বৌ এমন করে চুরি করে নিত বাংলাদেশে, ক্যাশ রাখলেই কিছুটা করে চুরি হয়ে যেত।
    এদেশে টাকা সে ব্যাংকে রাখতে চায় না, তার টাকা আছে জানলে সরকার যদি ভাতা কমিয়ে দেয়, এসব আকাশপাতাল ভেবে টাকা এদিকে সেদিকে লুকিয়ে রাখা।
    সরাসরি বৌকে ধরতেও পারছে না, টাকার কথা সে বৌকে জানায়নি আগে।
    এরপর কয়েকদিন সব ভুলে টুলে গিয়ে খুব ফুর্তি কথায় বার্তায়। তারপর কথাটা বলেই ফেলল। অর্চনার বাবা চাচ্ছেন মেজবোনের সঙ্গে বিয়েটা দিয়ে দিতে। তিনি তো সবই জানতেন গোড়া থেকে। মেজবোন এ কবছরে বড়ো হয়ে গেছে, সুন্দরী, কলেজে পড়ালেখা করছে, তারও বরাবরের ইচ্ছা দিদির মতো জারমানি যাবে, তা দিদি তো অকালে চলে গেল। লোকটিরও ডিভোর্স হয়ে গেলে একটা বিয়ে করতে আইনত কোনও সমস্যা নাই।
    এইসমস্তই ঠিক হয়ে গেছে বাবার সঙ্গে কথা বলে, অর্চনার বোন কল্পনা (নাম পরিবর্তিত) এসে পড়লেই বাবার ঘাড় থেকে একটা দায়িত্ব কমে যায়। দেশে সবসময় আতঙ্কে থাকা যুবতী মেয়ে নিয়ে, আর কত পারবেন তিনি? কল্পনার তো সম্মতি আছেই।
     
    এসব জানবার পরে আর যোগাযোগ রাখিনি। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৬ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:২৮740047
  • হাঁপ ধরে যাওয়া অভিজ্ঞতা। পড়ে এইরকম লাগছে, তোমাদের যে কেমন লেগেছে সে ত আর বলারই নয়। "আসলে "ঠিক" কিছুই কখনো হয় না, " - sad
  • যোষিতা | ২৬ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:৩৩740048
  • থ্যাংকস সকলকে।
    এই ঘটনার পরে আর কী কী হয়েছে খবর রাখি না। টোটাল সংশ্রব ত্যাগ করেছি।
    আসলেই বিদেশ যাবার মোহ এমন জিনিস, যে কে কতটা দাম দেবে তার হিসেব রাখা যায় না। 
  • :|: | 174.25.***.*** | ২৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৩:০১740049
  • অথবা, দেশে থাকার দারিদ্র্য/নিরাপত্তাহীনতাটা এমন জিনিস যে তা থেকে মুক্তি পেতে কে কতটা দাম দেবে তার হিসেব রাখা যায় না। 
  • JD | 2402:3a80:1987:eda4:478:5634:1232:***:*** | ৩০ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৩৯740054
  • উফ্ফ! কি ভয়াবহ অবস্থা।  বিপদে পড়ে বিদেশ যাওয়া একরকম। আর পয়সার লোভে বাবার মেয়েকে পাঠানো আর একরকম!! এটা লোক পাচারই বটে। তবে মনে থাকবে  কড়াই কোলে নিয়ে খাওয়া।
     
  • দীমু | 14.143.***.*** | ৩০ এপ্রিল ২০২৩ ২২:৩৭740060
  • অডিও প্রোডাকশনটা বেশ ভালো হয়েছে। 
  • যোষিতা | ৩০ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:৪৯740061
  • সকলকে আবাও থ্যাংকস।
    @ দীমু,
    জাস্টোরিতে আরও অডিও আছে, আরও তুলব। শুনবেন।
  • পারমিতা | 2401:4900:1c00:2222:415d:d13:c050:***:*** | ৩০ জুলাই ২০২৩ ০৯:৪৫740444
  • সাংঘাতিক ঘটনা।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন