এইসব সময়ে রাজ কাপুরের কথা মনে পড়ে। বা রাজেশ খান্না। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মারা যাবার পর বাংলায় টানা শোকজ্ঞাপন চলছে। পশ্চিমবঙ্গ নয়, বাংলায়, এপার এবং ওপারে। সামাজিক মাধ্যমে, গণমাধ্যমে। কিন্তু তথাকথিত সর্বভারতীয় মাধ্যমে তার কণামাত্র নেই। কোনো খবর নেই, বলা যাবেনা হয়তো, এক-আধ লাইন কোথাও বলা হয়ে থাকতেই পারে, কে আর টানা টিভি দেখে, বা সমস্ত চ্যীনেল দেখে। কিন্তু মোটের উপর অভ্রংলিহ নীরবতা। যেন কোথাও কিচ্ছু হয়নি। কোনো মহীরূহ পতন? বালাই ষাট।
এইসব সময়েই রাজকাপুরের কথা মনে পড়ে। বা রাজেশ খান্না। সর্বভারতীয় মাধ্যমের অশ্রুজল ইত্যাদি। সেই আশির দশক থেকে ২০১২। কিছু বদলায়নি। সর্বভারতীয় টিভি দেখে মনে হয়েছে, এঁরা ছিলেন 'ভারতীয়' সিনেমার রূপকার। রূপকথার রাজপুত্র। আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কে? কোন লাটের বাঁট? আঞ্চলিক সিনেমার এক অনামী অভিনেতা। 'ভারতীয়' ফিয় আবার কী? হিন্দি সিনেমার তারকা তো নয়। হলে বোঝা যেত।
অথচ, এই রাজ কাপুর ঠিক কে? একজন মধ্যম মানের অভিনেতা, খারাপও বলা যায়। হয়তো অতটা খারাপ নয়, যা সিনেমা বানাতেন, তাতে ওরকম চড়া জিনিসপত্তরই লাগে, সেটুকু ছাড় না হয় দেওয়া গেল। তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতির বেশিরভাগটাই নেহরুর নীতির অবদান। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, হাতে ধরে দেব আনন্দ এবং রাজ কাপুরকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরেছে। অভিনয়ক্ষমতার মূল্যায়নে হয়তো কেউ একমত হবেননা, কিন্তু এতে কোনো ভুল নেই, যে, রাজকাপুরের খ্যাতির বেশিরভাগটাই ভারত সরকারের অবদান। স্বয়ং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিপননের কাজ করেছেন সর্বশক্তি দিয়ে।
এবং এতেও কোনো ভুল নেই, যে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়-দক্ষতা নিয়ে এরকম কোনো তর্কের অবকাশই নেই। আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁর খ্যাতি নিয়েও। তার কতটা সত্যজিত রায়ের অবদান এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে অবশ্যই, কিন্তু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষমতা নিয়ে এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কোথাও কোনো বিতর্ক থাকা সম্ভব নয়। এ নিয়েও কোনো বিতর্ক থাকার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ, সেই স্বীকৃতি 'ভারতীয়' স্বীকৃতি নয়, বাঙলা সিনেমার স্বীকৃতি। সৌমিত্র এবং সত্যজিত বাংলায় সমান্তরাল এবং জনচিত্ততোষক সিনেমা পাশাপাশি করেছেন, বাংলা সিনেমার যুগপুরুষ হিসেবে তাঁদের অবস্থান নিয়ে কোনো প্রশ্ন কখনও নেই, ছিলও না, কিন্তু বোম্বেকেন্দ্রিক 'ভারতীয়' সিনেমায় তাঁদের কখনও জায়গা হয়নি।
এসব সময় তাই সত্যজিত রায়ের কথাও মনে পড়ে। সত্যজিত বিলক্ষণ জানতেন বিষয়টা। তাঁর এবং রাজকাপুরের অন্তত একবার সামনাসামনি কথাকাটাকাটি হয়েছিল এ নিয়ে। অপরাজিত যেবার ভেনিসে পুরষ্কার পায় তার ঠিক পরেই। সত্যজিত বলেন, এই সম্মান বাংলা সিনেমার সম্মান। রাজ কাপুর প্রশ্ন করেন, 'বাঙালি কেন, ভারতীয় নয়? আপনি বলেন কেন, আপনি একজন বাঙালি চিত্রপরিচালক?' সত্যজিত জবাবে তাঁর জলদগম্ভীর কণ্ঠে বলেন, 'আমি একজন বাঙালি চিত্রপরিচালকই'।
এ কোনো গুলতাপ্পি নয়, অন্তত আমার বানানো নয়। একাধিক জায়গায় এর বর্ণনা পাওয়া যায়, আপাতত অনুবাদ করলাম মিহির বোসের 'বলিউড -- একটি ইতিহাস (পাতা ১৮৯)' থেকে। কিন্তু সত্য হোক আর মিথ, এ গপ্পের সত্যজিত যে ফেলুদার মতই একদম ষাঁড়ের চোখের মধ্যমণিতে ধাক্কা মেরেছিলেন, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ তো সৌমিত্রের মৃত্যুই। রাজকাপুরের মৃত্যুতে শোকধ্বনি হয় সর্বভারতীয় মিডিয়ায়। আর সৌমিত্রের মৃত্যুতে এনডিটিভির খবর পড়লাম (পড়লাম, টিভি চালিয়ে কিছু দেখিনি) 'বাংলা সিনেমার প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব মারা গেছেন'। সে খবরের অর্ধেকই আবার অমিতাভ বচ্চনের ব্লগ এবং টুইটে ভর্তি। দেখে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, ঠিক কে এই অমিতাভ বচ্চন? কোন হরিদাস পাল? এই পড়েই যাঁদের শিহরণ হচ্ছে, তাঁদের একটা টিপস দিই। কদিন আগেই ডন নামক একটা সিনেমার একটু খানি চালিয়ে দেখলাম, দেখা গেলনা। বোম্বের সিনেমায় অদীক্ষিত আমার পুত্র অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, এটা সিনেমা? তা, কৈশোরের মায়াঅঞ্জন চোখ থেকে ঝেড়ে ফেলে একবার ডন দেখে নিতে পারেন। না, জনমোহিনী আর সমান্তরাল সিনেমার কথা হচ্ছেনা। ঠিক এর পাশাপাশি দেখুন সেই সময়ের বাংলা জনপ্রিয় সিনেমা বসন্ত বিলাপ। ভাল মন্দের বিচার পরে, কোনটা দেখে উঠতে পারেন পুরোটা একটু জানাবেন।
তো, এই জন্যই সৌমিত্রর মৃত্যুর দিনে অমিতাভ বচ্চন আর রাজ কাপুরের কথা মনে পড়ে। রাজ কাপুর মারা গেছেন, অমিতাভ বাঁচুন, দীর্ঘদিন বাঁচুন। ভারতীয় সিনেমার আইকন হয়েই বাঁচুন। সৌমিত্র থাকবেন আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক হয়েই। তিনি বাংলা সিনেমার আইকন। তিনি আমাদের। তাঁর বামপন্থা নিয়ে আমরা তর্ক করব, তাঁর অভিনয় নিয়ে ফাটাফাটি করব। আমরা বাঙালিরা। এপারে এবং ওপারে। সীমানা টিমানা মুছে যাবে এইসব ব্যাপারে। এবং এই আলোচনায় 'ভারতীয় মিডিয়া'র প্রবেশাধিকার নেই। সৌমিত্র আমাদের, একান্ত আমাদের। জাপানিদের যেমন তোশিরো মিফুনে। কোনো ব্যাটা বলিউডের সাধ্য নেই এরকম কাউকে ধারণ করার।
"রঞ্জিত মল্লিক। দ্য মোস্ট আন্ডাররেটেড অ্যাক্টর ইন টালিগঞ্জ।" ... "আপনার পেয়ারেমোহন সত্যজিৎ শেষে ওঁকে শাখাপ্রশাখায় নিতে বাধ্য হন এবং তাঁর অভিনয়ের চরম প্রশংসা করেন। "
"এতদ্দ্বারা রঞ্জিত মল্লিক দুর্দান্ত অভিনেতা হন না।"
বাঃ, একটু নিজের নিকে লিখবেন? তাহলে আলোচনার সুবিধে হত। মানে আদৌ এনগেজ হব কি না সেটা অন্তত ভাবতাম আর কি। চেরিপিক করেছেন কি না, তাই।
অত্যন্ত দুঃখজনক ও পরিতাপের বিষয় নিঃসন্দেহে। তবে অবাক হইনি কারন তারা রবিন্দ্রনাথকেই হেলা ফেলা করে কারন তিনিও বাঙ্গালী ছিলেন সুতরাং তাদের দ্বারা সৌমিত্রকে যে মূল্যায়ন করা হবেনা সেতো জানা কথা। সৌমিত্র বেঁচে থাকবেন বাঙ্গালির হৃদয়ে হৃদয়ে।
খুবই উচিত কথা লিখেছেন, ভাল লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে -
একি আপনারা সব কথাবার্তাই অন্য দিকে নিয়ে চলে গেছেন দেখি। যা হোক, আমার উত্তর আমি দিয়ে দিই।
১। পরিচিতি। এ নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই, "যেকোনো কারণেই হোক" রাজকাপুরকে সৌমিত্রর চেয়ে বেশি লোক চেনে। এ নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই। যেমন সন্দেহ নেই "যেকোনো কারণেই হোক" আম্বানির অনেক টাকা। এটা হল রিয়েলিটি। কিন্তু তার পরেও ওই "যেকোনো কারণে" ব্যাপারটাকে আমরা আল্লার নামে ছেড়ে দিই না। ওটা নিয়ে কথা বলি। জিও সরকারের কৃপায় বাড়ছে কিনা, কৃপাটা অন্যায্য কিনা, ইত্যাদি। এক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। রাজকাপুরকে কেন বেশি লোকে চেনে? সরকারি কৃপা? সেটা অন্যায্য কিনা? অমিতাভ বচ্চন কেন সুপারস্টার। "ওহ গুরু গুরু" ধ্বনি তো কিশোররা (পান ইনটেন্ডেড) দিতে পারে সচেতন মানুষদের তো দেবার কোনো কারণ নেই।
২। টিআরপি। টিআরপি ব্যাপারটা সহজ নয়। এবং ভারতীয় টি-আর-পির পদ্ধতিটি আঞ্চলিকতা ধ্বংস করার জন্যই তৈরি। যেমন তৈরি বোম্বের ইন্ডাস্ট্রি। এটা হাওয়ায় ভাসানো কথা নয়। এই নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ গুরুতেই করেছি। নিবন্ধটি পড়ে দেখতে পারেন।
এবং এর পরেও কারো ইচ্ছে হলে চোখ বন্ধ করে থাকতেও পারেন। ধর্মান্ধতা তো ঠিক কোনো দলের একচেটিয়া নয়। :-)
হ্যাঁ, কিন্তু, ভারতে হিন্দি (বা সমতুল্য) ভাষাভাষীর সংখ্যা - প্রথম এবং দ্বিতীয় কথ্য ভাষার নিরিখে তো অনেক, ২০১১ র সেন্সাস থেকে -
সেই। ধর্মান্ধতা তো ঠিক কোনো দলের একচেটিয়া নয়। কেও হিন্দু-ভার্সাস -মুসলিম নিয়ে করে , কেও বাংলা ভার্সেস হিন্দি নিয়ে করে, যার যা এজেন্ডা । দিনের শেষে সবই সেই আমরা ভার্সেস ওরা র আদিগন্ত শ্বশুরবাড়ি।
অবশ্য এটা একেবারেই হিসেব করার দরকার নেই কেন হিন্দি র প্রবল চাপ থাকা সত্ত্বেও মালায়লাম সিনেমা এতো ভালো ভালো লো বাজেট কিন্তু ক্রিটিকালি এক্লেমড সিনেমা বানাতে পারে যেগুলো বলিউড কপি করতে বাধ্য হয়, তামিল বা তেলেগু তে বহু যাত্রাপালা মার্কা খাজা সিনেমা হলেও কিভাবে তার মধ্যে বাহুবলি টাইপের মেগাহিট বানায় , যেটা বলিউড এখনো বানিয়ে উঠতে পারেনা, অথবা মেগাস্টারদের না নিয়েও এতো লো বাজেট হিন্দি মুভি কিভাবে জাস্ট গল্পের জোরে সুপার হিট হয়ে যায়।
আর এগুলোর উদা সামনে থাকা সত্ত্বেও কেন ৯০-% বাংলা সিনেমা সেই সমানে বি-গ্রেড বলিউড মুভির সি গ্রেড কপি বানিয়ে যায় , কেন দুয়েকটা বাদ দিলে অরিজিনাল কিছু বানাতে পারেনা , আর কেন ট্যালেন্টেড বাঙালি আর্টিস্ট বা ডিরেক্টর বা মুসিসিয়ান গুলো কলকাতা ছেড়ে বলিউড পাড়ি দেয় । তার থেকে হিন্দির দিকে আঙ্গুল তোলা অনেক সোজা।
ঠিক যেমন মোদী বা যোগী করে - যত প্রবলেম সব এই বাংলাদেশী আর মুসলিম গুলোর জন্যে এগুলিকে তাড়ালেই আর সমস্যা নেই । কোথায় যেন গিয়ে সব পথই মিলে যায়.
কী মুশকিল, "আমাদের সিনেমা, ওদের সিনেমা" এটা সত্যজিৎ রায়ের একটা বিখ্যাত বইয়ের নাম। সেটাকে কোট করা হয়েছে। মানে তার অনুবাদকে। সেটার একটা দার্শনিক / রাজনৈতিক অভিমুখ আছে, যেটা ঠিক বিজেপির আমরা - ওরা নয়। সে অন্য প্রসঙ্গ। কিন্তু সামান্য কোটেশনে এতে এত রেগে গেলে কীকরে হবে?
"আর এগুলোর উদা সামনে থাকা সত্ত্বেও কেন ৯০-% বাংলা সিনেমা সেই সমানে বি-গ্রেড বলিউড মুভির সি গ্রেড কপি বানিয়ে যায় , কেন দুয়েকটা বাদ দিলে অরিজিনাল কিছু বানাতে পারেনা , আর কেন ট্যালেন্টেড বাঙালি আর্টিস্ট বা ডিরেক্টর বা মুসিসিয়ান গুলো কলকাতা ছেড়ে বলিউড পাড়ি দেয় ।"-- এইটা সত্যি জানতে চান? স্বাধীনতার ঠিক আগে অবধি কলকাতা এবং বোম্বে দুটোই ছিল সিনেমার কেন্দ্র। উভমুখী যাতায়াত ছিল দুটো কেন্দ্রের। স্বাধীনতা এবং দেশভাগের ঠিক পর থেকে কেন সেটা একমুখী হয়ে গেল, কেন খ্যাতি এবং অর্থের জন্য বোম্বের দিকে যাত্রা শুরু হল, কেন কলকাতার সিনেমা শিল্প কয়েক দশকের মধ্যে উঠে যেতে বসল, এর তো ইতিহাস আছেই। খুবই বেদনাদায়ক। এ তো দুম করে আকাশ থেকে পড়ে হয়না। এ নিয়ে নিশ্চয়ই লিখব। দক্ষিণে কাউকে সেই যাত্রার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি, সেটাও পরিষ্কার হবে।
আর আরও একটা কথা বলি। আমি কিছু একটা লিখব বলে দুম করে শক ভ্যালু দেবার জন্য লিখে ফেলিনা। ধরুন টি-আর-পি নিয়ে যখন লিখেছি, সেটা দস্তুরমতো প্রচুর সময় দিয়ে বুঝে শুনে লিখেছি। এমনকি বাংলা স্ক্রিপ্ট-লেখকদের সঙ্গে লম্বা কথাবার্তা অবধি করেছি, বোঝার জন্য, যে, আমার বিশ্লেষণের সঙ্গে তাঁদের অভিজ্ঞতা মিলছে কিনা। কাজেই নি-জার্ক রিয়্যাকশান না দিয়ে একটু ভেবেচিন্তে বললে সকলেরই সুবিধে হয়।
যারা অমিতাবচ্চনের ফ্যান, তারা রজনীকান্তের কটা ফিলিম দেকেচে? হিন্দির হিরো মানে সর্বভারতীয় হিরো। বাকিসব আঞ্চলিক। এটা পলিটিকস ছাড়া কি?
এখানে তর্কটা ঠিক কি নিয়ে হচ্ছে? কজ না এফেক্ট? সৌমিত্র মারা গেলে সারা ভারত সেই নিয়ে কথা বলে না কারণ সৌমিত্র একজন রিজিওনাল অভিনেতা। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে সৌমিত্রকে বিশেষ কেউ চেনে না। এটা হল এফেক্ট। এর অনেক কারণ আছে এবং হিন্দি সিনেমার আধিপত্য হল তার একটা কারণ। যদি কারণ নিয়ে তর্ক হয় সেটা অন্য তর্ক। কিন্তু সৌমিত্রের মৃত্যুতে সর্বভারতীয় মিডিয়া কেন লাফালাফি করল না - সেটা নিয়ে অভিমান করা যায়, তর্ক করে খুব একটা কিছু পরিবর্তন হবে না।
নি-জার্ক রিয়্যাকশান কিচ্ছু নেই তো এর মধ্যে। আপনি একটা খোলা পাতায় লেখা লিখেছেন যেটা পড়ে প্রপার এনালাইসিস কম মনে হয়েছে , বরং হিন্দি ভার্সেস বাংলার প্রে-ডেটারমিন্ড ন্যারেটিভ বেশি মনে হয়েছে , সেই সুবাদে খোলা পাতায় মন্ত্বব্য করা হয়েছে । এটাই শুধু নয় , আরো বেশ কিছু লেখাতেই সেই একই প্রে-ডেটারমিন্ডন্যারেটিভ র প্রচার মনে হয়েছে যেটা অনেক ক্ষেত্রেই জাস্ট অনাবশ্যক এবং চাপিয়ে দেওয়া লেগেছে । আর যেখানে যা মন্তব্য , সেটা সেই সব লেখার প্রেক্ষিতেই করা, ভবিষ্যতে কি লেখা আসবে তার প্রেক্ষিতে নয়।
আর দেশভাগের পর বাংলার অবক্ষয় তো শুধু সিনেমায় হয়নি , শিল্প ব্যবসা শিক্ষা সবদিকে হয়েছে . তার হাজারটা কারণ আছে এবং থাকবে। তার পেছনে কতটা কেন্দ্রীয় বঞ্চনা , কতটা নিজের আত্মধ্বংসী রাজনীতি, কতটা শিল্পের রেজিম চেঞ্জের জন্যে , সেসব নিয়েও হাজারটা মতামত আছে এবং থাকবে। আর এসব কোনো পিওর সাইন্স নয় যে কোনো থিওরী প্রমান করা যাবে . এ সবই জাস্ট হাইপোথিসিস , যে যার নিজের ভিউপয়েন্ট থেকে দ্যাখেন এবং চেরি পিক করে করে স্যাম্পল তুলে যুক্তি সাজান -যেমন আপনার লেখায় ডন ভার্সেস বসন্ত বিলাপ ইত্যাদি-. হয়তো না জেনেই যাদের ডন ভালো লাগে তাদেরকে একটা লোয়ার ইন্টেলেকচুয়াল ব্রাকেটে রাখার একটা ইনডাইরেক্ট ইঙ্গিত করা হয়েছে -এটাও আমার কাছে আমরা-ভার্সাস -ওরার সমস্যা মনে হয়েছে। সিম্পল।
এখানে তো কেনো ঠিক ভুলের গল্পই নেই -সবই যার যার পার্সেপশন.
দুটো আলাদা ব্যাপার মনে হয়েছে।
ঈশানদা যে সমস্যাটার কথা বলছেন সেটা একটু অন্য। ভাষার দিক থেকে হিন্দি যদি মেজরিটি হয় (যেটা এখানে অনেকেই বলেছেন, অনেকে তো আবার হিন্দি হমারা রাষ্ট্রভাষাও বলে ফেলে), তাহলে বাঙলা মাইনরিটি। সেক্ষেত্রে মাইনরিটিকে প্রোটেক্ট করার দায়িত্ব আছে। এইযে সোনি টিভি মানে ন্যাশনাল মিডিয়া আর জি বাংলা মানে রিজিওনাল মিডিয়া - এই ডেফিনিশটা কেন? হিন্দিও তো রিজিওনাল ল্যাঙ্গুয়েজ - ভারতের একটা রিজিওনের লোকেরা বলে। বারবার শোনা যায় যে তামিলরা নাকি জানলেও হিন্দি বলেনা। দিল্লির লোকেরা তামিল আদৌ জানে? তাহলে কেন অন্যদেরই হিন্দি বলার এত তাগিদ থাকবে? যারা নিজেদেরকে "ন্যাশনাল মিডিয়া" হিসাবে দাগিয়ে নিয়েছে, তাদের কর্তব্য তো নেশনের সব ভাষার এবং অঞ্চলের লোকেদের একই গুরুত্ব দেওয়া। সেখানে বাঙালী অভিনেতা কম সময় পাবেন কেন? কারণ অন্যজন "হিন্দি"তে সিনেমা করেছেন। তাহলে হিন্দিই আমাদের জাতীয় ভাষা?
বলিউডকে নেশন বিল্ডিংএর সময় কিভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং তার ফলে বলিউডের আজকের এই আকার এবং তার ফলে হিন্দির আগ্রাসন নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। গুরুতেই।
এবারে কেউ যদি বলে যে রাজকাপুরকে বেশি লোক চেনে, তাহলে সেটা অবশ্যই ঠিক কথা। দক্ষিনের সিনেমার সাফল্য তো চোখেই দেখছি। হিন্দি তো আগ্রাসন করবেই। কিন্তু নিজেরাও কিছু করলাম না, সেটার কোনও মানে নেই। রাজ্যের অর্থনৈতীক উন্নতি না হলে এসবের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে সিনেমা ইজ দি মোস্ট এক্সপেনসিভ আর্ট। সেটা চালানোর জন্য প্রচুর ক্যাপিটাল দরকার। সেটা আপাতত বাঙলা সিনেমার নেই।
"৯০-% বাংলা সিনেমা সেই সমানে বি-গ্রেড বলিউড মুভির সি গ্রেড কপি বানিয়ে যায়"
এটা ভুল বক্তব্য। বাংলা সিনেমা এখন মূলত দক্ষীনের সিনেমার নকলে তৈরী হয়। হিন্দি সিনেমার নকল খুবই কম।
স্বাধীনতার আগে তিনটে কেন্দ্র ছিল। একটা পাকিস্তানে চলে গেছে। তখন কোলকাতা থেকে ফুল লেঙ্গথের হিন্দি সিনেমাও প্রোডিউসড হত। স্বাধীনতার পর থেকে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ক্যাপিটাল ইত্যাদি সড়িয়ে নিয়ে গিয়ে।
S, আমার ৯০-% কপি র কথাটা একেবারে লিটারালি নিয়েছেন। আসল বক্তব্যটা ছিল যে বিশাল বাজেট বা স্টারকাস্ট ছাড়াও প্রচুর লো বাজেট বলিউড বা সাউথ এর মুভি গল্পের জোরে ভালোই ব্যবসা করছে বা আগেও করেছে। সেখানে গত ১০-১৫ বছরে বা আরো অনেক বেশি পিরিয়ড ধরে টলিউড এর কমার্শিয়াল সাফল্য জাস্ট হাতে গোনা.
বাংলার সমস্যা শুধু বাজেট এর নয় , অনেক কিছুই- ভেতরের এবং বাইরের । এবং শুধু নালিশ করে করে সেসব মিটবে না। আর সত্যি বলতে আজকের দুনিয়ায় নালিশ শোনার সময়ও বেশি লোকের নেই হাতে এতো অপসন থাকতে।
ওহো হ্যাঁ হ্যাঁ। ডন কচিবেলায় কারো ভাল লেগে থাকতেই পারে। কিন্তু পরিণত বয়সে ওটাকে ভাল সিনেমা বললে অতি অবশ্যই যিনি বলছেন তাঁর বুদ্ধিবৃত্তি বা সততা কোনো একটা নিয়ে আমি নিচু ধারণা পোষণ করব। এবং ও নিয়ে আর বাক্যালাপে এগোবনা। ( এটা ডিসিকে খোঁচা মারার জন্য না। উনি পাতি ক্যাওড়ামি করেন)।
বাদবাকি সমস্তটা নিয়েই কথা হতে পারে। কোনো চাপ নেই। আর বলছেন ঠিক আছে, কিন্তু ওই আমরা-ওরা জাতীয় কমেন্টগুলোকে নি-জার্কই লেগেছে। এখনও লাগছে। এখানে কেউ আওয়ার ফিল্মস দেয়ার ফিল্মস এর নাম শোনেননি এইটা ঠিক বিশ্বাস হলনা।
ঈশান আগে ঠিক করুক কী নিয়ে বক্তব্য রাখছে -
ভালো সিনেমা বনাম খারাপ সিনেমা (ডন-বসন্ত বিলাপ)
ভালো অভিনেতা বনাম খারাপ অভিনেতা (রাজ কাপুরগ-সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়)
লিঙ্গুইস্টিক/রিজিওনাল হেজিমনি বনাম লিঙ্গুইস্টিক/রিজিওনাল শভিনিজম (হিন্দি-বাংলা)।
বক্তব্য ঘেঁটে গেছে।
সে ডিসির উত্তর ডিসি নিশ্চয় দেবেন। কিন্তু এই পার্টিকুলার হলিয়ার দ্যান দো এপ্রোচ নিয়ে আমার পয়েন্ট টা ওপরে লিখেই দিয়েছি। রিপিট করার দরকার দেখছিনা।
আর "এখানে কেউ আওয়ার ফিল্মস দেয়ার ফিল্মস এর নাম শোনেননি"- এই স্পেসিফিক পয়েন্ট টা ঠিক কিভাবে জানা গেলো মন্তব্যগুলো থেকে ?
বাপরে, সিনেমা ভাল খারাপ লাগা নিয়ে কারোর বুদ্ধিবৃত্তি নিয়ে নিচু ধারণা পোষণা করা - এতো ট্রাম্পের থেকেও এক কাঠি এগিয়ে।
সৌমিত্র চ্যাটার্জি মারা গেলে বাকী ভারতের মিডিয়ায় তেমন হোলদোল হয় না, কিন্তু ঋষি কাপুর মারা গেলে প্রিন্ট মিডিয়া, অনলাইন, টিভি ইত্যাদি কভারেজে ছেয়ে যায়।
শন কোনারি মারা গেলে বাংলা দৈনিকে কয়েক পাতা জুড়ে বাংলায় স্পেশাল ইস্যু বেরোয়, কিন্তু সৌমিত্রর জন্য গার্ডিয়ান বা নিউইয়র্ক টাইমস এ পাতার পর পাতার ইংরেজি প্রবন্ধ বেরোয় না।
এর সল্যুশন কী? আমি সল্যুশন জানতে চাই।
স্যন কোনারি মারা গেছেন জানতামই না।
শন কোনারি কে নিয়ে একটা বাংলা ছড়া ছিল! বেশ মজার টোনের ছড়া। বহুকাল আগে গুরুচন্ডালিতেই পেয়েছিলাম। কেউ সেই ছড়াটা খুঁজে আনতে পারেন?
সেম আর অমিত এই দুজ্জন এমন দাপটের সাথ গাধামি করে যায় সেলসের ছেলেদের এনে দেখালে ভাল ট্রেনিং হবে। সেরেফ গুগলানন্দ ভরসা করে ভরভরিয়ে ছড়িয়ে বেড়ায়।
ডন কিন্তু বেশ ভালো চেজ থ্রিলার, অন্তত হিন্দি সিনেমার লেভেলে। জয় বাবা ফেলুনাথ আর অভিযানও ঐ ঘরানার। ওদিকে অভিযান থেকে ইনস্পিরেশান নিয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভার হয়েছিল। এসব বললে বলবেন আমি ক্যাওড়ামি করছি :-(
১। " হিন্দি সিনেমার লেভেলে ভালো থ্রিলার" আর "স্বপন সাহার লেভেলে খুব ভালো সিনেমা" একই জিনিস। এ নিয়ে কোনো দ্বিমত থাকাই সম্ভব না। ছোটোবেলায় দেখে গুরু-গুরু বলেছেন, এতে কোনো পাপ হয়নি, কিন্তু এখন ডন বা বাবা-কেন-চাকর কে প্লিজ ভালো সিনেমা বলবেননা। ক্যাওড়ামি করেও না।
২। অমিত কি সত্যিই খুব রেগে গেছেন? "এখানে কেউ আওয়ার ফিল্মস দেয়ার ফিল্মস এর নাম শোনেননি" -- এটা তো বিশ্বাস করিনা বলললাম।
৩। আমি কী নিয়ে বক্তব্য রাখছি খুব ক্লিয়ার। বাংলা সিনেমা দেশভাগের আগে এবং পরে এমন একট উচ্চতায় পৌঁছেছিল, পপুলার সিনেমার কথাই বলছি, সেটা কোনো ভারতীয় সিনেমা কখনও পৌঁছয়নি। একটা সিস্টেমেটিক এফর্ট দিয়ে সেটাকে ধ্বংস করে "সর্বভারতীয়" হিন্দি সিনেমা চালু করা হল। সেটা একটা রাজনৈতিক পদ্ধতি। এতদ্বারা, আঞ্চলিকতাকে ধ্বংস করা হল, ভালো সিনেমা বা তার পোটেনশিয়ালকে ধ্বংস করা হল। এবং অত্যন্ত খাজা কিছু বস্তুকে এনটারটেনমেন্ট বলে চালানো হল। এই কাজে খুব কুশলী কিছু লোকজনের সঙ্গে কিছু ব্লান্ট মুখেরও দরকার হয়েছিল।
এবার, এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বৈধতা দিতে কিছু পপুলার ন্যারেটিভ বানানো হয়েছিল। যেমন অমিতাভ বচ্চন পর্দায় আঁটেননা। বা রাজকাপুর হলেন বিদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত। আমি পুরোটাকে ধরেই একটা কাউন্টার ন্যারেটিভ বানাচ্ছি। ধারাবাহিকভাবে। তাতে কিছু সাফল্য আছে। বাকিটাও হয়ে যাবে। কারণ ন্যারেটিভটা কাল্পনিক নয়।
সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় | ১৮ নভেম্বর ২০২০ ০৮:১৫100417
আমি কী নিয়ে বক্তব্য রাখছি খুব বাংলা সিনেমা দেশভাগের আগে এবং পরে এমন একট উচ্চতায় পৌঁছেছিল, পপুলার সিনেমার কথাই বলছি, সেটা কোনো ভারতীয় সিনেমা কখনও পৌঁছয়নি। একটা সিস্টেমেটিক এফর্ট দিয়ে সেটাকে ধ্বংস করে "সর্বভারতীয়" হিন্দি সিনেমা চালু করা হল। সেটা একটা রাজনৈতিক পদ্ধতি।
- এর স্বপক্ষে তথ্য কোথায়? শুধু কটা সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স দিয়ে এ জিনিস খাড়া করা যাবে না। এরকম নয় যে এই ন্যারেটিভটাকে আমি বিশ্বাস করছি না। এর একটা বিশ্বাসযোগ্যতা আছে, কিন্তু আমার কাছে যথেষ্ট তথ্য নেই যা দিয়ে এই হাইপোথিসিস বিয়ন্ড-রিজনেবল-ডাউট প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তোমার থাকলে, দাও।
- এই ন্যারেটিভে ঢোকাতে হবে ফ্ল্যাগশিপ বাঙলা স্টুডিও যেমন নিউ থিয়েটার্স কেন হিন্দি ছবিতে ঝুঁকেছিল।
- এই ন্যারেটিভে ঢকাতে হবে কেন বাংলার ট্যালেন্ট ক্রমাগতঃ হিন্দি ছবিতে চলে যেতে লাগলেন।
সলিড তথ্য চাই।
হ্যাঁ, নিউ থিয়াটার্স সমেত সব কটারই তথ্য আছে। কেবল বাংলার কুশলীরা কেন বোম্বে যেতে শুরু করলেন, এইটার সোজা-সাপ্টা কোনো প্রমাণ নেই। ওইটুকু বাদ দিয়ে বাকিটা লিখব। পারলে এই সপ্তাহেই। আমার আবিষ্কার কোনোটাই নয়। নানা জায়গায় নানা তথ্য আছে। যেটা কেউ করেননি সেটা হল জোড়া লাগানো।
গুড। অপেক্ষা করি।
যাঃ বাবা! অনিল কাপুর আর প্রিয়ান্কা চোপড়া আর ইরফান খান কেন হলিউড যেতে শুরু করলেন ?
...মাঝে মাঝে লাটের বাঁটের মত কথা এসে পড়ছে... পীড়াদায়ক ।..পরিহারযোগ্য...
কেবল বাংলার শিল্পীরাই বম্বে গেছে সেটা ঠিক নয়। মারাঠি, পান্জাবী, গুজরাতি, ভোজপুরি, দক্ষিনী সব ইন্ডাস্ট্রি থেকেই লোকেরা বম্বেতে কাজ করতে গেছে এবং যাচ্ছে। পয়সা তো একটা কারণ বটেই। অন্য ভাষায়, অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার একটা শৈল্পিক আকর্ষণও আছে। আবার বম্বে থেকেও বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে লোকে চিরকালই কাজ করেছে। এখনও করছে। ফলে আমাদের দর্শকদের কাছে, যারা হয়তো একটা বা দুটো ভারতীয় ভাষা জানি এবং বুঝি, ইন্ডাস্ট্রিগুলো যতটা আলাদা আলাদা মনে হয়, শিল্পীদের কাছে বোধয় অতটা অপিরিচিত নয়।
আগামী শনিবার আমি এখানে স্ট্রং বাইনারি পজিশন নেব। সেই আলোচনায় অন্তত এসেয়কে পাত্তা দেব না।