বদরুদ্দিন উমরের একটা প্রবন্ধ দেখুন। তিনি দীর্ঘদিন এই ক্ষুদ্র ঋণজাল নিয়ে কথা বলছেন। এ বিষয়ে তার একটি বইও আছে। বলা দরকার-- বদরুদ্দিন উমর কট্টর আওয়ামী বিরোধী বাম রাজনীতিক ও গবেষক।
........................................
গরিবদের পরিত্রাতা মুহাম্মদ ইউনূসের উন্মোচিত স্বরূপ
বদরুদ্দীন উমর
শতকরা ৩০ অথবা তার থেকে বেশি হারে গরিবদের সুদ দিয়ে এবং তার সুদ ও আসল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদায় করে তাদের দারিদ্র্য বাস্তবত দূর করা তো দূরের কথা, এটা সম্ভব এমন মনে করাও সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের বিপরীত। কিন্তু এই প্রচার গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক ও মালিক এবং তাদের সাম্রাজ্যবাদী পৃষ্ঠপোষকরা তাদের প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে ব্যাপক ও শক্তিশালীভাবে চালিয়ে আসছে। এর দ্বারা দেশের ও দেশের বাইরে মানুষকে যেভাবে ভ্রান্ত ধারণা পরিবেশনের মাধ্যমে প্রতারণা করা হয়েছে এবং সাফল্যজনকভাবে করা হয়েছে, এর দৃষ্টান্ত সাম্রাজ্যবাদী শয়তানির ইতিহাসেও বিরল।
গ্রামীণ ব্যাংকের সুদি কারবারের এমনই অবস্থা যে সাধারণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ঋণ পরিশোধের জন্য যে graceperiod বা সময় দেয়া হয় সেটাও তারা দেয় না। ঋণ গ্রহণের পরবর্তী সপ্তাহ থেকেই সুদ আদায় শুরু হয়। এই সাপ্তাহিক সুদ না দিলে ঋণের শর্ত ভঙ্গ করার জন্য ঋণগ্রহীতাকে শাস্তি দেয়া হয়। এভাবে ঋণ দেয়ার পর ঋণ পরিশোধের জন্য সময় না দিয়ে পরবর্তী সপ্তাহ থেকে ঋণ পরিশোধের অর্থ হল, গৃহীত ঋণ কোন উৎপাদনশীল বা লাভজনক খাতে বিনিয়োগের আগেই প্রদত্ত ঋণের টাকা থেকেই ঋণ পরিশোধ করা। তাছাড়া প্রথম থেকেই এভাবে সপ্তাহে সপ্তাহে ঋণ পরিশোধ করতে থাকার কারণে সুদের হারও বৃদ্ধি পেয়ে শেষ পর্যন্ত দাঁড়ায় ৫০%-এর বেশি! এভাবে যারা সুদি কারবারের মাধ্যমে গরিবদের পকেট মারে তাদের দাবি হল, ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তারা দেশের গরিব জনগণের দারিদ্র্য দূর করছে!! বিস্ময়ের ব্যাপার, এই অতি স্বচ্ছ মিথ্যা ও প্রতারণা সঙ্কেÄও দেশে ও বিদেশে মুহাম্মদ ইউনূস ও তার গ্রামীণ ব্যাংকের জয়জয়কার হয়েছে। এই প্রতারণার পুরস্কারস্বরূপ সাম্রাজ্যবাদীরা ইউনূসকে নোবেল শান্তি পুরস্কারেও ভূষিত করেছে। সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা এভাবে ইউনূসকে মাথায় তোলার মূল কারণ অনুন্নত ও গরিব দেশগুলোর জনগণকে প্রতারণার ক্ষেত্রে ইউনূসকে তারা এক অতি নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে সক্ষম হচ্ছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ মানবসমাজের সব থেকে প্রাচীন ও কঠিন সমস্যা। এ সমস্যার সমাধান করতে এই আধুনিক বিশ্বেও দেশে দেশে সরকারগুলোর ব্যর্থতা বা অপারগতা জনগণের বিপুল অংশকে দারিদে্র্যর দু:সহ অবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য করছে। জনগণের ব্যাপক, সুসংগঠিত ও শক্তিশালী রাজনৈতিক অবস্থান ছাড়া যে এই দরিদ্র অবস্থার পরিবর্তন কিছুতেই সম্ভব নয়, এ বিষয়ে মতলববাজ ছাড়া আর কার সন্দেহ আছে? কিন্তু তা সঙ্কেÄও মুহাম্মদ ইউনূস খুব সাফল্যের সঙ্গেই দেশের ও বিদেশের জনগণকে সাম্রাজ্যবাদীদের, তাদের বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলোর ও সেই সঙ্গে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রচার মাধ্যমগুলোর সহায়তায় সাফল্যজনকভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারিত করেছেন। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য, যে দেশটি গ্রামীণ ব্যাংককে সর্বোচ্চ ও হাজার হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করে এই প্রতারণামূলক অপকর্ম ইউনূসকে দিয়ে করিয়েছে, তারাই তাকে ভূষিত করেছে নোবেল শান্তি পুরস্কারে।
প্রতারণা হিসেবে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস যে বিশ্ব প্রতারকদের মধ্যে অগ্রগণ্য, এর প্রমাণ এখন নরওয়ে, সুইডেন থেকেই যেভাবে প্রচারিত হয়েছে সেটা স্তম্ভিত হওয়ার মতো। স্তম্ভিত হওয়া এ কারণে নয় যে, এক বড় ধরনের প্রতারক হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূসের পরিচয় এর মাধ্যমে উদ্ঘাটিত হয়েছে। এর কারণ, মুহাম্মদ ইউনূস তার প্রধান সাম্রাজ্যবাদী পৃষ্ঠপোষক ও তাকে সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ প্রদানকারী নরওয়ে এবং সেই সঙ্গে সুইডেন, জার্মানি ইত্যাদি দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যেভাবে প্রতারণা করেছেন, তার বিবরণই নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে একটি প্রামাণ্য চিত্রে গত ১ ডিসেম্বর প্রচারিত হয়েছে।
মুহাম্মদ ইউনূসের এই চুরি ও প্রতারণা এত বড় আকারের এবং এ বিষয়ে এত কিছু আলোচনার আছে যা আলোচনায় বিস্তারিত ও সন্তোষজনকভাবে করা সম্ভব নয়। তবে এর বিশেষ কয়েকটি দিক এখানে উল্লেখ ও আলোচনা করা দরকার। ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের ওপর নির্মিত ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদে নামের উপরোক্ত প্রামাণ্যচিত্রে গোপন নথিপত্রের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, প্রায় ৭০০ কোটি টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরানো হয়েছে। দরিদ্র ঋণ গ্রহীতাদের জন্য পাওয়া ১০ কোটি ডলার অনুদানের অর্থ ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে ইউনূস গ্রামীণ কল্যাণ নামে নিজের প্রতিষ্ঠিত ও মালিকানাধীন অন্য একটি কোম্পানিতে স্থানান্তর করেন। ক্ষুদ্র ঋণের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এবং অন্য উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানিতে এভাবে অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি গোপন রাখার জন্য ইউনূস নরওয়ের দাতাসংস্থা নোরাডকে অনুরোধ করেছিলেন, কারণ এটা জানাজানি হলে দেশে ও দেশের বাইরে আন্তর্জাতিকভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হতে পারে। নরওয়ের দূতাবাস বা সরকারকে এ বিষয় কিছু না জানালেও তাদের দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, তারা এ বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ১৯৯৬ সালের একটি রিপোর্টের ফুটনোট থেকে এ বিষয়ে হঠাৎ করেই জানতে পারেন। তারা এ সম্পর্কে বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে যে কোম্পানিতে এভাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, তার কোন খবরই তাদের কাছে ছিল না। তাদের এ বিষয়ে কিছু না জানিয়েই এ কাজ করা হয়েছিল।
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ইউনূসের মালিকানাধীন নতুন কোম্পানি গ্রামীণ কল্যাণে ৭০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয় ৭ মে, ১৯৯৬। কিন্তু বলা হয়েছিল, এ চুক্তি ১৯৯৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। যাহোক উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, যে দিন এ অর্থ স্থানান্তর হয়েছিল সেদিনই গ্রামীণ কল্যাণ এভাবে প্রাপ্ত অর্থ ঋণ হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করে! এভাবে ইউনূস প্রতারণার যে ভেল্কিবাজির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, ইতিহাসে তার তুল্য কিছু খুঁজে পাওয়া মুশকিল। শুধু এ কারণেই ইউনূসের নাম বিশ্ব প্রতারক হিসেবে কীর্তিত হওয়া দরকার!!
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ কল্যাণে অর্থ হস্তান্তর করে সে টাকা আবার গ্রামীণ ব্যাংকে ঋণ হিসেবে ফেরত এনে গরিবদের জন্য আরও সহজ শর্তে ঋণ এবং অন্যান্য সুবিধার ব্যবস্থার যে কথা ইউনূস এ অর্থ হস্তান্তরের যুক্তি হিসেবে উপস্থিত করেছেন সেটা নরওয়ের রাষ্ট্রদূত লেহনে এবং দূতাবাসের অফিসার ল্যান্ডমার্কের কাছে যে গ্রহণযোগ্য হয়নি, এটা তারা বলেছেন। ইউনূসের অন্যতম যুক্তি ছিল এভাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর ট্যাক্সের বোঝা কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছিলেন!! এর অর্থ কী? এ ট্যাক্স গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃক কাকে দেয়ার কথা ছিল? অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারকে। কাজেই যে কারসাজির মাধ্যমে ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক এবং ট্যাক্স রেয়াতের ব্যবস্থা করেছিলেন সেটা যে সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া ছাড়া আর কিছু ছিল না- এ কথা কি কাউকে বুঝিয়ে বলতে হবে? তাছাড়া সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার অর্থ হল ব্যবসা বা সুদি কারবার থেকে পাওয়া লাভের অংশ ট্যাক্স হিসেবে না দিয়ে জনগণের পকেট মারা। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ কল্যাণ নামক কোম্পানিতে অর্থ স্থানান্তর করে ইউনূস এভাবে জনগণের পকেট মারার ব্যবস্থাই করেছিলেন। এটা তার নিজের স্বীকারোক্তির মধ্যেই পাওয়া যায়। অন্য কিছু না হোক, শুধু এ কারণেই অর্থাৎ সরকারকে বিপুল পরিমাণ ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার অপরাধে মুহাম্মদ ইউনূসকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা দরকার।
কিন্তু দরকার হলেই যে সেটা করা হবে এমন কথা নেই। কারণ বাংলাদেশ সরকার সাধারণভাবে এনজিও এবং বিশেষভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম ও কার্যপরিচালনার ব্যাপারে প্রকৃতপক্ষে কোন নিয়ন্ত্রণ করে না। এখানে উল্লেখ করা দরকার, সরকারের যে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আছে তার কোন এখতিয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর নেই। যেমন এ এখতিয়ার আছে দেশের অন্যান্য ব্যাংকের ওপর। এর থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশ সরকার সাম্রাজ্যবাদের কতখানি খেদমত কতভাবে করে থাকে। এ খেদমতের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক তো বটেই, সেই সঙ্গে প্রশিকা, গণসাহায্য সংস্থা, সমতা ইত্যাদি এনজিও যথেচ্ছভাবে বিদেশ থেকে পাওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে ইচ্ছামতো তা ব্যবহার করে এবং দুর্নীতির মাধ্যমে এগুলোর পরিচালকরা ও সেই সঙ্গে অন্য কর্তাব্যক্তিরা কোটি কোটি টাকা গোপনে নিজেদের পটেকস্থ করেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের এ অর্থ স্থানান্তর নিয়ে কোন বিস্তারিত আলোচনা এ মুহূর্তে এখানে সম্ভব নয়, এটা আগে বলা হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখার প্রয়োজন আছে এবং সেটা লেখা হবে। তবে এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, ১৯৯৬ সালে যে ৭০০ কোটি টাকা স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে তার বর্তমান পরিমাণ ও মূল্য কত তার হিসাবও করা দরকার। ১৯৯৬ সালে ৭০০ কোটি টাকা ১৪ বছর পর ২০১০ সালে যে ৭০০ কোটি নয়, এটা বলাই বাহুল্য। শুধু তাই নয়, ১৯৯৬ সালের পর থেকে আরও যে হাজার হাজার কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে ইউরোপের দেশগুলো থেকে দেয়া হয়েছে তার হিসাবও এখন নতুনভাবে তদন্তের মাধ্যমে বের করা ও জনগণের সামনে উপস্থিত করা দরকার। কারণ বিদেশ থেকে দরিদ্র জনগণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে এসে নিজেরা বিশাল আকারে ধনী হওয়ার যে দুর্নীতি ও চক্রান্ত গ্রামীণ ব্যাংক থেকে করা হয়েছে, জাতীয় পর্যায়ে এর গুরুত্ব আছে।
এ প্রসঙ্গে যে দাবি জনগণের দিক থেকে করা দরকার তা হল, গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের নারীদের চড়া সুদে ঋণ দিয়ে তাদের কিভাবে ও কতখানি দারিদ্র্যমুক্ত করেছে সে বিষয়ে ব্যাপক তদন্ত পরিচালনা। এ কাজ সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে হওয়া দরকার। এ তদন্ত হলেই বোঝা যাবে, গরিবের জন্য নিবেদিতপ্রাণ মুহাম্মদ ইউনূস গরিবদের দারিদ্র্যমুক্তির নামে কিভাবে ও কী আকারে বাংলাদেশের জনগণকে শোষণ, সুদ আদায়ের জন্য তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন করে তাদের দারিদ্র্য দূরীকরণ নয়- উপরন্তু তাদের দারিদ্র্য আরও বৃদ্ধি করেছেন। কিভাবে তাদের নিজেদের ভিটেমাটি ছাড়া করেছেন, কিভাবে এই ঋণ গ্রহীতাদের অনেকে ঋণের বেড়াজাল ও নির্যাতন থেকে মুক্তিলাভের জন্য আত্মহত্যা করতে পর্যন্ত বাধ্য হয়েছেন! নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে যে তথ্যচিত্র প্রচার করা হয়েছে, তাতেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী গ্রাম জোবরা, যশোরের দিশারী পল্লী ইত্যাদি জায়গায় গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতারা কী নিদারুণ দুরবস্থার মধ্যে আছে, তার উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু জোবরা বা দিশারী পল্লীতেই নয়, বাংলাদেশের থানায় থানায়, গ্রামে যে গরিবদের গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ প্রদান করেছে তাদের সর্বনাশের চিত্র সেসব এলাকায় যে কোন প্রাথমিক তদন্তের মাধ্যমেই স্পষ্ট হবে। গ্রামাঞ্চলের অবস্থার সঙ্গে যাদের পরিচয় আছে, তারা সবাই এর খবর রাখেন।
পরিশেষে একটি বিষয়ের উল্লেখ করা দরকার। আমরা অবাক বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, বাংলাদেশের সব সংবাদপত্রে মুহাম্মদ ইউনূসের দুর্নীতির সংবাদ, নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত প্রামাণ্য চিত্রের রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও অভিন্ন মালিকানাধীন পত্রিকা প্রথম আলো ও ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারে এ বিষয়ে একটি লাইনও ছাপা হয়নি। চারদিকে এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হওয়ার কারণে পরদিন ব্যাখ্যাসহকারে এ দুটি পত্রিকায় এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এ ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখে এর সত্যাসত্য যাচাই করার উদ্দেশ্যেই তারা প্রথম দিনেই সংবাদটি প্রচার করা থেকে বিরত ছিলেন! বোঝা যাচ্ছে, নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত প্রামাণ্য চিত্র যা পরিবেশন করেছে সেটা বাংলাদেশের অন্য সব পত্রিকায় ছাপা হলেও দায়িত্বশীল পত্রিকা হিসেবে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সেটা ছাপা থেকে বিরত ছিল! কোন স্বচ্ছ রহস্যের কারণে এই দুটি পত্রিকা এ কাজ করেছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশের বোকা লোকদের ধারণা নেই এমন নয়। তবে যারা নিতান্তই বোকা তারা নিজেদের অনেক সময় সব থেকে বুদ্ধিমান ভেবে থাকে। এক্ষেত্রে এ দুটি পত্রিকা দেশের জনগণকে বোকা মনে করে যে বোকামি করেছে, এর মূল কারণ যে গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে তাদের নিবিড় সখ্য সম্পর্ক এতে সন্দেহ নেই। এ ধরনের সখ্যের কারণে দেশের প্রচার মাধ্যমের দ্বারা যে কত রকম ক্ষতিসাধিত হচ্ছে তার শেষ নেই।
[সূত্র: যুগান্তর, ০৫/১২/১০]