আব্দুল বারিক বিশ্বাসকে চেনেন ?চিনে রাখুন । এখন বেশ কিছুদিন খবরের শিরোনামে থাকবেন এই ডন । এই মাফিয়া ডন অপারেট করেন ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে ঘোজাডাঙ্গা বর্ডারে ।
কিছুদিন আগেও এঁর দৈনিক আয় ছিল আশি লাখ টাকা । কিভাবে ? বাংলাদেশে সীমন্ত দিয়ে ব্যবসায়িক পণ্য নিয়ে লরি ঢুকতে গেলেই একে ট্যাক্স দিতে হত। কিভাবে ?
ঘোজা ডাঙ্গা পার্কিং ইয়ার্ডে প্রতি রাতে কয়েকশ লরি মাল সহ পৌঁছত সীমান্তের ওপারে যাওয়ার জন্য । সরকারি স্তরে ঢোকার আগে এঁদের পার্কিং ইয়ার্ডে ঢোকানো হত। এবারই শুরু হত অপারেশন বারিক বিশ্বাস । ধরুন দিনে ৭০০ লরি ওপার বাংলায় ভোমরা বন্দরে যাবে । ১৬০০ লরির জমায়েত হলে কে আগে যাবে তার সিদ্ধান্ত নেয় বারিক বিশ্বাস । বারিক বাহিনীকে ৩০ হাজার টাকা দিলে একদিনেই ছাড়পত্র পেয়ে যাবে সীমান্ত অতিক্রম করতে । নচেৎ লাইনে এস । লাইনে তখন অপেক্ষ মান হয়তো ৬০০০ গাড়ি ।
ফলে যারা দিতেন না তাদের পড়তে হত সীমাহীন সমস্যায় । একটা পণ্যবাহী লরি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলে মালিকের খোরাকি এবং অন্যান্য খরচ বাবদ লেগে যায় ২০০০ টাকা প্রতিদিন । ৩০ দিন একটানা দাঁড়িয়ে থাকলে গলে যায় ৬০ হাজার টাকা । তার বদলে ৩০ হাজার দিলে ছাড়পত্র । বেশির ভাগ মালিক দ্বিতীয় পথটাই বেছে নেন । এছাড়াও থাকে পার্কিং ফি । যেটা আগে নিয়ে যেত বারিক । এখন নেয় সরকার ।
এই বারিক বিশ্বাসের নামে গরু, কয়লা এবং সোনা পাচারের ভুরি ভুরি অভিযোগ । বারিক যখন রাস্তায় গাড়ি নিয়ে যান তাকে এসকর্ট করে প্রায় সত্তরটি বাইক । সবাই তার পেড স্টাফ । কেউ, কোন রাজনৈতিক নেতা তার বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না । করলে ওম শান্তি ওম শান্তি অবধারিত । জেলায় তার গড ফাদার মন্ত্রী মল্লিক বাবু । কলকাতায়ও হরিশ চ্যাটার্জির স্ট্রিটেরও ট্রাস্টেড ইনি । নিয়মিত যাওয়া আসা । বারিকের দৈনন্দিন আয় শোনা যায় ৮০ লাখ । জেলায় তার ইনভেস্টমেন্ট প্রতিদিন ৩০ লাখ । কলকাতায় পৌঁছতে হয় দিনে ২০ লাখ । বাকিটা নিজের । গত তিন বছর ধরে এই সাম্রাজ্য চালাচ্ছেন তিনি । কেউ কোন আওয়াজ পর্যন্ত করতে পারে না । পুলিশ, জেলা প্রশাসন বারিক বলতে অজ্ঞান । গুড পে মাস্টার,রেগুলার পে মাস্টার হিসেবে তার খ্যাতি সবাই করেন ।
সেই বারিক বিশ্বাস আজ অ্যারেস্ট হলেন । কে করলেন ? ইডি নয় রাজ্য সরকারের সি আই ডি । কলকাতায় ডেকে নিয়ে shown arrest দেখানো হল । ই সি এলের করা পুরানো একটা কয়লা সংক্রান্ত মামলায় রাজ্য সরকার নাকি অ্যারেস্ট করেছে । মিডিয়া সন্ধ্যে বেলা খুব চ্যাঁচালো। ।
ভেতরের কাহিনী আসলে কি ? শুনবেন ?
বাংলাদেশে হাওয়ালায় টাকা পাঠাতো এই বারিক, এমনই সংবাদ । পার্থ অধ্যয়ে এঁর পারফরম্যান্স ভালো । কলকাতায় হরিশ চ্যাটার্জিতে ডিফলটার কোনোদিনই ছিলেন না । এর সঙ্গে অর্পিতা তদন্তে লিংক পেয়ে ইডির ডাক ছিল সময়ের অপেক্ষা । আজ হোক কাল সেই যাত্রা আটকাতে বারিককে তুলে নিল মমতার সি আই ডি । আটকে লাভ ? লাভ হল বারিক পাছে কলকাতার ডেইলি পেমেন্ট লিস্ট ই ডিকে দিয়ে দেয় । তখন হবে আরেক বিপদ । তাই আগেই সি আই ডি র ঘর জামাই করে দাও । অর্থাৎ খাও,পিও ঘুমিও। একদম যে পথে, যে স্টাইলে সারদার সুদীপ্ত সেনকে কব্জায় নিয়েছিল রাজ্য সি আই ডি । ঠিক সেই পথেই অপারেশন করল মমতার পুলিশ ।
এই বারিক বিশ্বাস কে নিয়ে বাংলাদেশে ওপারে ব্যবসায়ীদের বিশাল ক্ষোভ । সাতখিরা, ভোমরা সি এন্ড এফ্ এজেন্ট এসোসিয়েশন ২৫ জানুয়ারি তিনদিনের ধর্মঘটও ডেকেছিলেন । দশ জনের সমন্বয় কমিটি করে দু জনকে পাঠিয়েছিলেন কলকাতায় বারিক বিশ্বাসের সঙ্গে বৈঠক করতে । পাঁচতারা হোটেলে সে বৈঠকও করেছিলেন । বারিক বিশ্বাস নমনীয় হননি । ফিরে গিয়ে তাঁরা বাংলাদেশ সরকারকে সব জানিয়েছেন । তারপর কি হয়েছে তাঁরা আজও জানেন না । এপারে শোনা যাচ্ছে ই ডি র হাতে ভারত সরকারের অর্থ দফতর থেকে কাগজপত্র দিয়ে পাঠানো হয়েছে ।
আর ঠিক তার আগেই রাজ্য সরকারের সি আই ডি আজ তাকে তুলে নিল । গ্যারেজ করে আদতে সি আই ডি কাকে বাঁচালো ? তথ্য বলছে আব্দুল বারিক বিশ্বাসকে নয় । আব্দুল বারিক বিশ্বাস যাঁদের লাখ লাখ টাকা মাসোহারা দিতেন সেই জেলা এবং কলকাতার গড ফাদারদের সাময়িক স্বস্তি দিল রাজ্য পুলিশ ।
মাসোহারা কথাটাই বা বললাম কেন ? ওটা তো দৈনন্দিন ভাতা । দিনে যার পরিমাণ ২০ লাখ টাকা । রাতে যা নিয়ম করে ঢুকতো কলকাতার হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রীটে সোজা অন রোড ঘোজাডাঙ্গা থেকে ।
কিছু বলবেন ? কিছু সত্যিই কেউ বুঝলেন ?
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)