ফেবুতে পল্লুম। পড়ে ফেলুন। রিসেন্টলি বাংলায় এরকম অসাধারন লেখা হয়নি।
সোনামিতা নেমে এল ওপর থেকে। পেছনে সুচিত্রার দিদি। একই রকম দেখতে। একই রকম সাজগোজ। এঁর ব্লাউজের স্লিভ আরও সরু। ফিতের মত। বোধির একটা সমস্যা আছে। একটু বগল বাতিক আছে তার। মেয়েদের বগল দেখতে সে খুব ভয় পায়। একবার নিউ মার্কেটের বাইরেটায়, তখনো সে দেশ ত্যাগ করেনি- টমাসদের গ্রুপটার সঙ্গে মোটরসাইকেলের গায়ে ঠেসান দিয়ে রংবাজি করছিল, হঠাৎ টমাস বলল," দেখ, দেখ, বৌদিটা তোর দিকেই আসছে।" শুনে তাকিয়ে বোধি দেখল ভীষণ সুন্দর দেখতে একটা সিঁদূর, শাঁখা, শাড়ি আর স্লিভলেস ব্লাউজ পরা অল্প বয়সী মহিলা যেন তাকে দেখতে দেখতেই এগিয়ে আসছেন। সে নড়েচড়ে উঠবে- মহিলা ঠিক তার নাকের সামনে হাত তুলে দিয়ে একটা ব্যাগ ধরে বললেন," এই ব্যাগটা কত?" জঙ্গল হয়ে থাকা, শেভ না করা সেই বিকট বগল দেখে বোধি প্রায় অজ্ঞান হয়ে গেছিল। উফঃ! সে দৃশ্য আজও তার হজম হয় নি। এখনো খাওয়ার সময় যদি মনে পড়ে যায় সে ওয়াক করে বমি করে ফেলবে। এখনো সে মাঝে মাঝে ভাবে ওরকম মিষ্টি একজন মহিলার ওই রকম...।
বড় মাসি এসেই তার হাত ধরলেন," তোমার কথা তো শুনেই যাচ্ছি এসে থেকে। হ্যাঁ? সোনামিতা তো তোমার গল্প থামাচ্ছেই না। তা কোথায় থাকো তুমি লন্ডনে?" মুখ তুলে চশমার তলা দিয়ে দেখেন সোনামিতার বড় মাসী। এই সব মহিলা খুব ডেঞ্জারাস হন সচরাচর। হাতটা যা জোরে ধরেছেন, কথার উত্তর না দিলে মুচড়ে দিতে সময় নেবেন না। সুচিত্রা খুব হাসছেন। আর সোনামিতা এমন করে দাঁড়িয়ে আছে যেন তার সঙ্গে সোনামিতার বিয়ের সব ফাইনাল হয়ে গেছে। একটা লজ্জারুণ মুখ। চোখের দৃষ্টিতে ঝিলিক। হাতে অদৃশ্য বরমাল্য। বোধি ভাবল, এভাবেই মানুষ ফাঁসে! এর মধ্যে আকর্ণ হাসি নিয়ে এসে বসার ঘরের সব লাইট, ঝাড় লন্ঠন জ্বালিয়ে দিয়ে গেল মনোময়। বোধি ভেবে নিল সোনামিতাকে একান্তে পেলে সে কোন কথাটা প্রথমে জিজ্ঞেস করবে। বড় মাসিদের কেউ কোনদিন নাম মারফত পরিচয় করায় না, বড় মাসি হলেন বড় মাসি। বোধি বলল," আপনি লন্ডনে গেছেন?"
" না, আমি লন্ডনে যাইনি কখনো। আমি আমেরিকা গেছি। আমার ছেলে আমেরিকা চলে গেছে গত বছর। একবার ঘুরে এসেছি। আবার যাব। এবার যখন যাব তখন সুচিত্রারও যাওয়ার কথা আছে সঙ্গে। যদি তার আগে তোমাদের বিয়ে হয়ে যায় তাহলে আগে আমি আর সুচিত্রা লন্ডনে গিয়ে তোমাদের বাড়িতে এক মাস থাকব। তারপর ওখান থেকে নিউ জার্সি চলে যাব।"
এ তো গড়গড়িয়ে বলে যাচ্ছে। সে ভাবল ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা বলে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। যা বলছে বলুক। খেয়ে কাজ নেই। এক মাস নাকি থাকবে। সে বলল," আপনি তো লন্ডন চেনেন না, তাহলে আপনাকে পাড়ার নাম বলে লাভ?"
" আরে কে বলল চিনি না, বসো তুমি, সোনা বলেছে তোমার খুব কটর কটর কথা। কেন? এত খটখটে কথা বলো কেন? হুম? মা, মাসিদের সঙ্গে এভাবে কথা বলে নাকি?"
" আপনি তো আমার মাসি নন। আপনি সোনামিতার মাসি।" সে মাথা নাড়ল।
" মা, মাসির বয়সী তো বটে।"
" নাহ, তাও হচ্ছে না।"
" তোমার মায়ের বয়স কত বল?"
" বেঁচে নেই।"
" বেঁচে থাকলে?"
হুম! সাংঘাতিক টেটিয়া মহিলা তো? বোধি কোনমতে রাগটা কনট্রোল করল," বেঁচে থাকলে সত্তর হত ম্যাক্সিমাম।"
" ওকে। বুঝলাম। আমি তোমার মায়ের বয়সীও না, দিদির বয়সীও না। ঠিকই বলেছো।" এক মুহূর্তের জন্য হাওয়া বেরিয়ে গেল বড় মাসির। এসব স্ট্রিট স্মার্ট বড় মাসি জীবনে অনেক দেখেছে বোধি। লন্ডনের বাঙালিদের মধ্যেও এরকম হাঁক ডাক ওলা মহিলাদের অভাব নেই। সব তার কাছে ঠান্ডা। এই জন্য কেউ তাকে পছন্দ করে না।
কিন্তু সোনামিতার বড় মাসি অপমানটা চট করে ঝেড়ে ফেললেন," সে যাইহোক, আমাদের লন্ডনে আত্মীয় স্বজনের অভাব নেই। আমার নিজের বিয়ে ঠিক হয়েছিল লন্ডনে। বাবা শেষ অব্দি দিলেন না। এবং বলে দিলেন তিন মেয়ের প্রত্যেককে কলকাতা শহরেই উচ্চ প্রতিষ্ঠিত, গাড়ি, বাড়িওলা ছেলে দেখে পাত্রস্থ করবেন। এবং স্বজাতিও হবে। নো কমপ্রমাইজ! মেয়েদের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রাখবেন বলেছিলেন। রেখেছিলেনও তাই। বাবা ছিলেন হাইকোর্টের দুঁদে উকিল বুঝেছো? এক কথার মানুষ।" বড় মাসি একটা হাত রাখলেন বোধির কাঁধে। সঙ্গে সঙ্গে একটু লজ্জিত হল বোধি, রাগটা চলে গেল, সোনামিতার মুখে তখন ধরে রাখা শুকনো একটা হাসি, সুচিত্রারও তাই। নইলে, "দুঁদে উকিল আবার কবে এক কথার মানুষ হল" বলে ফেলতো সে। লজ্জিত হল বলেই বলল," থার্লো স্কোয়ারে থাকি আমি। সাউথ কেনসিংটন।"