যার কৈশোর শেষ এমন কেউ একজন নওল কিশোর কে দিচ্ছে।
আতোজের সুনীলার্জ্জি আছে।
উচ্চকিত আবার কী! বলুন ড্রামা কোশেন্ট বেশি। এই তো ডেফিনেশন এল এখুনি।
@অরিন, কে দিচ্ছে?
মাতাল সমগ্র ছেলেবেলায় বেশ ভালই লাগত, এখন মনে হয় ওভারহাইপড, একটু ভালো করে লেখা চুটকি সংকলন।
তারাপদ রায় নিজে বলেছিলেন, তিনি কবিতাই লিখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শক্তি,সুনীলের পাশে কবি হিসেবে নিজেকে ঠিক ততটা উচ্চদরের মনে হয় নি তাই গদ্যের দিকে ঝুঁকেছিলেন- হুবহু বাক্যগুলো মনে নেই।
সেই সাক্ষাৎকারটা কেউ পেলে দেবেন/দিও।
এত শান্ত, নিরুচ্চার একটা সাদামাটা ভাব আছে ওর লেখায় সেটা খুব টানে।ঐ দলে শক্তির পরে আমিও তারাপদ রায় কে রাখি। সুনীলের কিছু লেখা ভালোলাগে, কিন্তু উনি আমার অবশ্যপাঠ্যের তালিকায় আসেন না:-)
আর একজনের কথা না বললেই নয়, তার একটা কবিতা তুলে দিচ্ছি
সুখদুঃখের নকশা
-প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত
দুঃখ পেয়ে বেঁকে যায় মানুষ, আবার
অন্য কোনও দুঃখে গিয়ে সোজা হ'য়ে ওঠে ।
সে সহজে ছেড়ে যেতে চায় না
তাই যতদিন বেঁচে থাকে, ততদিন
আরও বেশি বেঁচে থাকবে বলে
ভালোবাসবার জন্যে মাঝে মাঝে ঢেউ দিয়ে ওঠে
শুধুই কি ভালোবাসা ? ঘৃণা নয় ?
ঘৃণা আরও খাঁটি ।
সে তখন স্থিরনেত্রে চেয়ে থাকে শয়তানের দিকে -
যদি তাতে, সব পাপ ভস্ম হ'য়ে যায় ৷
দুঃখ পেতে পেতে
তবু দুঃখ যে শেষ কথা নয়
এইটুকু বুঝে নিতে, পার্কে গিয়ে একা বসে থাকে ।
একটি শিশু তার দিকে হঠাৎ হঠাৎ ছুটে আসে ।
একঝাঁক পাখি এসে শব্দ করে ওঠে ।
তার ঘৃণা, ভালোবাসা
নকশার মতন নামে বিকেলের রোদে ।
একটা সুনীলও
আমার ভালোবাসার কোনো জন্ম হয় না
মৃত্যু হয় না –
কেননা আমি অন্যরকম ভালোবাসার হীরের গয়না
শরীরে নিয়ে জন্মেছিলাম।
আমার কেউ নাম রাখেনি, তিনটে-চারটে ছদ্মনামে
আমার ভ্রমণ মর্ত্যধামে,
আগুন দেখে আলো ভেবেছি, আলোয় আমার
হাত পুড়ে যায়
অন্ধকারে মানুষ দেখা সহজ ভেবে ঘূর্ণিমায়ায়
অন্ধকারে মিশে থেকেছি
কেউ আমাকে শিরোপা দেয়, কেউ দু’চোখে হাজার ছি ছি
তবুও আমার জন্ম-কবচ, ভালোবাসাকে ভেলোবেসেছি
আমার কোনো ভয় হয় না,
আমার ভালোবাসার কোন জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় না।।
বড় বেশি উচ্চকিত মনে হয় আজকাল:-)
"তারাপদ রায়ের প্রায় সব কবিতাই তাই। কঠিন শব্দ, কঠিন বাক্যবন্ধ, কঠিন উপমা - এর ব্যবহার কম, প্রায় নেইই বলা যায় -- কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকে এক শান্ত প্রগাঢ় জীবন দর্শন"
ওনার গল্পগুলো ও তাই । অনেক রকম ভাবে পড়া যায় । সহজ সরল গল্প বলা, কিন্তু তার মধ্যে আপনি যেমন লিখলেন "শান্ত প্রগাঢ় জীবন দর্শন" টা বেশ বোঝা যায় । মাতাল সমগ্রর গল্পগুলোই ভাবুন না একবার । প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গ, সাটল , কিন্তু লোক দেখানো হামবাগ লেখার স্টাইলে নয় । এইটা একটা দারুন ব্যাপার ছিল তারাপদ রায়ের লেখায় ।
দিচ্ছে তো বটেই ।
ইয়ে , কে দিচ্ছে? সুনীল? সেটা আমি ঠিক ধরতে পারলাম না তাই বললাম ।
তারাপদ রায়ের নিজের কথায় - -
"... কবিতা লিখতে আমার চমৎকার লাগে, তার জন্য আমার কোনো পরিশ্রম হয় না। কবিতা লেখায় আমার কখনই কোনো ক্লান্তি হয় না। সত্যি বলতে কি, আমি যখন ইচ্ছা, যত ইচ্ছা কবিতা লিখতে পারি। লিখি না তার কারণ লজ্জা করে, আর একেক সময় এ-ও ভাবি কেন লিখবো কার জন্যে লিখবো।
... ... উনিশশো তিপান্ন-চুয়ান্ন সালে আমি চতুর্দিকে অসংখ্য কবিতা পাঠাতে আরম্ভ করি। তার শতকরা পাঁচটি কবিতাও ছাপা হতো না। অবশ্য অতি অল্পদিনের মধ্যেই আমি এই কঠিন সমস্যার সমাধান করে ফেলি। কলেজে পড়তে পড়তেই সুখেন্দু মল্লিকের সঙ্গে দুজনে মিলে 'পূর্বমেঘ' নামে একটা কাগজ বের করে ফেলি। কেউ না ছাপুক, আমাদের লেখা আমরা নিজেরাই ছাপবো। কাগজটি বহু কষ্টে তিন চার বছর চলে তারপর যথারীতি উঠে যায়।
... ...
সেই অর্থে সাহিত্যের ব্যাকরণে যাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা বলে তা হয়ত সচেতন ভাবে আমি কখনো করি নি । প্রথমদিকে বন্ধুদের দেখে ছন্দ নিয়ে কিছু কারিকুরি করার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আমার ছন্দের কান খুব ভালো নয়, তাছাড়া আমি যে ধরনের কবিতা লিখি তাকে সুললিত ছন্দে প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব। তবুও তাৎক্ষণিক চমকপ্রদ মিল বা ছন্দের দিকে একটু ঝোঁক আমারও একসময় ছিলো, একবার কয়েকটা প্যাটার্ন কবিতা লিখেছিলাম বরফি বা ত্রিভূজের মতো, দু মাত্রা, ক্রমশ বেড়ে গোয়ে ছাব্বিশমাত্রা পর্যন্ত তারপর আবার হয়তো ক্রমশ কমে গিয়ে দু মাত্রায়
... ...
আমি কখনো এমন কিছু লিখি না যা স্পষ্ট নয়, যা বুদ্ধিগ্রাহ্য নয়, যা আমি নিজে জানি না বা বুঝি না। ধোঁয়াটে বা অপরিচ্ছন্ন উক্তিতে আমি বিশ্বাস করি না এবং স্বীকার করতে দ্বিধা নেই আজ পর্যন্ত এমন কোনো পাঠক বা পাঠিকার আমি সন্ধান পাইনি যিনি বলেছেন, আমার কবিতা তিনি বুঝতে পারেন নি
... ...
যা সহজ বোধগম্য নয় তা যেমন আমি লিখিনি, তেমনি আমি কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি মুখের ভাষায়। যে ভাষায় আমরা প্রতিনিয়ত কথা বলি আমাদের সেই মৌখিক ভাষাকে আমি কবিতায় নিয়ে যেতে চেয়েছি। এই জন্যে পয়ারে বা মুক্ত পয়ারে লেখাও এখন একেবারে কমে গেছে, নেহাতই কথ্য ভাষায় এখন আমি আমার পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিতে চাই দু-একটি স্বপ্ন, দু-একটি কল্পনা, কিছু দৈনন্দিতা।
... ... "
গুড ফাইন্ড। তর্কের অবসান।
তালে শক্তির কোনটা ছিল?
অরিন, ওই যে নবীন কিশোরকে দিচ্ছে বলছে যে! দিচ্ছে না?
এই তর্কের কথা মনেই নেই। তাহলে সুনীল বলেই মেনে নিই।
দিচ্ছে না? ভাইলভুইল দিল? ভুজুং ভাজাং? ঃ-)
আ চৈ শক্তি না সুনীল সেই নিয়ে ন্যাড়াদার সঙ্গে প্রাচীন কালেও একবার কথা হয়েছিল কিন্ত আমার নিজের স্মৃতিশক্তির ওপর তেমন আস্থা নেই আর কলকাতা গেলে খুঁজতে মনে থাকে না তাই শক্তিই মেনে নিই, তবে ক'দিন আগে সুনীলের এই নামে একটা ছোটদের বই খুঁজে পেয়ে আবার মনে হলো, আসলে কার!
"আরে ব্যাটা, নারীরা কি বাজার থেকে কিনে আনা সওদা? তোর সম্পত্তি? নদী টদী, দেশ টেশ যা খুশি দে, নারী দিতে চাস কোন আক্কেলে?"
কিন্তু কে দিচ্ছে?
সুনীল তো দিচ্ছে বলে মনে হলো না ।
;-)
আর সুনীলের এক পেটেন্ট জিনিস হল, এক সুন্দরী তরুণী যে কিনা সবসময় হাসিখুশি, কারণ পৃথিবীতে সে বেড়াতে এসেছে। বেড়াতে গিয়ে গিয়ে কেউ অখুশী থাকে?
যেন পিগম্যালিয়ন সিন্ড্রোম। তুই মূর্তিমাত্র, আমি তোকে বানিয়েছি আমার মনের মতন করে, তাই তুই থাকবি সদা সর্বদা।
এই পুরো মদ আড্ডা কমলকুমার খালাসীটোলা বিনয় পাগল হয়ে গেল---এই সমস্তটাই কী ঘোরতর উচ্চকিত পিতৃতান্ত্রিক!
এগুলো বাড়াবাড়ি!
নদী আর দেশই কি বাজার থেকে কিনে এনেছে?
এরা হচ্ছে সব মিটমিটে শয়তান। মুখে বলবে "আহা হাঁটু মুড়ে পায়ের কাছে বসি, তোমার প্রেমের ভিখারী, হে দেবী করুণা করো"এই টাইপের খোসামুদি করবে, অথচ আড়ালে সখাদের সঙ্গে হলেই তখন নারী তার সম্পত্তি ।
তোমাকে দিলাম...একখানা নদী, দু’তিনটে দেশ, কয়েকটি নারী " ---কীরকম শয়তান দেখেছেন? রন্ধ্রে রন্ধ্রে দাসমালিক মনোভাব। আরে ব্যাটা, নারীরা কি বাজার থেকে কিনে আনা সওদা? তোর সম্পত্তি? নদী টদী, দেশ টেশ যা খুশি দে, নারী দিতে চাস কোন আক্কেলে?
ছড়ার দাম ছসিকেতে মনে রাখার ছড়া ছিল। শক্তির -
আ চই আ চই চই-চই-চই
হিঙ্গুলপুকুরের হাঁসগুলো কই।
সবই ঠিক আছে, তাই বলে সুনীল কে উপেক্ষা করবেন না ভগবান পাপ diben.
কমল কুমার মজুমদারের কিছুই পড়িনি। শুধু আবছা মনে পড়ছে, একটা সিনেমা দেখেছিলাম "অন্তর্জলি যাত্রা" নামে। সেটা কি কমলকুমারের লেখা কাহিনির উপরে ভিত্তি করে? নাকি অন্য কারুর?
তারাপদ রায়ের কবিতাগুলো যেন আমাদেরই কথাগুলো, যা আমরা বলতে পারিনা, যাঃ, এ আবার কী করে বলি, এই সঙ্কোচে। অথচ অনুভব করি ভীষণভাবে। সাদামাঠা গাঁ মফস্বলী মানুষের প্রতিদিনের আশা আকাঙ্ক্ষা স্বপ্ন সাধ ভয় অসহায়তা আর্তি সব কিছু মৃদু নরম গলায় যেন বলে যাচ্ছেন, আর সেগুলো কবিতা হয়ে উঠছে।
সুনীলের কবিতায়( শুধু কবিতা কেন, গপে টল্পেও ) একটা "সুবর্ণকঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা" টাইপ ব্যাপার থাকে, একটু উচ্চপর্যায়ের সমাজ, পাইলট দাদা, নিজেদের প্রাইভেট গাড়ি চড়া রেশমীশাড়ী পরা শকুন্তলা টাইপ ব্যাপার থাকে, কিন্তু তারাপদ রায়ের লেখায় ওই দূরত্বটা নেই, একেবারে চেনা হাট বাট মাঠ গাঁ মফস্বলের কাহিনি, কোথাও কোনো এক্স্ট্রা সাজসজ্জা কৌশল নেই, সোজাসুজি মন টেনে নেয়।
তারাপদ রায়ের প্রায় সব কবিতাই তাই। কঠিন শব্দ, কঠিন বাক্যবন্ধ, কঠিন উপমা - এর ব্যবহার কম, প্রায় নেইই বলা যায় -- কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকে এক শান্ত প্রগাঢ় জীবন দর্শন
Atoz ০১:৩১ - ওয়েলকামঃ)
ছোটবেলায় ছড়ার দাম ছ'সিকে বলে একটা বইয়ে পড়েছিলাম এই কবিতাটা, আরো ভালো ভালো কবিতা ছিল ওখানে, যেগুলো ঐ বয়সে ছড়া হিসেবে পড়তেও অসুবিধে হয়নি!
খেয়েছে, আমি তো জানতামই না যে ওলকপি আর শালগম আলাদা জিনিস। আমার ধারণা ছিল ঢেঁড়স আর ভিন্ডি যেমন একই জিনিসের দুটো আলাদা নাম সেরকম ওলকপি আর শালগম একই জিনিসের দুটো আলাদা নাম।
রঞ্জনদা,
ওটা কঠ মনে হয় । কঠোপনিষদ । নচিকেতার কাহিনিটা ।
থ্যাংক ইউ এল সি এম। এই কবিতাটা একটা অসাধারণ কবিতা। কোনটা যে চন্দ্রমল্লিকার ফুল আর কোনটা যে সূর্যমুখী... পুরো কবিতায় চমক লাগানো শব্দ বাক্য কিছুই নেই, অথচ সবটা মিলে একটা কী ভালো কবিতা হয়ে উঠেছে!
ওলকপি আর শালগম আমিও আলাদা করতে পারি না। তবে সূর্যমুখী চিনি। ডালিয়া আর চন্দ্রমল্লিকা আলাদা করতে পারি না। ঃ-)