কবি তো কনফিউশন স্বীকার করেছেন, বলেছেন যে কবিতা আর কবিতার মত কবিতা বুঝতে ভুল হয়ে যায়, আলাদা করতে পারেন না ---
***********************************
কোনটা যে চন্দ্রমল্লিকার ফুল
আর কোনটা যে সূর্যমুখী –
বারবার দেখেও
আমার ভুল হয়ে যায়,
আমি আলাদা করতে পারি না ৷
ওলকপি এবং শালগম,
মৃগেলের বাচ্চা এবং বাটামাছ,
মানুষ এবং মানুষের মত মানুষ –
বারবার দেখেও
আমার ভুল হয়ে যায়,
আমি আলাদা করতে পারি না ৷
বই এবং পড়ার মত বই,
স্বপ্ন এবং দেখার মত স্বপ্ন,
কবিতা এবং কবিতার মত কবিতা,
বারবার দেখেও
আমার ভুল হয়ে যায়,
আমি আলাদা করতে পারি না৷
***********************************
"বন্ধুদের করে দিও কালা" শুনে একটা এপিসোড মনে পড়ল ওরিজিনাল স্টার্ট্রেকের। সেখানে এক অদ্ভুত স্পেসিসের একজন অ্যামবাসাডর আসছেন, যার চোখের দিকে তাকালে লোকে পাথর হয়ে যায়। তাই সবাই সরে যাবে। তিনি একটা বাক্সের মধ্যে করে আসছেন। যিনি কথা বলবেন তিনি খুবই হাইটেক সেন্সর টেন্সর নিয়ে আসবেন, কিন্তু তিনি নিজে চোখে কিছু দেখতে পান না। সমাধান।
কোনটা ডালিয়া আর কোনটা চন্দ্রমল্লিকা কিছুতেই কবি আলাদা করতে পারেন না, এইরকম আরও অনেক কিছু ---এই নিয়ে একটা কবিতা আছে তারাপদ রায়ের। দিন না কেউ!
"শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম
শুধু কবিতার জন্য কিছু খেলা
শুধু কবিতার জন্যে এক হিম সন্ধ্যেবেলা
ভুবন পেরিয়ে আসা
শুধু কবিতার জন্য অপলক মুখশ্রীর শান্তি এক ঝলক,
শুধু কবিতার জন্য তুমি নারী
শুধু কবিতার জন্য এতো রক্তপাত
মেঘে গাঙ্গেয় প্রপাত
শুধু কবিতার জন্য আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয়,
মানুষের মতো ক্ষোভময় বেঁচে থাকা
শুধু কবিতার জন্য আমি
অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছি "
আচ্ছা বুঝেছি। সেক্ষেত্রেও ব্যাপারটা খুবই রিডার স্পেসিফিক। পাঠক নাটক চান না চান না তার ওপর নির্ভর করে। ভাস্কর চক্রবর্তীর কবিতার ড্রামা কোশেন্ট কম, আমার ব্যক্তিগতভাবে ড্রামা কোশেন্ট কম থাকলেই বেশি ভালো লাগে কখনো, আবার কখনো বেশি থাকলে। মুড নির্ভর।
কিন্তু এর বাইরেও কবিতার একটা দায় হলো একটা বৃহত্তর ভাবনার জগত খুলে দেওয়া। তারাপদ রায় সেই জায়গায় সফল। আয়নার মধ্যে কে আছে আর বাইরেই বা কে, কোনটা আমি, এই কথাটা একশো সতেরো রকম ভাবে বলা যায়। নাটক করেও বলা যায়, যৌনতা দিয়ে বলা যায়, ভায়োলেন্স এনে বলা যায় --- সমস্ত রাজনৈতিক সামাজিক প্রেক্ষাপট কাজে লাগিয়ে বলা যায়। আবার এগুলো কিছুই না করে বেশিটাই না বলে, পাঠককে ভাবানো যায়। তারাপদ রায় এটা করেছেন। আমার এটা দূর্দান্ত লেগেছে।
এই শেফালিকা কুড়িয়ে কুড়িয়ে জড়ো করে নরম পর্বত বানানোর কবিতাটা কী ভালো যে লাগে! অনেক ধন্যবাদ, হুতো।
কবিতা ভর করল, হয়ে গেলেন কবি। কবিতা নেমে গেল, ব্যস, মুক্ত, আর কবি নন। ব্যাপারটা অনেকটা চার্জের মতন। ঃ-)
এই যে আমার কবিতা আমারও ভালো লাগে না, তাই বলে কি আমি কবি নই, একশ বার kabi.
তারাপদবাবু অনেক স্মরণযোগ্য লাইন লিখেছেন। একটি তো আমার জীবনের ট্যাগলাইন -
আমারে বাচাল যদি করেছ মাধব,
বন্ধুদের করে দিও কালা।
তারাবাবুর নিজের কন্ঠস্বর আছে। টিম যে বলল, কবিতার শ্যামল গাঙ্গুলি, তুলনাটা ভাল লাগল। তবে কবিতায় তারাপদ কন্ঠ আরও নীচু। বিমল করও বলা যায়। তারাপদ রায়কে কবি হিসেবে কৃত্তিবাস দলের মধ্যে আমি শক্তির পরেই স্থান দিতে চাইব।
আর তার থেকেও বড় কথা, তারাপদ রায় কবিতাকে কখনও বিরাট সিরিয়াস কিছুভাবে নেননি। কবিতায় রসিকতা ঢোকাতে কোন দ্বিধা নেই। কিছু মধ্যবয়স্ক বাঙালি পুরুষের মতন সারাজীবন সিরিয়াসনেসের আর সিউডোনেসের চোঁয়া ঢেঁকুর তুলে যাননি। বা গেলেও, কবিতায় তা প্রচ্ছন্ন রাখতে পেরেছিলেন।
টিম, কেসিদা মনে হয় বলছে তারাপদ রায়ের সেই আবশ্যিক ড্রামা কোশেন্টটা নেই। (আমার মতে না থাকায় তত্ত্ব থেকে বিচ্যুতি হলেও কাব্যগুণের খুব ক্ষতি হয়নি)
মনোলগ সম্পর্কে আমি বিশেষ করে সোনালী সেনগুপ্তর কবিতার কথা বলব। ড্রামা কোশেন্ট খুব হাই। কবিতা নয়? :)
কেসিদা , কবিতাকে কি এভাবে কোয়ান্টিফাই করা যায়? এবং দুজন কবির কবিতার মধ্যে রেটিং হয় কি? আমার মনে হয় এইযে ব্যক্তিগত ভালো লাগা খারাপ লাগার কথা তুমি বলছো, বা ধর রিলেটিভ স্কেলেই, সেইটা তো খুবই ব্যক্তিগত জার্নি নির্ভর একটা ব্যাপার। আমিও মোটেই কবিতার কোন বিশেষজ্ঞ নই, এবং তাত্ত্বিক আলোচনা করবার ট্রেনিং নেই আমার। আমার মনে হয়েছে কবিতা নিয়ে সমস্যাটা এখানেই যে কোন কবিতা ভালো হয়েছে, বা আদৌ কবিতা হয়েছে সেটা নিয়েই জোরদার তর্ক আছে। আর তর্ক যেহেতু আছে তাই আমি সেই বিচারটা অ্যাভয়েড করি। আমার কাছে অমুক কবিতা ভালো বা খারাপ লেগেছে এরকম বলা যায়।
তারাপদ রায়ের কবিতা নিয়ে লিখবো ভেবেছিলাম, কারণ আগে তেমন করে না পড়লেও সম্প্রতি পড়ছিলাম । লিখিনি কারণ মনে হয়েছে অনধিকার চর্চা হবে আরো না পড়ে, না ভেবে কিছু লিখলে।
কবিতা নিয়ে কথোপকথন গুলো ভারি চমৎকার। এগুলো না হারিয়ে যায়। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আমরা অনেকেই (হয়ত, অন্তত আমার ও আরো কয়েকজন তাদের জানি), কবিতা সময় বিশেষে একেক রকম ভাবে প্রতিভাসিত হয়। এখন সে monologue হতে পারে, সে ছবি হতে পারে (ব্যাশোর হাইকু), এমনকি অন্য কেউ আমার জীবনের গল্প বলেছেন, আমি তাকে ফিরে শুনছি এখন, তাও আমার একেক সময় উপলব্ধি হয়েছে।
সে যাই হোক, স্যাম হান্ট, নিউজিল্যান্ডের শ্রেষ্ঠ কবির লেখা দিই, এই কবিতাটা আমার প্রিয়,
Tell me what
Tell me what I don’t know –
not what I know now
or what I’ll know tomorrow.
Tell me something new,
a story that will blow
this steady head apart.
Maybe that’s about where
the best stories start:
or you could go on, and on,
talking of the morning after:
the storm, the break up at sea.
And all of it gone,
gone down deep
where no one should go –
gone as that! . . Tell me
what I won’t know tomorrow.
কেমন লাগল?
ট্র্যাডিশনালি, মনোলগ ড্রামাটিক হওয়া বিধেয়, তাতে ভুল নেই অবশ্যই।
রামদেবের কীর্তি,
https://mobile.twitter.com/niiravmodi/status/1315998427126226945
@?, মনোলগের সঙ্গে এগুলোতে এক্সট্রা যেটা আছে, সেটা হল অসম্ভব রকমের ভালো একটা ড্রামা কোশেন্ট। যেটা প্রচারের প্যামফ্লেটের একটু আগে থেমে যায়। "তাহাদের কথা" গল্পটার মতন।
ইন্দ্রাণী আর আতোজ
হয়তো লিখবো কখনো
আরও দাও হুতো, এইরকম মনে রাখার মত লাইন তারাপদ রায় আর কটা লিখেছেন? মনোলগ হয়েও একটা ধাক্কা দ্যায়।
এরকম মনোলগ সুমন মান্না অনেক ভালোভাবে, অনেক বেশি যত্নে আমাদের দিয়েছেন, তারাপদ রায়ের থেকে সুমন মান্না যেকোনোদিন বেশি প্রেফার করব।
এক পাড়াতুতো ঠাকুমা জ্বর- সর্দি, পেটখারাপ, হাজা, মেয়ের বিয়ে, দাদুর চোটপাট সবেতেই গুরুদেবের নাম জপ করে একটা কাপড়ের পুটুলি কপালে ঠেকিয়ে দিতেন। অগাধ বিশ্বাস ছিলো ঐ গুণেই সব সেরে যাবে!
আজ আমার ঐ বুড়িমানুষটাকে মনে পড়লো:-)
এটা কি মনোলগ নয় @kc ?
নাকি এটা মনোলগ নয়?
সর্বনাশ করেছে, কবিতার তত্ত্ব নিয়ে আমার মোটে জ্ঞানগম্যি নেই, এসবের জন্যে আমি সবসময় মিঠুন একক সোমনাথ ওমনাথ এদের ডাকাডাকি করা প্রেফার করি।
এমনিতে মনোলোগ তো কবিতার স্বীকৃত ফর্মই, আর মনে রাখার ব্যাপার যদি হয়, যদিও সেটা কোন মাপকাঠি নয়, তবে ঐ ছিলাম ভালোবাসার নীল পতাকাতলে স্বাধীন, সবুজ পাশপোর্ট সবুজ পাঞ্জাবী - এইসব তো মুখে মুখে ফিরেছে, তারপর সেই একই বাংলাদেশ বলে একটা কবিতা আছে, গদ্যগুলি আছে, চারাবাড়ি পোড়াবাড়ি আছে।
ছোটবেলা থেকে আমার প্রিয় কবিতা (যতিচিহ্ন মনে নেই)ঃ
থাকতো একজন কাশের জঙ্গলে
চাইতো একজন মেঘের সরবত
অন্য একজন শেফালিকার তলে
বানাতো ফুল দিয়ে নরম পর্বত
অনেকদিন হল এসব ঘটেছিল
অনেকদিন হল পুজোর ছুটি চাই
পাগল একজন বলতো আমাকে
জানেন ছোটোবাবু আমার ছুটি নাই
কোন কবিতা মনোলগ নয় ?
ঠিকানা কবিতা ফর্ম মোনলগ
কিছু পৌঁছয় কিছু হয়তোবা অপেক্ষায় রয়ে যায়
তিমিকেও, ঐ ঐ ঐ...
হুতো, তুমিতো বেশ কবিতা (হ্যাঁ, কবিতাই) লেখো, কিছু লাইন বেশ মনে থাকে।
তারাপদ বাবুর লেখাগুলো কবিতা? নাকি মনোলগ (কোনও রকম উত্তেজনা ব্যতিরেকে)
একটা বিতর্ক আহবান করছি।
অশোক মিত্র লিখেছেন ক কু ম সম্পর্কে, যে প্রতিদিন সান্ধ্য আড্ডায় ক কু ম 'র প্রিয় বিনোদন ছিলো রসিয়ে গল্প করা যে সেদিন (বা সদ্য কোনদিন ) তিনি "ঢ্যাঙাবাবু" কে কেমন জব্দ করেছেন।
তারাপদ রায় নিয়ে কমেন্টটা খুবই অদ্ভুৎ। তবে আমরা যাঁদের সর্বজ্ঞ মনে করি তাঁরা যে আসলে তা নন এটা মাথায় রাখা দরকার। তারাপদ রায় খুবই আন্ডাররেটেড । এবং যথোচিত মনোযোগ দাবি করেন। আমার অনেক সময় মনে হয়েছে কবিতার যদি কোন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় থেকে থাকে (অতি সরলীকরণ হলো, তা হোক ) তাহলে তারাপদবাবু হলেন সেই ছায়া।
তারাপদ রিসাক্লড সিক জোক ছাড়াও দু'চার ছত্র লিখেছিলেন, আপামর তার খবর রাখেনি অনেক সময়ই। লাহিড়িবাবু সেসবের সন্ধান জানতেন না তা নিশ্চয় নয়, তবে কী লিখেছেন তার খতিয়ানে জোক ছাড়া আর কিছু ঠাঁই পেল না সেটা মজার ব্যাপার।
হতে পারে রাখার যোগ্য মনে করেননি, হতেই পারে।
কাল মিডিয়া নিয়ে কথা হচ্ছিল, মিডিয়াকে সরকারের লাগাম পরানো রিস্কি - সরকারের গলায় কে বকলস বাঁধবে? সরকার তো লাগাম পরাতেই চায়। সিদ্দিক কাপ্পান মাসখানেক হাজতে থাকবেন বোধয়। সরকার খুবই পরিস্কার মেসেজ দিয়ে দিয়েছে। রিয়া চক্রবর্তী তো একরকম। সে যে জি নিউজের ফেক স্টিং অপারেশন উমা খুরানা নামে এক শিক্ষিকাকে নারী পাচারকারী প্রতিপন্ন করে দিয়েছিল, এবং তারপর জনগন রাস্তায় হেনস্তা করলো - দিনের পর দিন এ চলেছিল। কিন্তু সুধিরভাইদের কিছুই হয় নি।
আর না দেখলেই হয় - এ কোন সমাধানই নয়। সংখ্যাগুরু চাড্ডি আছে, তারা তো দেখবেই।
এবং শেষ পর্যন্ত, খেরোর খাতাতেও লোকজন পূর্ণাঙ্গ, সুচিন্তিত লেখাপত্র লেখে। এখন অংশগ্রহণকারী অনেক বেড়েছে, এত জনের লেখা খুঁটিয়ে পড়ে ব্লগ অ্যাকসেস তো ঠিক প্র্যাক্টিকেল নয়, তাই খেরোর খাতা তার প্রথম ধাপ।
এবার যেহেতু ব্লগ অ্যাকসেস দেওয়ার সময়, যাঁরা গুরুর 'চরিত্র' বিষয়ে জানেন তাঁদের কথা আলাদা, কিন্তু নতুন লেখকদের ক্ষেত্রে একটা এক্সপেক্টেশন সেট করে দেওয়ার ব্যাপার ছিল। খেরোতে যেহেতু সেটা হয় না, তাই যে যা খুশি লিখতেই পারেন। কাল বি-দা জিগ্গেস করছিলেন খেরো এমজাল কিনা। তো, এক হিসেবে সেরকম বলাই যায় বোধয়। তবে, ব্লগ অ্যাকসেস নেই এমন লেখকের সিরিয়াস বা পূর্ণাঙ্গ লেখাপত্রের জন্যেও খেরো ভরসা। (ডিঃ প্রথম ধাপ, কেন - ইত্যাদি এই ব্যাখ্যা কর্তৃপক্ষ দ্বারা ভেরিফায়েড নয়।)
মনে পড়েছে, মনে পড়েছে !
থ্যাংকিউ দময়ন্তী।
১) নাহ। পাথরে লেখা আর গুরুতে লেখা প্রায় একই ব্যপার। অশোকের শিলালিপি আর ইশানের খেরর খাতা একই ব্যপার। (তবে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ কল্লে হতেও পারে)
২) টই থেকে পুরোটা ব্লগে নেওয়া পাঠকের জন্য সুবিধেজনক। এছাড়া ব্লগে ধারাবাহিককে ১,২,৩ করে সুতোয় গাঁথা যায়।
৩) এই ছবিতে কমলা ডিমের মধ্যেযে চিহ্ন আছে ওটায় ক্লিকালে দুটো অপশান আসবে গুগল আর ফেসবুক। যেটা দিয়ে সুবিধে লগিন করতে অর্থাৎ ইউজার আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে ঢুকতে হবে।