দ্যাখেন,ঈশ্বর আছে যখন,ধর্মের জয় হবেই।তক্কো কইরে লাভ নেই।
নদীর ধারে বসে, খেতের দিকে চেয়ে খুব খানিকটা ভাবছিল লেন চো। গায়ে তার অসুরের শক্তি, খেটেছেও খুব চাষের জন্য।খালি ভগবান একটু বৃষ্টি দিলেই ব্যাস।
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটুকরো মেঘ। মনে হয় বৃষ্টি হবে।বাড়ি গিয়ে খেয়ে দেয়ে ঘুম।
সকালে উঠে অবাক। একি,পুরো মাঠ সাদা শিলায় ঢেকে গেছে। সব্বনাশ!পরের ছ মাস আধ পেটা খেয়ে থাকতে হবে।
বউ বললো, জীব দিয়েছেন যিনি,আহার দেবেন তিনি।ঈশ্বর কে ডাকো।লেন চো প্রাণপণে সারা রাত ঈশ্বর কে ডাকে।সকাল বেলায় প্রত্যয় হলো,ঈশ্বর আছেন,সব কিছু বুঝতে পারেন।
সুতরাং ঈশ্বর কে চিঠি দিয়ে জানানো হোক।লেন চো কিনা একা শিক্ষিত এই গ্রামে,তাই ঈশ্বর কে জানালো,তার খুব কষ্ট,জলদি একশো পেসো পাঠান।
পরদিন,খামে ডাক টিকিট সেঁটে,ওপরে ঠিকানা লিখলেন টু ঈশ্বর। পিয়ন চিঠি দেখে তো অবাক! বড় বাবুকে দেখালো।ঈশ্বরের ঠিকানা কারো জানা নেই কি না!তাই চিঠি খোলা সাব্যস্ত হলো। বড় বাবু গরীব কৃষকের সরলতায় মুগ্ধ হয়ে কিছু অর্থ মঞ্জুর করলেন;অন্য কর্মচারীরাও কিছু কিছু দিলো।তবু একশো পেসো হলো না।
পরদিন ই লেন চো ডাকঘরে হাজির ,জবাব এসেছে কি না জানতে।পিওন হেসে তার হাতে সিল করা খাম তুলে দিলো।
খাম খুলেই লেন চোর আক্কেল গুড়ুম।কাঁপা হাতে চিঠি লিখতে বসলো।ঈশ্বর,তুমি এর পর থেকে,অর্থ ডাক মারফত পাঠাবে না। বড় বাবু ভীষণ চোর।ত্রিশ পেসো,গায়েব করে দিয়েছে।
sm তাতে কি এল গেল? প্রভুপাদও ওরকম, তা বলে কি ভন্ড নয়? এরা সব শ্রুড ধর্মগুরু। প্যাকেজ করে ভুজুংভাজুং বেচতে পারলে সাহেবরা নিয়ে নেয়। ডলার আসে। রামকৃষ্ণ মিশনও একই জিনিস। মাদুলি কবজ দেয় না বলে কি এদের ছাড় দিতে হবে নাকি? আর বৈরাগ্য? দেবেন ঠাকুরও পাহাড়ে গিয়ে ভন্ডামি করত মশাই, তা বলে ঠিক সময় খাজনাটি গুণে নিতে ভুলত না। বুদ্ধরও দেখুন গিয়ে রাজারাজড়ার মাথায় হাত বুলিয়ে চলত হয়ত। ওদিকে প্রজাদের ট্যাক্সো বাড়ত।
"শেষ পর্যন্ত জয় বরাবর ধর্ম আর মানুষের শুভবুদ্ধিরই হয়েছে, হয়, ও হবে" - শেষ কোনটা? যদি সবকিছুর শেষ হয় তাহলে তাতে ধর্মের জয় হল বা হল না - কী আসে যায়? আর যদি অধ্যায়ের শেষ হয়, তবে পরের অধ্যায়েই আবার অধর্ম নতুন করে ফিরে আসতে পারে। বারবার আমরা তাই দেখেছি। হিটলার মরে গেলেই আসে হিরোশিমা। বৃটিশ রাজ গিয়ে লাইসেন্সরাজ। আদবানি লাথি খেলে নরেন উঠে আসে।
"ইসে, ধর্মের লোক জয়ী সর্বদা হচ্ছে না কেন? আপনার কি মনে হয়? ঘোর কলি?" - হচ্চ্চে তো! যে জিতছে তারটাই ধর্ম পরাজিতেের অধর্ম
দাদা,বুদ্ধ দেব কে একটু ছাড় দিন না, প্লিজ।খুব ভালো মানুষ।কারোর ক্ষতি করেন নি(ছেলে,বউ ছাড়া)।
ভারী ভদ্র লোক। স্বল্পাহারী,বিলাস ব্যসন বর্জিত মুক্ত পুরুষ।মানুষ কে সর্বদা ভালো উপদেশ দিয়েছেন।অহিংসা পালন করো, সত্যি কথা বলো,সৎ চিন্তা করো,সৎ ভাবে বাঁচো।ইত্যাদি। কোন অলৌকিক,ম্যাজিক ইত্যাদির কথা পাড়েন নি। এক কথায় ঠান্ডা মাথার লোক।
ধর্মগুরুদের মধ্যে বুদ্ধকে দেখি বরাবর ছাড় দেওয়া হয়। মনু, যীশু, হজরতের যেখানে স্বপনকুমার স্ট্যাটাস, বুদ্ধ সেখানে শেক্ষপীর। এই বিপাসনা ফিপাসনা আর রামদেববাবার যোগা তো একই পয়সার এপিঠওপিঠ। এত উলুতপুলুত হওয়ার কি আছে?
একদম খাঁটি কথা বলেছেন।গীতার শ্লোক ও সেই কথাই বলছে।কিন্তু ধৈর্য্য রাখাটাই বড় কথা।
এই কোভিড এর সময়,কিছু বিলিয়নেয়ার আমেরিকায়, প্রাইভেট জেটে করে উড়ে; এল এ তে জড়ো হচ্ছে।র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করিয়ে;পনেরো মিনিটের মধ্যে রেজাল্ট জেনে নিচ্ছে।তারপর শুরু হচ্ছে উদ্দাম পার্টি।খাও,জিও পিও।কোথায় এম্প্যাথি,কোথায় কি?
অধর্মের জয় বলে যেটা মনে হচ্ছে সেটা সাময়িক।
শেষ পর্যন্ত জয় বরাবর ধর্ম আর মানুষের শুভবুদ্ধিরই হয়েছে, হয়, ও হবে। অধর্ম না থাকলে আর ধর্মের উপলব্ধিটা হবে কি করে বলুন?
অধর্মের তো জয় হবেই।কারণ অধর্মের শক্তি বেশি। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের বিপক্ষে তিন জন সমকক্ষ যোদ্ধা ছিলো। দ্রোণ, কর্ণ,ভীষ্ম।
কিন্তু কথা হলো ওই
যদা যদা হি ধর্মস্য,গ্লানির্ভবতি ভারত
অভ্যুত্থানম ধর্মস্য,তদাত্মনম সৃজনমহম।
পরিত্রানায় সাধুনাম, বিনাশায়চ, দুস্কৃতাম,
ধমসংস্থা পুনর্থায়ও,সম্ভবামি যুগে যুগে।
"অরিন ,ধর্মের লোক জয়ী হলে,সর্বদা এমন হয় না,বোধ হয়।অশোক বুদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে, ধর্মা শোক হয়ে ছিলো।"
ঠিকই, আমিই জেনেরেলাইজ করে ফেলেছি।
তবুও একটা কথা মনে হয় বলা যেতে পারে যে, যে লোকটির প্রাথমিকভাবে ধর্মচর্চা করার কথা, সে যদি সে সব ফেলে রাজত্ব করতে আসে, ব্যবসা ফেঁদে বসে সে এক রকম। আর যিনি মনে করুন চণ্ডাশোক থেকে ধর্মাশোক হয়ে রাজত্বের একটা ট্রানসিশনে যান, এদের দুজনের মধ্যে একটা তফাৎ থাকে। মানে আপনার কাজের ক্ষেত্রটা এক রইল, ধর্মের Philosophical দিক থেকে আপনার চিন্তাভাবনার উত্তরণ হল, সে একরকম ব্যাপার, আর আপনি আদতে ধর্ম প্রচার করতেন, এখন দুম করে "রাজা" হয়ে গেলেন, তখন ব্যাপারটা অন্য রকম হলেও হতে পারে | মনে হয়। জানি না।
অরিন ,ধর্মের লোক জয়ী হলে,সর্বদা এমন হয় না,বোধ হয়।অশোক বুদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে, ধর্মা শোক হয়ে ছিলো।
ইতিহাসে এমন উদাহরণ আরো আছে। বুদ্ধ ধর্মের যে দিকটা আকর্ষণ করে,তাহলো এম্প্যাথি ও নিজের আত্মিক উত্তরন।এটা আপনি ই পয়েন্ট আউট করেছেন।
গান্ধী, আম্বেদকর দুজনেই অহিংসার কথা বলেছেন বা ফলো করার চেষ্টা করেছেন।কিন্তু দুজনের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা থাকলেও মনান্তর তো ছিলো। আফটার অল হিউম্যান বিইং ।কিছু ভ্রান্তি তো থাকবেই।
"অরিনদা, মায়নামার কি শ্রীলংকার বৌদ্ধ শাসকদের নিয়ে কী মত? ক্ষমতার বোধহয় আর অন্য কোন ধর্ম হয়না!"
সাংঘাতিক বদমাইশ !
ধর্মের লোকজন রাজনীতির ক্ষমতায় এলে যা হয়!
বৌদ্ধ নয় বটে, আমাদের উত্তর প্রদেশেও এক পিস "যোগী" আছে না?
"সর্বশ্রেষ্ঠ পথ হলেও সব সময় এফেক্টিভ কি না নিশ্চিত নই।"
আমি যতটুকু বুঝি, বৌদ্ধ ধর্মের সংস্কৃতিতে নজরটা শুধুই নিজের প্রতি রাখতে বলে, একলা মানুষ, সকলে সমষ্টিগত ভাবে যেভাবে ভাববেন। এবার আপনি যদি confrontation এর জায়গায় অন্যের ওপর জোর দেন ("মানে 'ওদের' জব্দ করতে হবে", ব্রিটিশকে জব্দ করা গেছে, জার্মান হলে, চেঙ্গিস খাঁ হলে হত কি? এতে করে ফোকাসটা অন্যের ওপর রাখা হচ্ছে), অহিংসক বৌদ্ধ সাধকের যুদ্ধ সেপথে যাবেই না, বা সেভাবে সে ভাববে না, কারণ তার ভাবনা চিন্তার জগৎটা নিজেকে নিয়ে। যার জন্য মনে করে দেখুন বুদ্ধদেবের আর অঙ্গুলিমালের সংঘাতের কাহিনি। সংঘাতের শেষে অঙ্গুলিমাল যখন ক্লান্ত হয়ে বুদ্ধদেবকে বলছেন, "আরে মশাই থামুন, অত দ্রুত চললে আপনার সঙ্গে যে তাল মেলানো যাচ্ছে না", বুদ্ধদেব তখন অঙ্গুলিমাল কে বলছেন, "আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই রয়েছি, ঘুরে মরছেন আপনি!" বৌদ্ধ ধর্মের আলোচনায় conflict resolution এর জায়গাটা ধরতে গেলে এই ব্যপারটিকে খেয়ালে রাখতে হবে|
ব্রুস লি'র উক্তি মনে করে দেখুন:
“If nothing within you stays rigid,
outward things will disclose themselves. Moving, be like water;
still, be like a mirror;
respond like an echo.”
(“শ্যানন লি: Bruce Lee: Wisdom for the Way.”)
"প্রশ্নটা হল, একটা দেশের মধ্যে ধরুন শখানেক বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠী (সেই ভাষাভিত্তিক সংস্কৃতির মনুষ্যগোষ্ঠী) আছে, তাদের মধ্যে দশখানা বড় বড় গোষ্ঠী। এদের মধ্যে একটি গোষ্ঠী সবাইকে দমিয়ে নিজেরা আধিপত্য নিতে চাইছে। এই অবস্থায় গৃহযুদ্ধের মতন পরিস্থিতি দেখা দিচ্ছে। দিন দিন অবস্থা ঘোরালো হয়ে পড়ছে।
এই অবস্থাটাকে অহিংসা নীতি দিয়ে কি কোনোভাবে সমাধান করা সম্ভব? যুযুধান গোষ্ঠীরা কিন্তু "বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনি" অবস্থায় আছে।"
দারুন ইন্টারেষ্টিং প্রশ্ন । সংক্ষেপে উত্তর: "অন্যায় ও উন্মত্ততার প্রতিরোধ অতি অবশ্যই বৌদ্ধ মতে সমাধান করা সম্ভব; শুধু সম্ভব নয়, আমার মতে ঐটেই সর্বশ্রেষ্ঠ পথ । ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত ভাবে, যেভাবেই দেখুন । "
বুদ্ধদেবের প্রদর্শিত পথ বললাম এই জন্য যে বুদ্ধদেবের অঙ্গুলিমাল কাহিনী তো জানেন । হিংসায় হিংসার ক্ষয় হয় না, একমাত্র পথ, মৈত্রী। আবার দেখুন, অঙ্গুত্তর নিকায় ৮৭ নম্বর "পত্তনী কুজ্জন" সূত্রে বুদ্ধদেব আজকের দিনে যাকে বয়কট বলা যেতে পারে, তার কথা বলছেন ,
" ভিক্ষুগণ, যখন গৃহীদের মধ্যে আটটি লক্ষণ দেখবেন, তখন ভিক্ষাপাত্র উল্টিয়ে রাখবেন, তাদের কাছ থেকে ভিক্ষা গ্রহণ করবেন না। কোন আটটি লক্ষণ? (১) যখন কেউ ভিক্ষুকে পারমার্থিক লাভ থেকে বঞ্চিত করতে চায়; (২) যখন কেউ ভিক্ষুদের ক্ষতি করতে চায় ; (৩) যখন কেউ ভিক্ষুদের কোনো জায়গায় অবস্থান করতে দিতে না চায় (৪) ভিক্ষুদের অপমান করে, কটু কথা বলে ; (৫) ভিক্ষুগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায় ; (৬, ৭, ৮) বুদ্ধ, ধম্মা সংঘ নিয়ে অপমানজনক বাক্য ব্যবহার করে
"
(URL : https://tipitaka.fandom.com/wiki/AN8.The_Book_of_Eights-ver2)
বৌদ্ধমতে যেহেতু ভিক্ষুরা সাধারণ মানুষের প্রতিভূ কারণ তাঁদের সাধারণ মানুষের ওপরেই পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় এর নানা রকম ইন্টারপ্রিটেশন হতে পারে, তবে এই একটি সূত্রে সাধারণ মানুষকে সংঘবদ্ধ করে অত্যাচারের ও সামাজিক অন্যায়ের প্রতিরোধ করার নির্দেশিকা রয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে।
আধুনিক পৃথিবীতে গৃহী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী মিলে এর বেশ কয়েকটি উদাহরণ আছে যেখানে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা সাধারণ মানুষকে আগ্রাসীদের প্রতিরোধ রুখে দিতে পথ দেখিয়েছেন । অনেকটা লেখার মত সময়ের অবকাশ নেই, হাতের কাছে দুটো উদাহরণ দিই :
১) কম্বোডিয়ার গান্ধী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী প্রিয় মহা ঘোষানন্দ গৃহ যুদ্ধ চলাকালীন মানুষকে সংঘবদ্ধ করে ল্যান্ড মাইন পরিবৃত মাঠের মধ্যে দিয়ে হেঁটে গিয়েছিলেন তাদের হারানো জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি নিয়ে। সে এক অসামান্য প্রতিবাদ।
(https://tricycle.org/magazine/likably-unlikely-monk/)
২) ১৯৯০ এবং ২০০৭ সালে ব্রহ্মদেশের বৌদ্ধ সন্ন্যাসী রা সেদেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মূলক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন ভিক্ষাপাত্র বয়কট এর মাধ্যমে।
কাজেই সম্ভব।