পিকে-র এই খবর আজকের কাগজে কেন? এসব লোককে লাগছেই বা কেন? কেজরি কেন বলেছিলেন যে শাহিনবাগের জমায়েত তিনি লাঠি চালিয়ে তুলে দিতে পারেন? তারপরে পাল্টি খেলেন কেন? ভোট পার্সেন্টেজ কমল কেন? কে জানে!
আমি আর যাই হোক কোনও ভাবেই তিনো নই। আমি বৃহত্তর আঙ্গিকের কথা, বৃহত্তর রাজনীতির কথা বলতে চাইছি আপ প্রসঙ্গে। আপ হচ্ছে আউট অ্যান্ড আউট একটা মিডল ক্লাস পার্টি যে মিডল ক্লাস এই সো কলড উন্নয়ন-টুন্নয়ন খুব ভালো খায়। কিন্তু আপের জয় উন্নয়নের কারণে হয়নি, হ্যাঁ ঠিক পড়ছেন, হয়নি। হলে ২০১৪তে আপের ভোট পার্সেন্টেজ ২০১৯এ প্রায় ২৫% কমে না। হলে ভোটের কিছু আগে পিকে-কে দরকার পড়ে না। শুধু উন্নয়ন দিয়েই জয়ী হওয়া যায়। পাশাপাশি বিজেপির সিট সেভাবে বাড়েনি ঠিকই কিন্তু ভোট পার্সেন্টেজ যথেষ্ট বেড়েছে অর্থাৎ গতবারের তুলনায় প্রায় ৮% বেশি। এটা যথেষ্ট আশঙ্কাজনক কারণ বিজেপি তার লং টার্ম স্ট্র্যাটেজিতে সফল।
এবার বৃহত্তর রাজনৈতিক আঙ্গিক। বিজেপির ঘোষিত শত্রু মুসলমান ও কমিউনিস্টরা এবং এর বয়স কম-বেশি ১০০ বছর। এই যে ম্যাঙ্গো পাবলিক বিজেপিকে হারিয়ে 'লেসার এভিল' মমতা, নীতীশ, নবীন, কেজরিওয়ালকে বেছে নিচ্ছে এটা মারাত্মক অশনি সংকেত। এর ফলে নীতিগতভাবে যারা বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে সেই বামেরা ক্রমশ প্রান্তিক ও গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে। এবং এই তথাকথিত 'লেসার এভিল'-রা যে যে কোনও মুহুর্তে বিজেপির জোটসঙ্গী হতে পারে (ওপেনলি বা গোপনে) তার একাধিক নজির আছে। এ রাজ্যে রাজীব কুমার তার অন্যতম দৃষ্টান্ত। ফলে আদতে যেটা হচ্ছে সেটা হল রাজ্যগুলোতে লেসার এভিল এবং কেন্দ্রে বিজেপি। পুরোটাই বিজেপির পক্ষে উইন-উইন সিচ্যুয়েশন এবং 'দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে যাবে না ফিরে' গেমপ্ল্যান। মনে রাখবেন কেজরিওয়ালের হনুমান মন্দিরে যাওয়ার ব্যাপারটাও। কাজেই যাঁরা মনে করছেন আপ জিতেছে মানে বিজেপি হেরেছে, তাঁরা আরেকটু গভীরভাবে বৃহত্তর প্যাটার্নটা ভাবুন।
এই আনন্দের বাজারে কিছু তির্যক কথা বলার জন্য দুঃখিত।
ডিসক্লেমার: আমি আর যাই হোক সিপিএম-ও নই এবং বাম= সিপিএম ফর্মুলায় বিশ্বাসী নই।
কেজরি পিকের কথাতেই চুপ ছিলেন, তবে কাশ্মীর নিয়ে ওনার অবস্থান একটুও সমর্থন করি না। তবুও এই বাজারে বিজেপির প্রতিটা পরাজয়ই ভাল খবর।
কিন্তু এতে বাংলায় বিশেষ কিছু এসে যাবে কি না আমার সন্দেহ আছে - বিশেষতঃ বইমেলায় পুলিশ যা দেখাল, তারপরে। এরা গন্ধ চেনে। একটাই ভরসা, বাংলায় বিজেপির মুখ বলতে এখনো ওই দিলীপ ঘোষ বা রাহুল জাতীয় আবালেরা। দেখাই যাক
এই আনন্দের সময়ে আপ সম্পর্কে দুটো তথ্য মাথায় রাখায় ভালো।
১. কেজরিওয়াল ৩৭০ সমর্থন করেছেন এবং ক্যা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এবং এক দিনের জন্যও শাহিনবাগে যাননি।
২. ভোটের বোধহয় মাস দেড়েক আগে হাত মিলিয়েছেন প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে।
সেই হিসেবে কিন্তু মমতার অবস্থান কেজরিওয়ালের তুলনায় বেশি বিজেপি-বিরোধী।