এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কালা চশমা 

    Jishnu Mukherjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩০ মে ২০২৪ | ২৯৩ বার পঠিত
  •                                              ১
    লরিটা চলে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর অবধি ধূলোগুলো থাকলো। রোদ্দুর মাখল। তারপর আর থাকল না। সবাই কি মাটিতে ঝরে পড়ল? কিছু পড়ল ইন্দ্রনীলের কালো চশমার উপর। ইন্দ্রনীল মুছল না। ইন্দ্রনীল কোনদিন মুছবেও না। অরুপ যেখান থেকে বাইকের গতি বাড়াল ইন্দ্রনীল খুব কাছেই ছিল তার। কাদা ছিটকে পড়ল ইন্দ্রনীলের কালো চশমায়। আগের দিন বৃষ্টি পড়েছে। তিনদিন হয়ে গেল, ইন্দ্রনীল নড়েনি, পড়েই আছে ওখানে। অরুপ দেখতে পায়নি তাকে। দেখলে নিশ্চয়ই থামত।

                                                 ২
    ইন্দ্রনীল যতদিন বেঁচে ছিল তার ঠিক দশদিন আগে ইন্দ্রনীল একটা ক্ষমতা পায়। অদ্ভুতভাবে। ডিমভাজা ভাজতে গিয়ে ডিম ফাটিয়েই সে দ্যাখে ডিমের মধ্যে একটা কাগজ। কাগজের একদিকে লেখা "কাঁচকলা খাও" আর অন্যদিকে লেখা "অতিরিক্ত কৌতূহল ভালো না।"

                                                ৩
    সবাই যা জানত না, পাগলা দাশু জানত...
    সবাই সেটা জানতে চাইল যা পাগলা দাশু জানত...
    সবাই সেটা জানল যা পাগলা দাশু জানত...
    গল্পটা জানা নিয়ে। জানার জন্যই গল্পটা। শেষে লবডঙ্কা।

                                                ৪
    ১এ আপনি জানলেন ইন্দ্রনীলের কথা, অরুপের কথা, লরির কথা। অরুপ জানল না ইন্দ্রনীলের কথা, লরির কথা। লরি জানল না অরুপের কথা, ইন্দ্রনীলের কথা। ৪দিন কেটে গেছে। ইন্দ্রনীল পড়ে আছে ওখানেই। পচছে। গন্ধ বেরোচ্ছে বাজে। এই গন্ধ পেয়েই বেশ কিছু কুকুর আসে তার পরের দিন। বৃষ্টি পরছিল বেশ জোরে যখন কুকুরগুলো ঠিক সেখানে পৌঁছয় যেখানে ইন্দ্রনীল ছিল। এখন বৃষ্টি টিপটিপ। ইন্দ্রনীল আর নেই। কুকুরগুলোও। কালো চশমাটা রয়ে গেছে।

                                               ৫
    একটা শব্দ। একটা গন্ধ। একটা আলো, টিউবলাইটের। ইন্দ্রনীল চোখ খুলে অরুপকে দেখতে পায়। মাছের মাথা দিয়ে মুগডাল খাচ্ছিল, ভাত খাচ্ছিল আর ভাবছিল অরুপ। ভাবছিল একটা চুটকির কথা। এটা কলেজে পড়াকালীন অর্কভা তাকে বলেছিল। একটা মুরগি দিম পাড়ত সোনার। সেটা বেচে একটা লোক বড়লোক হয়ে গেছিল। একদিন তার বৌ তাকে একটা বুদ্ধি দেয়। সোনার ডিম ফাটিয়ে সোনার অমলেট বানালে হয়তো বেশি সোনা পাওয়া যাবে। কারণ সোনার ডিমের খোসাও সোনার। সোনাই সোনা। এই শুনে লোকটা তার বৌকে বলে সোনা ভাজবে কিসে? এরপরে বৌ একটা সর্ষের তেলের নাম বলে, সেই নামটাই মনে আসছিল না অরুপের। মাছের কাটা গলায় আটকে অরুপ যখন ছটফট করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যায় তখন ইন্দ্রনীল তার আশ্চর্য ক্ষমতা প্রয়োগ করল। যেটার পর ইন্দ্রনীল ইন্দ্রনীল থাকে না, ৎঢ়নীল হয়ে যায়। 

                                              ৬
    ডিমের খোসাটা ডাস্টবিনে ফেলে বাটিতে মুড়ি নিয়ে ইন্দ্রনীল চানাচুর খুঁজছিল। কাগজটা আগেই পকেটে রেখে দ্যায় সে। একটু পেঁয়াজ হলে জমত। থাক গে। মাটিতে যে মুড়িটা পড়ল অনেকগুল পিঁপড়ে সেটা নিয়ে তাদের বাড়ি গেল। ইন্দ্রনীল ঘুমিয়ে পড়ল। ইন্দ্রনীল ক্যারাম খেলতে খেলতে অরুপকে পিঁপড়েদের মুড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলল, সে যে একটা কালো চশমা কিনেছে সেটা বলল। অদ্ভুত ক্ষমতার কথাটা বলল না। কাউকে কোনদিন বলেও নি।

                                              ৭
    মদ্যপ চালক ৎঢ়নীলকেই ধাক্কা মারে। ৎঢ়নীল মুহূর্তের মধ্যে ইন্দ্রনীলে পরিণত হয়ে পৌঁছে যায় যেখানে ও আরও পাঁচদিন থাকবে। ৎঢ়নীলের কথা লরি, অরুপ, মদ্যপ চালক জানত না।ইন্দ্রনীল জানত। ইন্দ্রনীল কিন্তু কাউকে বলেনি। আপনি তাও জানলেন ৎঢ়নীলের কথা, কালো চশমার কথা।
    আমি সেদিন ওই জায়গাটায় গিয়ে দেখলাম কালো চশমাটা আর ওখানে নেই।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.56.***.*** | ৩০ মে ২০২৪ ২০:০৪532512
  • এই লেখাটা আমার অত্যন্ত ভালো লাগলো। নেক্স্ট লেভেল লেখা। এ লেখা পড়ার জন্য পুরো কনশাসনেসকে এক জায়গায় এনে রাখতে হয়। তারপর লেখা তাকে আরো অন্য অন্য লেয়ারে নিয়ে যায়। বিশেষত এই লাইনগুলো -- "মদ্যপ চালক ৎঢ়নীলকেই ধাক্কা মারে।ৎঢ়নীল মুহূর্তের মধ্যে ইন্দ্রনীলে পরিণত হয়ে পৌঁছে যায় যেখানে ও আরও পাঁচদিন থাকবে।" ... মনে দাগ কেটে রাখলো। আমার ধারণা এই লেখাটা আমাকে আরো অনেকবার পড়তে হবে আর প্রতিবারই আরো নতুন মানে খুঁজে পাওয়া যাবে। 
  • | ৩১ মে ২০২৪ ১১:০৩532527
  • লেখাটা বেশ ভাল লাগল। 
    (কিন্তু বানান...  আর যতিচিহ্নের পরে স্পেস না দেওয়া...  এগুলো একটু ঠিক করে দিলে পড়তে চোখের আরাম হয়।) 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন