ছোটোবেলায় দোলের সময় পাড়ায় চুটিয়ে রঙ খেলেছ মধু। কৈশর পেরোতে পাড়ায় বিশেষ কাউকে - যাকে কেবল দেখেই গেছে বছরভর - কাছে গিয়ে কথা বলার মুরোদ হয়নি - তাদের বাড়ি গিয়ে মাসীমার পায়ে আবীর ছোঁয়ানোর ছলে তার গালেও একটু লাগিয়ে দিয়েছে। বিজয়াতে দলবেঁধে প্ল্যান করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভক্তি প্রকাশের ছলে মিষ্টিমুখ করার সে কী সুখ। সে সব একটা সময় ছিল - সশরীরে, মুখোমুখি আনন্দ উল্লাস ভাগ করে নেওয়ার।
সময়ের সাথে মানুষের মুখোমুখি মিথস্ক্রিয়ার সময়, সুযোগ (হয়তো ইচ্ছাও) কমে গেছে। এখন সঙ্গী মুঠোফোন। সোশ্যাল মিডিয়ায় দৌলতে (বা দাপটে) এখন ব্যক্তিগতভাবে বা নানা গ্ৰুপে নববর্ষে বা নানা উৎসবে এন্তার ডিজিটাল শুভেচ্ছা বার্তা আসে। তাদের কিছু দায়সারা। কিছু ফল, ফুল, কুলো, পাখা, গামছা, কলাপাতা, মঙ্গলঘট, রসগোল্লার হাঁড়ি সমেত। কিছু আসে চটকদার GIF বা স্টিকার চিপকে। একটাও স্ব-উদ্ভাবিত নয়। সব প্রফেশনাল কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের তৈরী। বেশিরভাগ শুভেচ্ছার একটা লাইন পড়েও মনে হয় না তা প্রেরকের হৃদয় হতে উৎসারিত।
এসব দেখে দেখে মধু তিতিবিরক্ত। ও কাউকে প্রতি-শুভেচ্ছা পাঠায় না। 121 কোনো মেসেজ এলে ভদ্রতা করে তাতে ডিজিটাল হার্ট সেঁটে উত্তর দিয়েই মেসেজগুলো ডিলিট করে দেয়। নয়তো ফোন ঝুলে যায়। ওর কাছে এ ধরণের ভার্চুয়াল ঢক্কানিনাদের বিন্দুমাত্র মূল্য নেই - বরং মেসেজ ডিলিট করে করে ও ক্লান্ত হয়ে যায়।
মধু ফেবুতে নেই। একান্ত একটি হোয়া গ্ৰুপে আগ্ৰহসহকারে আছে যেখানে সদস্যসংখ্যা মাত্র চারজন। ওরা চারজন একসাথে বেড়াতে গেছে, আড্ডা দিয়েছে। ওখানে নিয়মিত নানা আদানপ্রদান, রসিকতা হয়। ওখানে ভার্চুয়াল মিথস্ক্রিয়াতেও সামনাসামনি আড্ডা দেওয়ার মজা পাওয়া যায়। তাই ভালোও লাগে। এছাড়া ভদ্রতার খাতিরে আরো তিনটে হোয়া গ্ৰুপে আছে যেখানে সদস্য সংখ্যা যথাক্রমে ৩০ - ১৫৭ - ৩১৩. সেখানেও শুভেচ্ছা বার্তা আসার বিরাম নেই।
অন্য একটা লেখালেখির ফোরামে মধু প্রায়শই যায়। সেখানে কয়েক হাজার সদস্য। তবে সৌভাগ্যের বিষয় সেখানে কিছু পুরাতন গুরুজন ছাড়া বাকিরা বিশেষ কেউ শুভেচ্ছাবার্তা পাঠায় না। প্রত্যুত্তরও দেয় না। অবশ্য সে ফোরাম একটা হরি ঘোষের গোয়াল টু দ্য পাওয়ার ইনফিনিটি। তাই সেখানে কারুর কাউকে শুভেচ্ছার জবাব দেওয়ার দায় নেই। সে ফোরাম আছেও মেঘে - ফলে মধুর ফোনের মেমোরি খায় না।
তো ১৪৩১এর বাংলা নববর্ষে ঐ ১৫৭ নম্বর হোয়া গ্ৰুপে জনৈক “রামু” লিখলেন:
“নববর্ষে সবাইকে জানাই হার্দিক শুভকামনা। আশা করি আপনাদের সবার জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি আসবে। শান্তিতে ভরে উঠবে জীবন।”
বড় গ্ৰুপে মধু সচরাচর এসব বার্তার কোনো জবাব দেয়না। এক্ষেত্রে একটু মজা করতেই লিখলো:
“প্রথম বাক্যে প্রেরিত আপনার শুভকামনা গ্ৰহণ করলাম। দ্বিতীয় বাক্যে বর্ণিত সুখ তো একটি বায়বীয় ব্যাপার - যে যার মতো তার স্বরূপ নিয়ে ভাববে, পাবে বা না পেয়ে অসুখী থাকবে। তবে জীবনে সমৃদ্ধি কীভাবে আসবে, শান্তিতেই বা ভরে উঠবে কীভাবে জীবন - যদি একটু আইডিয়া দেন তো ভালো হয়।”
ও মা! তাতে রামুবাবু রেগে গিয়ে লিখলেন - " ধুর মশাই, বচ্ছরকার দিনে এসব ভালো ভালো কথা লিখতে হয় তাই লিখেছি। কীভাবে আসবে - আমি তার কি জানি? আরো অনেক কিছু তো আসার ছিল - সেসব তো “দিবস রজনী আমি যেন কার আসার আশায় থাকি” মোডে বছরের পর কাটিয়ে অবশেষে আশার ছলনায় ভুলতে বসেছেন। তাও যদি এতো জানার ইচ্ছা তো মুরোদ থাকে তো বিগুবাবুকে গিয়ে শুধোন না।"
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।