প্যারোডি ভালই হয়েছে।এখানেই লিখছি। কদিন যাবদ আমার যা অবজারভেশন।
রামমন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার সরাসরি সমপ্রচার আমি পুরোটাই দেখেছি। মূর্তির সৌন্দর্য নিয়ে আমার মত হচ্ছে, আমার চোখে মূর্তিটি সুন্দর লেগেছে। আমি শিল্পী নই, কাজেই শিল্পের গুণাগুণ জানি না। মন্দিরের ভেতরের কাজ যতটুকু দেখিয়েছে টিভিতে, যথেষ্ট সুন্দর।
জনগণের মধ্যে ভক্তির জোয়ার, প্রচুর মানুষের সমাগম, তীর্থে যাবার মত অনুভূতি, এগুলোর মধ্যে কোনও খাদ আছে বলে মনে হলো না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই করসেবকদের প্রথম দেখি ১৯৮৭তে পুরোনো দিল্লির লালকেল্লার অপোজিটে ফলের রসের স্টলগুলোর পাশে প্রচারে ব্যস্ত থাকতে। তারা ছোট্ট মাইক নিয়ে প্রচার করত, লিফলেট বিলি করত। এরপরে ১৯৯০ ও ১৯৯২ এর ঘটনা আমরা জানি। অনেক জল বয়ে গেছে সরযু নদী দিয়ে। সুপ্রীম কোর্টের রায় আমরা জানি। এখন মন্দিরের উদ্বোধনও হয়ে গেল। নতুন করে কোনও ঝামেলা হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে ঝামেলা পাকিয়ে যাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধি হবে, তারা যে কোনও ইশুতেই পাকাবে।
ধর্ম নিয়ে রাজনীতি ভারতবর্ষে বরাবর হয়ে এসেছে, ভবিষ্যতেও হবে।
ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বা না করা ব্যক্তিবিশেষের নিজস্ব অভিরুচি। জোর করে কারওকে নাস্তিক বানানো যায় না, এর হাতে গরম উদাহরণ সোভিয়্ত ইউনিয়ন। কয়েক জেনারেশন ধরে ধর্মাচরণ বন্ধ রাখার পরেও জনগণের ঈশ্বর বিশ্বাস রাষ্ট্রশক্তি চেপে রাখতে পারে নি। শুধু বেকারাই ঈশ্বর মানে বা ধার্মিক হয় — এমন ধারণা যদি কেও করে, তবে আমার পাল্টা যুক্তি হবে, তাহলে বোকারাই দুনিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ।
এরপরে কথা উঠতে পারে, যে উচ্চশিক্ষিত বা বিজ্ঞানমনস্কদের ঈশ্বরের অস্তিত্ব মেনে নেওয়া উচিত নয়।
এবারেও আমার নিজস্ব মত — না। এরকম কোনও মানে নেই। বরং আমি মনে করি কোনও এক বিশেষ শক্তির ওপর বিশ্বাস বা ভরসা রাখলে জীবনের অনেক স্ট্রেস কমে যায়, মানসিকভাবে অন্কটাই নির্ভার হওয়া যায়। বিশেষ করে সকলের মনের জোর ইস্পাতের মত কঠিন দৃঢ় নয়। তারা কেমন করে বাঁচবে? তাদের নিশ্চয় বাঁচার অধিকার আছে॥ তবে যাগের মনের জোর অনেক বেশি, তাদ্র জন্য এরকম ঈশ্বর বা ধর্ম বা দেবতার প্রতি নির্ভর করবার হয়ত দরকার নেই। তারা যদি জোর করে এগুলো চাপায় অন্যের ওপর, বা যারা বিশ্বাসী তাদেরকে তাচ্ছিল্য করে, সেটা তাদের নিজস্ব রুচির পরিচয়। এবং ভাইসি ভার্সা।
এর পরের কথা। ভারতের জনসংখ্যা বিপুল। এদেশে সংখ্যা গরিষ্ঠ হিন্দু হলেও, মুসলমান জনসংখ্যায় ইন্দোনেশিয়ার পরেই। কাজেই একটা ব্যালেন্স রেখে চলা দরকার। খামোখা মাইনরিটিদের উত্তেজিত করা বা উসকানি না দিলে, ঝামেলা বাধার সম্ভাবনা নেই। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সংখ্যাগুরু ধর্মীয় সম্প্রদায় ও সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুপাতটা ভারতের মত নয়। সেই সব দেশে সংখ্যালঘুরা চুপচাপ থাকে। সব দেশ নিরপেক্ষও নয়। কাজেই ভারতের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ানোর বা দাঙ্গায় ইন্ধন জোগানোর উপকরণ কম নেই।
আপাতত এই মন্দির নিয়ে কোথাও দাঙ্গা হচ্ছে বলে খবর পাই নি।
তবে হ্যাঁ, রাজনীতির লোকেরা বরাবরই ধর্মীয় সম্প্রদায়দের ব্যবহার করে মুনাফা লুটেছে। কিন্তু আবারও ঐ ডেমোক্র্যাটিক সিস্টেমে মতদান সবচেয়ে দরকারি বস্তু।
যে ঝামেলাটা হয়ে গেছে, তার নিষ্পত্তিও সর্বোচ্য আদালতের রায়ে সকলেরই জানা। এখন ভবিষ্যতে কী কী হতে পারে, কোথায় কোথায় রেপ হবে, কে রাকে মারবে, এগুলো নিয়ে স্পেকুলেশন করে টাইমপাস হতে পারে।
যারা রেপ করে, খুন করে, লুঠ করে, তারা যে ধর্মপরিচয়েরই হোক না কেন, তারা খারাপ লোক। এখন, কেন তারা খারাপ লোক, সেই নিয়ে আলোচনা অন্য ডিবেটের প্রসঙ্গ।
এরপরে আমাকে বিজেপি বলে দাগিয়ে দিলে কি তৃণূল বলে দাগালে, আমার কীই বা করবার আছে।