"বিজেপির আসনসংখ্যা কমলেও" - এটা অনেকটাই আন্দাজে বলেছি, যুক্তি তেমন নেই। আশা করতে ক্ষতি কি? বাংলা নিয়ে আমার কোন প্রেডিকশান নেই, পব নিয়ে সেরকম কোন ইন্টারেস্টও নেই।
সিএস একদমই ঠিক বলেছেন, বিভিন্ন জায়গায় সরকারের হস্তক্ষেপ বেড়েই চলেছে। আপনার বা অন্যদের বোধায় মনে আছে, বিভিন্ন সেক্টরে সরকারের উপস্থিতি কমানোর চেষ্টা শুরু হয়েছিল রেগ্যানের আমলে আর ইউরোপে সেটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেছিলেন মার্গারেট থ্যাচার, হেলমুট কোল ইত্যাদিরা। আর তার থিওরেটিকাল ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন মিল্টন ফ্রিডম্যান, অ্যালান গ্রিনস্প্যান, ফ্রিডরিখ হায়েকের মতো নিওলিবারাল ইকোনমিস্টরা। তারপর থেকে মোটামুটি দু হাজার সাল অবধি সরকারি হস্তক্ষেপ কমানোর চেষ্টা করা হয়, প্রাইভেট ক্যাপিটালকে যথেচ্ছ স্বাধীনতা আর সুযোগ সুবিধে দেওয়া হয়। কিন্তু ২০০৮ এর রিসেশানের পর আবার ব্যালেন্স অফ পাওয়ার সরকারের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে, আর ২০২০ এর প্যান্ডেমিকের পর তো সরকারি হস্তক্ষেপ বহুগুন বেড়ে যায়। ফেড এমন হারে টাকা ছাপায় যে রেকর্ড ইনফ্লেশান তৈরি হয়, সেটা সামলাতে আবার এখন ফেড ইন্টারেস্ট রেট বাড়িয়ে রেখেছে। এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দক্ষিনপন্থী বা ফ্যাসিস্ট প্রবণতা দেখা দিয়েছে, তার ফলেও সরকারের রোল আবার এক্সপ্যান্ড করছে। আঅমাদের দেশেও যে ফ্যাসিস্ট মোদি সরকার বিভিন্ন জায়গায় হস্তক্ষেপ করবে, তাতে আর আশ্চর্য কি!
যাই হোক, এবার ইকোনমি।
১। ২০১৪ এর পর থেকে ইন্ডিয়াতে ক্রোনি ক্যাপিটালিজম (আদানি আর আম্বানি) বহুগুন বেড়েছে, কাজেই আশা করা যায় আগামী পাঁচ বছরে এই ট্রেন্ড অব্যাহত থাকবে। তবে ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের ব্যাপারে কংগ্রেস আর বিজেপির কোন তফাত নেই, নব্বুইএর লিবারাইজেশানের কয়েক বছরের মধ্যেই এই ট্রেন্ড শুরু হয়ে গেছিল।
২। গত দশ বছরে বিজেপি যেমনভাবে ল অ্যান্ড অর্ডার, এন্ফোর্সমেন্ট, সোশ্যাল রাইটস সংক্রান্ত বিভিন্ন সরকারি এজেন্সির দখল নিয়ে ফেলেছে, সেভাবেই দুতিনজন ক্রোনি ক্যাপিটালিস্ট বিভিন্ন ইকোনমিক আর ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনের (যেমন সেবি, চেম্বার্স অফ কমার্স, ব্যাংক) দখল নিয়েছে আর এই ট্রেন্ডও অব্যাহত থাকবে।
(ব্যাংক দখলের একটা উদাহরন এই খবরে পাবেনঃ
আর এই রাইটঅফ এর ফলে ব্যাংক গুলো খুচরো লোন দিতে অনেক বেশী কড়াকড়ি করবে, ফলে স্মল আর মিডল এন্টারপ্রাইজ সেক্টরে লিকুইডিটির অভাব দেখা দিতে পারে। ইতিমধ্যেই কনজিউমার ক্রেডিটের রিস্ক ওয়েটেজ বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে সাধারন মানুষ ব্যাংক থেকে লোক নিতে গেলে বা ক্রেডিট কার্ড ব্যাবহার করতে গেলে বেশী ইন্টারেস্ট দিচ্ছেন)।
৩। বিজেপি সরকার ইনফ্রাস্ট্রাকচার সেক্টরে ম্যাসিভ ইনভেস্ট করেছে, যার ফলে পুরো দেশ জুড়ে মেগা ইনফ্রা বুম চলছে। যদিও এর অনেকটাই গুজরাট, ইউপি, এমপি বা রাজস্থানে সীমাবদ্ধ, তবে সেও খারাপ না। এর ফলে আগামী পাঁচ বছরে অবশ্যই এইসব জায়গাগুলোতে ইকোনমি ভালো হবে, ইনকাম বাড়বে, মানি সার্কুলেশান বাড়বে। আশা করা যায় যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাক্টিভিটিও বাড়াবে, যদিও তার বেশীরভাগ সুফল পাবে আদানি আর আম্বানির মতো দুতিনজন ক্রোনি ক্যাপিটালিস্ট।
৫। আগামী পাঁচ বছরে জিডিপি গ্রোথ রেট ৭-৮% হওয়ার কথা, যদি না কোভিড এর মতো আবার কোন এক্সটার্নাল শক আসে। এর মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া বা প্যালেস্টাইন-ইজরায়েলের মতো লোকাল কনফ্লিক্ট ধরছি না, কারন মার্কেট এগুলোকে অনেকটাই অ্যাবজর্ব করে ফেলেছে।
৬। উল্টোদিকে, ইন্ডিয়ার সোশ্যাল সেক্টরে ইনভেস্টমেন্ট অত্যন্ত কম বা আরও কমছে, ফলে হিউম্যান ক্যাপিটাল তৈরি হওয়ার হার আরও কমবে বলে মনে হয়। শিক্ষা আর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই গভীর সংকটে, আগামী পাঁচ বছরে এই সংকট আরও বাড়বে। আর ইন্ডিয়াতে কোন সোশ্যাল সেফটি নেট নেই, ফলে সাধারন মানুষ আরও বেশী করে বিপদে পড়বেন।
৭। শেয়ার মার্কেট অনেকটা বাড়বে, পাঁচ বছরে সেনসেক্স অন্তত ডবল হওয়ার কথা। ৩ ডিসেম্বর চার রাজ্যের ফল বেরনোর পরের দিন সেনসেক্স প্রায় চোদ্দশো পয়েন্ট বেড়েছিল, অর্থাত কিনা ইনভেস্টররা বিজেপির অতো ভালো ফল আশা করেন নি। তবে এখন অনেকেই নিশ্চিত যে ২০২৪ এ বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসবে, অর্থাত বিজনেস অ্যাজ ইউজিয়াল হবে। তাই যদি হয়, তাহলে এখন সেনসেক্স ৭০,০০০ এ আছে, পরের পাঁচ বছরে অন্তত এক লাখের ওপরে উঠবার প্রবল সম্ভাবনা। তাই যদি হয় তো মিউচিয়াল ফান্ড ইনভেস্টররা ভালো প্রফিট করবেন (বিরাট বড়ো করে ডিসক্লেমারঃ ইহা কোন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইস নহে, দয়া করিয়া কেউ এই প্রেডিকশানের বেসিসে ইনভেস্ট করিবেন না :-))