বিদ্যালয় উঠে যাওয়ার একাধিক কারণ।
১. সন্তান সংখ্যা কমে যাওয়া।
আগে আগে যেখানে এক দম্পতির চার পাঁচ জন ছেলে মেয়ে থাকতো, এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজন।
২. ইংরেজি মাধ্যমের প্রতি আসক্তি। ছেলে হলে ইংরেজি মাধ্যমে। মেয়ে হলে বাংলা মাধ্যমের একটু আশা আছে
৩. শিক্ষক শিক্ষিকাদের অশ্রদ্ধা ছাত্র ছাত্রীদের প্রতি। অভিভাবকের প্রতি
৪. শিক্ষক শিক্ষিকারা ৮০ ভাগ দূর থেকে আসেন।
এলাকায় সংযোগ কম।
৫. নিজেরা বেতন নেন সরকার পোষিত বিদ্যালয় থেকে মাইনে বাড়ানোর আন্দোলনে যত সক্রিয় পড়ানোতে তত নন।
৬. নিজেরা সরকারের বিদ্যালয়ের চাকরি করবেন আর ছেলে মেয়ে পড়াবেন ইংরেজি মাধ্যমে।৭. নয়ের দশকের শেষে এস ইউ সি দলের প্রাথমিকে ইংরেজি ফেরানোর আন্দোলন। তাতে ১৯৯৭ এ এস এবং আইয়ের সম্মেলনে তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর ধুনো দেওয়া এবং ডায়মন্ডহারবারে এস এফ আইয়ের এক সভা থেকে তৎকালীন এস এফ আই রাজ্য সম্পাদকের আল টপকা মন্তব্য। তার পরদিনই এস ইউ সি ঝোপ বুঝে কোপ মারতে সরস্বতী পূজার পরদিন বাংলা বন্ধ ডেকে দিল। পর পর তিন দিন শনি, রবি, সোম, বন্ধ মোটামুটি সফল। ব্যস। জ্যোতিবাবুও বলে বসলেন, ভাবছি।
৮. পবিত্র সরকার কমিটি বসল। নানা ধানাই পানাই করে, প্রাথমিকে ইংরেজি শিক্ষার বিরুদ্ধে বহু সওয়াল করে লেখা হল, জনমতের দাবিতে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে ইংরেজি ফেরানো হোক।
৯. অশোক মিত্র, অমিয় বাগচি, মৃণালিনী দাশগুপ্ত, অমিতাভ চৌধুরী, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় পরমেশ আচার্য, দেবেশ রায়, মালিনী ভট্টাচার্য, মিহির ভট্টাচার্য প্রমুখ আন্দোলন করলেন ভাষা ও চেতনা সমিতির ডাকে।
বিধানসভা অভিযান হলো। খুব গেট ঝাঁকালাম।
কিন্তু ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের ঢল নেমে গেল।
সরকার ঢালাও অনুমতি দিতে শুরু করল। শিক্ষা ব্যবসা জোরদার।
১০. জীবন ধারার ছাপ চেতনাকে গড়ে।
নেতাদের ছেলে মেয়েরা ইংরেজি মাধ্যমে গেলেন। ১৯৯৯ এ নতুন বেতন কাঠামো এল। এক একজনের দুই থেকে চার হাজার মাইনে বাড়ল। শিক্ষক শিক্ষিকারা নিজেদের উচ্চ মধ্যবিত্ত ভাবতে শুরু করলেন।
ক্রিকেট খেলার জগতে সৌরভ জাঁকিয়ে বসলেন।কোক পেপসি সিপিএম সম্মেলনে ফাউন্টেন বসিয়ে দিল। দেদার খাও। নজরুল মঞ্চে।
সল্ট লেকে সিটি সেন্টার নামক শপিং মল এল। বিগবাজার এসছিল বাগুইআটির পাশে ১৯৯৭এর পরে।
কমিউন্যালিজম বাড়ল।
কমিউনিজমের জায়গা নিল কনজিউমারিজম।
অনেকেই মনে করতে লাগলেন, ইংরেজি জানলেই ছেলের বিদেশে বাস পাকা।
১১. শিক্ষক শিক্ষিকারা একদল শিশুকে ইংরেজি মাধ্যমে ভর্তি করতে লাগলেন। নিজেদের অপদার্থ প্রমাণ করছেন জেনেও।
আর এখন তো এলাকায় থাকার ব্যাপার নেই।
বিবেক ব্যাপারটাও ধামাচাপা।
নার্সিং হোমে ভর্তি, রেস্টুরেন্টে খাওয়া, বেড়াতে যাওয়া, শপিং মলে বাজারের মতো ছেলে মেয়ে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে -- একটা সোস্যাল স্টেটাস হয়ে দাঁড়ায়।
এই কালিদাসরাও দায়ী।
এরপরে আরো বিষয় আছে
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।