এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বাকিসব

  • নতুন রূপকথা 

    &/
    বাকিসব | | ০৪ মার্চ ২০২৩ | ২৩৫১ বার পঠিত
  • প্রাচীন রূপকথার আদলে লেখা নতুন কাহিনি, মৌলিক রচনা । এরকম লেখা যদি আপনাদের থাকে, শেয়ার করুন না ! এই সেদিন দেখছিলাম একজন শিক্ষিত, বিনয়ী দুই কাঠবেড়ালি পাব্লো আর বাবলোকে  নিয়ে কী দারুণ রূপকথা লিখেছেন!  পরদিন লিখলেন গোলাপি কাক আর বেগুনী বাতাসার রূপকথা। এরকম সব। :-)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৫ মার্চ ২০২৩ ০১:১৯739599
  • কই গো কেকে ?কই গো চতুর্মাত্রিক ? কই গো অন্যেরা ?লেখা দিবেন না ?:-)
  • kk | 2601:14a:500:e780:54b3:ad94:a725:***:*** | ০৫ মার্চ ২০২৩ ০৭:৩০739601
  • অ্যান্ডর,
    আমি তো নতুন রূপকথা লিখিনা? পুরনো রূপকথাই দু চারটে বলেছিলাম। রূপকথা জীবনে একটাই লিখেছিলাম। আর কোনদিন আমার দ্বারা ঐ জিনিষ হবে বলে মনে হয়না। আমি যদি নতুন রূপকথা কিছু পড়ি, তাহলে এখানে শেয়ার করবো অখন।
  • &/ | 107.77.***.*** | ০৫ মার্চ ২০২৩ ০৮:৩৪739602
  • হ্যাঁ হ্যাঁ প্লীজ । নতুন রূপকথা সব সময় ফ্যাসিনেটিং হয় 
  • :|: | 174.25.***.*** | ০৫ মার্চ ২০২৩ ১৭:০৬739603
  • ওবাবা আমাকে ডাক দিলেন! কিন্তু মন্তব্য ছাড়া আর তো কিছু লিখিনা :) তো এই বিষয়ে মত এই যে পুরাণের গল্পগুলো, সে যে দেশেরই হোক, সব চেয়ে সুন্দর রূপকথা। কিন্তু পুরাণকাহিনী আনলে আলোচনাটা অন্যদিকে চলে যাবার সম্ভবনা প্রবল। তাই টই স্রষ্টার সঙ্গে অপেক্ষায় রইলাম নতুনদিনের রূপকথা জন্য। 
  • &/ | 107.77.***.*** | ০৫ মার্চ ২০২৩ ২২:৩৪739604
  • প্রাচীন হোক বা নতুন, সব রূপকথাই ভেতরে ভেতরে বাস্তব সমাজের কথাই তো ! এই যে বিখ্যাত লালকমল নীলকমল ,পার্টিকুলারলি বাংলার রূপকথা , এর মধ্যে  হয়তো অরাজক মাৎস্যন্যায়ের সময়ের কথাই ফ্যান্টাসির মোড়কে উঠে এসেছে -য্খন রাজার হাতিশালে হাতি মরে ঘোড়াশালে ঘোড়া, রাজপুত্রেরা নিরুদ্দেশ, রাজা মানসিক ভারসাম্যহীন, রাক্ষসেরা দেশকে শোষণ করছে -পরে ফিরে আসা রাজপুত্রেরা- (তাদের মধ্যে একজন আবার রাক্ষসদের দৌহিত্র) তারা দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে।  
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৫ মার্চ ২০২৩ ২২:৪১739605
  • &/ | 107.77.237.98 | ০৫ মার্চ ২০২৩ ২২:৩৪
    ভালো বলেছ। 
    সচলে একবার লিখতে শুরু করেছিলাম। তারপর যেমন আমার স্বভাব, প্রথম গল্পের পর আর এগোনো হয়নি। 
  • &/ | 107.77.***.*** | ০৫ মার্চ ২০২৩ ২৩:৪৫739608
  • হ্যাঁ হ্যাঁ অমিতাভদা ,দিন দিন। সব দিন। :)
  • kk | 2601:14a:500:e780:1d24:542f:e5ee:***:*** | ০৫ মার্চ ২০২৩ ২৩:৫১739609
  • আমিও অমিতাভদা'র গল্পগুলো শুনতে আগ্রহী। এর মধ্যে কুয়ালালামপুরের রূপকথাও থাকবেনা? অনেকদিন আগে একটা টই খোলা হয়েছিলো লোককথা, উপজাতীদের গল্প এইসব নিয়ে। তাতে অ্যান্ডর আর টীম খুব সুন্দর সুন্দর অনেক গল্প বলেছিলো। সেটার কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেলো।
  • &/ | 107.77.***.*** | ০৫ মার্চ ২০২৩ ২৩:৫৬739611
  • এই গুরচ যেন ছোটোখাটো ব্রহ্মাণ্ড । কী নেই ? প্রায় সব বিষয়েই ট ই আছে :)
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৬ মার্চ ২০২৩ ০০:১৮739612
  • সেই বছর এমন দিনেই লিখেছিলাম, মার্চ ৬-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
     
    মিতুল - পর্ব ১

    সেদিন কি হল বলি তবে। প্রথমে ত সকাল হল। আর তারপর, মিতুল – ও হো, বলাই ত হয়নি মিতুল কে। ঠিক ধরেছ। মিতুল একটা ছোট্ট মেয়ে। তুমি ত অনেক বড় হয়ে গেছ। কত কি জানো, কত কথা বল। মিতুল তোমার মত বড় নয়, কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কথা বলে যে সবাই বলে,
    – বাব্বাঃ, মিতুল দেখি অনেক বড় হয়ে গেছে!
    মিতুল এখনো অনেক কিছুই জানে না। কিন্তু জানতে চায় অনেক।
    যেমন, সেদিন সকাল হতেই মিতুলের খুব জানতে ইচ্ছে করছিল বাইরেটা এখন কেমন। সে তাকিয়ে দেখল, মা ঘুমিয়ে আছে, বাবাও। মিতুলের নিজের একটা ছোট্ট বিছানা আছে, মা-বাবার বিছানাটার ঠিক পাশে। সেটা থেকে নেমে পড়ল ও। তারপর টুক টুক করে হেঁটে জানালার পাশে এসে দাঁড়াল।
    জানালার সামনে মিতুলের বাবা ওর জন্য একটা ছোট টুল বসিয়ে রেখেছে। ও সেটার উপর উঠে পড়ে জানালার বাইরে তাকাল। সামনে বাগান। সকালের আলোয় বাগানটা কি সুন্দর দেখতে হয়েছে! আচ্ছা, বাগানে কি কেউ এসেছে!
    ও মা! শালিক পাখিটা এসে গেছে! মিতুল শালিক পাখিটাকে ডাকল। মনে মনে ডেকেছে। কিন্তু শালিক ঠিক শুনতে পেয়েছে। সে ওর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। হাসল। মিতুল তখন তাকে জিজ্ঞেস করল
    – আজকে কি নাম তোমার?
    তুমি ভাবছ নাম আবার কারো পাল্টায় নাকি! ঐ শালিকটার পাল্টাত। রোজ না, যেদিন ইচ্ছে হত। মিতুল ঠিক বুঝতে পারত কবে ওর নাম পাল্টে গেছে। শালিক পাখিটা বলল
    – আজকে আমার নাম কিচকিছুনা।
    – কি করছ তুমি কিচকিছুনা?
    – হটর খাচ্ছি।
    এই বলে ঠোঁট দিয়ে ঘাসের ভিতর থেকে কি একটা তুলে দেখাল। মিতুল হাসল। কিচকিছুনা সব কিছুর নূতন নাম দ্যায়, খাবারেরও। আগে আরেকদিন এই খাবারটার নাম অন্য কিছু বলেছিল। হি হি। সে কিচকিছুনাকে বলল,
    – জানো, কাল আমার জন্মদিন ছিল।
    কিচকিছুনা বলল,
    – জানি, কেক কাটা হয়েছে, কেক খেয়েছ সবাই।
    কথা বলতে বলতে কিচকিছুনা হটর খেয়ে যাচ্ছিল। ওকে সমানে খেতে দেখে মিতুলেরও একটু খিদে পেল। কিন্তু মা না উঠলে ত খাবার পাওয়া যাবে না! থাক গে, আর একটু পরেই মা উঠে যাবে, তখন খাবে। মিতুল যখন এইসব ভাবছে তখন কিচকিছুনা উড়ে গিয়ে জানালার সামনে ডালটায় বসেছে। যেই বসেছে, ডালটা থেকে ধপ করে কি একটা নীচে পড়েছে। কাঠবিড়ালিটা! ওটাও রোজ সকালে আসে। আজকে ঐ ডালটায় সে একটা লাল ফল খেতে যাচ্ছিল। হঠাৎ কিচকিছুনা সেখানে উড়ে আসায় – কাঠবিড়ালি ধপাস!
    এই কাঠবিড়ালিটার একটাই নাম – তর্পিও। মিতুল জানে। সে ওর দিকে তাকিয়ে হাসল। তর্পিও কিচকিছুনার উপর খুব রাগ করতে যাচ্ছিল। কিন্তু মিতুলকে হাসতে দেখে সেও হেসে ফেলল। এবার তর্পিও উপরে তাকিয়ে দেখে, কিচকিছুনাও একটা ডানা তুলে মুখটা একটু আড়াল করে হাসছে। তর্পিও তখন তার মোটা লেজটা গোল করে পাকিয়ে মাটিতে পেতে, সেটার উপর আর দু’পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে উঠল। তারপর হাতদু’টো সামনে বাড়িয়ে বলল,
    – অত হাসবার কিছু হয়নি। চলতে গেলে সবাই পড়ে।
    এই বলে তর্পিও আবার চার হাত-পায়ে হাঁটার মত হয়ে গেল। লেজটা পিঠের উপর কায়দা করে বাঁকিয়ে, খাড়া করে ধরে একটা ঝাঁকুনি দিল। তারপর লাফিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। এদিক ওদিক তাকাল। আরো একটা ছোট্ট লাফ দিল। তারপর একবার ঘুরে তাকাল মিতুলের দিকে।
    মিতুলের খুব ইচ্ছে করছিল তর্পিওর সাথে সেও ঘুরতে যায়। তর্পিও সেটা ঠিক বুঝতে পেরেছে। সে কি করল জানো? নিজের মোটা লেজটা মিতুলের দিকে বাড়িয়ে দিল। সেটা লম্বা হতে হতে যেই মিতুলের হাতের কাছে এসে গেল, মিতুল লেজটা ধরে ফেলল। তার পরেই তর্পিও তার লেজটা ছোট করে ফেলল। আর লেজের সাথে সাথে, লেজের টানে টানে মিতুল জানালা গলে বাইরে চলে এল।
    মিতুল তর্পিওর দিকে তাকিয়ে একটা খুব খুশীর হাসি দিল। তর্পিও বলল
    – কি, কোন দিকে যেতে চাও তুমি?
    মিতুল সামনের দিকে হাত দেখিয়ে দিল।
    চলতে চলতে কত রকমের গাছ দেখল ওরা, কত ফুল, কত সুন্দর গন্ধ, কত রকমের রং! কত পাখী, কত তাদের ঢং! কেঊ ছুটে বেড়াচ্ছে, কেউ দোল খাচ্ছে। কেউ উড়ে উড়ে গান গাইছে। চলতে চলতে একসময় ওরা একটা বিরাট ঝোপের সামনে এসে পড়ল। ঝোপের ভিতর থেকে হাতীর শুঁড়ের মত একটা প্রাণী বের হয়ে এলো।
    না ভুল হ’ল। হাতীর শুঁড়ের মত না। মিতুল একদিন ওর বাবার সাথে অ্যাকোয়ারিয়াম দেখতে গিয়েছিল। সেখানে একটা প্রাণী দেখেছিল। তার নাম অক্টোপাস। আটটা শুঁড় ছিল তার। বাবা বাড়ি ফিরে এসে অনেক গল্প করেছিল অক্টোপাস নিয়ে। এই শুঁড়টা ঐ অক্টোপাসের শুঁড়ের মত দেখতে। শুঁড়টার হাতে একটা ঝুমঝুমি ধরা। কি সুন্দর ঝুমঝুমিটা! শুঁড়টা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঝুমঝুমি বাজিয়ে মিতুলকে ডাকছিল। মিতুল এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। ঝুমঝুমি নিয়ে আর খেলে না ও। কিন্তু এই ঝুমঝুমিটা এত সুন্দর, আর, শুঁড়টা এত ভাল করে ওটা বাজাচ্ছিল যে মিতুলের ইচ্ছে হল ওটার আরো কাছে গিয়ে দেখে। মিতুল পা বাড়াল।
    ঠিক তখনি কানের পাশে কে যেন বলে উঠল,
    – সাবধান! সাবধান!
    মিতুল তাকিয়ে দেখে, একটা প্রাণী তার লম্বা গলা নামিয়ে মাথাটা মিতুলের কাছে নিয়ে এসেছে। মিতুল চিনতে পারল তাকে, বইয়ে তার ছবি দেখেছে, একটা জিরাফ। জিরাফটা একটা ছোট গাছের ডাল মুখে নিয়ে তার লম্বা গলাটা বাড়িয়ে ডালটা ঝুমঝুমির কাছে নিয়ে গেল। সাথে সাথে শুঁড়টা কিরকম একটা ঝটকা দিয়ে ডালটাকে পেঁচিয়ে ধরল। তারপর সেটাকে টেনে জঙ্গলের ও পাশে কোথায় নিয়ে গেল। আর তার এ পাশ ও পাশ থেকে আরো কত যে শুঁড় বেরিয়ে এলো। মিতুলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকল শুঁড়গুলো।
    মিতুল উল্টোদিকে ফিরে দৌড় দিতে যাচ্ছিল। জিরাফ বলল
    – দাঁড়াও। মুখ ফিরিও না। মুখ ফিরালে ওরা আরো তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসবে।
    মিতুল আর জিরাফ সামনে তাকিয়ে একটু একটু করে পিছনে হাঁটতে থাকল। জিরাফটা এবার আরেকটা ডাল তুলে নিয়ে একটা শুঁড়ের দিকে লাঠির মত বাগিয়ে ধরল। শুঁড়গুলো এবার গর্জন করতে থাকল। আর, একটা শুঁড় কোথা থেকে কালো ধোঁয়ার মত কিছু ওদের দিকে ছুঁড়ে দিলো। চারদিক কালো কুয়াশায় ঢেকে অন্ধকার হয়ে এলো।
    মিতুলের একটু একটু ভয় করছিল এখন। জিরাফকে আর ঠিকমত দেখতে পাচ্ছিল না ও। তর্পিও-কেও কোথাও দেখা যাচ্ছে না। এখন কি হবে? এই সময় একটা নীল তারা ওর পাশে এসে দাঁড়াল। মিতুল পরিষ্কার শুনতে পেল তারাটা তাকে বলছে ভয় না পেতে। মিতুল তার দিকে সরে এলো। তাকে জিজ্ঞেস করল,
    – তুমি কে?
    সে বলল,
    – আমায় চেনো না? আমি অভি।
    মিতুল বুঝল, বাবা-মা এর কথাই কয়েকদিন ধরে বলছে। এই ত সবাইকে অন্ধকারে পথ দেখায়। মিতুল জিজ্ঞেস করায় মা একদিন বলেছিল এ একজন অনেক বড় তারা। বলেছিল, মিতুল বড় হলে সব বুঝতে পারবে। আর বলেছিল, এই তারার আলো যার কাছে থাকে তার মন থেকে ভয় চলে যায়। মিতুলেরও এখন আর ভয় লাগছিল না।
    নীল-তারাকে আসতে দেখেই শুঁড়গুলো পিছোতে শুরু করেছিল। এখন মিতুল আর নীল-তারা একসঙ্গে সামনে এগোতেই সব কটা শুঁড় একসঙ্গে গুটিয়ে নিয়ে ভয়ানক প্রাণীটা কোথায় পালিয়ে চলে গেল। কালো ধোঁয়াগুলোও অনেকটা মিলিয়ে গেছে। চারদিকে এখন আবার দিনের আলো ফিরে এসেছে।
    শুঁড়-ওয়ালা প্রাণীটা চলে যাওয়ার পর নীল-তারাও মিতুলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার নিজের দেশে চলে গেল। যাওয়ার আগে মিতুলের হাতে এক টুকরো আলো তুলে দিল। আলোটা মিতুলের সাথে মিশে গেল। ঠিক এই সময় তর্পিও কোথা থেকে লাফাতে লাফাতে এসে হাজির। এসেই বলে কি
    – অনেক দেরী হয়ে গেছে এখানে। চলো এবার অন্যদিকে যাই।
    কিন্তু মিতুলের এখন আর কোথাও যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। বাবা-মাকে কতক্ষণ দেখেনি! জিরাফের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মিতুল আর তর্পিও তাই মিতুলের ঘরের দিকে ফিরে চলল। বাড়ির কাছে যখন এসে গেছে, ততক্ষণে মিতুলের খুব খিদে পেয়ে গেছে। সে মনে মনে বলল
    – আমি খাবো।
    সেই শুনে তর্পিও বলল
    – কি খাবে?
    মিতুলের মনে হল কাল রাতে তার জন্মদিনের কেকটা আরো খেতে পারলে বেশ হয়। সে বলল
    – কেক।
    যেই মিতুল এই কথা বলেছে, সাথে সাথে চারদিক নানা রং-এর আলোয় ঝলমল করে উঠেছে। মিতুল চমকে এদিক ওদিক মাথা ঘুরিয়ে দেখে গাছের পর গাছে সরু সরু ডাল থেকে কত যে রং বেরং-এর ছাতা ঝুলছে! সব কটা ছাতার হাতল থেকে একটা করে কাপ ঝুলছে। আর, কাপের মধ্যে কি আছে? ঠিক ধরেছ – ছোট্ট ছোট্ট কেক, নানা রং-এর কাপ-কেক। একটা ছাতার মাথায় বসে তর্পিও সেই ছাতার নীচের কেকটা ধরতে চাইছে, পারছে না, ওর হাত পৌঁছচ্ছে না। তর্পিও বারে বারে মিতুল-এর দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু মিতুল কি করে পাবে কেকগুলো! সেগুলো ত অনেক উঁচুতে! কি হবে এখন!
    এই সময় মিতুলের ঠিক পিছনে কে যেন বলে উঠল
    – আমার সাথে এসো।
    মিতুল ঘুরে দেখে কিচকিছুনা, তার একটা ডানা বাড়িয়ে রেখেছে। সে হাত বাড়িয়ে কিচকিছুনার ডানা ধরতেই কিচকিছুনা এত্ত বড় হয়ে গেল। মিতুল তখন কিচকিছুনার ডানা ধরে তার পিঠে চেপে বসল। কিন্তু মিতুল যদি পড়ে যায়! কিচকিছুনাকে সে কথা বলতেই কিচকিছুনা তার ডানা থেকে কয়েকটা পালক খাড়া করে মিতুলের চারদিকে একটা সুন্দর ঘর বানিয়ে ফেলল। তারপর মিতুলকে পিঠে নিয়ে কিচকিছুনা উড়তে শুরু করে দিল। দুজনেই উড়ে উড়ে অনেক কেক খেল। কি ভালো যে খেতে! খাওয়ার শেষে সুন্দর দেখতে দুটো কেক মিতুল মা আর বাবার জন্য নিয়ে নিল। তারপর সে আর কিচকিছুনা মাটিতে নেমে এল। মিতুল কিচকিছুনার পিঠ থেকে মাটিতে নেমে পড়ল।
    তর্পিও এই সময়টা এ গাছে ও গাছে ছুটে ছুটে ফল খাচ্ছিল। এবার সে দৌড়ে চলে এল তাদের কাছে। বলল
    – আমার জন্য কেক আনলে? খুব ভালো।
    মিতুল বলল
    – এই যা! আমি যে এ দুটো মা আর বাবার জন্য আনলাম? জানো, আমার বাব-মা দু’জনেই কেক খেতে খুব ভালোবাসে!
    তর্পিও বলল
    – তা হলে আজ আর আমরা ঘুরতে যাব না।
    এই বলে সে মিতুলকে তার লেজে তুলে নিয়ে লেজটা জানালা দিয়ে ঢুকিয়ে মিতুলকে একেবারে ওর বিছানায় এনে শুইয়ে দিল।
    তর্পিওর লেজটা জানালা দিয়ে মিলিয়ে যেতেই মিতুল বিছানায় উঠে বসল, বলল
    – মা-বাবা, কেক।
    মিতুলের বাবা-মা একটু আগেই ঘুম থেকে উঠে গিয়েছিল। বাবা টেবিলে বসে চা খাচ্ছিল। এখন মিতুলের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল
    – ঘুম ভেঙ্গেই কেক খেতে ইচ্ছে করছে?
    মিতুল বাবার দিকে হাতের মুঠো বাড়িয়ে দিয়ে বলল
    – তোমরা খাবে।
    শুনে মিতুলের বাবার যে কি আনন্দ হল! বলল
    – বাঃ বাঃ! মিতুল মামণি দেখছি অনেক বড় হয়ে গেছে!
    মা ছিল বাবার পাশে। খুশীতে সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। আর বলছে,
    – শুনেছ ও কি বলছে! ও আমাদের কেক খাওয়াবে বলছে। শুনেছ, শুনেছ!
    মা-বাবার খুশী দেখে মিতুলের ইচ্ছে করছিল এক্ষুণি ওদের সমস্ত গল্পগুলো বলে। কিন্তু এ কি! মিতুলের মুঠো যে ফাঁকা! কেক কোথায় গেল? কেক-দুটো কি তবে জানালা দিয়ে ঢুকে আসার সময় বাগানে পড়ে গেল? তর্পিওটা এমন হুস করে ওকে ঘরের ভিতর ঢুকিয়ে দিল! তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে টুলে উঠে জানালায় উঁকি দিল মিতুল। নীচে তাকাল। নাঃ! জানালাটার সামনে কোন কেক পড়ে নেই! মাথা তুলে দেখে তর্পিও অনেকটা দূরে বসে আছে। হাত দুটো সামনের দিকে তোলা, বুকের কাছে জড়ো করা। আর তার মুখটা ফোলা, নড়ছে মনে হয়, তার মানে কিছু খাচ্ছে।
    এইবার মিতুল সব বুঝতে পারল। আহা রে! কিচকিছুনা আর মিতুল যখন উড়ে উড়ে কেক খাচ্ছিল, তর্পিও ত তখন একটা কেকও খেতে পায়নি। দৌড়ে দৌড়ে শুধু ফল খেয়ে বেড়িয়েছে। ভেবেছিল মিতুল ওর জন্য কেকে নিয়ে আসবে। তাও হয়নি। মিতুল ওর জন্য কোন কেক আনে নি। তাই বাগানে পড়ে থাকা কেক দেখে তর্পিও আর লোভ সামলাতে পারে নি।
    বেচারা তর্পিও! মিতুলের এখন আর কেক আনতে পারেনি বলে অতটা খারাপ লাগছিলনা। ঠিক আছে, ছোট ঐ কেকদুটো তর্পিওই খাক। ওদের নিজেদের জন্য ত কালকের বড় কেকটার অনেকটা আছেই। সেইটা থেকেই ওরা সবাই খেতে পারবে। পরে, মিতুল যখন অনেক বড় হয়ে যাবে, মাকে-বাবাকে অনেক, অনেক কাপ-কেক কিনে দেবে। আর এখন, মা-বার কাছে গিয়ে সব গল্পগুলো বলতে হবে। বলতে হবে, নীল-তারা অভি কেমন করে তাড়িয়ে দিয়েছিল কালো ধোঁয়া ছুঁড়ে দেওয়া শুঁড়-গুলোকে। বলতে হবে, মিতুলের কাছেও এখন আছে নীল-তারার আলো।
     
     
  • &/ | 107.77.***.*** | ০৬ মার্চ ২০২৩ ০০:৫৫739613
  • চমৎকার । খুব ভালো। মিষ্টি রূপকথা 
  • lcm | ০৬ মার্চ ২০২৩ ০১:৫৭739615
  • বাদুর কেন নিশাচর
    ---------
    এক বাদুর আর এক ইঁদুর দুজনে খুব বন্ধু ছিল। যদিও ইঁদুরের প্রতি বাদুরের একটু হিংসে ছিল। ওরা সবসময় একসঙ্গে খেত।

    বাদুর খুব ভালো স্যুপ রান্না করত, খেতে খেতে ইঁদুর রোজ বলত - তুমি এই স্যুপটা এত ভাল রাঁধো না যে কি বলব।

    বাদুর একদিন বলল - তুমিও এমন স্যুপ রাঁধতে পারো। আমি আসলে নিজেকে একটু গরম জলে সেদ্ধ করে দিই, আমার মাংস এত সুস্বাদু, তাতেই তো স্যুপে এত ভালো টেস্ট হয়, ওটাই রহস্য।

    পরের দিন বাদুর রান্নার কায়দা দেখাতে আরম্ভ করল - প্রথমে সে অল্প গরম জল আনল (ইঁদুর ভাবল বুঝি খুব গরম জল), সেটাতে একটুক্ষণ ডুব দিয়ে উঠে এল, তারপর স্যুপ তৈরি করে দিল।

    ইঁদুর তো মুগ্ধ। ( বাদুর একথা বলল না যে জলে নিজেকে সেদ্ধ হবার সঙ্গে স্যুপের স্বাদের কোনো সম্পর্ক নেই।)

    যাই হোক, ইঁদুর বাড়ি গিয়ে বউকে বলল এইরকম কায়দায় রান্নার কথা, কিন্তু বৌ পাত্তা দিল না। ইঁদুরের বউ গরম জল ফোটাতে দিয়ে পাশের ঘরে গেল, সেই সুযোগে ইঁদুর ফুটন্ত জলে ঝাঁপ দিল, আর মরে গেল।

    ইঁদুরের এই রকম অদ্ভূত মৃত্যুর খবর জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়ল। ইঁদুরের বউ খুব কান্নাকাটি করতে থাকল এবং বাদুরের ব্যাপারটা রাজাকে বলে দিল। সবাই জেনে গেল বাদুরের বদমাইশি। জঙ্গলের সবাই বাদুরকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ল। বাদুর জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে রইল।

    সেই থেকে বাদুর সারাদিন লুকিয়ে থাকে, শুধুমাত্র রাতের অন্ধকারে খেতে বেরোয়।

    ( আফ্রিকান রূপকথার গপ্পো থেকে )
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৬ মার্চ ২০২৩ ০৪:৫৯739617
  • বেচারা বাদুর। হয়ত তার নিশাচরতার ফলে, মানুষ তাকে বিশ্বাস করতে না পেরে বিশ্বাসঘাতক বদমাইশ বানিয়ে দিল।
  • &/ | 107.77.***.*** | ০৬ মার্চ ২০২৩ ০৫:৪৪739619
  • ড্রাকুলা বানিয়ে ছেড়েছে 
  • &/ | 107.77.***.*** | ০৬ মার্চ ২০২৩ ২১:৩৮739622
  • প্রাচীন রূপকথা রিভাইভ  করে একধরণের কাহিনি আজকাল লেখা হয় পশ্চিমে , স্টীম পাংক না কী যেন নাম, সেরকম কিছুও করা সম্ভব বাংলার কিছু রূপকথা নিয়ে। ধরুন হিউম্যান ক্লোন আর তার নানাবিধ টানাপড়েন আইন বেআইন ইত্যাদির মধ্যে লাল নীলকমলের কাহিনিটা নতুন করে লেখা যায়। 
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৭ মার্চ ২০২৩ ০০:৩৬739629
  • ৫ই মার্চ ১৭ঃ০৬ , চতুর্মাত্রিক, আপনিও দিন না! যদি কোথাও কোনো নতুন রূপকথা পান। অথবা আপনার নিজেরই যদি ওরকম কোনো রূপকথা থাকে। ঃ-)
  • :|: | 174.25.***.*** | ০৮ মার্চ ২০২৩ ০৫:১৮739634
  • দেখুন, সত্যি বলতে কি, এই জগৎ-স্বপ্নের সবটাই আমার রূপকথাই মনে হয়। আলাদা করে কিছু দেখা মুশকিল। 
     
    এই যেমন বাদুড় বাহাদুরের কথা হলো। বেচারীর নিশাচরত্বের সুযোগ নিয়ে ওকে কেমন ভিলেন বানিয়ে দিলো। তারপর তো বাদুড় সমাজ রেগেই একশা! বলে কি এতো বড়ো সাহস -- সারা গুষ্টিকে অকমান করা! তখন বাদুড়-অস্মিতার কমিটির পক্ষ থেকে মিটিং বসলো। ওদের নেতা বললেন, "বোকাগুলো হ্যামিলনের বাঁশিওলার গল্পই শুনেছে শুধু, তার থেকে শিক্ষা কিছু নেয়নি।" তারপর যে প্ল্যান হলো তার ফলাফল দেখলো সারা দুনিয়ার মানুষ দু'বছর ধরে কোভিডকালে।
     
    তো, এইরকম খবরের কাগজ খুললেই কত রূপকথা। এইটাতে যেমন আছে রূপকথা আর সাইফাই-র অপূর্ব মিশেলের সম্ভবনা: https://bartamanpatrika.com/home?cid=14&id=439877
  • &/ | 151.14.***.*** | ১৬ মার্চ ২০২৩ ০৪:২৬739742
  • নতুন রূপকথা শোনার জন্য আগ্রহ নিয়ে এসে দেখি কোথায় কী? নতুন রূপকথা তো আসে নি আর!
  • &/ | 151.14.***.*** | ২০ মার্চ ২০২৩ ০২:২৪739776
  • কেকে, জানো সেদিন ফেবুতে দেখলাম একজন মৌলিক রূপকথা লিখেছেন ঘুরুট্টি দেশের। সেই দেশ থেকে সূর্য সরে গিয়ে সব অন্ধকার, পাতা ঝরে গেছে, পাখি নেই, সবাই নিরানন্দ । অত্যাচারী রাজা তার নিজের নামে পুজো দেওয়ায় সবাইকে। এক বদমাশ শকুন সবাইকে বাধ্য করে রাজার পুজো করতে। আর স্পাইং করে বেড়ায় সবার উপরে। প্রজাদের কারুর মনে আনন্দ নেই, দেহে শক্তি নেই,প্রাণে সাহস নেই। তারপরে একদিন পাশের এক আলোকোজ্জ্বল দেশ থেকে এক কিশোর এল তার বাঁশি নিয়ে, তাকে গুপ্তচর ভেবে রাজা কোতল করতে গেছে আর সে বলেছে একবার বাঁশি বাজাবে মরার আগে। মঞ্জুর হতেই সে যেই না বাঁশিতে সূর্যবন্দনার সুর বাজিয়েছে, অমনি সূর্য এসে পড়েছে আকাশে। সব আলো। পাখিরা ফেরৎ এসেছে, গাছে গাছে ফুল পাতা ফুটেছে। অত্যাচারী রাজা বদলে গেলেন, মুকুট খুলে সিংহাসনে রেখে সমস্ত রাজকীয় আভরণ ত্যাগ করে মাঠে নেমে নাচতে নাচতে কইছেন, আমি আর রাজা না, আমিও প্রজা এখন থেকে। ঘুরুট্টি না, এখন দেশের নাম হবে সূর্যদীপ্ত।
    খুবই সুন্দর রূপকথা। অথচ লোকে কমেন্টে নানা রাজনৈতিক তর্ক করছে, বলছে এগুলো কি রূপকের আড়ালে রাজনীতি? তুমুল বিতন্ডা লেগে গ্যাছে।
  • kk | 2601:14a:500:e780:8469:7eaf:937e:***:*** | ২০ মার্চ ২০২৩ ০২:৩৫739777
  • সূর্যদীপ্ত বেশ নাম। তবে আমার ঘুরুট্টি নামটাও ভালো লাগছিলো। শকুনকে ভিলেন পাখি বানানোতে অবশ্য একটু খারাপ লাগলো। কেমন হতো যদি একটা ঝলমলে রঙীন ম্যাকাও পাখি ঐ বদমাশ, জোরে করে পুজো দেওয়ানোর পার্ট পেতো, আর পালক খসা, হিলহিলে গলা বুড়োমত শকুন হতো দয়ালু আর জ্ঞানী পাখি?
    মানুষের বিতন্ডার কথা আর বেশি কী বলার আছে বলো? সেই একটা স্টারট্রেক দেখেছিলাম "ডে অভ ডাভ" বলে, তাতে একটা প্রাণী ছিলো যে রাগ আর ঝগড়া খেয়ে বাঁচতো। আজকাল তো দেখি মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়। কিছু না কিছু করে "তুই নাকি কাল সাদাকে বলছিলি লাল" আনতেই হবে! আমার একটা প্রশ্নের উত্তর অবশ্য কেউ দেয়না -- এই এত রাগ করে, অন্যকে গালাগাল দিয়ে ভুত ভাগিয়ে তাঁদের মনে কি সত্যি কোনো শান্তি আসে? দু লহমায় চলে যাবেনা এমন শান্তি?
  • &/ | 151.14.***.*** | ২০ মার্চ ২০২৩ ০২:৪৭739778
  • আরে শান্তি কী বলছ, বিশাল দেশোদ্ধারের অনুভূতি আসে তেনাদের। খানিক রাজনৈতিক বিতন্ডা করে 'দেশের কাজ' করল ভেবে পরম পরিতৃপ্তি। ঃ-)
  • :|: | 174.25.***.*** | ২০ মার্চ ২০২৩ ০৩:০৮739779
  • রূপকের আড়ালে শুধু রাজনীতি নিয়ে ঝগড়া করছে? আঃ আমি যদি থাকতুম তো ধর্ম প্রচার করছে কিনা সে প্রশ্নও তুলে দিতুম। এতো পুরো শ্রীকৃষ্ণ আর গীতার মহিমা জারি করার চেষ্টা। এই বাঁশি বাজানো বালক কেমন মানব বধের বাণী দিয়েছে তাকি আমরা জানিনা -- ব্যাস ব্যাস বুঝতেই পারছেন গোরুর (ওই বালকও চরাতো বটে) রচনায় ঢুকে গেলুম কেমন স্যুট করে। 
  • &/ | 151.14.***.*** | ২০ মার্চ ২০২৩ ০৩:৪১739780
  • আরে গল্পে রাখালই ছিল। আমি বলার সময় কিশোর বললাম। রাখাল এসেছিল শিউলিফুলের গন্ধ সর্বাঙ্গে জড়িয়ে, সাদা আর কালো গরুর পিছনে পিছনে। মানে গরুগুলোই ভুল করে ঘুরুট্টিতে ঢুকে পড়ে, তাদের সন্ধানেই রাখালের যাওয়া।
  • &/ | 151.14.***.*** | ২০ মার্চ ২০২৩ ০৩:৫৪739781
  • একটাই তো প্রোটোটাইপ। সেই থেকেই সব গল্প। পুরোনো বা নতুন। ঃ-)
  • &/ | 151.14.***.*** | ২১ মার্চ ২০২৩ ০৪:০০739797
  • এইবারে সেই মিষ্টি মিরিচিনি পাতার রূপকথাটা বলি। সেটা ফেবুতে একজন লিখেছেন মৌলিক রূপকথা হিসেবে। নামধাম চরিত্র ঘটনা সব ঠিকঠাক মনে নেই, তাই সেগুলো বানিয়ে দিচ্ছি।
    এক ছিল রাগী ছেলে, সে বনে বনে ফাঁদ পেতে পশু ধরে বেড়াতো। একদিন তার ফাঁদে ধরা পড়ল একটা বাচ্চা ভালুক। রাগী লোকটা ভালুককে বেঁধে বাড়ি নিয়ে গেল, কেটেকুটে রেঁধে খাবে। বাচ্চা ভালুক কেঁদে বলে, 'আজ আমার জন্মদিন গো। মা আমাকে মিরিচিনি পাতার পায়েস বানিয়ে খাওয়াবে বলেছিল গো! আর খাওয়া হল না গো। আমার মায়ের সঙ্গেও আর দেখা হবে না গো।' এইসব বলে সে হাঁপুসনয়নে কাঁদে।
    রাগী লোকটা শুনে কেমন হয়ে গেল। তার কেউ কোথাও নেই, সে জানে না কবে তার জন্মদিন। অনাথ- আশ্রমের দুয়ারে তাকে পাওয়া গেছিল, সেখানেই সে মানুষ হয়েছে ছোটোবেলা। কেউ কোনোদিন তাকে ভালো কথা বলে নি, ভালো কিছু খাওয়ায় নি, ভালো কিছু দেয় নি। শুধু নানারকমের শাস্তি পেত সে। আর দুবেলা দুমুঠো খাওয়া। তাই তো জ্ঞানবুদ্ধি হবার মত বয়সেই সে পালিয়েছে অনাথ-আশ্রম ছেড়ে।
    বাচ্চা ভালুককে সে বলল, 'ঠিক আছে, আজ তোকে মারবো না। চল দেখি কোথায় মিরিচিনি পাতা আছে, তুলে এনে তোকে আমি পায়েস বানিয়ে দেবো। আমিই আজ তোর জন্মদিন করবো।'
    বাচ্চা ভালুক খুশিতে ডগোমগো, বলে, 'চলো চলো বনের মধ্যে চলো। সেখানে একটা সুড়ঙ্গ আছে, তার ভেতরে মিরিচিনি গাছ আছে।'
  • kk | 2601:14a:500:e780:fd6f:e71d:c364:***:*** | ২১ মার্চ ২০২৩ ০৫:০১739798
  • এই গল্পটা পড়ে গ্রিঞ্চের কথা মনে পড়লো।
  • &/ | 151.14.***.*** | ২১ মার্চ ২০২৩ ০৫:৩২739799
  • তারপর তো তারা গ্রাম থেকে মাঠ পেরিয়ে বনে গিয়ে ঢুকল। বনের মধ্যে তারা চলে আর চলে, চলে আর চলে। ঘন হয়ে আসে গাছপালা ঝোপঝাড় লতাপাতা, আলো কমে আসে। কোথায় সুড়ঙ্গ? কিছুই তো দেখা যায় না।
    লোকটা বাচ্চা ভালুকের উপরে রেগে গেল। রেগে গিয়ে ওর ঘেঁটি চেপে ধরে বলল, "তুই মিথ্যে কথা বলে আমাকে বনে নিয়ে এলি? ওসব মিরিচিনি ফিরিচিনি কিছুই নেই আসলে?"
    বাচ্চা ভালুক কেঁদে বলে, "আছে গো আছে। আর একটু চলো।"
    তারা আরও চলে, বন এত ঘন আলো এত কম যে মনে হয় যেন রাত্রি। শুধু পাতার ফাঁকফোঁক্ড় দিয়ে ছোটো ছোটো রোদ্দুরের গোল গোল আলো একটু একটু।
    মস্ত মস্ত মহীরুহ উঠে গেছে আকাশের দিকে, তাদের কান্ড জড়িয়ে কত সব লতাপাতা।
    একটা গাছ থেকে বিরাট বড় একটা চকরাবকরা সাপ এসে তাদের সামনে ফণা তুলল। লোকটা আর ভালুক দু'জনেই ভয়ে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে।
    সাপটা হিস হিস করে বলে, "তোদের মধ্যে একজনকে আমি খাবো। অন্যজনকে ছেড়ে দেবো। বল, কাকে খাই?"
    ভালুক বলে, "আমাকে খাও।"
    লোকটা বলে, "না না, ওকে খেওনা, ও এইটুকু বাচ্চা। বরং আমাকে খাও।" এই বলে সাপের দিকে এগিয়ে যায়।
    সাপটা হো হো করে হাসতে হাসতে মানুষ হয়ে যায়। বলে, "আমি তোদের পরীক্ষা করছিলাম। তোরা দু'জনেই পাশ।"
  • &/ | 151.14.***.*** | ২১ মার্চ ২০২৩ ০৬:০০739801
  • তারপর সেই মানুষটা বলে, "তোরা তো দেখছি খুব ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত। চল আমার গাছবাড়িতে চল। সেখানে খাবি দাবি, বিশ্রাম করবি। রাতটা কাটিয়ে কাল সকালে যেখানে যাবার যাবি।"
    ওরা তো শুনে খুব খুশি। সত্যিই ওরা খুব ক্লান্ত ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত ছিল। মানুষটা তরতর করে গাছে উঠে উপর থেকে একটা লতার মই নামিয়ে দিল। এরা সেই মই বেয়ে উঠল। মস্ত সেই গাছের তেডালায় চমৎকার এক বাড়ি। সেই বাড়িতে এরা খাদ্য, পানীয় সব পেয়ে খুবই আনন্দিত হল। তারপরে কম্বলের বিছানায় ওদের বসিয়ে দিয়ে গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিল মানুষটা। তারপর বলল, "এবারে বল তোদের কথা। তোরা কোথা থেকে এলি, কোথায় যাচ্ছিস?"
    ভালুক আর লোকটা পালা করে তাদের সব কথা বলল দয়ালু মানুষটাকে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন