এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কাবলিদা 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৩ জানুয়ারি ২০২৩ | ৮৬৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • কাবলিদাকে নিয়ে লেখা খুব শক্ত। স্মৃতি-টিতি সব জড়িয়ে যায়। ভবানীপুরের বাড়িটার কথা মনে পড়ে। একতলায় দরজা। যেটায় বেল দিলে কাবলিদা নাকি উপর থেকে দড়ি টেনে দরজা খুলে দিত। নাকি বললাম, কারণ আমাকে কখনও দেয়নি। আমি যেতাম মূলত হুল্লোড়ের দিনে। যাবার আগে সবসময়েই সেখানে অন্য কেউ হাজির হত। দরজা খোলাই থাকত। গুরুর ভাট হত সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলায়। সেখানে নানা ধাপে নানা ঘর। কাবলিদার বাড়ি বললেই, মাঝখানে বসার জায়গাটা মনে পড়ে, যেখানে সবাই দল পাকিয়ে বসত। আর মনে পড়ে গান। এমন একটাও ভাট হয়নি ওই বাড়িতে, যেখানে একটাও গান গাইনি। একটা তো অতি অল্প বললাম, অন্তত দশটার কমে থেমেছি বলে মনে পড়েনা। কেন যে উতলা মন গেয়েছিলাম ওইখানে, যেটা দিয়ে গুরুর ভিডিও বানিয়েছি পরে। আমি একা নই, আরও কত লোক। কল্লোলদা করেছে। ঈপ্সিতা করেছে।  একটি মেয়ে এসেছিল, "আমি অপার হয়ে বসে আছি" গেয়েছিল, তার নাম ভুলে গেছি। সাত্যকি অনেকগুলো গান গেয়েছিল একবার । আর, আর, আর, আলাদা করে কিছু মনে পড়েনা। খালি ধোঁয়া-ধোঁয়া হওয়া একটা বসার ঘর থেকে গান ভেসে আসে। কিছু গান মনে থেকে যায়, কিছু উড়ে যায় ঝোড়ো হাওয়ায়। শহর জুড়ে পাখিদের আর্তনাদ। 

    কাবলিবুড়ো আমাদের সঙ্গে জুটেছিল কেন, সে এক রহস্য। লেখালিখিতে খুব উৎসাহ ছিল এমন না। যদিও লেখার হাতখানা ছিল রসসিক্ত, চমৎকার। কিন্তু স্মৃতিকথা লিখতে বললে কোনোদিনই উদ্যোগ নিয়ে লেখেনি। রাজনীতি-টিতিতেও তেমন উৎসাহ ছিলনা। কিন্তু সে আমলে ভাটের একটা গুণ ছিল। সব মতবিরোধ সত্ত্বেও একসঙ্গে জুটে যাওয়া যেত। কী সেই রসায়ন ঠিক জানিনা, তবে যেত। কাবলিদাও একরকম করে সেটায় বসবাস করত। আমিও। আরও অনেকেই। ওসব সুখের বসতবাড়ি চিরকাল থাকেনা, সবাই জানে। আমাদেরও চিরকাল থাকেনি। কিন্তু ছিলটা সত্যি। সে ছিল আমাদের সুখের ইডেন। ভবানীপুরের সেই সব গজল্লা মনে পড়ে। মাঝের বসার ঘরে গান হচ্ছে। এদিকে বারান্দায়, লোকে গিয়ে বিড়ি খাচ্ছে। কাবলিবুড়ো অত্যাচার না নিতে পেরে পাশের ঘরে গিয়ে বিছানায় গড়াচ্ছে। সেখানেও চার-পাঁচজন হাজির। এরই মধ্যে দুটো কাজের কথা বলতে হবে। কোথায় হবে? চলে যাওয়া হল ছাদে। নিচ থেকে ভেসে আসছে, "আমি অপার হয়ে বসে আছি"। এইসব।

    বইমেলায় কাবলিদা বিশেষ আসত না। মানে আসতে দেওয়া হতনা, কারণ, এলেই ধুলোয় অসুস্থ হয়ে পড়ত। অন্তত বছর কুড়ি ধরেই কাবলিদা অসুস্থ। তার পরেও একটা সময় পুরো ব্যাপারটার সঙ্গেই জড়িয়ে ছিল ওতঃপ্রোতভাবে। ওই ভবানীপুরের বাড়িতেই থাকত গুরুর যাবতীয় বইয়ের বান্ডিল। কিন্তু এসব লিখছি কেন, কে জানে। কাবলিদা গুরুর বইয়ের স্টক রাখত -- এইটা বললে কী বোঝা যায়? কিচ্ছু না। যেটা লিখতে চাইছি, সেটা পারছিনা। আসলে, খুব গোদা করে বললে, গুরুর তো ঠিক কোনো কেন্দ্র নেই। ফলে কেন্দ্র না, কিন্তু অন্তত একটা নোঙ্গর টোঙ্গর হয়ে ছিল কাবলিদা এবং তার বাড়ি, একটা লম্বা সময় ধরে। কোন বছর থেকে কোন বছর খেয়াল নেই। বছর দশেক হবে নিশ্চয়ই। কম সময় না। এখনও ঠিকানা বললেই এক ঝটকায় বলরাম বসাক রোড এর কথাই মনে পড়ে। ওই ছোট্টো গলিটার কথা মনে পড়ে। হাতে হাতে করে অনেকে মিলে বই তুলে এনে গাড়িতে ডাঁই করার কথা মনে পড়ে। বা গাড়ি থেকে তুলে ঘরে রাখার কথা। রফিক এই লোডের অনেকটাই নিত, তার কথা তো লিখতেই ভুলে গেলাম। যেমন ভুলে গেলাম কাজুর কথা। সাউথ সিটির কথা। গানের ওপারের মেজ বৌয়ের কথা।  

    এইভাবে সব জড়িয়ে যায় বলেই কাবলিদাকে নিয়ে লেখা খুব শক্ত। একদিন সময় নিয়ে বসলাম, তবু লিখতে গেলেই পুরোনো কথাবার্তা ভিড় করে আসছে, সম্পূর্ণ এলোমেলোভাবে। স্মৃতি-টিতি জড়িয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি কাবলিদাকে। ফতুয়া পরে, আধশোওয়া হয়ে। দাড়ি-টাড়ি কাটেনি। এই ছবিটুকুই থাক। বাকিটুকু তো লিখে বোঝানো খুব শক্ত।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শক্তি দত্ত রায় | ০৩ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৩৮514986
  • খুব সহজ ভালবাসায় লেখা।আন্তরিকতায় ভিজিয়ে দেওয়া স্মৃতিচারণ।আমদেরও স্মরণাঞ্জলি রইলো,সামান‍্যই পরিচয় ছিল।ভালো লেগেছিল তাঁর কথা,আচরণ।
  • aranya | 2601:84:4600:5410:659a:82d6:b61f:***:*** | ০৩ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:২৮514997
  • 'কিন্তু সে আমলে ভাটের একটা গুণ ছিল। সব মতবিরোধ সত্ত্বেও একসঙ্গে জুটে যাওয়া যেত। কী সেই রসায়ন ঠিক জানিনা, তবে যেত। কাবলিদাও একরকম করে সেটায় বসবাস করত। আমিও। আরও অনেকেই। ওসব সুখের বসতবাড়ি চিরকাল থাকেনা, সবাই জানে। আমাদেরও চিরকাল থাকেনি। কিন্তু ছিলটা সত্যি'
     
    - সেই ভাট, আজও মিস করি 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন