এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ছোট্ট দোয়েল টুকটুক

    Kasturi Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ জানুয়ারি ২০২২ | ১০৭৫ বার পঠিত | রেটিং ৪.৩ (৩ জন)
  • ঘন কুয়াশায় ঢাকা সকালে কারই বা মন ভালো থাকে বল। চারপাশ প্রয়ান্ধকার। অদেখার আড়ালে ভয়ঙ্কর বিপদ। 
    টুকটুকের মা টিটি আর বাবা ডোডো, কিছুতেই টুকটুককে বেরোতে দিচ্ছে না। কিন্তু টুকটুক জেদ ধরে বসে আছে, ও বেরোবেই। 
    এই ঝুপসি কুল গাছে, পাতার আড়াল দিয়ে তৈরী করা ওদের একটা ছোট্ট বাসা। আকাশের মুখ ভার দেখে, টুকটুকের ডোডো বাবা কয়েকদিনের জন্য খাবারও জোগাড় করে রেখেছিল। শুঁয়োপোকার ছানা, চিকমিকে পোকা, বিন্নীর মায়ের ফেলে দেওয়া চাউমিন ..এইসব। কটা দিন চলে যাবে বেশ। এরপর মেঘ বৃষ্টির পালা শেষে ঝলমলিয়ে রোদ উঠলেই, ভিজে মাঠের ইয়া ইয়া পোকাগুলো গর্ত থেকে বেরোলেই, আহা..মহাভোজ।
    ছোট্ট টুকটুক বড্ড জেদি হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। কিছুতেই শুনছেনা মা বাবার কথা। ও বেরোবেই। একসময় মা বাবা খাবার খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেই, সাঁ..ই করে বেরিয়ে পড়লো টুকটুক। ব্যাস্, এক্কেবারে কুয়াশার অন্দরমহলে..'ওরে বাবা, এ কি..কিছুই যে দেখা যাচ্ছেনা। মাঠ ঘাট গাছপালাগুলো সব গেল কোথায় ! '..
    এ্যঁ এ্যঁ এ্যঁ এ্যঁ করে কাঁদতে শুরু করলো টুকটুক। ওর কান্না শুনে , কুয়াশা বুড়ির দল জাপটে ধরলো ওকে। এক্কেবারে ঢেকে ফেললো পরম মমতায়। অনেক অনেক আদর করে, ওদের বুকের মধ্যে জমানো উষ্ণতা দিয়ে ভিজিয়ে চান করিয়ে দিল টুকটুককে। 
    এদিকে দিন তিনেক হেব্বি রেস্টের পর সূয্যি মামার খেয়াল হলো, 'আরে অনেক দেরি হয়ে গেল যে!  ইসস্..এত্ত ঘুমোলাম ! '..
    বলেই, দু হাত দিয়ে মেঘ ঠেলে টিরিং করে মুখ বাড়ালেন। তারপর একটু একটু করে ধরার বুকে আলোয় আলো ছড়িয়ে হেসে উঠলেন।
    ঝাপসা কুয়াশা বুড়ির দল তখন গাছপালার আড়ালে, পাতার তলায়,  গিয়ে মিলিয়ে গেল আসতে আসতে। যাবার সময় টুকটুকের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে গেল, 'আবার আসবো আমরা। ততদিন ভালো হয়ে থেকো, কেমন ..আর মা বাবার কথা শুনো।'
    ওরা চলে যেতেই টুকটুক পরিস্কার দেখতে পেল সব। কি মজা, কি মজা..টি টি টিটিটি..টি টি টিটিটি করে ডেকে ও উড়ে গিয়ে বসলো বাক্কুদের বাড়ির ছাদে। 
    ওর ভিজে যাওয়া কুয়াশা মাখা শরীর সূয্যি মামার ওমে সেঁকে নিতে নিতে অনেক গল্প করলো সূয্যি মামার সাথে।  এই তিনদিন টানা ঘুমিয়ে কি কি স্বপ্ন দেখছেন সূয্যি মামা, সেসবই গল্প করলেন টুকটুকের সাথে।
    এমন সময় একটা কালো কউয়া উড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়তে গেল টুকটুকের ওপর। বলগা বোলতা ঠিক সময়মতো বোঁঁ বোঁ করে কালো কউয়ার নাকে ধাক্কা না মারলে, কি যে হতো !..
    সাঁই সাঁই সাঁই করে প্রাণভয়ে গাছপালা বাড়িঘরের ফাঁক দিয়ে পালাতে লাগলো টুকটুক। আর পেছনে কালো কউয়া। 
    হঠাৎই চাম্পু আমগাছের কোটরের মধ্যে কে যেন টেনে নিয়ে গেল টুকটুককে। অন্ধকার ওই কোটরে চোখ একটু সইতেই দেখতে পেল, টেরি লক্ষীপেঁচা ওর ডানার আড়ালে লুকিয়ে ফেলেছে ওকে। 
    কালো কউয়া ততক্ষণে টুকটুককে দেখতে না পেয়ে রণে ভঙ্গ দিয়েছে। 
    তারপর মা পেঁচা টেরি, যখন ওকে ট্যাঁঁপারি খাওয়াচ্ছিল..তখন টিটি মা আর ডোডো বাবা হাঁপাতে হাঁপাতে সেখানে গিয়ে পৌঁছল। অনেক বকাবকি, কান্নাকাটি, আদর টাদরের পর ..টেরি পেঁচাকে অনেক ধন্যবাদ টাদ জানিয়ে ফেরার সময়, ভকলু বিকলু মা টেরির দুই ছানা টুকটুককে বললো, 'তুমি আমাদের সাথে খেলতে আসবে তো টুকটুক '..
    'নিশ্চয়ই আসবো ভকলু বিকলু' ..
    'মাঝরাতে যখন চাঁদের আলোয় ঝমঝম করবে চারপাশ, তখন আমি বিন্নী দিদির বাড়ির ছাদে বসে গান গাইবো। চলে আসিস কিন্তু তোরা । '
    আর তারপর থেকে ছোট্ট দোয়েল টুকটুক ঠিক রাত দুটো বাজলেই, বিন্নীদের বাড়ির ছাদে বসে গান গায়। আর ওর সোনালী সুরেলা সুরে ভকলু বিকলু কোটর থেকে বেরিয়ে আসে। 
    তারপর ..তারপর হুটোপাটি, লুকোচুরি, এক্কাদোক্কায় ভোরের আলো ফুটতে শুরু করে। ক্যালেন্ডুলার কুঁড়িরা হাসিহাসি মুখে চোখ মেলে।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সুব্রত পাল | 42.***.*** | ২৮ জানুয়ারি ২০২২ ০০:৫৬503176
  • বোলতা আর কাউয়া র ব্যাপারটা জমিয়ে দিয়েছিস। সমস্ত নাম গুলোতেই চমক।
    এত দোয়েলের গল্প শুধু নয়, সব কিশোরী ও তার মায়েদের শাসনের গল্প। 
    ভাল লিখেছিস।
  • কস্তুরী | 103.27.***.*** | ২৮ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:১৮503179
  • অনেক ধন্যবাদ রে দিগন্ত।
  • Tanmoy Chattopadhyay | ২৮ জানুয়ারি ২০২২ ১১:৫৪503183
  • অসাধারণ । চিরন্তন সত্য। 
  • কস্তুরী | 2402:3a80:1cd2:1313:378:5634:1232:***:*** | ২৮ জানুয়ারি ২০২২ ১৩:১২503188
  • অনেক ধন্যবাদ।
  • sayan bhattacharyya | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:৩৬503195
  • খুব ভালো হয়েছে 
  • কস্তুরী | 103.27.***.*** | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ১১:১৯503199
  • অনেক ধন্যবাদ।
  • Sulagna Halder | 2409:4060:2d94:8ee8:11d6:1e88:649:***:*** | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:৫৩503231
  • কী যে সুন্দর লাগল পড়তে, কী বলব ! মনে মনে টুকটুক হয়ে, রূপকথার সুন্দর জীবন বেঁচে নিলাম , খানিকক্ষ ! 
  • মিনতি চক্রবর্তী হালদার। | 2409:4060:2d94:8ee8:11d6:1e88:649:***:*** | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ২০:১২503232
  • দারুণ  লিখেছো কস্তুরী। কি imaginative  মন তোমার! সুন্দর এই মনটা ধরে রাখো। বেশ সাবলীল লেখনী। লেখার ব্যাপারে আরোও মনোযোগী হও । যদি অনুমতি দাও তবে
    আমি কয়েকটি বাচ্চাকে লিঙ্কটা পাঠাবো । ওদের মতামত
    জানার চেষ্টা করবো।
  • অরিজিত ভট্টাচার্য | 2401:4900:3149:5d8d:2d8a:81aa:f6fc:***:*** | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ২১:২৪503237
  •  খুব সুন্দর গল্প ✅
  • কস্তুরী | 103.27.***.*** | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ২২:১৮503241
  • সুলগ্না, আপনার মতামত পেয়ে খুব খুশী হলাম। সত্যি, আমরা বোধহয় সবাই টুকটুক হয়েই বাঁচতে চাই। বাবা মায়ের শাসনের আড়ালে থাকার সময়টুকুই জীবনের সেরা সময়..তা একটা বয়সে এসে অনুভব করা যায়। 
    ভালো থাকবেন।
  • কস্তুরী | 103.27.***.*** | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ২২:২৬503242
  • মিনতি দি, আশীর্বাদ করবেন এভাবেই যেন লিখে যেতে পারি। আপনি যাদের পড়াতে চাইছেন, নিশ্চয়ই লিঙ্ক পাঠিয়ে দিন। আমার অনুমতি নেওয়ার কোনো  প্রয়োজন নেই দিদি। এ তো আমার পরম সৌভাগ্য যে আপনি এমনটা ভেবেছেন। 
    আমার প্রণাম নেবেন।
  • Kasturi Das | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ২২:৪৫503243
  • সবাইকে ধন্যবাদ আমার এই লেখা পড়ার জন্য।
  • Mousumi Banerjee | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১০:৫৪503727
  • কি সুন্দর লেখা! টুকটুকের জগতে আমিও মনে মনে হারিয়ে গেলাম।
  • Manisha Deb Sarkar | 2409:4060:2e81:ce72::c88a:***:*** | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:৪২504272
  • ওদের জগৎ টা কি সুন্দর আর মিষ্টি। তুমিও খুব মিষ্টি করেই লিখেছো। পড়ে খুব ভালো লাগলো। 
  • Kasturi Das | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২০:৩৩504283
  • অনেক ধন্যবাদ দিদি। আপনি আমার প্রণাম নেবেন। আপনি পড়েছেন, আমার খুব ভালো লাগলো দিদি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন