ঘন কুয়াশায় ঢাকা সকালে কারই বা মন ভালো থাকে বল। চারপাশ প্রয়ান্ধকার। অদেখার আড়ালে ভয়ঙ্কর বিপদ। টুকটুকের মা টিটি আর বাবা ডোডো, কিছুতেই টুকটুককে বেরোতে দিচ্ছে না। কিন্তু টুকটুক জেদ ধরে বসে আছে, ও বেরোবেই।
এই ঝুপসি কুল গাছে, পাতার আড়াল দিয়ে তৈরী করা ওদের একটা ছোট্ট বাসা। আকাশের মুখ ভার দেখে, টুকটুকের ডোডো বাবা কয়েকদিনের জন্য খাবারও জোগাড় করে রেখেছিল। শুঁয়োপোকার ছানা, চিকমিকে পোকা, বিন্নীর মায়ের ফেলে দেওয়া চাউমিন ..এইসব। কটা দিন চলে যাবে বেশ। এরপর মেঘ বৃষ্টির পালা শেষে ঝলমলিয়ে রোদ উঠলেই, ভিজে মাঠের ইয়া ইয়া পোকাগুলো গর্ত থেকে বেরোলেই, আহা..মহাভোজ।
ছোট্ট টুকটুক বড্ড জেদি হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। কিছুতেই শুনছেনা মা বাবার কথা। ও বেরোবেই। একসময় মা বাবা খাবার খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেই, সাঁ..ই করে বেরিয়ে পড়লো টুকটুক। ব্যাস্, এক্কেবারে কুয়াশার অন্দরমহলে..'ওরে বাবা, এ কি..কিছুই যে দেখা যাচ্ছেনা। মাঠ ঘাট গাছপালাগুলো সব গেল কোথায় ! '..
এ্যঁ এ্যঁ এ্যঁ এ্যঁ করে কাঁদতে শুরু করলো টুকটুক। ওর কান্না শুনে , কুয়াশা বুড়ির দল জাপটে ধরলো ওকে। এক্কেবারে ঢেকে ফেললো পরম মমতায়। অনেক অনেক আদর করে, ওদের বুকের মধ্যে জমানো উষ্ণতা দিয়ে ভিজিয়ে চান করিয়ে দিল টুকটুককে।
এদিকে দিন তিনেক হেব্বি রেস্টের পর সূয্যি মামার খেয়াল হলো, 'আরে অনেক দেরি হয়ে গেল যে! ইসস্..এত্ত ঘুমোলাম ! '..
বলেই, দু হাত দিয়ে মেঘ ঠেলে টিরিং করে মুখ বাড়ালেন। তারপর একটু একটু করে ধরার বুকে আলোয় আলো ছড়িয়ে হেসে উঠলেন।
ঝাপসা কুয়াশা বুড়ির দল তখন গাছপালার আড়ালে, পাতার তলায়, গিয়ে মিলিয়ে গেল আসতে আসতে। যাবার সময় টুকটুকের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে গেল, 'আবার আসবো আমরা। ততদিন ভালো হয়ে থেকো, কেমন ..আর মা বাবার কথা শুনো।'
ওরা চলে যেতেই টুকটুক পরিস্কার দেখতে পেল সব। কি মজা, কি মজা..টি টি টিটিটি..টি টি টিটিটি করে ডেকে ও উড়ে গিয়ে বসলো বাক্কুদের বাড়ির ছাদে।
ওর ভিজে যাওয়া কুয়াশা মাখা শরীর সূয্যি মামার ওমে সেঁকে নিতে নিতে অনেক গল্প করলো সূয্যি মামার সাথে। এই তিনদিন টানা ঘুমিয়ে কি কি স্বপ্ন দেখছেন সূয্যি মামা, সেসবই গল্প করলেন টুকটুকের সাথে।
এমন সময় একটা কালো কউয়া উড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়তে গেল টুকটুকের ওপর। বলগা বোলতা ঠিক সময়মতো বোঁঁ বোঁ করে কালো কউয়ার নাকে ধাক্কা না মারলে, কি যে হতো !..
সাঁই সাঁই সাঁই করে প্রাণভয়ে গাছপালা বাড়িঘরের ফাঁক দিয়ে পালাতে লাগলো টুকটুক। আর পেছনে কালো কউয়া।
হঠাৎই চাম্পু আমগাছের কোটরের মধ্যে কে যেন টেনে নিয়ে গেল টুকটুককে। অন্ধকার ওই কোটরে চোখ একটু সইতেই দেখতে পেল, টেরি লক্ষীপেঁচা ওর ডানার আড়ালে লুকিয়ে ফেলেছে ওকে।
কালো কউয়া ততক্ষণে টুকটুককে দেখতে না পেয়ে রণে ভঙ্গ দিয়েছে।
তারপর মা পেঁচা টেরি, যখন ওকে ট্যাঁঁপারি খাওয়াচ্ছিল..তখন টিটি মা আর ডোডো বাবা হাঁপাতে হাঁপাতে সেখানে গিয়ে পৌঁছল। অনেক বকাবকি, কান্নাকাটি, আদর টাদরের পর ..টেরি পেঁচাকে অনেক ধন্যবাদ টাদ জানিয়ে ফেরার সময়, ভকলু বিকলু মা টেরির দুই ছানা টুকটুককে বললো, 'তুমি আমাদের সাথে খেলতে আসবে তো টুকটুক '..
'নিশ্চয়ই আসবো ভকলু বিকলু' ..
'মাঝরাতে যখন চাঁদের আলোয় ঝমঝম করবে চারপাশ, তখন আমি বিন্নী দিদির বাড়ির ছাদে বসে গান গাইবো। চলে আসিস কিন্তু তোরা । '
আর তারপর থেকে ছোট্ট দোয়েল টুকটুক ঠিক রাত দুটো বাজলেই, বিন্নীদের বাড়ির ছাদে বসে গান গায়। আর ওর সোনালী সুরেলা সুরে ভকলু বিকলু কোটর থেকে বেরিয়ে আসে।
তারপর ..তারপর হুটোপাটি, লুকোচুরি, এক্কাদোক্কায় ভোরের আলো ফুটতে শুরু করে। ক্যালেন্ডুলার কুঁড়িরা হাসিহাসি মুখে চোখ মেলে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।