@এলেবেলে,
১
প্রথমেই বিতর্কের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু আপনার বিবৃতিতে যুক্তিতর্কের চেয়ে এলেবেলে বক্তৃতাই যেন বেশী ঠেকলো।
খেরো খাতায় আপনি কী গভীর জ্ঞানতত্ত্ব খুঁজতে এসেছিলেন ভাই? লেখার শিরোনামও পড়েন নি? হয়তো চন্ডালেরই গুরুবিদ্যার ঘাটতি, অথবা আটার কলে আখের রস সন্ধানের ফল।
বিনয় করে বলি, প্রথম মন্তব্যকারী প্রিসিলা কিন্তু ঠিকই এই লেখার মাজেজা বুঝেছেন, "বাউল দর্শনে গান নয়, দর্শনটিই মূল কথা - এই মর্মটিকে তুলে ধরা হয়েছে লেখায়৷ যথার্থভাবেই তা করা হয়েছে৷"
২
"বাউল গান মানেই দেহতত্ত্বমূলক গান নয়। ওটা একটা শ্রেণি, আরও অনেক শ্রেণির মতোই। তাঁদের ভাষায় চারি চন্দ্রের সেবা না করতে পারলে প্রকৃত বাউল হওয়া যায় না। এই 'চারি চন্দ্র' তাঁদের সাঁটের কথা। যাঁরা জানেন, জানেন। না জানলে বাউল নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো।"
চন্ডলের লেখায় কোথাও কী বলা হয়েছে, "বাউল গান মানেই দেহতত্ত্বমূলক গান"? নাকি "চার চাঁদের ভেদ" কথা ফাঁস করলেই বাউল গান নিয়ে খুব বিদ্যাধরী বাহাদুরী হয়! আজব!?
বরং এই লেখায় খুব ফলাও করে বলা হয়েছে, "বাউল একটি গুপ্ত সাধনার ধর্ম, বৈষ্ণব সহজিয়া, বৌদ্ধ সহজিয়া ও সুফিবাদের সংমিশ্রণে মানবগুরুর ভজনা, দেহ-কেন্দ্রিক সাধনাই লালন প্রদর্শিত বাউল ধর্মের মূলমন্ত্র" ইত্যাদি।
নিছক কচকচে জ্ঞান বিদ্যায় নোটটি কে ভারি করতে চাওয়া হয়নি, সাঁটের কথা তো নয়ই, এলেবেলে পাঠকের জন্য "সংবিধিবদ্ধ সতর্কতা" দেওয়া দরকার ছিল কী?
৩
"যেদিন হিন্দু, মুসলমান" একটি ফেক লালন গীতি।
তাই? অনেক বাউল আখড়ায় কিন্তু এই গান নিয়মিত গাওয়া হয়, এটি ফেক লালন গীতি, এই নিয়ে কোনো তথ্য সূত্র আছে? জানালে খুশী হবো।
এপারে অন্যতম বাউল শফি মন্ডল নিয়মিত টিভি ও মঞ্চে কিন্তু এই গান করেন :
৪
"ফরিদা পারভীন স্বাধীন বাংলাদেশের 'সুধী' সমাজে লালনের গানকে জনপ্রিয় করতেই পারেন, কিন্তু এই আচাভুয়া সুধী সমাজ নিয়ে বাউলদের কোনও কালেই মাথাব্যথা নেই।"
তো? বাউলদের মাথা ব্যথার প্রশ্ন আসছে কথা থেকে? লেখা না পড়েই গা জোয়াররি নাকি!?
বাউলরা গ্রামীণ পল্লী জীবনে তাদের সাধনার ধর্ম, গীত, জ্ঞান নিয়ে আপন মনে থাকবেন, এই তো স্বাভাবিক।
বরং চন্ডালের লেখায় সুস্পষ্ট বলা হয়েছে "সে সময় লালনের গানের কোনো লিখিত রূপ ছিল না। শুধু মাত্র মুখে মুখে, গানে গানে বাউল ফকিররা লালনের গান অবিভক্ত ভারতে ছড়িয়ে দেন।"
এবং
"দেড়শ বছর পরে আজও প্রতি দোল পূর্ণিমায় লালনের জন্ম উৎসব তিথিতে দুই বাংলা থেকে হাজার হাজার বাউল ফকির, ভক্ত কুষ্টিয়ায় মাজারে জড়ো হন, তারা দিন রাত গান গানে স্মরণ করেন সাঁইজীকে।"
৫
এলেবেলে মতে, "লালনের গানের সবচেয়ে জোরের জায়গা হল বেদ-কোরান-পুরাণকে অস্বীকার করা। "
প্র চ ন্ড দ্বি ম ত।
লালনের গানের লক্ষ্য হলো জাত-পাত, ধর্ম বর্ণ-বিভেদের অবসান। সবকিছুর ওপরে তিনি স্থান দিয়েছিলেন মানবতাবাদকে।
এইটাই তার গানের সবচে জোরের জায়গা।
এই "মানবতাবাদ" প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তারা "বেদ-কোরান-পুরাণকে অস্বীকার" অস্বীকার করবেন, সেটি পন্থা, আর সেটাই তো স্বাভাবিক।
তাছাড়া এই লেখায় আগেই বলা হয়েছে, "বাউল একটি গুপ্ত সাধনার ধর্ম", সেখানে মুসলিম বাউল, হিন্দু বাউল আশা করেন নাকি ভাই?
খেয়াল করে রব ফকিরের গানটি শুনলেই পারতেন, সেখানে স্পষ্টতই শরীয়ত পন্থাকে অস্বীকার করা হয়েছে, "সৃষ্টিকর্তা বলছো যারে/লা শরিক হয় কেমন করে/ভেবে দেখো পূর্বাপরে/ সৃষ্টি করলেই শরিক আছে।"
৬
"লালনের একমাত্র স্কেচ বলে জ্যোতি ঠাকুরের আঁকাটি নিয়ে প্রচুর ইফস অ্যান্ড বাটস আছে। বিষয়টা ঠিক ওইরকম গোলগোল কিছু নয়।"
এঁ!! সর্বজন বিদিত লালনের একমাত্র স্কেচ নিয়ে কি রকম "চৌকো বা ত্রিকোণ" আছে, জানালে বাধিত হবো।
৭
"লালন নিজেকে আজীবন ফকির বলেছেন, ফকির বলেই পরিচিত হতে চেয়েছেন। সেখানে তাঁকে সাঁই হিসেবে চিহ্নিত করা এক ধরণের গুরুবাদের লক্ষণ "
এইবার কিন্তু বিশ্রী লেজেগোবরে হলো ভাই।
এই লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে, "মরমী আত্মধিক সাধক লালন ফকিরকে তার অনুসারীরা সাঁই হিসেবে ডাকেন, তিনি মোটেই মুঘল পদবী ধারী "শাহ্" নন! "
"অজ্ঞতা বশত: এটি একটি বহুল প্রচলিত ভুল। বিশেষ করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক "লালন শাহ্ (?) সেতু" বানিয়ে অজ্ঞতাটিকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। "
অর্থাৎ এপারে লালনের নামকরণ নিয়ে যে দীর্ঘ বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, তা খানিকটা কাটানোর চেষ্টা। এখন লালনকে সাঁই চিহ্নিত করার "গুরুবাদী" দায় চন্ডালকে নিতে হবে নাকি!?
যদিও বাউলরা সাঁই বা সাঁইজী বলতে লালনকেই বুঝিয়ে থাকেন।
আবার লালন তার অসংখ্য গানে তার ভাবগুরু সিরাজকে "সাঁই" সহযোগেই সম্বোধন করেন। এ জন্য খোদ লালনও "গুরুবাদের লক্ষণ" দোষে দুষ্ট হলে কি আর করা!
শুভেচ্ছা।