এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • লালন সম্পর্কে দুটো একটা কথা যা আমি জানি...

    বিপ্লব রহমান লেখকের গ্রাহক হোন
    ০১ ডিসেম্বর ২০২১ | ৬০৩০ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৪ জন)




  • মরমী আত্মধিক সাধক লালন ফকিরকে তার অনুসারীরা সাঁই হিসেবে ডাকেন, তিনি মোটেই মুঘল পদবী ধারী "শাহ্" নন! 
     
    অজ্ঞতা বশত: এটি একটি বহুল প্রচলিত ভুল। বিশেষ করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক "লালন শাহ্ (?) সেতু" বানিয়ে অজ্ঞতাটিকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। 
     
    আবার কিছু বাউল নিজেরাই উদাসীনতায় নামের ক্ষেত্রে "শাহ্" কথাটি ব্যবহার করেন, যেমন আরেক বিখ্যাত বাউল "শাহ্ আব্দুল করিম"। কিন্তু বংশ লতিকা খুঁজে তার সাথে মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক বর্গের কোনো যোগসাজস না পাওয়ারই কথা। 
     
    "সাঁই" কথাটির ভাবার্থ হচ্ছে -- বাবা, কর্তা, গুরু, পথ প্রদর্শক ইত্যাদি। 
     
    লালন ফকির ছিলেন একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক ও দার্শনিক। তার গানের মধ্যে সন্ধান পাওয়া যায় এক বিরল মানব দর্শনের।



    লালন ফকিরকে "বাউল-সম্রাট" বা "বাউল গুরু" হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তার গানের মাধ্যমেই উনিশ শতকে বাউল গান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তিনি প্রায় দু হাজার গান রচনা করেছিলেন বলে লালন গবেষকরা বলেন।
     
    তবে স্বাধীন বাংলাদেশে আটের দশকে ফরিদা পারভীন বেতারে লালন গীতি নিয়মিত পরিবেশন করে সুধী সমাজে নতুন করে লালনকে প্রতিষ্ঠা করেন। 
     
    তিনি সাঁইজীর অনুসারী কুষ্টিয়ার বাউল মোকসেদ আলী সাঁইয়ের কাছে দীর্ঘদিন ধরে লালনের দর্শন জেনেছেন ও গান শিখেছেন। 
     
    ফরিদা পারভীন জাদুকরী কোকিল কণ্ঠে ক্রমে সারা বিশ্বে লালনের গান নিয়ে যান। নতুন করে এই অহিংস কবি, গীতিকার ও দার্শনিকের চিন্তা জনসম্মুখে উন্মোচিত হয়। বাউল ফকিররা বাদেও দুই বাংলার মধ্যবিত্ত সমাজে "লালন গীতি" চর্চা ব্যাপকভাবে শুরু হয়। 
     
    ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলা একটি "শ্রোতা জরিপ" এর আয়োজন করে। বিষয়টি ছিলো - সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে? তিরিশ দিনের ওপর চালানো জরিপে শ্রোতাদের ভোটে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ২০ জনের জীবন নিয়ে বিবিসি বাংলায় বেতার অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় ২০০৪-এর ২৬ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত।
     
    বিবিসি বাংলার সেই জরিপে শ্রোতাদের মনোনীত শীর্ষ ২০ জন বাঙালির তালিকায় ১২ তম স্থানে আসেন সাধক লালন ফকির ।
     


    এর আগে লালন সাঁই অবশ্য তার গভীর দর্শন দিয়ে জীবনদশাতেই ঠাকুর পরিবার ও সে সময়ের প্রগতিশীল সুধী সমাজের দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলেন। 
     
    লালনের জীবদ্দশায় তার একমাত্র স্কেচটি তৈরি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। লালনের মৃত্যুর বছরখানেক আগে ৫ মে ১৮৮৯ সালে পদ্মায় তার বজরায় বসিয়ে তিনি এই পেন্সিল স্কেচটি করেন- যা ভারতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। যেখানে তিনি ক্যাপশন লিখেছেন, "লালন ফকির, শিলাইদহ"।
     
    ছবিটিতে খোলা চুল-দাড়িতে চেয়ারে ঝুঁকে বসা লালনকে দেখা যাচ্ছে এক পাশ থেকে, বাম হাতে দোতরা ধরা; ধুতি বা লুঙ্গি পাঞ্জাবী পরা লালন ডান পায়ের ওপর বাম পা ভাঁজ করে বসেছেন।
     
    জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহে জমিদারির কাজে এলে নিয়মিত 
    লালনের কাছে মানবতাবাদী ধর্মকথা ও তার গান শুনতেন। নিরক্ষর এই মহাপুরুষের গানে বরাবরই সাধারণ পল্লী জীবনকে আশ্রয় করে গভীর আত্মজিজ্ঞাসা প্রকাশ পেয়েছে। 
     
    খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরবর্তীতে লালন ও অন্যান্য বাউল গানে আকৃষ্ট হন। তার অনেক গানে এর প্রভাবও পড়েছে। 
     
    রবীন্দ্রনাথ নিজে তার বাউল প্রভাবিত গানগুলোকে "রবীন্দ্র-বাউলের গান" হিসেবে অভিহিত করেন। এ ধরনের অসংখ্য গান আছে। যেমন —
    ‘তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই’; ‘তুমি যে সুরের আগুন জ্বালিয়ে দিলে’; ‘সে দিনে আপদ আমার যাবে কেটে’; ‘সবাই যারে সব দিতেছে’; ‘রইল বলে রাখলে কারে’; ‘ফিরে চল মাটির টানে’; ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়’; ‘কান্না হাসির দোল দোলানো’; ‘আমি তারেই খুঁজে বেড়াই’; ‘ও আমার মন যখন’; ‘কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ’; ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’; ‘যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক’; ‘যে তোরে পাগল বলে’; ‘গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ’; ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’; ‘ও আমার দেশের মাটি’; ‘নিশিদিন ভরসা রাখিস, ওরে মন হবেই হবে’; ‘মালা হতে খসে পড়া’; ‘আমি যখন ছিলাম অন্ধ’; ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’; ‘ডাকব না ডাকব না’ ধরনের অনেক গান। 

    "আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি", বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতটিও বাউলসংগীত, যা "আমি কোথায় পাব তারে" গানটি দ্বারা প্রভাবিত।



    লালন ফকিরের  (১৭ অক্টোবর ১৭৭২ – ১৭ অক্টোবর ১৮৯০) সঠিক জন্ম ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কোন কোন লালন গবেষক মনে করেন  বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার ভাড়ারা গ্রামে লালন জন্মগ্রহণ করেছিলেন সম্ভ্রান্ত এক হিন্দু কায়স্থ পরিবারে। বাবা মাধব কর ও মা পদ্মাবতীর একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি।
     
    কিন্তু এ বিষয়ে দ্বিমতও আছে। কেউ বলেন তার জন্ম ঝিনাইদহে, কেউ বলেন যশোরে।
     
    কথিত আছে শৈশবে পিতৃবিয়োগ হওয়ায় অল্প বয়সেই তাঁর ওপর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়েছিল। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের সুযোগ তার হয়নি।
     
    কোন কোন গবেষকের বিবরণ অনুযায়ী প্রতিবেশী বাউলদাস ও অন্যান্য সঙ্গীদের নিয়ে "পুণ্যস্নান" বা তীর্থভ্রমণ সেরে ঘরে ফেরার পথে লালন বসন্তরোগে গুরুতরভাবে আক্রান্ত হন।
     
    রোগ বৃদ্ধি পেলে অচৈতন্য লালনকে মৃত মনে করে সঙ্গীরা কোনরকমে তার মুখাগ্নি করে তাকে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এক মুসলমান রমণী নদীকূল থেকে লালনের সংজ্ঞাহীন দেহ উদ্ধার করে সেবাশুশ্রূষা করে তাঁকে সুস্থ করে তোলেন। কিন্তু তাঁর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
     
    এই গবেষণার তথ্যমতে, এরপর বাড়ি ফিরে গেলে সমাজপতি ও আত্মীয়স্বজন মুসলমানের গৃহে অন্নজল গ্রহণ করার অপরাধে তাকে সমাজে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। ব্যথিত লালন চিরতরে গৃহত্যাগ করেন।
     
    বলা হয় এই ঘটনা সমাজ-সংসার, শাস্ত্র আচার এবং জাতধর্ম সম্পর্কে তাঁকে বীতশ্রদ্ধ করে তোলে। এবং এখান থেকেই হয় তার নতুন জন্ম।
     
    বাউল গুরু সিরাজ সাঁইয়ের কাছে দীক্ষা নেওয়ার পর কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া গ্রামে আখড়া স্থাপন করে তার প্রকৃত সাধক জীবনের সূচনা হয়।
     
    "সিরাজ সাঁই কয় কোথায় রে মন, সোনার খাট পালঙ্ক এমন? /লালন কহে সব অকারণ, সার হবে মাটির বিছানা"...
     
    লালনের গানে বার বার ঘুরে ফিরে তার ভাবগুরু "সিরাজ সাঁই" এর কথা এসেছে, যদিও গবেষকরা তার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান, সিরাজ সাঁই এর ঐতিহাসিক সূত্র বা অন্য কোনো লোকগীতিতে তার উল্লেখ নাই।
     
    কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেউড়িয়ায় নিজের আখড়ায় ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর, বাংলা ১২৯৭ সালের পয়লা কার্তিক ১১৬ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন মহাত্মা ফকির লালন সাঁই।
     


    এ কথা বলে নেওয়া ভাল, বাউল একটি গুপ্ত সাধনার ধর্ম, বৈষ্ণব সহজিয়া, বৌদ্ধ সহজিয়া ও সুফিবাদের সংমিশ্রণে মানবগুরুর ভজনা, দেহ-কেন্দ্রিক সাধনাই লালন প্রদর্শিত বাউল ধর্মের মূলমন্ত্র, দেহতত্ত্ব, "যাহা নাই দেহ ভান্ডে, তাহা নাই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে" ইত্যাদি। গুপ্ত সাধনার ধর্ম বলেই বাউলরা অনেক কথা ধাঁধায় গানে গানে প্রচার করেন। 
     
    যেমন, লালন সাঁই বলেন, "চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে, আমরা ভেবে করবো কী?/ ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম, তোমরা তারে বলবে কী?" 
     
    গান হচ্ছে লালনের বাউল ধর্মের কালাম বা বাণী মাত্র, "জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন" যার আধ্যাত্মিক লক্ষ্য। লালন সাঁই যেমন তার গানে বলেন, "মিলন হবে কত দিনে, আমার মনের মানুষের সনে?"
     


    লালন সাঁই তার গানে বলেন, "যেদিন হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান / জাতি-গোত্র নাহি রবে / এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে?"
     
    লালন ফকিরের যখন আর্বিভাব ঘটেছিল সেই সময়টা বাঙালির জীবনের এক ক্রান্তিকাল। পলাশীর যুদ্ধে স্বাধীনতার সূর্য তখন অস্তমিত। গ্রামীণ সমাজ নানাভাবে বিভক্ত। ধর্ম জাত-পাত ইত্যাদি নিয়ে সমাজে ছিল বিভিন্ন সমস্যা।
     
    লালন এই জাত-পাত ও ধর্ম বর্ণ-বিভেদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন একটি জাত ধর্ম বর্ণ গোত্রহীন সমাজ গড়ে তুলতে। সবকিছুর ওপরে তিনি স্থান দিয়েছিলেন মানবতাবাদকে।
     
    তিনি শুধু জাত-পাতের বিরুদ্ধেই সোচ্চার ছিলেন না, লালন গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন সামাজিক অনাচার, বিভেদ বৈষম্য এবং সামন্ত শোষণের বিরুদ্ধেও তিনি রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।
     
    "শিলাইদহের ঠাকুর জমিদাররা যখন প্রজাপীড়ন আরম্ভ করলেন তখন কুমারখালির কাঙাল হরিনাথ তার 'গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকায় ঠাকুর জমিদারদের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ করেন। এতে ঠাকুর জমিদাররা কাঙাল হরিনাথকে শায়েস্তা করার জন্য গুণ্ডা নিয়োগ করেন। লালন ফকির তখন তাঁর এই বন্ধুকে রক্ষা করার জন্য তাঁর শিষ্যদের নিয়ে জমিদারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন।"
     
    সে সময় লালনের গানের কোনো লিখিত রূপ ছিল না। শুধু মাত্র মুখে মুখে, গানে গানে বাউল ফকিররা লালনের গান অবিভক্ত ভারতে ছড়িয়ে দেন। 
     
    দেড়শ বছর পরে আজও প্রতি দোল পূর্ণিমায় লালনের জন্ম উৎসব তিথিতে দুই বাংলা থেকে হাজার হাজার বাউল ফকির, ভক্ত কুষ্টিয়ায় মাজারে জড়ো হন, তারা দিন রাত গান গানে স্মরণ করেন সাঁইজীকে। 



    এইসব ইতিহাস পরম্পরা ও মূল ভাব দর্শন বাদ দিয়ে শুধু মাত্র গান দিয়ে লালন সাঁইকে 
    তথা বাউল কথাকে বিচার করার চেষ্টা গুরুতর অজ্ঞতার নামান্তর। 
     
    বলা ভাল, রণজিৎ কুমার লালনকে নিয়ে "সেনবাউল রাজারাম" নামে একটি উপন্যাস রচনা করেন। পরেশ ভট্টাচার্য রচনা করেন "বাউল রাজার প্রেম" নামে একটি উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত উপন্যাস "গোরা" শুরু হয়েছে লালনের গান "খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়" দিয়ে।
     
    এছাড়া বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লালনের জীবনী নিয়ে রচনা করেন "মনের মানুষ" (২০০৮) উপন্যাস। এই উপন্যাসে কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়াই লালনকে হিন্দু কায়স্থ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছ, নাম দেয়া হয়েছে "লালন চন্দ্র কর(!)"। এটি মোটেই লালনের আত্মজীবনী নয়, ইতিহাস তো নয়ই, ঐতিহাসিক চরিত্র লালন ফকিরকে উপজীব্য লেখা এটি শেষ পর্যন্ত উপন্যাসই। 
     
    "মনের মানুষ" (২০১০) সিনেমাটিও কাল্পনিক। বরং সিনেমায় বাউল জীবনাচারকে আরও বেশ কিছুটা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। 
     
    আর বাংলা ব্যান্ড সংগীতে বাউল গান নিয়ে পশ্চিমা বাদ্য যন্ত্রে ফিউশন ইত্যাদি তৈরি, মানবতার দর্শনটির সর্বশেষ বিকৃত ও কর্পোরেট রূপ। 
     
    *সংযুক্ত : সব সৃষ্টি করলো যে জন, তারে সৃষ্টি কে করেছে? ... রব ফকিরের লালন গীতি
     
     

    _______
    তথ্য সূত্র : অখন্ড লালন সংগীত, আবদেল মান্নান, বিবিসি বাংলা, উইকিপিডিয়া, অন্যান্য। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • প্রিসিলা রাজ | 103.23.***.*** | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ১০:৩৪501580
  • বাউল দর্শনে গান নয়, দর্শনটিই মূল কথা - এই মর্মটিকে  তুলে ধরা হয়েছে লেখায়৷ যথার্থভাবেই তা করা হয়েছে৷
  • b | 14.139.***.*** | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ১১:০০501583
  • "খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়"
     
    'কমনে (কোথা দিয়ে ) আসে যায়' নয়? 
  • বিপ্লব রহমান | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ১১:২৬501585
  • @প্রিসিলা, 
     
    অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। 
     
    @b, 
     
    কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক উচ্চারণে "কমনে",  ফরিদা পারভীনও এই উচ্চরণ করেন, কিন্তু "কেমনে" কথার সাথে এর মূল ভাবের পার্থক্য নাই। 
     
    অভিধান বলছে, = কমনে, কম্নে [ kamanē, kamnē ] ক্রি-বিণ. (আঞ্চ.) ১. কোথায়; ২. কোন পথে; ৩. কেমন করে... ইত্যাদি। 
     
    আপনার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ
  • সম্বিৎ | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ১১:২৯501587
  • 'মনের মানুষ' নামক অখাদ্য উপন্যাস আর ততোধিক খারাপ ছবি পাবলিক স্ফিয়ার থেকে যত তাড়াতাড়ি বিস্মরণে চলে যায়, ততই মঙ্গল।
  • Prativa Sarker | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:২১501588
  • লেখাটি বেশ ভালো। কিন্তু রবীন্দ্রগানের দীর্ঘ উদ্ধৃতিটি খুবই প্রক্ষিপ্ত মনে হয়েছে। ওটি না দিলে কী আসতো যেতো! 
  • সিএস | 103.99.***.*** | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:৩৭501589
  • "এইসব ইতিহাস পরম্পরা ও মূল ভাব দর্শন বাদ দিয়ে শুধু মাত্র গান দিয়ে লালন সাঁইকে 
    তথা বাউল কথাকে বিচার করার চেষ্টা গুরুতর অজ্ঞতার নামান্তর। "
     
    এইটি মনে ​​​​​​​হয় রবিবাবুই ​​​​​​​শুরু ​​​​​​​করেছিলেন। ​​​​​​​গানটুকুই ​​​​​​​নিয়েছিলেন, ​​​​​​​নিজের দর্শনের ​​​​​​​সাথে মিল ​​​​​​​খুঁজে ​​​​​​​পেয়েছিলেন আর ​​​​​​​'বস্তুবাদী' বাউল ​​​​​​​দর্শন 'ভাববাদী", 'হিউম্যানিস্ট' ইত্যাদিতে ​​​​​​​পরিণত ​​​​​​​হয়েছে ​​​​​​​ক্রমশঃ। 
     
     
  • বিপ্লব রহমান | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:৫৪501590
  • @সম্বিৎ, 
     
    "মনের মানুষ" উপন্যাসটিকে বটতলার সাহিত্যও বলা যায়। একে নিয়ে বিভ্রান্তিকর সিনেমা বানানোয় আরও বিপত্তি ঘটেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের ফেসবুক গ্রুপ "থিঙ্ক বাংলায়" একজন "মনের মানুষ"কে তথ্য সূত্র বানিয়ে লালন সম্পর্কে প্রচুর ভুলভাল তথ্য দিয়ে রীতিমত নোট লিখে ফেলেছেন! 
     
    ওই নোটটি খন্ডন করতে গিয়ে আসলে শেষে এই নোটটি লিখতে হলো। আপনার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ। 
     
    @প্রতিভা দি, 
     
    ঠিকই বলেছ। এখন লেখা সামান্য সম্পাদনা করে রবীন্দ্রনাথের একটি গানের অংশ উল্লেখের বদলে কয়েকটি গানের কথা উল্লেখ করেছি। 
     
    আসলে ভোরে এই নোটটি লেখার সময় প্রয়াত কালিকা প্রসাদের একটি সাক্ষাৎকারের কথা মনে পড়ছিল। সেখানে রবীন্দ্র গানে বাউল সংগীতের প্রভাব প্রসঙ্গে কালিকা প্রসাদ "কান পেতে রই" গানটিকে উদ্ধত করেছিলেন! ভাব তাড়নায় বিপত্তি এইখানে। 
     
    @সিএস, 
     
    তাই? স্বীকার করি, রবীন্দ্র সংগীতের বিচার করার মতো যথেষ্ট এলেম চন্ডালের নাই। 
     
    তবে রবীন্দ্রনাথ নিশ্চিত বাউল দর্শন কথা সম্পর্কে যথেষ্টই জানতেন, নইলে একই ভাবের প্রভাব নিজের গানে করতে পারতেন না। 
     
    আপনাকে ধন্যবাদ 
  • সূশান্ত কর | 2401:4900:38c7:97ce:a9a1:63e8:5774:***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:৫৭501591
  • পড়লাম। ভালো লাগল। তাই পড়াতে ছড়ালাম। 
  • রৌহিন | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৪:১৫501592
  • সিরাজ সাঁই এর অস্তিত্ব সন্দেহাতীত নয়, এটা জানা ছিল না। আমি জানতাম, সিরাজ সাঁই এর আখড়াতেই লালনের সঙ্গীত চর্চার প্রথম ধাপ। তবে এটা ঠিক, লালন ছাড়া আর কোনো ফকিরের গানে সিরাজের উল্লেখ পাইনি - কিন্তু সে তো কারুর গানেই নিজের ছাড়া অন্যের উল্লেখ সাধারণত নেই - এক লালনই ব্যতিক্রম।
  • সিএস | 103.99.***.*** | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৪:৩১501594
  • রবিবাবুর গান নিয়ে বক্তব্য নেই।

    ব্যাপার হল, দেহতত্ত্বের সাধনা ছাড়া বাউলদের 'দর্শন' টেকে না, ওটাই আসল। রবিবাবুর মনে হয় না সেটা খুব একটা রুচিশীল মনে হয়েছিল, সেটা অবশ্য ওনার ক্ষেত্রেই ঘটেনি, উনিশ শতক জুড়েই কলকাতা শহরের মানুষেরা বাউল আর অন্য গৌণধর্ম দ্বারা আকৃষ্ট হয়েছেন আবার তাদের সাধনপদ্ধতির জন্য দূরেও থেকেছেন, নানা রকমের সমালোচনাও হয়েছে গৌণধর্মের মানুষদের। নাটকে বাউলদের উপস্থিতি, নিজেকে 'রবি বাউল' বলা অথবা অবন ঠাকুরের আঁকা 'রবি বাউল' - এর ছবি, এগুলোতে বাউল একক মূর্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, যুগল সাধনা থেকে তাকে আলাদা করে। মনের মানুষ - কে রবি বাবু অনুবাদ করেছিলেন Man of the heart বলে আর বাউলের গানে খুঁজে পেয়েছিলেন 'মানবসত্তার' আকুতি, কিন্তু বাউলদের কাছে মনের মানুষ নিতান্ত শারীরিকও হতে পারে। বাউলদের নিয়ে রবীন্দ্রনাথের বা ক্ষিতিমোহন সেনের উৎসাহ হয়ত তাদের ব্রাহ্ম ধর্মের নিরাকার সাধনার সাথে বাউলদের মূর্তিপুজো না করতে চাওয়ার মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়ার জন্যই। অবন ঠাকুরের 'রবি বাউল' যে ছবিটি, সেখানেও বাউলের যে রূপকল্প যেখানে রবিবাউল নাচছেন তার সাথে বাস্তব বাউলের মনে হয় না যোগ আছে, ওরকম বড় আলখাল্লা মনে হয় না বাউলদের পোশাক। তো এগুলোকেই বলা যায় বাউল দর্শনকে 'ভাববাদী' বানানো, তাঁদের দর্শন রবিবাবু জানতেন না সেরকম নয়, কিন্তু তার ওপর নিজের ভাববাদ, দর্শন ইত্যাদি আরোপ করেছেন। সেরকম আরোপ করলে বাউলদের থেকে যেটা নেওয়া হয়, সেটা শুধু  গানটুকুই , অথচ গানও তাদের দর্শন ও সাধনপদ্ধতির লুকোন ভাষা ! এটার আরো এক্সটেনশন হয়েছে পরে যখন বাউলদের মধ্যে 'সেকুলারিজম' বা হিউম্যানিজম খুঁজে পাওয়া হয়েছে। তো এসবই শিক্ষিত মানুষের ঐসব মানুষদের নিজেদের ধারণার আদলে বানিয়ে তোলা, যা বাউলদের নিজস্ব জীবন থেকে দূরে এবং সেই জন্যই ভাববাদী।
     
     
  • শক্তি | 2405:201:8005:9078:89d5:b943:a540:***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:৫৬501595
  • বাউল দর্শন আমার ধারণায় স্বকীয় অভিজ্ঞতা এবং আধ‍্যাত্ম চেতনায় সমৃদ্ধ এই বাউল সংস্কৃতি শহুরে সংস্কৃতি দূরে থাক সাধারণ গ্রামীণজীবন থেকে  স্বতন্ত্র। ইংরেজি শিক্ষিত এলিটদের আলখাল্লা তার আবরণ নয়।রবীন্দ্রনাথ তাঁর মহানুভবতায় লালনকে স্বকীয় করে ছিলেন,এই কথা স্বীকার করতে হবে লালন লালনই। রাবীন্দ্রিক হননি সম্ভব ছিল না।সিনেমার লালন শিলাইদহের লালন নন।পূর্বজীবনে হিন্দু না অহিন্দু ছিলেন সে প্রশ্নই আমার কাছে অবান্তর মনের মানুষের অন্বেষাই তাঁর ধর্ম।রবীন্দ্রনাথ সেখানেই পেয়েছিলেন অন্তরের মিল।রবীন্দ্রনাথ ও বাউল ছিলেন না।হওয়া সম্ভব ছিল না।
  • এলেবেলে | 202.142.***.*** | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:৪৩501598
  • আমি একটু কটু কথা বলি বরং। বাংলাদেশের মানুষ হয়েও যে লালন সম্পর্কে এমন একটি শিশুতোষ, বিভ্রান্তিমূলক তথ্যে পরিপূর্ণ লেখা লিখে ফেলা যায় - সেটা এই লেখাটা না পড়লে বুঝতে পারতাম না। প্রথমত, বাউল গান মানেই দেহতত্ত্বমূলক গান নয়। ওটা একটা শ্রেণি, আরও অনেক শ্রেণির মতোই। তাঁদের ভাষায় চারি চন্দ্রের সেবা না করতে পারলে প্রকৃত বাউল হওয়া যায় না। এই 'চারি চন্দ্র' তাঁদের সাঁটের কথা। যাঁরা জানেন, জানেন। না জানলে বাউল নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো।
     
    দ্বিতীয়ত, "যেদিন হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান / জাতি-গোত্র নাহি রবে / এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে?" একটি ফেক লালন গীতি। লালন নিজে কস্মিনকালেও এই গানটি রচনা করেননি। এই গান পরে তাঁর নামে গুঁজে দেওয়া হয়। আরও অনেকেই অন্যের গান যেমন লালনের নামে চালিয়ে দেন।
     
    তৃতীয়্ত, ফরিদা পারভীন স্বাধীন বাংলাদেশের 'সুধী' সমাজে লালনের গানকে জনপ্রিয় করতেই পারেন, কিন্তু এই আচাভুয়া সুধী সমাজ নিয়ে বাউলদের কোনও কালেই মাথাব্যথা নেই। লালনের গান বহু বছর ধরে স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ দুই বাংলার অগণিত বাউলের মুখে শুনে আসছেন দীর্ঘদিন ধরেই। বরং সুধী সমাজের এই ফোক নিয়ে ফক্কুরিকে তাঁরা পাত্তাও দেন না।
     
    লালনের গানের সবচেয়ে জোরের জায়গা হল বেদ-কোরান-পুরাণকে অস্বীকার করা। এই সমান্তরাল গান ও গায়কদের জীবন নিয়ে রবীন্দ্রনাথ একদা অসম্ভব আকৃষ্ট হয়েছিলেন। এ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যও আছে। কিন্তু কিছু ফেক বাউলের বাউলগিরিতে অতিষ্ঠ ও তিতিবরক্ত হয়ে তিনি সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন। তবুও সমসাময়িক কালে একমাত্র রবীন্দ্রনাথই এই গৌণধর্মটিকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, বাকিরা ছোটলোকদের কারবার বলে নাক সিঁটকানি অব্যাহত রাখেন।
     
    সর্বোপরি, লালনের একমাত্র স্কেচ বলে জ্যোতি ঠাকুরের আঁকাটি নিয়ে প্রচুর ইফস অ্যান্ড বাটস আছে। বিষয়টা ঠিক ওইরকম গোলগোল কিছু নয়।
     
    লালন নিজেকে আজীবন ফকির বলেছেন, ফকির বলেই পরিচিত হতে চেয়েছেন। সেখানে তাঁকে সাঁই হিসেবে চিহ্নিত করা এক ধরণের গুরুবাদের লক্ষণ যা ফকিররা তীব্র ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেন।  
  • সিনা | 203.96.***.*** | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:২৩501599
  • আমি বাংলাদেশি। ফরিদা পারভীন আর লালন গীতি কেউ কারো নয়।
  • বিপ্লব রহমান | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ২২:৪১501603
  • @সুশান্ত দা, 
     
    অনেকদিন পর গুরুতে দেখলাম। আপনাকে ধন্যবাদ। 
     
    @রৌহিন, 
     
    লক্ষনীয়, লালনের গানে সিরাজ সাঁই যেন দ্বান্দ্বিক প্রশ্ন নিয়ে বরাবরই হাজির হয়েছেন। তার গানের মুন্সিয়ানা এইখানে। 
     
    @সিএস, 
     
    আপনার ধারনার সাথে অনেকটাই একমত। পরে শক্তি দি সুধী জনের সীমাবদ্ধতা আরও সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন। 
     
    @শক্তি দি, 
     
    এ ক ম ত। অনেক ধন্যবাদ।
  • Azizul Malik | 2607:fea8:a422:c100:a1d9:816:7d2f:***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:৩৭501606
  • শেষ প্যারাগ্রাফটি সব চেয়ে গুরুত্তপুর্ন ও সঠীক . Ami লেখকের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি . 
    আজিজুল মালিক 
  • বিপ্লব রহমান | ০২ ডিসেম্বর ২০২১ ০১:৩৯501608
  • @এলেবেলে, 
     

    প্রথমেই বিতর্কের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু আপনার বিবৃতিতে যুক্তিতর্কের চেয়ে এলেবেলে বক্তৃতাই যেন বেশী ঠেকলো। 
     
    খেরো খাতায় আপনি কী গভীর জ্ঞানতত্ত্ব খুঁজতে এসেছিলেন ভাই? লেখার শিরোনামও পড়েন নি? হয়তো চন্ডালেরই গুরুবিদ্যার ঘাটতি, অথবা আটার কলে আখের রস সন্ধানের ফল। 
     
    বিনয় করে বলি, প্রথম মন্তব্যকারী প্রিসিলা কিন্তু ঠিকই এই লেখার মাজেজা বুঝেছেন, "বাউল দর্শনে গান নয়, দর্শনটিই মূল কথা - এই মর্মটিকে তুলে ধরা হয়েছে লেখায়৷ যথার্থভাবেই তা করা হয়েছে৷"


    "বাউল গান মানেই দেহতত্ত্বমূলক গান নয়। ওটা একটা শ্রেণি, আরও অনেক শ্রেণির মতোই। তাঁদের ভাষায় চারি চন্দ্রের সেবা না করতে পারলে প্রকৃত বাউল হওয়া যায় না। এই 'চারি চন্দ্র' তাঁদের সাঁটের কথা। যাঁরা জানেন, জানেন। না জানলে বাউল নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো।"
     
    চন্ডলের লেখায় কোথাও কী বলা হয়েছে, "বাউল গান মানেই দেহতত্ত্বমূলক গান"? নাকি "চার চাঁদের ভেদ" কথা ফাঁস করলেই বাউল গান নিয়ে খুব বিদ্যাধরী বাহাদুরী হয়! আজব!? 
     
    বরং এই লেখায় খুব ফলাও করে বলা হয়েছে, "বাউল একটি গুপ্ত সাধনার ধর্ম, বৈষ্ণব সহজিয়া, বৌদ্ধ সহজিয়া ও সুফিবাদের সংমিশ্রণে মানবগুরুর ভজনা, দেহ-কেন্দ্রিক সাধনাই লালন প্রদর্শিত বাউল ধর্মের মূলমন্ত্র" ইত্যাদি। 
     
    নিছক কচকচে জ্ঞান বিদ্যায় নোটটি কে ভারি করতে চাওয়া হয়নি, সাঁটের কথা তো নয়ই, এলেবেলে পাঠকের জন্য "সংবিধিবদ্ধ সতর্কতা" দেওয়া দরকার ছিল কী?
     

    "যেদিন হিন্দু, মুসলমান" একটি ফেক লালন গীতি।
     
    তাই? অনেক বাউল আখড়ায় কিন্তু এই গান নিয়মিত গাওয়া হয়, এটি ফেক লালন গীতি, এই নিয়ে কোনো তথ্য সূত্র আছে? জানালে খুশী হবো।
     
    এপারে অন্যতম বাউল শফি মন্ডল নিয়মিত টিভি ও মঞ্চে কিন্তু এই গান করেন : 
     

     
    "ফরিদা পারভীন স্বাধীন বাংলাদেশের 'সুধী' সমাজে লালনের গানকে জনপ্রিয় করতেই পারেন, কিন্তু এই আচাভুয়া সুধী সমাজ নিয়ে বাউলদের কোনও কালেই মাথাব্যথা নেই।" 
     
    তো? বাউলদের মাথা ব্যথার প্রশ্ন আসছে কথা থেকে? লেখা না পড়েই গা জোয়াররি নাকি!?
     
    বাউলরা গ্রামীণ পল্লী জীবনে তাদের সাধনার ধর্ম, গীত, জ্ঞান নিয়ে আপন মনে থাকবেন, এই তো স্বাভাবিক। 
     
    বরং চন্ডালের লেখায় সুস্পষ্ট বলা হয়েছে "সে সময় লালনের গানের কোনো লিখিত রূপ ছিল না। শুধু মাত্র মুখে মুখে, গানে গানে বাউল ফকিররা লালনের গান অবিভক্ত ভারতে ছড়িয়ে দেন।" 
     
    এবং 
     
    "দেড়শ বছর পরে আজও প্রতি দোল পূর্ণিমায় লালনের জন্ম উৎসব তিথিতে দুই বাংলা থেকে হাজার হাজার বাউল ফকির, ভক্ত কুষ্টিয়ায় মাজারে জড়ো হন, তারা দিন রাত গান গানে স্মরণ করেন সাঁইজীকে।" 


    এলেবেলে মতে, "লালনের গানের সবচেয়ে জোরের জায়গা হল বেদ-কোরান-পুরাণকে অস্বীকার করা। " 
     
    প্র চ ন্ড দ্বি ম ত। 
     
    লালনের গানের লক্ষ্য হলো জাত-পাত, ধর্ম বর্ণ-বিভেদের অবসান। সবকিছুর ওপরে তিনি স্থান দিয়েছিলেন মানবতাবাদকে।
    এইটাই তার গানের সবচে জোরের জায়গা। 
     
    এই "মানবতাবাদ" প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তারা "বেদ-কোরান-পুরাণকে অস্বীকার" অস্বীকার করবেন, সেটি পন্থা, আর সেটাই তো স্বাভাবিক। 
     
    তাছাড়া এই লেখায় আগেই বলা হয়েছে, "বাউল একটি গুপ্ত সাধনার ধর্ম", সেখানে মুসলিম বাউল, হিন্দু বাউল আশা করেন নাকি ভাই? 
     
    খেয়াল করে রব ফকিরের গানটি শুনলেই পারতেন, সেখানে স্পষ্টতই শরীয়ত পন্থাকে অস্বীকার করা হয়েছে, "সৃষ্টিকর্তা বলছো যারে/লা শরিক হয় কেমন করে/ভেবে দেখো পূর্বাপরে/ সৃষ্টি করলেই শরিক আছে।" 

     
    "লালনের একমাত্র স্কেচ বলে জ্যোতি ঠাকুরের আঁকাটি নিয়ে প্রচুর ইফস অ্যান্ড বাটস আছে। বিষয়টা ঠিক ওইরকম গোলগোল কিছু নয়।"
     
    এঁ!! সর্বজন বিদিত লালনের একমাত্র স্কেচ নিয়ে কি রকম "চৌকো বা ত্রিকোণ" আছে, জানালে বাধিত হবো। 


    "লালন নিজেকে আজীবন ফকির বলেছেন, ফকির বলেই পরিচিত হতে চেয়েছেন। সেখানে তাঁকে সাঁই হিসেবে চিহ্নিত করা এক ধরণের গুরুবাদের লক্ষণ " 
     
    এইবার কিন্তু বিশ্রী লেজেগোবরে হলো ভাই। 
     
    এই লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে, "মরমী আত্মধিক সাধক লালন ফকিরকে তার অনুসারীরা সাঁই হিসেবে ডাকেন, তিনি মোটেই মুঘল পদবী ধারী "শাহ্" নন! "
     
    "অজ্ঞতা বশত: এটি একটি বহুল প্রচলিত ভুল। বিশেষ করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক "লালন শাহ্ (?) সেতু" বানিয়ে অজ্ঞতাটিকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। "
     
    অর্থাৎ এপারে লালনের নামকরণ নিয়ে যে দীর্ঘ বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, তা খানিকটা কাটানোর চেষ্টা। এখন লালনকে সাঁই চিহ্নিত করার "গুরুবাদী" দায় চন্ডালকে নিতে হবে নাকি!? 
     
    যদিও বাউলরা সাঁই বা সাঁইজী বলতে লালনকেই বুঝিয়ে থাকেন। 
     
    আবার লালন তার অসংখ্য গানে তার ভাবগুরু সিরাজকে "সাঁই" সহযোগেই সম্বোধন করেন। এ জন্য খোদ লালনও "গুরুবাদের লক্ষণ" দোষে দুষ্ট হলে কি আর করা! 
     
    শুভেচ্ছা। 
     
  • বিপ্লব রহমান | ০২ ডিসেম্বর ২০২১ ০১:৫৭501609
  • @সিনা, 
     
    দেশীর সাক্ষাৎ পেয়ে ভাল লাগল। ধন্যবাদ 
     
    @আজিজুল 
     
    আপনাকে ধন্যবাদ
  • Pavel Bhattacharjee | ০২ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:৫৮501627
  • ফরিদা পারভীন ছেউরিয়া বাউল দর্শনের আকৃষ্ট হয়ে বাউল সঙ্গ করার তথ্য টা  জানা ছিল না।ধন্যবাদ। 
    লাগল সাঁই'য়ের জন্ম ও  মৃত্যুর বাংলা সন টা পেন মিস্টেক সম্ভবত। 
  • বিপ্লব রহমান | ০২ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:৫১501630
  • @পাভেল, 
     
    অনেক ধন্যবাদ। টাইপো ঠিক করেছি। শুভ 
  • এসএস | 43.243.***.*** | ০৩ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:৩০501660
  • লালন সাঁইকে নিয়ে সংক্ষেপে এত সাবলীল লেখা আগে পড়িনি। ফরিদা পারভীন সম্পর্কে আরও জানতে চাই। এলেবেলের মন্তব্য অযাচিত মনে হয়েছে।  
  • এলেবেলে | 202.142.***.*** | ০৩ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:৫১501663
  • বিপ্লব রহমান, আপনার দীর্ঘ উত্তরটির জন্য ধন্যবাদ। আমি দেরি করে উত্তর দেওয়ার কারণে লজ্জিত। আসলে নিজস্ব লেখালেখি নিয়ে খুব ব্যস্ততার কারণে উত্তর দিতে দেরি হল। এবং এখানেও আপনার সবক'টি প্রশ্নের উত্তর আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব হবে না। আমি বিভিন্ন দিন ভেঙে ভেঙে উত্তর দেব। আজ আপনার প্রথম তিনটে বক্তব্য নিয়ে কিছু বলি বরং।
     
    ১. হ্যাঁ, আপনি খেরোর খাতায় লিখেছেন। কিন্তু সেটা ঠিক হাত মকশো করার লেখা নয়। আপনি গুরুর সাইটের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত এবং গুরুর বাংলাদেশের মানুষদের লেখালেখির অন্যতম প্রধান প্রতিনিধিও বটে। কাজেই আপনি কোথায় লিখলেন সেটা বিবেচ্য নয়, আপনি কী লিখলেন সেটাই বিবেচ্য। আমি ঘোষিতভাবেই এলেবেলে। কাজেই আমার বক্তব্যকে আপনার এলেবেলে মনে করার হক একশোবার আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলব এটি একটি শিশুতোষ বিভ্রান্তিমূলক তথ্যে পরিপূর্ণ লেখা।
     
    ২. দেহতত্ত্ব আপনার মূল লেখাতে না আসলেও সিএস-এর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিষয়টি এসেছে। এসেছে রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গও। রবীন্দ্রনাথের যে দীর্ঘ উদ্ধৃতিটি লিখেও আপনি এডিট করে বাদ দিয়েছেন, সেটি আমার পড়ার সুযোগ হয়নি। কিন্তু সব মিলিয়ে দেহতত্ত্ব ও রবীন্দ্রনাথ নিয়ে যা বলতে চাওয়া হয়েছে, তার ভিত্তিতেই আমি কথাটা বলেছিলাম।
    রবীন্দ্রনাথ এ প্রসঙ্গে লিখেছিলেন --- আমাদের দেশে যাঁরা নিজেদের শিক্ষিত বলেন তাঁরা প্রয়োজনের তাড়নায় হিন্দু-মুসলমানের মিলনের নানা কৌশল খুঁজে বেড়াচ্ছেন। অন্য দেশের ঐতিহাসিক স্কুলে তাঁদের শিক্ষা। কিন্তু, আমাদের দেশের ইতিহাস আজ পর্যন্ত, প্রয়োজনের মধ্যে নয়, পরন্তু মানুষের অন্তরতর গভীর সত্যের মধ্যে মিলনের সাধনাকে বহন করে এসেছে। বাউল-সাহিত্যে বাউল সম্প্রদায়ের সেই সাধনা দেখি এ জিনিস হিন্দু-মুসলমান উভয়েরই; একত্র হয়েছে অথচ কেউ কাউকে আঘাত করে নি। এই মিলনে সভাসমিতির প্রতিষ্ঠা হয় নি; এই মিলনে গান জেগেছে, সেই গানের ভাষা ও সুর অশিক্ষিত মাধুর্যে সরস। এই গানের ভাষায় ও সুরে হিন্দু-মুসলমানের কণ্ঠ মিলেছে, কোরান পুরাণে ঝগড়া বাধে নি। এই মিলনেই ভারতের সভ্যতার সত্য পরিচয়, বিবাদে বিরোধে বর্বরতা। বাংলাদেশের গ্রামের গভীর চিত্তে উচ্চ সভ্যতার প্রেরণা ইস্কুল-কলেজের অগোচরে আপনা-আপনি কিরকম কাজ করে এসেছে, হিন্দু-মুসলমানের জন্য এক আসন রচনার চেষ্টা করেছে, এই বাউল গানে তারই পরিচয় পাওয়া যায়।
     
    খেয়াল রাখবেন এই প্রবন্ধটি ১৩৩৪-এ রচিত। রবি ঠাকুর তখন ৬৬ পার করেছেন।
     
    ৩. লালনের যে গানটিকে ফেক বলায় আপনি অবাক হয়েছেন, এবারে সে প্রসঙ্গে আসা যাক। আগে মূল গানটা এখানে সবার জন্য রাখলাম।
    এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে
    সেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান
    জাতি গোত্র নাহি রবে।
    শোনায়ে লোভের বুলি
    নেবে না কাঁধের ঝুলি
    ইতর আতরাফ বলি
    দূরে ঠেলে না দেবে।
    আমীর ফকির হয়ে একঠাঁই
    সবার পাওনা খাবে সবাই
    আশরাফ বলিয়া রেহাই
    ভবে কেউ নাহি পাবে।
    ধর্ম কুল গোত্র জাতির
    তুলবে না গো কেহ জিগির
    কেঁদে বলে লালন ফকির
    কে মোরে দেখায়ে দেবে।
     
    আপনার মনে হয় রবে, দেবে, পাবে, দেবে মার্কা অন্ত্যমিল লালনের? আপনার মনে হয় লালনের সময়ে আশরাফ-আতরাফের বিভাজন বাংলার গ্রামে ছিল?  আপনি নিশ্চিতভাবে আর একটা, হ্যাঁ মাত্র একটা, গান দেখাতে পারবেন যেখানে লালন খোদ নিজেকে 'ফকির' বলেছেন?
     
    গুরুতে সচেতনভাবে রেফারেন্স দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। তাই রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধের শিরোনামও দিলাম না। লালনের ফেক গান সম্পর্কে রেফারেন্সও দিলাম না। আগে, মানে সবার আগে এটিকে লালনের ফেক গান হিসেবে স্বীকার করুন ও চতুর্দিকে প্রচার করতে শুরু করে দিন।
     
    ভালো থাকুন।
     
  • সম্বিৎ | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০০:১৩501668
  • "এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে" গান কিন্তু শক্তিনাথ ঝা-এ নেই। প্রামাণ্য লালন স্কলার হিসেবে শক্তিনাথ ঝা খুব মান্য।
  • lcm | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০০:৫৭501669
  • বিপ্লব লিখেছেন, একটি গান লালন এর গান।
    এলেবেলে বলছেন, না এটি লালন এর গান নয়। 
     
    এলেবেলে কিছু সলিড যুক্তি দিয়েছেন যে কেন ওনার মনে হচ্ছে যে ওটি লালনের গান নয়। 
     
    এই অবধি ঠিক আছে।  

    কিন্তু শেষে এলেবেলে বলছেন, ওনার কাছে রেফারেন্স আছে যে এটি লালনের গান নয়, কিন্তু উনি সেটি উনি দেখাবেন না, আগে বিপ্লবকে মানতে হবে যে ওটি লালনের নয়, এবং চারিদিকে সেটি প্রচার করতে হবে, তারপরে এলেবেলে সেই রেফারেন্স দিলেও দিতে ​​​​​​​পারেন। 

    প্রমাণ জমা দেওয়ার আগেই বিচারের রায় বেরোনোর দাবী - হোয়াই ইজ দিস বিকস, হোয়াই, হোয়াই  :-)
  • বিপ্লব রহমান | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০১:৩৭501670
  • ভাই এলেবেলে, 
     
    এই বার বিবৃতিতে কিন্তু যুক্তিতর্ক আরও কম, লেজে গোবরে ছড়ানোর মাত্রা যেন আরও বেশী, এঁড়ে সুলভ লম্ফঝম্ফও নেহাৎ কম হয় নাই ভাই। পুরাই যেন নামকরনের স্বার্থকতা! 
     
     
    "আপনি গুরুর সাইটের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত এবং গুরুর বাংলাদেশের মানুষদের লেখালেখির অন্যতম প্রধান প্রতিনিধিও বটে। কাজেই আপনি কোথায় লিখলেন সেটা বিবেচ্য নয়, আপনি কী লিখলেন সেটাই বিবেচ্য।"
     
    কোন ফোরামে লেখা, কে লিখছেন, কী লিখছেন -- সবই বিবেচ্য হওয়া উচিৎ, নইলে আর আলাদা ফোরামই বা কেন? ফেক, নন ফেক আইডিই বা কেন? 
     
    "তা সত্ত্বেও বলব এটি একটি শিশুতোষ বিভ্রান্তিমূলক তথ্যে পরিপূর্ণ লেখা।" 
     
    ফের ব্যাক্তিগত আক্রমণ ও গালাগাল, অক্ষমের শেষ হাতিয়ারই তাই, হয় গালাগাল, না হয় ঘেউ ঘেউ! 
     
    এ পর্যন্ত কোনো যুক্তিই খন্ডন না করে প্রথম থেকেই আপনি দুইই করে চলেছেন, তবে এই ইতরপনা আবারও উপেক্ষা করছি, মোল্লার দৌড় কতদূর যায়, দেখার খায়েশ রাখি তাই।
     
     
    "দেহতত্ত্ব আপনার মূল লেখাতে না আসলেও সিএস-এর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিষয়টি এসেছে। এসেছে রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গও।" 
     
    চন্ডলের লেখা বা মন্তব্যে কোথাও কী বলা হয়েছে, "বাউল গান মানেই দেহতত্ত্বমূলক গান"? তাহলে উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে - কেন রে ভাই!? 
     
    "রবীন্দ্রনাথের যে দীর্ঘ উদ্ধৃতিটি লিখেও আপনি এডিট করে বাদ দিয়েছেন, সেটি আমার পড়ার সুযোগ হয়নি। কিন্তু সব মিলিয়ে দেহতত্ত্ব ও রবীন্দ্রনাথ নিয়ে যা বলতে চাওয়া হয়েছে, তার ভিত্তিতেই আমি কথাটা বলেছিলাম।"
     
    নেত্রালয়ে যোগাযোগের সময় এসেছে বোধহয়, কেননা রবীন্দ্রনাথের দীর্ঘ উদ্ধৃতি কোথাও এডিট করে বাদ দেওয়া হয়নি, রবীন্দ্র গানে বাউল প্রভাব প্রসঙ্গে একটি গানের বদলে সম্পাদনা করে ডজনখানেক গানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র, এবং মন্তব্যের খোপে তা না জানালেও মূল লেখার কোনো হেরফের হয়নি।
     
     
    "যেদিন হিন্দু মুসমান " লালনের গান নয়, হতেও পারে এটি ফেক। কিন্তু ...
     
    এলেবেলে সারাদিন ধরে গলা ফাটালেই বিশ্বাস করতে হবে কেন? যখন কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সূত্রসহ প্রমাণ তার কাছে নাই!
     
    আবার আগেই বলা হয়েছে, অনেক বাউল আখড়ায় এই গান নিয়মিত গাওয়া হয়, এপারে বিখ্যাত বাউল শফি মন্ডল নিয়মিত টিভি ও নানা অনুষ্ঠানে এই গান করেন। 
     
    আরেক প্রসিধ্য বাউল গোলাম ফকিরও এই গান নিয়মিত পরিবেশন করেন : 
     
     
    "আপনার মনে হয় লালনের সময়ে আশরাফ-আতরাফের বিভাজন বাংলার গ্রামে ছিল?"
     
    নিছকই নাদান প্রশ্ন। হে হে ... 
     
     "আপনি নিশ্চিতভাবে আর একটা, হ্যাঁ মাত্র একটা, গান দেখাতে পারবেন যেখানে লালন খোদ নিজেকে 'ফকির' বলেছেন?" 
     
    জ্বি, খুব জোর দিয়ে বলছি, "খাঁচার ভিতর অচিন পাখি" গানে লালন খোদ নিজেকে 'ফকির' বলেছেন!! দেখুন : 
     
    ..."মন তুই রইলি খাঁচার আশে/
    খাঁচা যে তোর কাঁচা বাঁশে/ কোন দিন খাঁচা পড়বে খসে/ ফকির লালন কেঁদে কয়"...।
     
     
    দুই দফা "ছায়ার সাথে কুস্তি লড়ে" আপাতত ইস্তফা দেওয়া গেল, যদিও এলেবেলের স্তরে নেমে বাতচিতে বিনোদন ভরপুর।
     
    ভাল থাকুন, ফি আমানিল্লাহ! 
     
     
  • বিপ্লব রহমান | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০২:০৬501671
  • এসএস, 
     
    আপনার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ। 
     
    ফরিদা পারভীন নিয়ে দু কলম আলাদা করে লিখবো হয়তো। ওপরে মন্তব্যে তার গাওয়া একটি বিখ্যাত লালন গীতির লিংক দিয়েছি, আপাতত সেটি শুনতে পারেন। 
     
    সম্বিৎ,
     
    শক্তিনাথ ঝা পড়া হয়নি, লালন সম্পর্কে যতটুকু জানি, তার অনেক গানই গ্রন্থিত হয়নি, কাজেই চট করে অমুক গান ফেক লালন গীতি, বিনা প্রশ্নে তা মেনে নিতে রাজী নই। 
     
    বিশেষ করে এপারে বাউল সমাজে রীতিমত যখন এই গান চর্চা হয়। অনেক ধন্যবাদ
     
    আইসিএম, 
     
    একটু ভুল হলো ভাই, আমি কিন্তু সন্দেহাতীতবভাবে বলিনি, "হিন্দু মুসলমান " লালনেরই গান, বরং এটি লালনের গান নয় শুনে কিছুটা অবাক হয়েছি। 
     
    আবারও বলছি, অমুক গান ফেক লালন গীতি, বিনা প্রশ্নে তা মেনে নিতে রাজী নই। 
     
    বিশেষ করে এপারে বাউল সমাজে রীতিমত যখন এই গান নিয়মিত চর্চা হয়।
     
    "কিন্তু শেষে এলেবেলে বলছেন, ওনার কাছে রেফারেন্স আছে যে এটি লালনের গান নয়, কিন্তু উনি সেটি উনি দেখাবেন না, আগে বিপ্লবকে মানতে হবে যে ওটি লালনের নয়, এবং চারিদিকে সেটি প্রচার করতে হবে, তারপরে এলেবেলে সেই রেফারেন্স দিলেও দিতে ​​​​​​​পারেন।" 
     
    হে হে... এতদিন গুরুতে রেসিডেন্স ভাঁড়ের নিতান্তই অভাব ছিল, এইবার বুঝি তার অভাব মিটতে বসেছে! :)) 
     
    শুভ 
     
     
     
  • lcm | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৩:৫১501672
  • বিপ্লব,
    একটি অনুরোধ, অন্য যারা লিখছেন তাদের প্রতি একটু সংযত ভাষা ব্যবহার করুন। কেউ আপনার লেখাকে বিভ্রান্তিমূলক বলেছেন বা অপরিণত (শিশুতোষ) বলেছেন - আপনি তাই নিয়ে লিখুন, কিন্তু "ভাঁড়" বা এইজাতীয় শব্দ ব্যবহার না করাই শ্রেয়। আমি নিশ্চিত আপনি এ ব্যাপারটা জানেন, হয়ত সামান্য প্ররোচিত হয়ে লিখে ফেলেছেন। 
     
    অনেকদিন আগে এক ডাক্তার বলেছিলেন - যে আমাদের মুখটা, মানে, হাঁ ছিদ্র - ওটা একটু সাবধানে - ইনপুট এবং আউটপুট - দুই দিক দিয়েই । ইনপুট, মানে ওখান দিয়ে যা শরীরে যা ঢোকে, খাদ্য পানীয়, তা আমাদের সাংঘাতিক ক্ষতি করতে পারে, আবার কোনো ইনপুট না নিলেও শরীর চলবে না। আর, আউটপুট, ওখান দিয়ে যা বাহির হয়, শব্দ বা কথা, তা ঝামেলার কারণ হতে পারে। তাই নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার দরকার :-)
  • একক | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৩:৫৬501673
  • ব্যক্তিগত আক্রমণ না করেও আলচনা চালান যায় ত!  লালনের উক্ত গান টি ওঁর লেখা কিনা সত্যি জানি না। কিন্তু ভাষার প্রয়োগ দেখে সত্যি মনে হয় ওটি লালন ভাবধারার তুলনামূলক আধুনিক কারো, হলেও হতে পারে। 
     
    সে নিয়ে তর্ক হোক,  যুক্তি হোক, ভালো ই লাগবে পড়তে।
  • m | 2a0f:9100:110:a::***:*** | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৪৫501678
  • এলেবেলে আগে রেফারেন্স দিতে গিয়ে গুরুতে চ্যালেঞ্জড হয়ে শেষ অবধি সামলাতে পারেননি। তাই উনার একটু ফোবিয়া মত হয়েছে মনে হয়। তবে সেটা আস্তে আস্তে কেটে গেলেই ভাল। বিনা রেফারেন্সে আপ্তবাক্য অনেকেই মানতে চাইবে না।
  • বিপ্লব রহমান | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৫৮501679
  • আইসিএম, 
    একক, 
     
    আপনারা দুজনেরই ঠিক বলেছেন, ভাষার বিষয়ে খেয়াল থাকবে,  এলেবেলে শুরুই করেছেন বিস্তর ব্যক্তিগত আক্রমণ ও অহেতুক  বুধোর পিণ্ডি দিয়ে, এরই জবাবে সামান্য পাটকেল মাত্র। 
     
    তবে কমেডি হিসেবেই একে নিয়েছি, উপভোগ্য। -:)
     
    ভাল থাকুন
  • বিপ্লব রহমান | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:০৮501680
  • এম, 
     
    "বিনা রেফারেন্সে আপ্তবাক্য অনেকেই মানতে চাইবে না।"
     
    এ ক ম ত। 
     
    উপরন্তু ফেক গান নিয়ে তার যুক্তিতর্কও খুব খেল। এই হনুগিরির দিন বোধহয় অনেক আগেই ফুরিয়েছে।
     
    এছাড়া এপারে প্রখ্যাত বাউল সাধকরা নিয়মিত এই গান চর্চা করেন। 
     
     আপনাকে ধন্যবাদ 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন