এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কৃষি অর্থনীতির হাত ধরেই গ্রামীণ বাংলার ঘরে ঘরে কোজাগরী পূর্ণিমায় আবাহন হত মা লক্ষ্মীর

    Goutam Chakraborty লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ অক্টোবর ২০২১ | ১১৪৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • কৃষি অর্থনীতির হাত ধরেই গ্রামীণ বাংলার ঘরে ঘরে কোজাগরী পূর্ণিমায় আবাহন হত মা লক্ষ্মীর
    গৌতম চক্রবর্তী

    সেই চাঁদ এখনো ওঠে। সেই পূর্ণিমা এখনো ভাসে। আকাশ বাতাস ভাসিয়ে পূর্ণিমার জোয়ারে দশদিক আজও ম্লান হয়ে যায়। শুধু তেমনভাবে শোনা যায় না সেই শাঁখের ধ্বনি আর মা কাকিমাদের উলু দেওয়া। হারিয়ে গেল সেই সময়কার ঘিয়ের প্রদীপ, তিলের নাড়ু, ফুলুরি, সন্দেশ, চিড়ে নারকেল, আখ। বাংলার ঘরে ঘরে সেই লক্ষ্মীপুজোর রাত ছিল অনেকটা রূপকথায় পড়া রাতের মত। ধানছড়ার পাশে রাখা দেবী লক্ষ্মীর ছোট্ট মূর্তিটা সেদিন আর পাঁচটা দিনের থেকে একটু বেশি উজ্জ্বল লাগতো। সেটা দেবীর নতুন সাজের মাহাত্ম্য, নাকি নিজের ভালো লাগার হ্যালুশিনেশন তা বুঝতে পারতাম না সেই ছোটবেলায়। সারা বাড়িটা অপূর্ব স্নিগ্ধতায় ভরে থাকত। একটা অদ্ভুৎ ধরনের আনন্দ ভরে থাকতো চারপাশে। মনে মনে কিসের এত আনন্দ হত সেটা সেই ছোটবেলায় বুঝতাম না। আজও সেই রাতটা আসে। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর রাত। ফল বা সবজি বাজারে চড়া দাম সত্বেও মধ্যবিত্ত থেকে অতি নিম্নবিত্ত সকলেই লক্ষ্মীর আরাধনার ব্রতী হয়। শারদ উৎসবের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনন্দ উৎসবের মরসুম। হিন্দুদের দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপুজো, নবরাত্রি, দশেরা, কালীপুজো, দিওয়ালি, মুসলিমদের বকরি ঈদ, মহরম, খ্রিস্টানদের ক্রিসমাস এইসব নিয়ে বছরের শেষ তিনটি মাস আমাদের কেটে যায় হৈ-হুল্লোড় উদযাপনে। সবচেয়ে বড় কথা কোন উৎসব আর শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে তার আনন্দের রেশ নিয়ে আমাদের সবার মধ্যেই। আবার এমনও হয়েছে হয়তো নির্দিষ্ট কোন সম্প্রদায়ের উৎসব আর শুধুমাত্র তাদের মধ্যেই নির্দিষ্ট নেই। তা এখন আমাদের সকলের হয়ে গেছে।

    আশ্বিনের শেষ দিনটিতে শরৎ বিদায় নেয়। আসে হেমন্ত। এই দিনটি কোথাও জলবিষুব সংক্রান্তি, কোথাও আবার নল সংক্রান্তি, কোথাও আবার ডাক সংক্রান্তি। ক্ষেত্রলক্ষীকে এই দিনে সাধ ভক্ষণ করানো হয়। ক্ষেত্রলক্ষ্মী যেন উমার মতোই ঘরের মেয়ে। পূর্ণগর্ভা সেই দেবীকে ঘরের আনাজ দিয়েই রেঁধে বেড়ে খাওয়াতে হবে যে। আগের রাতে জলে ভিজিয়ে রাখা আউশ ধানের আতপ চাল, ফল, ওল, মানকচু, রাই সর্ষে এবং অশোক ফুল চুপড়ি করে নিয়ে গিয়ে খেতে রেখে চাষী যেন পিতার মতোই ডাক দেন লক্ষীকে। তারপরে কেটে যায় মাস। পিতার মতো যত্নে চাষী বুকে জড়িয়ে রাখেন তাঁর কন্যাকে। ভাদ্র মাসে যে জল হয়েছিল সেই জল তিনি ক্ষেত থেকে বের করে দেন এবং তখন পর্যাপ্ত রোদ পায় ধান গাছ। কিন্তু সব জল আবার ক্ষেত থেকে বের করে দেওয়া যাবে না। কিছুটা জল চাষের খেতে রেখে দিতে হয়। এইভাবে শুরু হয় হেমন্তের দেবীটির অর্চনা। হেমন্তের দিনে হিম পরে। নদী থেকে উঠে আসে কুয়াশা। তার জল হিম হয়ে ভারী বাতাসে ভর করে উঠে আসে জনপদে। মাঠে ঘাটে। ঊষার আলোয় ভর করে ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তারপরে দিবাকরের কিরণ বেয়ে ধুইয়ে দেয় অন্তর থেকে বাহির। যেন বা পুজোর আগে স্নান করে নেয় পুজো করার স্থানটি। সেই সময় পদ্মাসনা এক দেবী হাতে ধানের শিষ ধরে উপস্থিত হন। তাঁর আসন পাতা থাকে ঘরে ঘরে। এই দেবী সমুদ্রমন্থনজাত। মন্থনের গরল কন্ঠে নিয়েছিলেন চন্দ্রমৌলি শিব আর অমৃত ভান্ডার থেকে উঠে এসেছিলেন লক্ষ্মী। সহস্র সূর্যের মতো তাঁর রূপের ঐশ্বর্য। ভোর রাতের হিম এবং তারপরে সূর্যের কিরণ সবকিছুই তিনি ভরে দেন ধানের শিষে। গর্ভবতী হয়ে ওঠে সোনার বাংলা।

    কৃষিভিত্তিক বাংলায় লক্ষ্মীর আবির্ভাব হয়েছিল ভূমি আর কৃষি থেকেই। সেই সময়কার বাংলা মোটেও আজকের বাংলার মত ছিল না। বাংলার ধান-চাল ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এমনকি সিংহলে এবং মালয়ে রপ্তানি হত। এই সোনার ধান বাঙালিকে সারাবছর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার ক্ষমতা যোগাত। আর তাই হয়তো বাঙালি অন্য কোন ফসলকে লক্ষ্মী বলত না। ধানই বাঙালির লক্ষী। সেই থেকেই ধান এবং ধানসরার পুজো বাঙালির লৌকিকতায় জুড়ে গিয়েছিল। তাই গ্রামবাংলায় ধান্যলক্ষীকে সাধ খাওয়ানোর অনুষ্ঠানের কথা শুনে অবাক হবার কিছু নেই। ধানের গর্ভে শিষের উদ্গম হলে বাঙালি একসময় এই ধান্যলক্ষ্মী ওরফে ধানের সাধ ভক্ষণ অনুষ্ঠান করত। শোনা যায় ময়মনসিংহে আশ্বিনের সংক্রান্তিতে কৃষিজীবী বাঙালি গেরস্থ আমের পাতায় সুগন্ধি মসলা মাখাত পরম যত্নে। তারপর পাট কাঠির মাথায় করে ধানের ক্ষেতে ক্ষেতে গুঁজে দিতো। ধান্যলক্ষীকে সাধ খাওয়ানোর এই অনুষ্ঠান বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে প্রসিদ্ধ ছিল। মেদিনীপুরে ডাকের পূজা বা নল সংক্রান্তি, উত্তরবঙ্গে লখীডাকে বা ডাক দেওয়া উৎসব, এছাড়াও ডাক সংক্রান্তি, গর্ভিনী সংক্রান্তি এসব নামেও পরিচিত রয়েছে।
    আনুমানিক ১৬৬৭ থেকে ১৭৪৭ খ্রিস্টাব্দে রামেশ্বর ভট্টাচার্যের শিবায়নে যেন কৃষি পরাশর এর সংস্কৃত শ্লোক এর বঙ্গানুবাদ পাওয়া যায়। বাংলার ঘরের মেয়ে বৌদের যেমন আগলে রাখেন পিতা এবং স্বামী, সেই মধ্যযুগে তেমনি কল্পনা করা হয়েছিল মহেশকেও। যিনি স্বয়ং দেবেশ তিনি নামলেন মাঠে। তখনও ধানের রং সবুজ। মহেশ নিজেই খেতে নলখাগড়া পুঁতে দেন। সারা সংসারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এরপরে অপেক্ষা। মেয়ে যে আসন্ন প্রসবা। তারপরে এল কার্তিক। আর তখনই ধরণী সুধন্যা হল। ফুল এল ধানে। এবার সন্তানবতী দেবী রানীর রূপ নিলেন। স্বর্ণশীর্ষ ধান্য প্রস্তুত। এবার লক্ষ্মী অন্নপূর্ণা। সেই অন্নপূর্ণাও ঘরের কন্যা। হরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। কিন্তু সদাশিব থাকেন গাঁজা আর ভাঙ নিয়ে। উপার্জন নেই। কিন্তু সংসার রয়েছে। উচিত কথা বলতে গেলে রেগে যান। কিন্তু লক্ষী চপলা। তিনি সর্বক্ষণ থাকেন না। তিনিও দানে বিরত হন। তিনিও কৃপা হরণ করেন বলে বাণিজ্য বসে যায়। আর্থিক মন্দা শুধু আজকের কথা নয়। বারবার মন্দার কথা বলেছেন সেই কবিরাও যারা প্রাণ পণ রেখেছেন দেবতার চরণে। তাঁরা লিখছেন কখনো ক্ষেতে ফসল ফলে না। যদি বা ফলে তা কৃষকের ঘরে আসে না। অষ্টাদশ শতকের সামান্য আগে থেকে সামান্য দুধ ভাতের জন্য আকুল হয়ে থাকতো বাঙালি পিতা-মাতা। মধ্যযুগে বেশ কয়েকবার দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গ এসেছে নানা কাব্যে। কখন বন্যায়, কখনো খরাতে, কখনো রাজার আচরণে ঘরে দুমুঠো ভাত পান নি বাংলার মানুষ। একটু গরম ভাতের আশায় দেশান্তরিত হয়েছিলেন অনেকেই। নিজেদের খেত ছিল না। থাকলেও তার ফসল নিজেদের কাছে থাকতো না। অর্থনীতির কোন গেরোতে নিজের চাষ করা ফসল তুলে দেওয়া যায় না নিজের ঘরের লোকের পাতে তা বোঝা দায় ছিল দরিদ্র কৃষকদের।

    কৃষি পরাশর থেকে আমরা জানতে পারি হেমন্তের ধানের রং গিয়ে মিশত নীল আকাশের গায়ে। দিগন্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকতো লক্ষীর দৃষ্টি। ঠিক তখনই ধান্য ছেদন এর আগে ক্ষেতের পাশে কৃষক পরিজনদের ডেকে পায়েসান্ন, ব্যন্জন খেতে দেওয়া হতো। তখন কিন্তু বাঙালি মাছ মাংসও দিত। মরিচ দেওয়া দই, দুধ, ঘি, ফল মিষ্টি এবং পিঠে খেয়ে অতিথিরা হাত পা ধুলে ক্ষেত্রস্বামী তাঁদেরকে নতুন বস্ত্র দিতেন। তারপরে নাচে-গানে ইন্দ্রের বন্দনা করা হতো। হাত জোর করে প্রার্থনা করা হত লক্ষীদেবী যেন তাদেরকে এবং কৃষিক্ষেত্রের অকর্তিত ধান গাছগুলিকে রক্ষা করেন। সমগ্র বৎসর যেন কৃষকসমাজ বিনা বাধায় কৃষি কাজ করতে পারে।

    ধান্যলক্ষ্মী কে ঘিরে উৎসব শুরু হয় এভাবে ধান যখন থেকে ওঠে তখন লক্ষীকে ঘরে তোলার সময় তাই শুরু হয়ে যায় মহোৎসব উঠোন গলা পরিষ্কার করে পঞ্জিকা নির্দিষ্ট ধান্য ছেদন শুভ দিন দেখে কৃষক মাঠে যেত সে সব এখন মেহাদি পাঁচালী স্মৃতিকথা দুল্ল।তবে এখনো গ্রামবাংলায় অগ্রহায়ণ মাস লক্ষ্মীর মাস বলে বিবেচিত হয় প্রতি বৃহস্পতিবার সবথেকে চাকুরীজীবী সবার ঘরে ঘরে আলপনা পরেই ঘটে বটেই লক্ষ্মীপুজো হয় আমাদের বাড়িতেও বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী আলপনা পর্যন্ত আমরা নিরামিষ পরোটার আয়োজন থাকতো ছোটবেলায় বুঝতাম না তিনি আমাদের ধানলক্ষী পরবর্তীকালে অনুষ্ঠান বহুবার মনে করিয়ে দিয়েছে ধানঘরা নবান্ন শুরু করতেন লক্ষীর ব্রত বা ক্ষেত্রগত অনুষ্ঠান। আবুল ধারণা জাদু করার পর মামাবাড়িতে অবশ্য দেখেছি বা অনুষ্ঠান থেকে একটা পাকা ধানের শীষ নতুন কাপড় জড়িয়ে তার কোলে রেখে দিতেন আমার বাড়ির মেয়েরা সেই ধানের শীষ গুলো পুজো করে 1-30 বাক্স খাট বা চৌকি ইত্যাদি নানা জিনিসপত্র উপহার দেন অথবা বেঁধে দিতেন।এই বাঁধন তিনদিন পর্যন্ত থাকতো এই তিনদিন ঘর থেকে কাউকে কিছু দেওয়া হতো না চতুর্থ দিন বাঁধন খুলে ধানের শীষ গুলো জলে ভাসিয়ে দিলে শান্তি অনেকদিন ধরে এর কোন মানে খুজে পাই পরবর্তীকালে মুঝে করতে হিমশিম খেয়েছি আসলে আমি মানে লক্ষ্মীর ভাগবান পাওনি মানে বন্ধন বান জাও নির্মাণের লক্ষ্মীর কাছে যাওয়া তবে কৃষক পরিবারে সেই যাওয়া মানে ধানের বৃদ্ধি কামনা আর কিছু সম্পদ কামনা নয় বলে মনে হয়।

    আমার ছোটবেলার কথা এখনো ভীষণ মনে পড়ে। আমাদের একান্নবর্তী পরিবারে পৌষ সংক্রান্তির দিনে উঠোনে খুনকে ভর্তি ধান আর ধানছড়া দিয়ে মায়ের লক্ষ্মীর ঘট স্থাপিত হত। পুজোর শেষে সেই লক্ষীর ঘটকে আবার বাড়ির ভেতরে তোলা হত। এখন আর হয় না। শুনেছিলাম একবার কোজাগরীর দিন ঠাকুমার লক্ষ্মীপূজায় ধাণের ছড়া এবং ধানের শিস পাওয়া যাচ্ছিল না কোথাও। খুঁজতে খুঁজতে বাবা পৌঁছে গিয়েছিল ধান গবেষণা কেন্দ্রে। সেখানে অনধিকার প্রবেশকারীর শাস্তি বরাদ্দ ছিল। বাবা কিন্তু শাস্তি পায়নি। বরং ওখানকার আধিকারিকের হাত থেকে অনেকগুলো ধানের শিস পেয়েছিল। ঠাকুরমা মারা যাওয়ার পর বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর ধুমধাম বন্ধ গিয়েছিল। আসলে খুব ছোটবেলায় আমার দাদু মারা গিয়েছিলেন হঠাৎ করে। তাই রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি ছেড়ে ভাঙাচোরা বাড়িতে ভাইবোনকে নিয়ে চলে এসেছিল বাবা। সেখানে একটা ঘরের মধ্যে ঠাকুমা পেতেছিলেন লক্ষ্মীর পট। সেই পটে আঁকা চাঁদের আলো আর মা লক্ষ্মীর মমতা মাখা মুখখানা বাবাকে যেন একটা কল্পনার জগতে নিয়ে যেত। কঠিন সংগ্রামের সময় বাপ হারানো ছেলেকে সেই কোজাগরী পূর্ণিমার লক্ষী হয়তো বেঁচে থাকার এবং বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কৌশিক ঘোষ | ২০ অক্টোবর ২০২১ ১৫:৩১499883
  • যে সময়ে ঐ ঐ গুলো করা হতো, ঐ পায়েস ব‍্যঞ্জন, মাছ মাংস বস্ত্র ইত্যাদি দেওয়া, সেই সময় ইন্দ্রের বন্দনা করা হতো !! খুব উপকৃত হবো যদি ইন্দ্রের উদ্দেশে গাওয়া গানের দুয়েকটার কিছু কিছু লাইন এখানে দিতে পারেন। 
     
    আমি ব‍্যক্তিগতভাবে আগ্রহী।
  • kk | 68.184.***.*** | ২০ অক্টোবর ২০২১ ২১:৩১499904
  • ফন্ট সাইজ কি একটু বাড়ানো যায়? চোখে একটু অসুবিধা হচ্ছে পড়তে।
  • Goutam Chakraborty | ২০ অক্টোবর ২০২১ ২৩:৩১499905
  • অবশ্যই পরের লেখাতে font-size বাড়িয়ে দেব।
     
    কৌশিক বাবুর প্রশ্নের উত্তরে বলি বৃষ্টি এবং বজ্র দেবতা হচ্ছেন ইন্দ্র। এটা মিথিওলজিক্যাল ব্যাখ্যা। বাংলার কৃষকেরা এখনো অনেকেই মিথিওলজিতে বিশ্বাস করেন। এবং এই বিশ্বাস থেকেই অনেক স্তোত্র, অনেক মন্ত্র, অনেক গান যুগে যুগে কালে কালে চলে এসেছে। অনেক কিছুই মুখে মুখে চলে এসেছে। অনেক কিছুই লিপিবদ্ধ হয়েছে। প্রাচীন যুগের ইতিহাস এবং পুরাণ নিয়ে লিখতে গেলে অনেক সময়তেই আমাদের চলে আসা সাহিত্য এবং সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে আমরা তথ্যসূত্র পাই। অনেক ক্ষেত্রেই পাইনা। তাই আপনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছিনা। তবে কষ্ট করে কলকাতা আর্কাইভসে চলে গিয়ে যদি পুরন্দর সংহিতা বইটা জোগাড় করে নিতে পারেন আমি নিশ্চিত আপনার প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদ নেবেন। আমিও অন্য তথ্য সূত্র থেকে খোঁজার চেষ্টা করছি।
  • কৌশিক ঘোষ | ২০ অক্টোবর ২০২১ ২৩:৪৫499906
  • @Goutam Chakraborty
    প্রথমেই ধন‍্যবাদ জানাই সাহায্য করার জন‍্য।
    কোলকাতা আর্কাইভসের অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ বলুন। মানে কোথা দিয়ে কোথায় যাবো ?
    আরেকটা কথাও বলে রাখি। এখানেই প্রশ্ন শেষ না। যখন যখন এ বিষয়ে আটকাবো, তখন তখন সমাধানের খোঁজে জন‍্য ফিরে আসবো আপনার কাছে। 
  • কৌশিক ঘোষ | ২০ অক্টোবর ২০২১ ২৩:৪৭499907
  • ** সমাধানের খোঁজে ফিরে আসবো
  • Goutam Chakraborty | ২১ অক্টোবর ২০২১ ০৬:১৪499918
  • সহজ সমাধান। গুগল ম্যাপে চলে যান। সাহায্য পাবেন। 
  • Goutam Chakraborty | ২১ অক্টোবর ২০২১ ০৬:২৭499920
  • অতি অবশ্যই এই স্তোত্র বা মন্ত্র যা পুরন্দর সংহিতাতে রয়েছে তা গ্রাম বাংলার কৃষকেরা পাঠ করে না। কারণ এগুলি সংস্কৃত। তবে  কালে কালে মানুষের মুখে মুখে আঞ্চলিক সংস্কৃতির রূপান্তর ঘটেছে তাদের লোকায়ত সংস্কৃতিতে। ইন্দ্রবন্দনাও এই লোকায়ত সংস্কৃতির অঙ্গ বলেই মনে হয়। আমি এই তথ্যের বাইরে এই প্রসঙ্গে আপনাকে আর কোন তথ্য দিতে অপারগ।
  • কৌশিক ঘোষ | ২১ অক্টোবর ২০২১ ০৮:২৪499925
  • ওপরে যে লিঙ্ক দিয়েছেন, সে তো পুরোপুরি ফর্ম‍্যাল জিনিস। একদম সাধারণ মানুষ, যারা এইসব সংহিতা টিতার বাইরে, তারা কী করে, কিভাবে করে, এই নিয়ে আমার আগ্রহ।
    অনেককাল আগে একজনের কাছে ইন্দ্রপুজোর আল্পনা দেখেছিলাম। তখন আমি টিনএজার। আরো পরে যখন আগ্রহ বাড়লো, তখন ঐ পুজোর ডিটেইলস জানতে চাইলাম। কোন অঞ্চলে এ পুজো হয়, কারা অংশগ্রহণ করে, ছেলেরা নাকি মেয়েরা, ফর্ম‍্যাল নাকি লোকায়ত  ব্রতকথা-রিচুয়‍্যালনির্ভর, বছরের কোন সময়ে হয়, কেন করে, ভালো বৃষ্টির আশায় নাকি অন‍্য কারণে, এসব প্রশ্ন করার সুযোগ পাইনি। ততদিনে তিনি অন‍্য জগতে।
    এতদিন পরে আপনার লেখা পড়ে আমি খানিক আশার আলো দেখলাম। সেজন্যই প্রশ্ন করেছি।
    ফর্ম‍্যাল হলেও কিছু প্রশ্ন থাকে পুজোর পদ্ধতি নিয়ে। অবৈদিক তো বটেই, বেশ খানিকটা লোকায়ত বা স্থানীয় আচার ও বিশ্বাসের ছাপ পড়ার কথা পুজোর পদ্ধতিতে, মন্ত্রগুলোও ইন্টারেস্টিং হয়ে ওঠার কথা। কিছু বৈদিক শ্লোক, বাকি সব অর্বাচীন। রিচুয়‍্যাল ইত্যাদি তো লক্ষ‍্যণীয় বটেই।
    বেদ থেকে পুরাণে পৌঁছে ইন্দ্র আর চেয়ার ধরে রাখতে পারেন নি। ইন্দ্রের কাল্ট একদম লুপ্ত বলা যায়। প্রয়াত ডঃ জয়দেব মুখোপাধ্যায় বহু বছর আগে এক জায়গায় ইন্দ্রপুজোর কথা লিখে গেছেন। সে পুজো তখনই ক্ষয়িঞ্চু, ডঃ মুখোপাধ্যায়ও নেই। ফলে জানার কোনো রাস্তা নেই।
     
    আমার চাহিদা কেমন তা আশা করি বোঝাতে পেরেছি।
  • Goutam Chakraborty | ২১ অক্টোবর ২০২১ ১২:৩৮499930
  • আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। এই মুহূর্তে ব্যাঙ্গালোরে আছি। কয়েকটা দিন সময় চাইলাম। আপনার এই প্রশ্ন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং একাডেমিক। উত্তর দেওয়া আমার নৈতিক কর্তব্য। আমি জলপাইগুড়িতে থাকি। হাই স্কুল শিক্ষক। ইতিহাসের। ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বিষয়ক লেখালেখি নেশা। তাই দায়বদ্ধতা থেকেই যায়। কিছু পুরনো বই পত্র ঘাঁটতে হবে। মনে হয় কিছুটা আলোকপাত করতে পারব। হয়তো সবটা নয়। কারণ এই বিষয়ে আমি আপনার সঙ্গে একমত যে বৈদিক যুগ থেকে পুরাণের স্তরেই ইন্দ্রের অবনমন ঘটেছিল। আসলে কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় আমাদের উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সংস্কৃতিতে এবং পুরান ও লোককথা নির্ভর লোকশ্রুতিতে আর্য সংস্কৃতি এবং দ্রাবিড় সংস্কৃতি দুটোর একটা সংমিশ্রণ ঘটেছে। এখনো প্রকৃতি পুজোর ওপর মানুষ নির্ভরশীল। যেমন তিস্তা বুড়ির পূজা, পরাশর পূজা, নল সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি, নবান্ন। আমার লেখার মূল বিষয় ইন্দ্র পুজো ছিল না। ছিল লক্ষী পূজা। লক্ষ্মী ব্রত পালন করার সময় যেহেতু বৃষ্টি এবং বজ্র দেবতা হিসেবে ইন্দ্রকে কল্পনা করা হয় তাই হয়তো  কৃষকেরা ইন্দ্রকেও পুজো করেছিলেন ওই অঞ্চলে। আপাতদৃষ্টিতে এটা অনুমান। অনুমান সাপেক্ষে এই যুক্তি সর্বাগ্রে মাথায় আসে। তবে এর বিশদ ব্যাখ্যা আমি খোঁজার চেষ্টা করব কথা দিলাম। ২৫ তারিখ জলপাইগুড়ি ফিরছি। লাইব্রেরিও খুলে গেছে। একটু সময় চাইলাম। কারণ সচেতন এবং পড়ুয়া পাঠককে সন্তুষ্টি বিধানের দায় লেখক এর। শ্রদ্ধা জানাই। শুভ বিজয়ার প্রীতি শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা।
  • কৌশিক ঘোষ | ২১ অক্টোবর ২০২১ ১৩:১১499933
  • উত্তরটা পড়লাম। ব‍্যতিক্রমী ধরনের আন্তরিকতায় পূর্ণ।
    এবং অবশ্যই আগাম ধন্যবাদ রইলো।
  • বিপ্লব রহমান | ২২ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৫৬500013
  • লক্ষ্মী পূজার বৃত্তান্ত জেনে ভাল লাগলো। স্মৃতিচারণটুকু আরও সুন্দর। 
     
    আরও লিখুন। শুভ কামনা কমরেড
  • অর্পিতা ঘোষ | 122.16.***.*** | ২৫ অক্টোবর ২০২১ ১৩:১৬500186
  • খুব ভাল লাগলো লেখাটা পড়তে ....
    প্রকৃতির সাথে আমাদের সব দেবী, দেবতা আর রোজকার জীবন যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত.....লেখার গুণে প্রতিবেদন টি খুবই আকর্ষণীয় হয়েছে.....আরো লেখা পড়তে চাই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন