এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ

    Mousumi Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ আগস্ট ২০২১ | ৯৯২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • মাথা ভর্তি ঢেউ খেলানো কুচকুচে কালো চুল কাঁধের কাছে নেমে এসেছে। গায়ের রঙও ঘোর কৃষ্ণবর্ণ।  চোখ দুটি লালচে, ঢুলুঢুলু, দিনের বেলাতেও। পরণে হলুদ প্যান্ট, লাল শার্ট।  নামটা বেশ জমকালো, বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ। 
     
    দ্বিতীয় সাইরেন বাজতেই কারখানার গেটে প্রতিদিনই হুড়োহুড়ি লাগে, সময় পেরিয়ে গেলে হাজিরাবাবু আর সুযোগ দেবেন না বলে। বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ সাত সকালেই মহুয়া সেবন করে টলমল পায়ে গিয়ে পৌঁছল হাজিরাবাবুর কাছে। 
    হাজিরাবাবু – তুমি আজও মদ খেয়েছ এই সকালবেলা? বড় সাহেব বলেছেন মদ খেলে তোমাকে ঢুকতে না দিতে।
     
    বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ – ( কাঁদ কাঁদ হয়ে) বাবু, আর করবো না এমন। আজ ভুলে গিয়ে খেয়ে ফেলেছি। হাজিরা কাটবেন না দয়া করে। গতমাসে অনেক মাইনে কাটা গেছে বাবু।
     
    কিছুক্ষণ অনুনয় বিনয়ের পর বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণের জয় হল। সে শরীর টানটান করে শেডে গিয়ে পৌঁছল।
     
     কারখানা চত্বরে বারবার বারণ করা সত্ত্বেও নিত্যনৈমিত্তিক ঘটেই চলেছে এসব। মদ্যপদের হাজিরা কাটবার নোটিস, বা তা কার্যকরী হয়েও খুব বেশী পরিবর্তন হয় নি।আদিবাসীদের এলাকা। সকাল শুরুই হয় এখানে মহুয়ার মদ দিয়ে।
     
    ঘটনার দিন   প্রতিদিনের মতো বড় সাহেব  এসে  কারখানার গেটে পৌঁছলেন।  তাঁর নিজস্ব অফিসঘরে ঢুকে সবেমাত্র একটু ঠাণ্ডা হচ্ছেন,  বেশ কিছু কর্মচারী দরজা ঠেলাঠেলি করে এসে হাজির। উত্তেজিত সকলেই।  ব্যাপার কি?  স্যার, বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ ....আর কিছুই বোধগম্য হল না সাহেবের।  সকলেই একসঙ্গে বলতে চায়, ঐ একটি নামই শোনা যাচ্ছে । ইতিমধ্যে হাজিরাবাবু এসে হাজির। বললেন, স্যার, মহা বিপদ হয়ে গেছে।  বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণকে পাওয়া যাচ্ছে না।  সমবেত হৈ চৈ চলছেই।  
     
    বড়সাহেব – মানে?
     
    হাজিরাবাবু – স্যার, ও আজ কারখানায় ঢুকেছে কিন্তু শেডের কোথাও নেই।
     
    বড়সাহেব – দেখুন, এই চত্বরেই হবে নিশ্চয়ই।
     
    হাজিরাবাবু – না স্যার, ওকে কোনোও জায়গাতেই পাওয়া যাচ্ছে না। 
     
    বড়সাহেব – আজও কি ও মদ্যপ অবস্থায় এসেছিল?
     
    হাজিরাবাবু – হ্যাঁ স্যার, ঢুকতে দেওয়া যাবে না বলতেই পা জড়িয়ে হাঁউমাউ করে কাঁদল বলে ছেড়েছি।
     
    বড়সাহেবের মাথায় হাত। দু কিলোমিটার ব্যাসের কারখানা চত্বর। কোথায় কিভাবে লোকটা পড়ে আছে কে জানে! ইলেকট্রিক ক্রেন, তার, লোহা, লক্কর চারিদিকে। এই খবর বাইরে গেলে উপর মহলে অনেক জবাবদিহি করতে হবে। ওদিকে ট্রেড ইউনিয়নের ঝামেলা। দরদর করে ঘাম হচ্ছে তাঁর। হাজিরাবাবুকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই বেরোলেন বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণের সন্ধানে। খোঁজ, খোঁজ, খোঁজ সমস্ত সম্ভাব্য  বিপজ্জনক জায়গাগুলো দেখে নিলেন। কোথাও সে নেই।  তবু ভালো। কিন্তু গেল কোথায়? বেরোলে তো গেটপাস থাকতই। 
     
    খুঁজতে খুঁজতে কারখানার জমির শেষপ্রান্তে পাঁচিলের কাছাকাছি পৌঁছলেন। ওদিকে বিশেষ কেউ যায় না। জঙ্গলি গাছপালা ওদিকে।  স্যার, স্যার ঐ দেখুন! 
     
    বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ জঙ্গলি গাছের মাঝখানে একটা বড় গাছে ঠেস দিয়ে  দাঁড়িয়ে পাশের ঝোপে ফোটা জঙ্গলি হলুদ ফুলের উপর ওড়া প্রজাপতি মন দিয়ে ধরবার চেষ্টায় নিমগ্ন। 
     
    বড়সাহেবের সঙ্গে হাজিরাবাবুরও ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ২৮ আগস্ট ২০২১ ১৩:২৩497306
  • তারপর? সূচনা পর্ব বেশ ভাল লাগল
  • Sudeshna Sanyal | 37.186.***.*** | ২৮ আগস্ট ২০২১ ১৬:৫১497315
  • Khub bhalo laglo. 
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন