ছোট্ট পুটুস কখনো সখনো মায়ের সাথে বেড়াতে বেরোয় বিকেলে। ও যখন যায় তখন একটা পার্কের পাশ দিয়েই যায়। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। অনেক.. অনেক দিন আগে ও খেলতে আসত এখানে। কি মজাই না হত। পার্কের পাশ দিয়ে গেলেই ওর সব মনে পড়ে যায়। দোলনা, ঢেঁকি, স্লিপ। মায়ের কাছে বায়না করে একটু নিয়ে যেতে। কিন্তু ওর তো বারণ।
বাড়ীতেও পুটুস একা। ওর তো কোনো ভাই বোন নেই। ও টিভিতে দেখেছে ভাই বোন দের একসাথে থাকতে। ওর স্কুলের কিছু বন্ধু র ও আছে। তাদের থেকে গল্প শুনেছে। ব্যাপারটা বেশ মজাদার বলেই মনে হয়েছে পুটুসের। মাকে সে ব্যপারেও বায়না করেছিল। মা বলেছে জীবনে একা থাকতে শিখতে হয়। কথাটার মানে যদিও বোঝেনি কিন্তু ওর খুব মন খারাপ হয়েছিল। পুটুসের কথা বোঝার মত কেউ নেই। বড়দের কোনো কথা বোঝানো বেশ ঝক্কি। কেন যে তাদের মনে হয় ছোটোরা যা বলে সবই মজা আর ভুল ও জানে না।
স্কুলের বন্ধুদের সাথেও ওর কয়েকবছর হল দেখা হয়নি। অর্ক, সাগর, অর্চিত ওরা সব কেমন আছে কে জানে? পুটুস এখন ক্লাস ফোর। সবে টু থেকে থ্রি তে উঠে ওর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।সেই থেকে সারাদিন বাড়িতে। আগের বার তখন ডিসেম্বরে সান্টার কাছে উইস করেই রেখেছিল ও যেন স্কুলে যেতে পায়। সে কথাও সান্টাও রাখেনি। কেউ পুটুসের কথা শোনে না। পুটুসের তো অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে। ওর মনে কত কথা জমে রোজ। সেগুলো তো কাউকে বলা দরকার। বড়রা সারাদিন ফোনে ব্যস্ত, আসলে ওর কথা কেউ শুনতেই চায় না। দিদুন একটু আধটু শোনে তবু। পুটুস তো হ্যারি পটার দেখেছে, পথের পাঁচালি, মাটিলডা, হিরক রাজার দেশে। রামায়ন, মহাভারতের গল্প শুনেছে দিদুন এর কাছে। এসব কিছু থেকে ওর মাথায় অনেক প্ল্যান আসে। প্ল্যান গুলো খুব ভাল। অর্ক, অর্চিত কে যদি বলা যেত দারুন হত। কিন্তু বাড়ির বড়দের বলতে গেলেই বলবে তোর যত পাগলামি। ধুর কিচ্ছু ভালো লাগে না ওর।
কিন্তু কি করবে ওরা ।গত দু'বছর এ কোনো পুটুসই তো বেরোতে পারে নি। ওরা যে সবাই গৃহ বন্দী। স্কুল, মাঠ, পার্ক সব খাঁ, খাঁ করছে। নীল আকাশ, সবুজ ঘাস, শিষ দেওয়া পাখি, সবাই ডেকে ডেকে ফিরে যাচ্ছে। পুটুসেদের যে চারদেয়ালের মাঝে করোনা নামে একটা স্বার্থপর দৈত্য বন্দী করে রেখেছে।
তারপর? একদিনের একটি মারাত্মক ঘটনা বললে জমে যাবে। সূচনা পর্ব ভাল লাগল। হা শৈশব! :/