এখন বর্ষার মরশুম। আর বর্ষার মরশুম মানেই কৃষকেরা জমিতে সারাক্ষণ। এখন আমন ধান রোয়ার সময়। প্রথমে ট্রাক্টরের সাহায্যে জমি চষা তারপর ধান রোয়া হবে। রোদ হোক বা বৃষ্টি, সমস্ত দূর্যোগ উপেক্ষা করে খালি পায়ে কৃষকেরা সারাদিন জমিতে কাজ করেন। আছে বিষধর সাপের ভয়।
কয়েক বছর আগে এমন বর্ষাকে উপেক্ষা করে দিন-রাত ট্রাক্টরের সাহায্যে কৃষকেরা জমি চষার কাজ করতেন। তখন কোনো একটা জমির ওপরে বাঁশের মাচা করে তার ওপর তাঁবু খাটিয়ে রাতে পালা করে একজন ঘুমাতেন অন্যজন জমি চষতেন। তারও আগে দেখেছি দুটো বলদের সাহায্যে নাঙল দিয়ে জমি চাষ করতে। দুটো গরুর কাঁধে থাকত একটা কাঠের দণ্ড। দণ্ডের সঙ্গে মাঝে বাঁধা থাকত কাঠের নাঙল এবং নাঙলের নিচে জোড়া থাকত লোহার ফলা। পিছন থেকে একজন এক হাতে একটা চাবুক এবং অন্য হাতে নাঙলের ফলা মাটিতে চাপ দিয়ে "হাআআ হাআআ..." আওয়াজে বলদের পিছনে ছুটতেন। বলদ দিয়ে একই ভাবে জমিতে মইও দিতেন। সেক্ষেত্রে নাঙলের ফলার পরিবর্তে বাঁধা থাকত একটি মই। একজন মইয়ের ওপরে দাঁড়াতেন আর সেই "হাআআ হাআআ..." আওয়াজ দিলেই বলদ চলতো পিছনে মইয়ের চাপে চষা জমি সমান হয়ে যেত।
আমাদের বাড়ির পিছনদিক থেকেই জমি শুরু হচ্ছে। ছোটবেলায় রাতে দেখতে পেতাম দূরে তাঁবুতে টিমটিম করে একটা আলো জ্বলছে আর আশপাশের কোন জমিতে একজন ট্রাক্টর চালাচ্ছেন। অনেক দূর পর্যন্ত ট্রাক্টরের আলো পৌঁছতো। তখন সারারাত ট্রাক্টরের আওয়াজ আসতো আমাদের বাড়িতে। আর আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতাম সাপ-ক্ষোপ আসবেনা তো! ওনারা সজাগ আছেন তো? কিন্তু একজন তো একলাই তাঁবুতে ঘুমান। তাড়াতাড়ি সকালটা হলে হয়। এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়তাম!
এখন বড়ো-ট্রাক্টর আসার পর কৃষকদের রাত্রিবেলায় কাজ অনেকটাই কমে গেছে, বা হয়না বললেই চলে। কারণ বড়ো-ট্রাক্টরে খুব কম সময়ের মধ্যেই অনেকগুলো জমি চষা হয়ে যাচ্ছে। তবে ছোট-ট্রাক্টরও আছে, এতে কিছু কিছু কাজ এখনো হয়।
—সুবিমল
ইঞ্জিনের আগুনের কল, গাড়ির কত বল!