বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি এ কোন অপরূপ সৃষ্টি
এত মিষ্টি মিষ্টি মিষ্টি আমার হারিয়ে গেছে দৃষ্টি।
সত্যি প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি। ৪০০কোটি বছর আগে নবজাত পৃথিবীর জ্বলন্ত আগুনকে নির্বাপিত করে নিষ্প্রান মেদিনীতে প্রাণের আধার তৈরি করেছিল এই বারিধারা। সূচনা হয়েছিল শস্যশ্যামলা সুজলা সুফলা পৃথিবীর। বৃষ্টি নিয়ে আমাদের কতই না স্মৃতি।
শিশুকালে রবিঠাকুর কে তাঁর শিক্ষক মহাশয় জিজ্ঞেস করেছিলেন _
রবি করে জ্বালাতন আছিল সবাই, বরষা ভরসা দিল আর ভয় নাই।
রবি তাই মিলিয়ে দিলেন_
মীনগণ হীন হয়ে ছিল সরোবরে, এখন সকলে মিলে জল কেলি করে।
রবি ঠাকুরের ছেলেবেলার কথা বলতেই নিজের ছেলেবেলা চুপটি করে পাশে এসে দাঁড়ায়।বৃষ্টির ফোঁটা তো ভারী হয়ে উপর থেকে নীচের দিকেই নামে। খুব ছেলেবেলায় মনে আছে আমাদের পুরোনো বাড়ির পাশে একটা ছোট পুকুর ছিল। ডোবার আকারের, কিন্তু জলে ভরে থাকতো। পরে সেখানে নতুন বাড়ি হয়। তা সেই পুকুরে যখন বৃষ্টির সময় আমড়া গাছের পাতা থেকে টুপটুপ করে জল পড়ত আমার মনে হত এই বুঝি বৃক্ষের, ধরিত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়া কনকাঞ্জলি। একটা গোটা পাতার জল কেমন ধীরে ধীরে সঞ্চিত হয়ে আপনভারে বিনম্রচিত্তে ঝরে পড়ত। অপূর্ব।ঝরঝর বারিধারায় অসহায় শিউলি, নিম, পেয়ারা, মাদার কাঁটা, আমড়া, ডুমুর, কামিনী, নারকেল দাঁড়িয়ে রইত, নিশ্চুপ। আমার ইচ্ছে হত বৃষ্টি শেষে ওদের মাথা মুছিয়ে দিই। এসব অনেকদিনের কথা।
হ্যাঁ বৃষ্টির সাথে নিবিড় সম্পর্ক পড়াশোনার। তবে তা সু না কু তা বলতে পারিনা। বৃষ্টি মানে রেইনি ডে, বৃষ্টি মানে অঙ্কের স্যার আসবে না। বৃষ্টি মানে কাকভেজা হয়ে স্কুল থেকে ফেরা। একদিন উপুড়ঝান্তে বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে বাড়ি ফিরছি।পাশ থেকে এক সহপাঠীকে দেখলাম প্রাণপনে বৃষ্টির ফোঁটার আগে আগে বাড়ির দিকে দৌড়চ্ছে। আমি তার অযথা তৎপরতায় অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। এবং নিজ সিদ্ধান্তে অটল থেকে ধীরগতিতেই চুপচুপে ভিজে বাড়ি ফিরলাম। কি মজারই না দিন ছিল। আর এখন আমার মেয়ে গ্ৰীলের বাইরে হাত বাড়িয়ে একমুঠো বৃষ্টি ধরতে গেলে হাঁ হাঁ করে উঠি। পরিবর্তন।
সর্বকালের একটা প্রিয় গান আছে
কেয়া পাতার নৌকো গড়ে সাজিয়ে দেব ফুলে
তাল দিঘীতে ভাসিয়ে দেব চলবে দুলে দুলে।
বাড়ির সামনের রাস্তায় জমা জলই তালদিঘী আর আমার খাতার পাতা ছিঁড়ে বানানো ময়ূরপঙ্খী তাতে দুলে দুলে চলেছে। রেস হচ্ছে। কারটা আগে যায়। এখনকার বৃষ্টি ঝরা দিনের সাথে এসবের মিল পাওয়া যাবে না।এখন অরিজিৎ সিং এর গান সাথে কফি কাপ।
তা যাই হোক আমি সফিস্টিকেটেড হই বা না হই বৃষ্টি কিন্তু সেই একই ঝরঝর, ঝিরিঝিরি,ঝমঝম ছন্দেই হয়ে চলেছে। একইভাবে গ্ৰীষ্মের দাবদাহে তপ্ত মৃত্তিকার, জ্বলে যাওয়া বিবর্ণ হয়ে যাওয়া বৃক্ষরাশির, চৌচির হওয়া তৃষ্ণার্ত ধূসর ক্ষেতে প্রাণ সঞ্চার করছে। পৃথিবীকে শস্যশ্যামলায় করে তোলে। পরম প্রশান্তি তে শান্ত, স্নিগ্ধ হয় জগৎ।
এই স্নিগ্ধতায় চোখে পড়ে কাকভেজা দুই শিশুর স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার দৃশ্য। স্কুলের পুলকারের কাকুকে ধমকে টমকে বাড়ির বেশ কিছু দূরে গাড়ি থামিয়েছে।স্কুলের ব্যাগকে ছাতা বানিয়ে মহানন্দে ফিরছে। সেই দেখেই কলম ধরা।তা না হলে তো তিনদিনের বৃষ্টিতে না শুকোনো,স্যাঁতস্যাঁতে জামাকাপড় নিয়ে ঘরেই দড়ি টাঙাচ্ছিলাম মেলবো বলে।
আহ শৈশব! ছোট্ট করে সুন্দর লিখছেন, গ্রাহক হলাম।
আরো লিখুন
~
কি ভাবে যেন পুরো লেখা বোল্ড হয়ে গেছে, অনুগ্রহ করে সম্পাদনা করে ঠিক করে দেবেন? খুব চোখে লাগছে
লেখাটা চালিয়ে যা স্বাতী। খুব ভালো হচ্ছে।