ভোট মিটে গিয়েছে। মোদী-শাহের আর দেখা নেই। গত দুই-তিন মাস যেভাবে মোদী-শাহ নিয়মকরে বাংলায় ঘুরে গিয়েছেন, মনে হয়েছিল তাঁদের মতো বঙ্গপ্রেমী আর দুটি নাই। ভোট শেষ, তাঁরাও ডুমুরের ফুল। আসলে, এই মুহূর্তে বঙ্গে বড় কিছু হেতু নেই। আপনি বলবেন, ক্রমহ্রাসমান করোনা পরিস্থিতি কি সেই হেতুর মধ্যে পড়ে না। ভোটের থেকে বড় কিছু নয়। ভোট হল এমন মোহ, সেখানে সব কিছুর মাফ আছে। ভালবাসা আর যুদ্ধে এত দিন সব ভুল মাফ ছিল। বাংলার নির্বাচনের পর মনে হয়েছে, ভোটেও যা কিছু করা যায়, তার জন্য সব মাফ হয়ে যায়। ভোট প্রচারে এই লাখো লাখো লোকের সমাহারে করোনা পরিস্থিতি কি আরও ভয়ঙ্কর হবে না? প্রশ্ন শুনে অমিত শাহের জবাব ছিল, মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে তো ভোট নেই। তাহলে সেখানে কী করে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই জবাব শুধু বিস্ময়ের নয়, নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেয়। ভোট শেষ হওয়ার একমাসের মধ্যেই তার প্রমাণ মিলল। গোটা দেশের সংক্রমণের হার বঙ্গে সব থেকে বেশি! এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী বলবেন?
অবাধ ভোট প্রচার হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা হওয়া উচিত বলে জানিয়েছিল মাদ্রাজ আদালত। তাতে গোঁসা হয় নির্বাচন কমিশনের। ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিয়ে যেখানে স্কুল-কলেজের পড়াশুনা বন্ধ হচ্ছে, শ্রমিকদের ভাতে মেরে কল-কারখানার উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে; নির্বাচন কী এমন বিষয় যা এই মহামারিতেও রাশ টানা গেল না। নর্মাল পরিস্থিতিতে আর পাঁচটা নির্বাচন হওয়ার মতোই ৫ রাজ্যের নির্বাচন হল। প্রত্যেক রাজনৈতিক দল উল্লাসে মেতে উঠল। লাখো লাখো লোক জোড়ো করে রোড-শো, জনসভা হল। করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ ততক্ষণে তীরে এসে গোঙাচ্ছে। আর বিপুল জনস্রোতের ঢেউয়ে নিজেদের ভিজিয়ে নিতে মেতে উঠেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কম যাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সব রাজনৈতিক দল সমান দোষে দুষ্ট। তাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা হবে না কেন?
ফল ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যে কেন বাংলাকে লকডাউনে যেতে হল? কোনও সাংবাদিক কি প্রশ্ন করেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে? এত দিন তাঁর দল রাজপথে লাখো লাখো লোক নামিয়ে উল্লাস করে বেরিয়েছে। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হওয়ার জন্য তিনি কি দায়ী নন? নির্দিষ্টভাবে একজোট হয়ে সংবাদ মাধ্যম কি এই প্রশ্ন করেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে? অর্থাৎ গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ তার দায়িত্বটুকু পালন করেনি। যখন মমতা, মোদী, শাহ লাখো লাখো মানুষের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছেন, জনপ্লাবন দেখে গদগদ হয়ে উঠেছেন, সংবাদমাধ্যমের হেডলাইনে করোনা বিধি উধাওয়ের ছিটে ফোঁটা শ্লেষ দেখতে পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন তুলতে সাহস পায়নি সংবাদমাধ্যম। যদি বিজ্ঞাপন কমে যায়!
আর শেষে পড়ে রইল সব জান্তা জনগণ। আমরা নিজেরা কী দিয়ে যে তৈরি! এই নেতাদের জনসভায় ভিড় করে কী পেয়েছেন? কিসের আবেগ? রাজ্যে যে সরকারই আসুক না কেন, রাতারাতি আপনি কী সুবিধা পেয়ে যেতেন, যে তার লোভে সেদিন ভিড় জমিয়েছিলেন? আর যদি আবেগেই হয়, দেশের আবেগ কি তার চেয়ে ছোট হয়ে গেল? কথা ছিল, জনগণ সরকার চালাবে। আজ করোনা আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিল, যেমন জনগণ, তার তেমন সরকার! আর তেমন ফল! এখন মোদীকে দুষে কী লাভ?
"সব রাজনৈতিক দল সমান দোষে দুষ্ট। তাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা হবে না কেন?
ফল ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যে কেন বাংলাকে লকডাউনে যেতে হল? কোনও সাংবাদিক কি প্রশ্ন করেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে? এত দিন তাঁর দল রাজপথে লাখো লাখো লোক নামিয়ে উল্লাস করে বেরিয়েছে। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হওয়ার জন্য তিনি কি দায়ী নন?"
একদম মৌলিক প্রশ্ন। চলুক