এইসব সময়ে রাজ কাপুরের কথা মনে পড়ে। বা রাজেশ খান্না। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মারা যাবার পর বাংলায় টানা শোকজ্ঞাপন চলছে। পশ্চিমবঙ্গ নয়, বাংলায়, এপার এবং ওপারে। সামাজিক মাধ্যমে, গণমাধ্যমে। কিন্তু তথাকথিত সর্বভারতীয় মাধ্যমে তার কণামাত্র নেই। কোনো খবর নেই, বলা যাবেনা হয়তো, এক-আধ লাইন কোথাও বলা হয়ে থাকতেই পারে, কে আর টানা টিভি দেখে, বা সমস্ত চ্যীনেল দেখে। কিন্তু মোটের উপর অভ্রংলিহ নীরবতা। যেন কোথাও কিচ্ছু হয়নি। কোনো মহীরূহ পতন? বালাই ষাট।
এইসব সময়েই রাজকাপুরের কথা মনে পড়ে। বা রাজেশ খান্না। সর্বভারতীয় মাধ্যমের অশ্রুজল ইত্যাদি। সেই আশির দশক থেকে ২০১২। কিছু বদলায়নি। সর্বভারতীয় টিভি দেখে মনে হয়েছে, এঁরা ছিলেন 'ভারতীয়' সিনেমার রূপকার। রূপকথার রাজপুত্র। আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কে? কোন লাটের বাঁট? আঞ্চলিক সিনেমার এক অনামী অভিনেতা। 'ভারতীয়' ফিয় আবার কী? হিন্দি সিনেমার তারকা তো নয়। হলে বোঝা যেত।
অথচ, এই রাজ কাপুর ঠিক কে? একজন মধ্যম মানের অভিনেতা, খারাপও বলা যায়। হয়তো অতটা খারাপ নয়, যা সিনেমা বানাতেন, তাতে ওরকম চড়া জিনিসপত্তরই লাগে, সেটুকু ছাড় না হয় দেওয়া গেল। তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতির বেশিরভাগটাই নেহরুর নীতির অবদান। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, হাতে ধরে দেব আনন্দ এবং রাজ কাপুরকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরেছে। অভিনয়ক্ষমতার মূল্যায়নে হয়তো কেউ একমত হবেননা, কিন্তু এতে কোনো ভুল নেই, যে, রাজকাপুরের খ্যাতির বেশিরভাগটাই ভারত সরকারের অবদান। স্বয়ং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিপননের কাজ করেছেন সর্বশক্তি দিয়ে।
এবং এতেও কোনো ভুল নেই, যে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়-দক্ষতা নিয়ে এরকম কোনো তর্কের অবকাশই নেই। আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁর খ্যাতি নিয়েও। তার কতটা সত্যজিত রায়ের অবদান এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে অবশ্যই, কিন্তু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষমতা নিয়ে এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কোথাও কোনো বিতর্ক থাকা সম্ভব নয়। এ নিয়েও কোনো বিতর্ক থাকার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ, সেই স্বীকৃতি 'ভারতীয়' স্বীকৃতি নয়, বাঙলা সিনেমার স্বীকৃতি। সৌমিত্র এবং সত্যজিত বাংলায় সমান্তরাল এবং জনচিত্ততোষক সিনেমা পাশাপাশি করেছেন, বাংলা সিনেমার যুগপুরুষ হিসেবে তাঁদের অবস্থান নিয়ে কোনো প্রশ্ন কখনও নেই, ছিলও না, কিন্তু বোম্বেকেন্দ্রিক 'ভারতীয়' সিনেমায় তাঁদের কখনও জায়গা হয়নি।
এসব সময় তাই সত্যজিত রায়ের কথাও মনে পড়ে। সত্যজিত বিলক্ষণ জানতেন বিষয়টা। তাঁর এবং রাজকাপুরের অন্তত একবার সামনাসামনি কথাকাটাকাটি হয়েছিল এ নিয়ে। অপরাজিত যেবার ভেনিসে পুরষ্কার পায় তার ঠিক পরেই। সত্যজিত বলেন, এই সম্মান বাংলা সিনেমার সম্মান। রাজ কাপুর প্রশ্ন করেন, 'বাঙালি কেন, ভারতীয় নয়? আপনি বলেন কেন, আপনি একজন বাঙালি চিত্রপরিচালক?' সত্যজিত জবাবে তাঁর জলদগম্ভীর কণ্ঠে বলেন, 'আমি একজন বাঙালি চিত্রপরিচালকই'।
এ কোনো গুলতাপ্পি নয়, অন্তত আমার বানানো নয়। একাধিক জায়গায় এর বর্ণনা পাওয়া যায়, আপাতত অনুবাদ করলাম মিহির বোসের 'বলিউড -- একটি ইতিহাস (পাতা ১৮৯)' থেকে। কিন্তু সত্য হোক আর মিথ, এ গপ্পের সত্যজিত যে ফেলুদার মতই একদম ষাঁড়ের চোখের মধ্যমণিতে ধাক্কা মেরেছিলেন, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ তো সৌমিত্রের মৃত্যুই। রাজকাপুরের মৃত্যুতে শোকধ্বনি হয় সর্বভারতীয় মিডিয়ায়। আর সৌমিত্রের মৃত্যুতে এনডিটিভির খবর পড়লাম (পড়লাম, টিভি চালিয়ে কিছু দেখিনি) 'বাংলা সিনেমার প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব মারা গেছেন'। সে খবরের অর্ধেকই আবার অমিতাভ বচ্চনের ব্লগ এবং টুইটে ভর্তি। দেখে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, ঠিক কে এই অমিতাভ বচ্চন? কোন হরিদাস পাল? এই পড়েই যাঁদের শিহরণ হচ্ছে, তাঁদের একটা টিপস দিই। কদিন আগেই ডন নামক একটা সিনেমার একটু খানি চালিয়ে দেখলাম, দেখা গেলনা। বোম্বের সিনেমায় অদীক্ষিত আমার পুত্র অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, এটা সিনেমা? তা, কৈশোরের মায়াঅঞ্জন চোখ থেকে ঝেড়ে ফেলে একবার ডন দেখে নিতে পারেন। না, জনমোহিনী আর সমান্তরাল সিনেমার কথা হচ্ছেনা। ঠিক এর পাশাপাশি দেখুন সেই সময়ের বাংলা জনপ্রিয় সিনেমা বসন্ত বিলাপ। ভাল মন্দের বিচার পরে, কোনটা দেখে উঠতে পারেন পুরোটা একটু জানাবেন।
তো, এই জন্যই সৌমিত্রর মৃত্যুর দিনে অমিতাভ বচ্চন আর রাজ কাপুরের কথা মনে পড়ে। রাজ কাপুর মারা গেছেন, অমিতাভ বাঁচুন, দীর্ঘদিন বাঁচুন। ভারতীয় সিনেমার আইকন হয়েই বাঁচুন। সৌমিত্র থাকবেন আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক হয়েই। তিনি বাংলা সিনেমার আইকন। তিনি আমাদের। তাঁর বামপন্থা নিয়ে আমরা তর্ক করব, তাঁর অভিনয় নিয়ে ফাটাফাটি করব। আমরা বাঙালিরা। এপারে এবং ওপারে। সীমানা টিমানা মুছে যাবে এইসব ব্যাপারে। এবং এই আলোচনায় 'ভারতীয় মিডিয়া'র প্রবেশাধিকার নেই। সৌমিত্র আমাদের, একান্ত আমাদের। জাপানিদের যেমন তোশিরো মিফুনে। কোনো ব্যাটা বলিউডের সাধ্য নেই এরকম কাউকে ধারণ করার।
আজকে প্রাইম টাইমে রবীশকুমার আধঘন্টা ধরে সৌমিত্র এবং বাংলার সংস্কৃতিমনস্কতা নিয়ে বললেন। বললেন হিন্দি সিনেমার কেউ মারা গেলে স্রেফ কুছু গান আর সিনেমার ক্লিপ দিয়েই কাজ সেরে দেয়। কিন্তু বাংলায় অ্যাঙ্কররাও রীতিমত ডিটেলে আলোচনা করে, মৃতব্যক্তির কাজক্ররম সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল থাকে। আনন্দবাজার, টেলিগ্রাফ এই সময় এর সব পাতার ছবি দেখালেন।
এইও, অমিতা বচ্চন নিয়ে আপত্তি থাক্লে ঠিক আছে (কিন্তু সেগুলোও আর্টিস্টের খামতি নয়), অমিতাভ বচ্চন নিয়ে তাচ্ছিল্য মেনে নেওয়া যাবে না!
"সর্ব ভারতীয় মিডিয়া" বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? গোবলয় রাজ্যগুলিতে চলা খপরের কাগজগুলিকে? বলিউডের রিয়াকশনকে? ডেফিনিশন না থাকলে আলোচনা অসম্ভব।
সৌমিত্রের খবর দক্ষিণের মিডিয়া কেমন কভার করেছে? সেখানে কি অমিতাভ আর রজনীকান্ত সমান ফুটেজ পান?
আঞ্চলিকতার প্রতি শ্রদ্ধা বিচ্ছিন্নতাবাদে পরিণত না হওয়াই কাম্য।
হিন্দিঃ https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_news_channels_in_India#Hindi_news_channels
ওর নিচে দেখবেন, 'আঞ্চলিক' হিন্দি চ্যানেলেরও তালিকা আছে।
মনে হচ্ছে, ডিডি ন্যাশানাল শোনেননি, 'আঞ্চলিক' সিনেমা শোনেননি, 'জাতীয় মিডিয়া' শোনেননি। এ তো বড় রঙ্গ।
ঈশানদা, আঞ্চলিক সিনেমা বলেও তো আসলে কিছু হয়্না। ওগুলো আসলে আঞ্চলিক ভাষার সিনেমা। সিনেমাকে একটা অঞ্চলে বেঁধে রাখবে, এমন কেউ এখনও আসেনি।
তবে জাতীয় মিডিয়া বলিউড নিয়ে যে রঙ্গ করে, তাতে আমিও চাইনা তারা অপু আর ফেলুদার দিকে হাত বাড়াক।
সত্যিই সমস্যাটা বুঝতে পারছি না। নাটক করছিনা। বড় এস তো দুটি লিংক দিলেন আর সিঙ্গুল ডি-ও "সর্ব varotiy" মিডিয়ায় আলোচনার কথাই বললেন বলে মনে হলো। এমনকি সৌমিত্রকে দাদা সাহেব ইত্যাদি স্তরের জাতীয় পুরস্কারও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি মূলত বাংলা ভাষায় করা ছবি এবং নাটকের অভিনেতা ছিলেন বলে বাঙালীদের মনের কাছাকাছি। এটা তো খুব স্বাভাবিকও। এক আমাদের হননেন্দ্র বাবু ছাড়া গুজরাটি কালজয়ী অভিনেতা বা কেরালার প্রত্যন্ত মানুষের জীবনমুখী সাহিত্যের খোঁজ রাখা এবং তার সঙ্গে পোকো পোমো যোগ নিয়ে গভীর আলোচনা আমরা কেউই তেমন করতে পারিনা। ৯৫%। তাতে কি বিচ্ছিন্নতা বোধে বিদ্ধ হতে হবে নাকি?
এর মধ্যে বাঙালী থাকিব না মানুষ হইবো (থুড়ি সর্বভারতীয় মিডিয়া নিয়ে বিচলিত হইবো) জাতীয় প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?
ক্রিকেট এলোনা এবারে ? শুধু ই বলিউড ? একবার বন্যা ত্রাণের জন্যে সব বোম্বে আর কলকাতার ফিল্ম ষ্টার মিলে ইডেনে একখান চ্যারিটি ম্যাচ খেলেছিলেন বটে, তাতে সৌমিত্র-ও ছিলেন. সেই সূত্রে দুটোকে মিলিয়ে দিলেই "আমরা বাঙালি" টেম্পলেট এ খাপে খাপ বসে যেত কিন্তু।
নাটকের কিছু নেই। এনডিটিভিতে পড়েছি আমিই লিখেছি। কিছু দেখিনি। ওঁরা দুটো ছোটো অনুষ্ঠান হয়েছে লিখেছেন। লিংকও দিয়েছেন। এর মধ্যে রবীশ কুমারটা খানিক দেখলাম, ভালই লাগছিল।
তার পরেও রাজ কাপুর বা রাজেশ খান্নাকে নিয়ে সর্বভারতীয় মিডিয়ায় যা নাচানাচি হয়েছিল এ তার ভগ্নাংশও নয়। যদিও ক্ষমতা বা অর্জনের প্রশ্ন হয়, তো সৌমিত্র এবং সত্যজিৎ ভারতবর্ষের সিনেমার জন্য যা অর্জন করেছেন ওই বোম্বের নায়করা তার ধারে কাছেও না। তবু এই তারতম্য ছিল আছে এবং চলছে। ধারাবাহিকভাবে।
কিন্তু এসব তো লেখাতেই লেখা আছে। আবার কেন?
তার কারণ সংখ্যা। রাজ কাপুর বা রাজেশ খান্নার দর্শক সংখ্যা এবং আমার আপনার ভালো না লাগলেও ওদের সিনেমা বোঝার লোকের সংখ্যা অনেক অনেক বেশী -- সে নেহেরুর ভুল বিদেশ নীতি বা যে কোনো কারণেই হোক। তো যাঁদের বেশী লোকে চেনে তাঁদের নিয়ে বেশী আলোচনা হয়েছে। বিশ্ব জোড়া মূলত শহুরে শিক্ষিত বাঙালী মধ্যবিত্তের অভিনেতার যতটা প্রাপ্য সৌমিত্রও ততটাই পেয়েছেন।
এর মধ্যে সংখ্যা ছাড়া আর তো কিছু নাই।
অমিতাভ বচ্চনের ডন আমার অসাধারন ভাল্লাগে, ডনের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য লেখককে ধন্যবাদ। ডন, মুকাদ্দার কা সিকান্দার, দ্য গ্রেট গ্যাম্বলার, পারওয়ারিশ, লাওয়ারিস, নমকহালাল....এগুলো এখনও য়ুটুবে মাঝে মাঝে ক্লিপ দেখি। সুপার ডুপার হিট সিনেমাগুলো। একটা সময়ে আবার কারা যেন অমিতাভ অভিনয় করতে জানে কিনা সেসব নিয়ে আঁতলামো করতো। আমাদের কাছে ওটা কোন তর্কের বিষয়ই ছিলো না, কারন আমরা অমিতাভের সিনেমা দেখতাম ঝারপিটের জন্য।
আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের একটা সিনেমা দেখেছি, মাছ মিষ্টি আর মোর। সিনেমাটা ঢপের ছিলো, কোন একটা কারনে বসে বসে দেখতে হয়েছিল। ওনার সিনেমায় ঝারপিট ছিলোনা, তাই দেখাও হয় নি।
তবে রাজেশ খান্না সুপার স্টার হলেও, অমিতাভ কিন্তু মেগাস্টার। তাই রাজেশ খান্নার থেকে অনেক বেশী নাচানাচি হবে অমিতাভ বচ্চনকে নিয়ে।
বচ্চনের কালিয়া ভুলবেন না ইওর অনার। সইত্যজিতের আ্যসিস্ট্যান্ট টিনু আনন্দের ছবি।
আদিগন্ত আলুচোনার শেষে সবই শেষে সেই আমরা -ওরা র গল্পে এসে দাঁড়ায়। গুরুতে করলে লীলে আর মোদী করলে কিলে। এই যা তফাৎ।
আরে হ্যাঁ কালিয়া :d আর ত্রিশূল? আরও কতো আছে! জান্জির, বম্বে টু গোয়া, অমর আকবর অ্যান্টনি। আরেকটা মেগা হিট হলো দিওয়ার, এগুলোর অন্য লেভেল।
এসবের মধ্যে শোলের নাম করছিনা, কারন ওটা একদম আলাদা।
ছোটবেলায় একটা খাতায় অমিতাভের সিনেমার একটা লিস্ট বানিয়েছিলাম, তাতে সত্তরটা মতো সিনেমার নাম ছিলো। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে কম্পিটিশান হতো কে কটা অমিতাভের সিনেমা দেখেছে তাই নিয়ে। এমনকি সওদাগরের মতো অখাদ্য সিনেমা অবধি কোনরকমে দেখেছিলাম স্রেফ কম্পিটিশানে জিতবো বলে। তবে শাহেনশাহ আমার দেখা বচ্চানের লাস্ট সিনেমা।
আগে আমার নিজস্ব সীমাবদ্ধতাগুলো খুব স্পষ্ট ভাষায় লিখি। আমি দীর্ঘদিন টিভি দেখি না। নেটফ্লিক্স খায় না মাথায় মাখে জানি না। এমনকি ইদানীং ব্যাপক চালু হওয়া গুগল মিটও জানি না। ফলে রাজদীপ সারদেশাইকে প্রণয় রায়ের সূত্রে চিনলেও রবিশকুমারের একটি কথাও ইহজীবনে শুনিনি। এবং স্ট্যান্ড আপ কমেডি কী জিনিস জানি না। ভবিষ্যতে এই সম্পর্কিত সীমাবদ্ধতা কাটানোর ব্যাপারে আমি চরম উদাসীন।
কিন্তু এই লেখাটায় সৈকত কতগুলো ধারণাকে ধ্রুবসত্য ধরে নিয়ে প্রবন্ধটি লিখেছেন। বলা বাহুল্য, এই ধারণাগুলো তাঁর নিজস্ব রুচি ও মনোভাবসঞ্জাত। ফলে এটিকে তাঁর সবচেয়ে দুর্বল প্রবন্ধ হিসেবে বিবেচনা করছি। কেন করছি তার কারণগুলো বলি।
১) তিনি মিডিয়া সম্পর্কে যা বলেছেন আমি তার বিপরীত ধারণা পোষণ করি। এক্ষেত্রে স্থানীয়-জাতীয় মার্কা আমরা-ওরার কোনও তর-তম নেই। দুটোই শ্মশানের ডোম, দুজনেই নির্লিপ্তির সঙ্গে শবদাহে অভ্যস্ত। এবং শবে আগ্রহী নয়।
২) মিডিয়া চলে টিআরপি-তে। এই বিষয়ে এখানে যাঁরা মন্তব্য করেছেন এবং পরে করবেন, তাঁদের প্রত্যেকের জ্ঞানগম্যি আমার চেয়ে বেশি। এখন এই টিআরপি কীভাবে নির্ধারিত হয়, তা কতটা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে নির্ধারণ করা হয়, কত টাকা ঢালে চ্যানেলকর্তারা - সেসব বাদ দিলাম। কিন্তু মোদ্দা কথা টিআরপি আছে।
৩) সৌমিত্রকে নিয়ে জাতীয় চ্যানেলগুলোর নীরবতা এই টিআরপিজনিত কারণেই। রাজেশ খান্না নিয়ে তাদের সরবতাও একই কারণে। এখানে রুচি নির্ধারণের কোনও দায়বদ্ধতা তাদের নেই। কোনও ডমিনেশন নেই। কোনও আমরা-ওরা নেই। যো বিকত্যা হ্যায়, উসকে পিছে দওড়ো অর পাকড়ো।
৪) একই কারণে বাংলা চ্যানেলগুলোতে সৌমিত্রকে নিয়ে ব্রেকিং নিউজের ঢল। এখানেও রুচি নির্মাণের কোনও দায় নেই। একটা বিরাট অংশের বাঙালি আজীবন উত্তম-সৌমিত্রে মজে, সিনেমাগুলোর নাম বা তাদের গুণমান নিয়ে আলোচনা করছি না। কিছু বাঙালি সৌমিত্রের হাতে গোণা খান কুড়ি কি তিরিশেক সিনেমায় মজে। ফলে টিআরপি আছে। তাই কাজে লাগাও।
৫) চ্যানেলের অ্যাঙ্কররা বিশুদ্ধ পাঁঠা এবং নিপুণ অভিনেতা। ফলে তাঁদের জন্য স্ক্রিপ্ট লেখা হয় এবং সেগুলোকে তাঁরা নিষ্ঠাভরে আউড়ে চলেন মাত্র। নাহলে কেউ অমর্ত্য থেকে রবিশঙ্কর হয়ে রাজনীতি-খেলা-সাহিত্য-চলচ্চিত্র-থিয়েটার-সঙ্গীত ইত্যাদিতে হরেকরকমবা হতে পারে না, হওয়া সম্ভব নয় অত কম সময়ের মধ্যে।
৬) এই টিআরপির কারণে বাংলা চ্যানেলগুলোর কাছে মুর্শিদাবাদের শিশু লোকমানের দুঃখজনক মৃত্যুও যা, পরিণত বয়সে সৌমিত্রের মৃত্যুও তাই।
ডিসি জানি অঙ্কের জাহাজ। তাঁর ভালোলাগাকে এই অকপট ভঙ্গীতে জানানোর জন্য তাঁকে সশ্রদ্ধ স্যালুট।
ধুর কে সৌমিত্র কে , কি কভার করলো কিছু এসেই যায় না। রিপাবলিক টিভি না করাই ভালো। বাংআলি লোক বাংলায় সেলিব্রেটেড, উনি তো সর্বভারতীয় সিনেমা কে কোনদিন পাত্তাই দেন নি। মুশকিল হল, বাঙালি বিকল্প সংস্কৃতির দুনিয়ার তো বটেই, বাঙালি মেনস্ট্রীম এর ও এই দম টা ছিল সমস্ত সীমাবদ্ধতা সত্বেও, এখন বাঙালি মেন স্ট্রীম আর বাঙালি বিকল্প সংস্কৃতি, কারোর ই সেরকম দম নাই। ধুর বাল বলতে তো দম লাগে। বাংলা সিরিয়ালে হিন্দী গান বাজাচ্ছে ভাই কি আর বলা। আমি সিপিআই সিপিএম ঘরানার লোক, ৮০ র দশকে নতুন করে যে সর্বভারতীয়ত্ত্বর চর্চা হয়েছিল, সেটা আমাদের ট্রেনিং এর মধ্যেই ছিল, অনেক লোক কেই প্যারোকিয়াল মনে হত, কিন্তু আজকাল সংস্কৃতি মানেই বলিউড, আর বাঙালি মেয়ে মানেই কালা যাদু এসব আর সহ্য করা যায় না।
বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
যা বাবাঃ , এই যে এলেবেলে বললেন , বাংলাসিনেমা রঞ্জু মল্লিক টেনে নিয়ে চলেছেন .
আর একঝাঁকতরুন প্রতিভা এসে গেছে !
অবস্থাটার পরিবর্তন আসে ২০০৫ নাগাদ। যখন বাংলা সিনেমায় নায়ক নামক কনসেপ্টটির মৃত্যু হওয়ায় পরাণ বন্দ্যো-খরাজ-শাশ্বত-পরম-রুদ্রনীল-রজতাভ প্রমুখ একগুচ্ছ শক্তিশালী অভিনেতা আবির্ভূত হন। পরে ঋত্বিক।
তবে হিন্দি সিনেমা -- মারাঠি , গুজরাটি , পাঞ্জাবি সিনেমার মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। টলিউড কে বেঁচে থাকতে গেলে হিন্দি সিনেমা বানাতে , হবে, ভবিষ্যতে। খালি ভোজপুরী সিনেমার বাজারটি ভালো .
এসেম, দয়া করে সর্বত্র ভাটের বক্তব্যকে সর্বত্র গুঁজবেন না। আপনি আমার কালকের মন্তব্যের স্পিরিটটাই বোঝেননি। অঞ্জন চৌধুরী-রঞ্জিত মল্লিক এবং স্বপন সাহা-রঞ্জিত মল্লিক একটি অত্যন্ত সফল জুটি। বাংলা সিনেমার সঙ্গে জড়িত কর্মীদের পেটের ভাত এই তৃতীয় শ্রেণির সিনেমার সুবাদেই হয়েছে। সেটাকে অস্বীকার করা হয় গাম্বাট এলিটপনা কিংবা নির্লজ্জ মূর্খতার প্রদর্শন। এতদ্দ্বারা রঞ্জিত মল্লিক দুর্দান্ত অভিনেতা হন না।
একইভাবে রঞ্জিত মল্লিকের মতো জিভছোলার প্রয়োজন সত্ত্বেও দেব বাংলা সিনেমাকে টেনেছেন। কারণ পোসেনজিত আর টানতে পারছেন না। তিনি প্রথমে ঋতুপর্ণ ও পরে সিজিতের নোক্কিপ্যাঁচা হচ্ছেন। এই মেনস্ট্রিম বাংলা সিনেমার লোকজনের প্রতি আমাদের চিরকাল উন্নাসিকতা বর্তমান। তাতে বাংলা সিনেমার কলাকুশলীদের কিস্যু এসে যায় না। আগে বোঝার চেষ্টা করুন, পরে এঁড়ে তক্কো করুন।
এখনও অবধি আমি শুধু ডিডিদার সাথে মুখোমুখি দেখা করেছি। আর এককের সাথে মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়। বোধিদার সাথেও এক দুবার হয়েছে। আপনারা মাইরি একটা মুখোমুখি মিটের ব্যবস্থা করুন। জনা কুড়ি-পঁচিশ যারা রেগুলার এখানে আড্ডা দিই, অন্যরাও চাইলে অবশ্যই আসতে পারেন। বোধিদা, এলেবেলে, দ দি, ন্যাড়াবাবু, অমিত, টি, এস, আর সব্বাই। অন্তত সবাই মিলে ঘন্টা দুয়েকের একটা গুগল মিটও কি করা যায়না কোন একটা রোববার? সিরিয়াসলি বল্লাম।
জুম জুম।জুম মিট করে ফেলো।
জুম বা গুগুল মিট হলে আমি সিঙ্গিল মল্ট আনব।
শ্রীমান এলেবেলে, আমি কোথায় কি লিখবো আমার নিজস্ব ব্যাপার।আপনি বরঞ্চ বিভিন্ন টই তে রাবিশ পরিবেশনা থেকে বিরত থাকতে পারেন। পর পর রাবিশ ঢালবেন, রবিশ কুমার কে জানবেন না,রঞ্জিত মল্লিক কে সৌমিত্রর চেয়ে উঁচু জায়গায় বসাবেন,উত্তম কুমড়ো বলবেন, আর লোকজন চুপটি থাকবে ?এইসব পাহাড় প্রমাণ জঞ্জাল সরানো তো একদিনের কম্মো নয়।
আমি উত্তম-সৌমিত্র লিখেছি। এর মানে ৮০ অবধি বোঝায়। তারপরে রঞ্জিত মল্লিক-ভিক্টর ব্যানার্জি-পাপোষ তাল। কিছু পরে চিরু-পোসু। তখনও বাংলা সিরিয়াল জাঁকিয়ে বসেনি। অঞ্জন-স্বপন সেই ফাঁকটা ভরাট করেন। আগে যেখানে বাংলা সিনেমার নাম হত বিলম্বিত লয়, সেখানে সেটা দাঁড়ায় বাবা কেন চাকরে। কারণ দর্শক পাল্টে গেছে। বাংলা সিনেমা হলগুলোর করুণ দশা। মাল্টিপ্লেক্স হতে শুরু করেছে। এই সময়ে টিভির দৌলতে একঝাঁক অভিনেতা উঠে আসেন।
বাংলা সিনেমার দর্শকদের রুচির শ্রেষ্ঠ উদাহরণ সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। অত শক্তিশালী এবং বিরাট রেঞ্জসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও কোনও কালে কল্কে পাননি।
আর রঞ্জিত মল্লিকের শাখাপ্রশাখাকে লিলি চক্রবর্তীর অ্যানেকডোটাল রেফারেন্স দিয়ে নস্যাৎ করা যাবে না। সত্যজিতের লিখিত স্টেটমেন্ট আছে। বাদ্দিন।
বেশ তবে জুম মিটই হোক। আমি আলাদা একটা টই খুলছি।
আর রিপাবলিক টিভি দেখতেই হবে বা রবিশকুমারের কথা শুনতেই হবে জাতীয় ফতোয়াকে আমি পাত্তা দিতে অভ্যস্ত নই। টিভির আলোচনা থেকে শেখার বয়স পেরিয়ে এসেছি। তাতে যদি শেখার খামতি হয় তবে হোক।
জুম মিটটায় আগ্রহী, ন্যাড়াদা আর শোভনদা ছাড়া সব্বাইকে প্রাণখুলে সুসভ্যভাবে গালি দিতে আগ্রহী। আমাকে হিসেবে রাখবেন। গ্লেনফিডিচ আমার থেকে।
টই খুলে দিয়েছি, ওখানে সময় বলুন :-)