করোনাক্রান্তির ভেতর আবারও সীমিত পরিসরে শুরু হচ্ছে পর্যটন। প্রতি বছর হাজারো পর্যটক এপারে বাংলাদেশের আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল রাংগামাটির কাপ্তাই লেক ভ্রমণ করে উপভোগ করেন প্রাকৃতিক শোভা। তাদের খুব অল্প অংশই জানেন, উন্নয়নের নামে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের নমুনা এই লেক সৃষ্টির ইতিকথা।
১৯৬০ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুত প্রকল্প করে রাতারাতি ৫৪ হাজার একর পাহাড়, বন ও চাষবাসের জমি লেকের পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। সে সময় উদ্বাস্তু হন প্রায় এক লাখ পাহাড়ি। তাদের অনেকে ভারতের ত্রিপুরা, অরুনাচল ও মিজোরামে পাড়ি জমান।
বাদবাকীরা পরিনত হন পাহাড়ের অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতে। আজো তারা পুনর্বাসিত হননি। পাননি কোনো ক্ষতিপূরণও। আর কাপ্তাই জলবিদ্যুত প্রকল্প থেকে যে বিদ্যুতটুকু তৈরি হয়, তার সুবিধাভোগি জনগণ পার্বত্যবাসীও নন। খোদ কাপ্তাই শহরেই দিনে-রাতে ছয়-সাত ঘন্টার বেশী বিদ্যুত থাকে না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ এলাকাই এখনো বিদ্যুতের সুবিধার বাইরে। জলবিদ্যুত প্রকল্পের সব বিদ্যুত সরবরাহ করা হয় জাতীয় বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থাপনায়।
কাপ্তাই লেকের মাধ্যমেই পাহাড়িদের ওপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সূচনা ঘটে।
সে সময়ের সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে শুনেছি, পাকিস্তানী প্রকৌশলীদের হিসেব ছিলো, কর্ণফূলি নদীতে বাধ দিয়ে ওই জলবিদ্যুত প্রকল্প করলে অনেক কম জায়গা জলমগ্ন হবে। কিন্তু তারা খোদ কাপ্তাই, রাঙামাটি শহরসহ বিস্তৃর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে, এতোটা ভাবতে পারেনি। অর্থাৎ কতোটাই না একটি বেহিসেবী পরিকল্পনা!
উপরন্তু সরকার যে ক্ষতিপূরণের টাকা বরাদ্দ রেখেছিলো, এর বেশীরভাগই পাকিস্তানী আমলারা পকেটস্থ করেছে।
লক্ষ্যনীয়, এমএন লারমা সেই থেকে পাহাড়ি ছাত্র সমিতি সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন। এতো বড়ো একটি রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন তাকে দারুণভাবে আলোড়িত করেছিলো।
প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বলছে, শুধুমাত্র শুভ ইচ্ছায় ”পাহাড়ি-বাঙালি ভাই ভাই” সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে, পার্বত্য সমস্যার সমাধান হবে, পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে-- এমন ভাবনাটি অবাস্তব।
রাষ্ট্রর মানবিক দৃষ্টি ছাড়া এটি সম্ভব নয়। আর রাষ্ট্রকে মানবিক হতে বাধ্য করতে চাই আত্নত্যাগী সংগ্রাম। পথটি দীর্ঘ ও রক্তে পিচ্ছিল।
আর তাই সিঁধু-কানহু, বিরসা মুন্ডা, এমএন লারমা, কল্পনা চাকমা, আলফ্রেড সরেন, পিরেন স্নাল, চলেশ রিছিলের দেখানো সংগ্রামী পথই আদিবাসীর মুক্তির একমাত্র পথ। আর এ সংগ্রামে প্রগতিমনা বাংগালিদেরও সহযোগি হিসেবে সাথে চাই। ...
_______
ছবি : প্রসেনজিৎ চাকমা
পাঞ্চেত ড্যাম ও পুরুলিয়ার কথা মনে পড়ে গেল।সংখ্যালঘু পাহাড়িদের স্বার্থ নিয়ে নিরলস লেখার জন্য লেখককে স্যালুট !
এইভাবে কেন লজ্জা দিচ্ছো দিদি? কর্তব্যবোধে আদিবাসী অধিকার আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি মাত্র। তোমার কাছ থেকে নিরন্তর শিখছি। শুভ কামনা