এখন তো সবই বেদে আছে বললেই সমস্যা মিটে যায়। তবে কুমারী পূজার সমস্যা বোধহয় মেটে না। কারণ বেদে এই প্রথার উল্লেখ আছে বলে জানা নেই। তন্ত্রপুরাণে আছে। তবে বেদ পরবর্তী কালে এর উদ্ভব এতে সন্দেহ নেই। আমাদের পীঠস্থান বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনে এর প্রচলন অতি অধুনা। স্বামী বিবেকানন্দ কাশ্মীর বেড়াতে গিয়ে এক মুসলমান কন্যাসন্তানের মধ্যে দেবীভাব দেখেছিলেন ও তাকে পূজা করেছিলেন। তারপর থেকেই মিশনে এই কুমারী পূজা চালু হয়। এখন তো অনেকখানেই হচ্ছে।তবে কখনোসখনো দু একটি ছুটকো খবর উড়ে এলেও আর কারো হিম্মত হয়নি 'বেজাতের' কুমারী এনে পুজোবেদীতে বসাবার। শাস্ত্র বলে কুমারীর জাতধর্মবর্ণ না দেখলেও চলে, কিন্তু পুজোর সময় মিশনসহ সব উদ্যোক্তারা খোঁজে অল্পবয়সী ব্রাহ্মণকন্যা।
ঠিক কথা, বললেই বা শুনছে কে?
ঠিক। একমত
আমাদের নিজস্ব 'গুডনাইট স্টোরিজ ফ' রেবেল গার্লস' ফরকার।
খুব ঠিক লেখা, প্রতিভাদি। আপনার সব লেখা পড়ে উঠতে পারি না, কিন্তু যেটুকু পড়ি তাতে সাবলীলতার সাথে লেখার বলিষ্ঠতা ও সামাজিক দায়স্বীকার পছন্দ হয়।
বর্তমান সময়ে যখন সনাতন ধর্মের নাম করে অন্ধবিশ্বাসের চর্চা এবং বিশেষ করে মেয়েদের অব্জেক্টিফিকেশনের বাড়াবাড়ি তখন প্রতিভা সরকারের এই যুক্তিপূর্ণ কথাগুলো ভরসা জোগায়। হ্যাঁ, কেউ একজন হয়ত ভাববে, হয়ত ভাবছে। আজ না হোক আগামীকাল।
লেখিকা ঠিক কি বলতে চেয়েছেন, বুঝতে পারলাম না। প্রতীক তো সবজায়গায় ব্যবহৃত হয়। সাহিত্য, বিজ্ঞান, সবজায়গায় প্রতীক ব্যবহার করা হয়। তা এক্ষেত্রে কি সমস্যা হলো?
আর লেখিকা যদি শক্তিবাদ নিয়ে একটু পড়াশোনা করতেন তাহলে জানতেন শক্তিবাদের দার্শনিক চিন্তা অনুযায়ী প্রত্যেক নারীই জগন্মাতার প্রতীক। চণ্ডীর নারায়ণীস্তুতিতে এই কথা বলা হয়েছে। শুধুমাত্র নারী নয়, প্রাণীজগতের যেকোনো স্ত্রী প্রজাতিতেই জগন্মাতার প্রকাশ।
আর লেখিকার অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি যজুর্বেদে দেবীকে কন্যাকুমারী রূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও বৈদিক সাহিত্যে এর সূচনা পাওয়া যাচ্ছে।
আসলে বেদ আর তন্ত্র মে সবসময় একে অপরের বিরোধী হবে তার কোনো কথা নেই, বরং অনেকক্ষেত্রেই উভয়ের চিন্তার সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
রজোদর্শন হলে নারী কখনোই অশুচি হননা, কিন্তু তাঁর কুমারীকাল অতিক্রান্ত হয়। তাই কুমারীরূপে তিনি আর পূজিত হননা।
আর এর আগেই লিখেছি শক্তিবাদের চিন্তা অনুযায়ী প্রত্যেক নারীমূর্তি তেই জগন্মাতার বিশেষ প্রকাশ। তাই শক্তিবাদের দিক থেকে মে কোনো নারীকেই জগন্মাতার প্রতীকরূপে পূজা করা যায়।
আর নারীর ক্ষমতায়ন নারীকেই করতে হবে, অন্য কেউ তার হয়ে করে দিতে পারেনা। স্বাধীনতা কখনোই ভিক্ষা নয়, তা জোরকরে আদায় করে নিতে হয়।
কিন্তু কুমারী পূজা কি করে মধ্যযুগীয় কুসংস্কার হলো, তাই বোধগম্য হলো না। বরং কুমারীপূজা আমাদের মনে শক্তিবাদের চিন্তাকে জাগ্রত করে। লেখায় কোনো সঠিক যুক্তি পেলাম না। লেখিকার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দই প্রাধান্য পেয়েছে। কেউ কুমারী পূজা পছন্দ নাই করতে পারেন, সেটা তাঁর সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অধিকার। কিন্তু নিজের অপছন্দ হলেই মধ্যযুগীয় কুসংস্কার বলে দাগিয়ে দেব, সেটা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছু নয়।
কমেন্ট-প্রতি ৭০ পয়সার বদলে শব্দপ্রতি পয়সা দেওয়ার ব্যবস্থা করুক আইটিসেল। আর নইলে এইসব শক্তিবাদের দার্শনিকতা, জগন্মাতার রূপ ধরণের মাম্বো-জাম্বোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হউক।
আহা , এখন মন্দার বাজার। আচ্ছে দিন না এলে পয়সা বাড়ানো যাবেনা.
লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো। লেখিকাকে শুভেচ্ছা.
দুর্দান্ত লেখা,জরুরি লেখা। তবে নিচে একজনের কমেন্ট দেখে বুঝলাম ওনার কগনিটিভ স্কিল সুপারহিউম্যান। সুতরাং আপনার 'মানবিক' ভাষা উনি ঠিক বুঝতে পারছেন না,কী সব যেন প্রশ্ন করছেন!
দারুণ লেখা, বলা বাহুল্য। কিন্তু এই লেখা শুধু সমমনস্কদের জন্য তো নয়, বরং খুব বেশি করে তাঁদের জন্য যাঁরা এই সব ধারণায়, সংস্কারে, আচারসর্বস্বতায় বিশ্বাসী। তাঁদের স্বরকে বিদ্রূপ করে থামিয়ে না দিয়ে আলোচনা চলুক। লেখার নীচে তেমন একজনের অনেকগুলো মন্তব্য ও তার প্রতিক্রিয়া দেখে কথাগুলো মনে এল। প্রতিভাদিই ও আরো যাঁরা এই শক্তিবাদ বিষয়ে অগ্রহী তাঁরা যুক্তি ও তথ্য দিয়ে উত্তর দিন। শুধু খিল্লী দিয়ে দিল্লী অবধি যাওয়া যাবে না।
প্রতিভা লেখেন খুব ভালো। এই লেখাটাও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এই সব বেদ পুরাণ মাইথলজি নিয়ে এটাক করে লেখার একটা অসুবিধে আছে।।ওটা করার আগে একটু ব্যাক গ্রাউন্ড মেটেরিয়াল জোগাড় করতে হয়। সেটা খুব কঠিন কাজ নয়। এই তো একটু উইকি ঘাটতেই বেরিয়ে এলো যে ১৬ বছর বয়স অবধি মেয়েদের কুমারী পুজো করা যায়।
এক বছরের কন্যা — সন্ধ্যা
দুই বছরের কন্যা — সরস্বতী
তিন বছরের কন্যা — ত্রিধামূর্তি
চার বছরের কন্যা — কালিকা
পাঁচ বছরের কন্যা — সুভগা
ছয় বছরের কন্যা — উমা
সাত বছরের কন্যা — মালিনী
আট বছরের কন্যা — কুষ্ঠিকা
নয় বছরের কন্যা — কালসন্দর্ভা
দশ বছরের কন্যা — অপরাজিতা
এগারো বছরের কন্যা — রূদ্রাণী
বারো বছরের কন্যা — ভৈরবী
তেরো বছরের কন্যা — মহালপ্তী
চৌদ্দ বছরের কন্যা — পীঠনাযি়কা
পনেরো বছরের কন্যা — ক্ষেত্রজ্ঞা
ষোলো বছরের কন্যা — অন্নদা বা অম্বিকা
তাহলে প্রতিভার বেসিক প্রেমিসটা অর্থাৎ রজস্বলা ইত্যাদি দাঁড়াচ্ছে না। এটাকটা অন্য দিক দিয়ে করলে মনে হয় ভালো হ'ত
কোথাও কেনও জানিনা রজঃস্বলা হলে নারী হয়ে ওঠা মানুষটি আর অগম্য থাকেনা সেটারই রূপক কিনা। যতদিন দেবী ততদিন তিনি অগম্য, যে সমাজে গৌরীদান প্রথা প্রচলিত যে সমাজে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ আজও মনে করে কুমারী সঙ্গমে যৌনরোগ সেরে যায় সে সমাজের পুরুষতন্ত্রের রাজনীতিতে সবই সম্ভব। দেবত্ব আরোপটাই তো আসলে একধরণের পুরুষতান্ত্রিক রাজনীতি।
তবে বেলুড় মঠে সম্ভবতঃ পাঁচ থেকে আট বছরের মেয়েদেরই পুজো করা হয়। বাংলাদেশে ওটাই সবচেয়ে প্রচারিত কুমারীপূজা।
ব্যক্তিগত আক্রমণ নিজেদের যুক্তির অভাবকেই প্রকাশ করে। আর কথায় কথায় অন্যকে আইটি সেল বলা বন্ধ করুন।
আর যদি অত বড়ো বৈজ্ঞানিক তো বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন চিন্তাকে প্রকাশ করুন। অনর্থক ভুলভাল কথা বলছেন কেন?
দর্শন ও বিজ্ঞান দুটি ভিন্ন শাখা। দুটোকে গোলাচ্ছেন কেন? যদি বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করেন, তাহলে বিজ্ঞানে মন দিন। আর দর্শন নিয়ে আলোচনা করতে হলে দার্শনিক ভিত্তি জানতে হবে।
কেউ মাথার দিব্যি দেয়নি যে দুর্গাপূজা করতে হবে বা কুমারীপূজা করতে হবে। কিন্তু তা নিয়ে আলোচনা করতে হলে তার দার্শনিক ভিত্তি জানতে হবে।
শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণব, স্যর জন উডরফ, ব্রতীন্দ্রনাথ মুখার্জি, শশিভূষণ দাশগুপ্ত, যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি প্রমুখ গবেষক শক্তিবাদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এঁদের পাণ্ডিত্যের ভগ্নাংশ ও আমাদের নেই। এঁরা সবাই বোধহয় আইটি সেলের লোক ছিলেন!
নিজেদের কোনো যোগ্যতা না থাকলে অন্যকে আক্রমণ করাই তখন সবচেয়ে সহজ! এ ব্যাপারে দক্ষিণপন্থী, বামপন্থী- সব শিয়ালের এক রা!
লেখাটা পোষায়নি। দুর্গাপুজো করে মেয়েদের সমস্যা না কমলে কুমারী পুজোর সাথে সেই সমস্যার যোগ করা কেন ? যুক্তিবাদীরা প্রশ্ন করবে, সে ঠিক আছে কিন্তু এইসব যুক্তিতে জট কাটবে ? আর শিব - শক্তি - মহামায়া এসব নিয়েও দর্শন আছে, সেগুলো ভেগোলজি হতেই পারে কিন্তু সেসবের সাথেও তো অন্য মান্য দেবী আর পুজোগুলো যুক্ত।
লেখাটা আমারও পোষায়নি মুলতঃ প্রেজেন্টেশনের কারণে। কিন্তু, পুজো সংক্রান্ত যে কোন প্রথাকে - আধুনিক বা তুলনামূলকভাবে নবীন - একটা বৈদিক ভেগোলজি দিয়ে জাস্টিফাই করার চেষ্টা, যেটা সিরিজ অফ কমেন্টে দেখছি, সেটা শুধু বিরক্তিকরই নয়, বিপজ্জনকও।
হ্যাঁ, যুক্তিতে না পোষাকে সবই বিপজ্জনক!
আবার বলছি, যজুর্বেদে দেবীকে কন্যাকুমারী রূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এটিকে দেবীকে কুমারী রূপে পূজার আদিমতম রূপ বলা যেতে পারে। এই চিন্তা পরবর্তী কালে পুরাণ ও তন্ত্র দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছে।
একটু কষ্ট করে প্রামাণ্য বইগুলো পড়লেই তো হয়! অবশ্য সবই তো আইটি সেল!
না, আপনি আইটি সেল নন। পড়াশুনো করা লোক। তাও ভেগোলজির অভিযোগটা রয়ে গেল।
ডাক্তারবাবু সমুদ্র সেনগুপ্তকে জানাই শুধু উইকি পড়লে অসুবিধে। আমি অনেক তথ্যভান্ডার ঘাঁটাঘাঁটি করে পোস্ট দিই। মিশনের মহারাজরা জানেন শাস্ত্রমতে ষোল বছরের বালিকার যদি রজোদর্শন না হয়ে থাকে তাহলেই কেবল সে কুমারী বলে বিবেচিত হবে। ঐ নামগুলো আমি ইচ্ছে করেই দিইনি, কারণ ও তো উইকি ঘেঁটে সবাই দেখে নিতে পারে উইকি দেখুন বললেই হয়ে যায়। কষ্ট করে টাইপ করার কি দরকার।
একটা লিংক দিলাম। তাতেও ব্যাপারটা খোলসা করা আছে। এছাড়াও is the goddess still a feminist, durga puja and a myth of making nari shakti, Kumar puja in Nepal and India: a dichotomy in hinduism এ-ই লিংকগুলি অবশ্যই দেখবেন। তার সঙ্গে কিছু ডকুমেন্টারি। চাইলে তারও নাম দিয়ে দেব।
ডাক্তারবাবু কোথায় ষোলো বছরের কুমারী পূজা দেখেছেন জানতে পারলে খুশি হব। তবে আমার জ্ঞানত কোথাও ৬/৭ বছরের বেশি দেখিনি। কারণ ওপরে বলেছি।
১৩ থেকে ১৬ ব্বছুরে মেয়েদের কুমারীপুজা করা হয়েছে এমন খান দশেক প্রামাণ্য উদাহরণ চাই। উইকিতে পেলাম না।
সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি ৬-৮ বছুরে কুচোগুলোকে নিয়ে কুমারীপুজা নামক এক কুচ্ছিত ব্যপার চলে।
বঙ্গদর্পণ ১,এ আলোচনা আছে। আর দুলাল বিশ্বাসের বই বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত।
বেদে আছে এখানে শুনলাম। তবে হয়ত-র ব্যবহার আছে। হয়ত বেদে এ-ই উল্লেখই বর্তমান কুমারী পূজার উৎস এইরকম দীপবাবু বললেন। বেদের দর্শন পরবর্তীতে পুরানে অনেক পরিবর্তিত হয়েছিল। তারপর লোকবিশ্বাসে আরো অনেক পরিবর্তন। মূল দর্শনে থাকতে পারে নারীকে প্রকৃতি হিসেবে আরাধনা করার কথা। কিন্তু এখন তো তা নেই। আচারসর্বস্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে এ-ই কনসেপ্ট। দুর্গাপূজাই তো তাই একথা যারা বলবেন তাদের বলি সেখানে কোনো জীবন্ত শিশুমানস জড়িয়ে নেই। খেলার বদলে ঘোমটা মাথায় গয়না পরে ছ ঘন্টা বসে থাকা নেই। শিশুর ওপর দৈহিক ও মানসিক নিপীড়ন নেই। বাচ্চার মানস জগতে এ-ই ঘটনার বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিজের চোখে দেখেছি। নারীশক্তির জাগরণকে সেলিব্রেট করার নামে এটি অত্যন্ত কুআচার। দেবী সাজা মেয়েগুলো পরবর্তী জীবনে অন্য নারীর মতোই দাসীবৃত্তি করতে বাধ্য হয়। এই মহা ধাপ্পা বন্ধ হওয়া দরকার। শবরীমালাই মন্দিরের মতো। তবে এই আমার দেশ তো। কমেন্ট পড়েই বোঝা যায় হবে না হবেনা। এ হবার নয়।
আচারসর্বস্বতার কি দেখলেন? আর আপনি বলছেন কুমারী পূজা মেয়েদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। আপনার এই দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ আছেতো? না আবার সেই ব্যক্তিগত বিদ্বেষ?