বাবা রামদেবের ম্যাজিক
ম্যাজিকের স্টেজ নির্মাণ
গত ২৮শে মে, ২০২০ তারিখে ইকনমিক টাইমসে একটি খবর প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়েছিল যে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর জেলার কালেক্টর চুপচাপ বাবা রামদেবের পতঞ্জলি রিসার্চ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের তৈরি আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোভিদ-১৯শের রোগীদের উপর পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছিলেন, কিন্তু খবরটা চাউর হওয়ায় এবং এ নিয়ে কিছু এনজিও এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিং দেশের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেলের অনুমতি ছাড়া এবং নতুন কোন ওষুধ মানুষের উপর পরীক্ষার জন্যে নির্ধারিত আইনি প্রোটোকলের পালন ছাড়া এমন অনুমতি দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলায় (২২শে মে) সে অনুমতি বাতিল করা হয় । এ নিয়ে পতঞ্জলি ট্রাস্টের ৯৬% শেয়ারের মালিক আচার্য বালকৃষ্ণ বলেন – ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আমরা আয়ুর্বেদ নিয়ে কোন নতুন এক্সপেরিমেন্ট করছি না । যে ওষুধগুলো বহু লোক নিয়মিত ব্যবহার করছে তা করোনা রোগীদের দিলে কতটুকু লাভ হয় দেখতে চাইছি।[1]
ম্যাজিক শো
২৩শে জুন সন্ধ্যেবেলা। করোনা প্যানডেমিকে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ ছুঁতে চলেছে। গোটা দেশ উৎফুল্ল। সমস্ত চ্যানেলে দেখাচ্ছে বাবা রামদেব আচার্য বালকৃষ্ণকে পাশে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করছেন। সামনের টেবিলে রয়েছে করোনিল , শ্বাসারি এবং অনুতৈল নামে নাকে দেওয়ার জন্যে একটি তেল। বাবা রামদেব জানালেন যে উনি রাজস্থানের জয়পুরের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল ইন্সটিটিউট নামের একটি হাসপাতালে ১০০ জন রোগীর উপর রান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়ালের নিয়ম মেনে পরীক্ষা চালিয়েছেন। তাতে ৩ দিনে ৬৬% এবং ৭ দিনে ১০০% রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছে। অতএব—মা ভৈঃ !
সন্ধ্যেয় ইন্ডিয়া নামের হিন্দি চ্যানেলকে দেয়া একটি ইন্টারভিউয়ে উনি জানালেন যে কোভিদের চিকিৎসার জন্যে কোন এলোপ্যাথিক ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই । প্রায় ৫৪৫ টাকার এই তিনটে ওষুধের কম্বিনেশনই যথেষ্ট । সাতদিনে একশ’ পার্সেন্ট সাকসেস! দুনিয়ায় কোন দেশ এখন অব্দি যা পারেনি—অক্সফোর্ড হোক বা আমেরিকা বা চীন বা জার্মানি—তা প্রাচীন আয়ুর্বেদ পারল। সমস্ত টিভি চ্যানেলে চ্যানেলে বাবাজির যোগ প্রজ্ঞা এবং রিসার্চের জয় জয়কার। যারা এ নিয়ে প্রশ্ন করার গুস্তাখি করছে সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা দেশদ্রোহী এবং বিলিতি সাহেবদের পা-চাটা অভিধা পেল।
কেউ কেউ প্রশ্ন করল ওষুধটি বাজারে ছাড়ার বা বিজ্ঞাপিত করার আগে উনি আইসিএম আর ( ইন্ডিয়ান যেন্টার ফর মেডিক্যাল রিসার্চ) থেকে অনুমতি নিয়েছেন তো? হেসে জবাব দিলেন—কোন বে-আইনি কাজ করিনি। দরকারি অনুমতি এবং কাগজপত্র সবই আছে।
অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্সঃ
কিন্তু সেদিন রাত্রে আয়ুষ মন্ত্রক পতঞ্জলি আয়ুর্বেদকে নোটিস ধরিয়ে জানাল যে এই দপ্তর সমস্ত কাগজপ্ত্র পরীক্ষা করে নিশ্চিন্ত হয়ে অনুমতি না দেয়া পর্য্যন্ত যেন করোনিলের বিক্রি এবং প্রচার বন্ধ রাখা হয় । কেন ?
কারণ ২১ ডিসেম্বর ২০১৮তে ভারত সরকারের গেজেটে ড্রাগস এন্ড কসমেটিক্স অ্যাক্টের কিঞ্চিৎ সংশোধন করে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে কোন আয়ুর্বেদিক, [2]সিদ্ধ, ইউনানি বা হোমিওপ্যাথিক ওষুধের নামে কোন রোগ নিরাময়ের বা চিকিৎসার জন্যে বিজ্ঞাপন দেয়া বা প্রচার করা নিষিদ্ধ।[3]
মার্চ ২০২০ থেকে দেশে করোনার ভীতি ছড়িয়ে পড়ল। তার সঙ্গে শুরু হল গোমূত্র সেবন বা নাকে সরষের অথবা আয়ুর্বেদিক তেল লাগিয়ে করোনা ঠেকানোর বিপত্তারণ মন্ত্র। এমন সময়ে লক ডাউন শুরু হওয়ার পর ভারত সরকারের আয়ুষ মন্ত্রক থেকে গেজেটে ১ এপ্রিল নির্দেশ প্রকাশিত হল যে কেঁউ যদি আয়ুর্বেদ বা ইউনানি বা সিদ্ধ পদ্ধতিতে রোগ নিরাময়ের দাবি প্রিন্ট, টিভি বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারিত করে তবে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।[4]
এদিকে দেখা যাচ্ছে হরিদ্বারে এই ওষুধ উৎপাদনের জন্যে লাইসেন্সের আবেদনে কোথাও করোনার চিকিৎসার নামগন্ধ নেই । অনুমতি নেয়া হয়েছিল ‘ইমিউনিটি’ বা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে ।[5]
রিসার্চের নামে যা দেখা গেলঃ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস রেজিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়ার রেকর্ডেও এই প্রয়োগে পতঞ্জলির নাম আছে কিন্তু করোনিল বা শ্বসারির নাম নেই। রিসার্চের স্থান এবং ফলফলের জায়গা খালি।
৯৫ জনকে নিয়ে ৪৫ জনকে (ট্রিটমেন্ট গ্রুপ) ওষুধ দেয়া হয় এবং বাকি পঞ্চাশ জন ‘প্লেসিবো’গ্রুপ, অর্থাৎ যাদের ওই ওষুধ দেয়া হয়নি। কিন্তু এতে শুধু ২০ থেকে ৪০ বছরের লোককে নেইয়া হয়েছিল। অনেকেই উপসর্গবিহীন, বা সামান্য কিছু উপসর্গ। পুরো রিসার্চ ঠিকমত করলে অর্থাৎ চিকিৎসার পর ফলো-আপ পিরিয়ডের উপসর্গ, সাইড এফেক্ট এসব দেখতে গেলে দু’মাস লাগে। অথচ এঁরা একমাস পুরো হতে না হতেই ওষুধ বানিয়ে ফেললেন। কোন মেডিক্যাল জার্নালে রিসার্চের ফল এবং রিপোর্ট প্রকাশ করা দরকার মনে করেননি। রোগীদের ক্লিনিক্যাল রিপোর্ট যেমন কো-মরবিডিটি আছে কিনা, চিকিৎসার সময় এবং ডোজ, নারী-পুরুষ –এসব কোন রেকর্ড নেই।
ফলে মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওই রাজ্যে আয়ুষ মন্ত্রকের অনুমতি না পাওয়া পর্য্যন্ত করোনিলের বিক্রি নিষিদ্ধ করে দিলেন। মুজফরপুর এবং জয়পুরে বাবা রামদেব এবং আচার্য বালকৃষ্ণের বিরুদ্ধে এফ আই আর হল। রাজস্থানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুংকার দিয়ে মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অপরাধে কড়া ব্যবস্থা নেবেন বলে জানালেন।[6]
ফের ম্যাজিকঃ শীর্ষাসন
সাতদিন গেল না। এবার ৩০ জুন তারিখে রামদেব এবং আচার্য বালকৃষ্ণ আবার প্রেস কনফারেন্স করলেন। বললেন – উনি আয়ুর্বেদকে বদনাম করার ষড়যন্ত্রের শিকার। উনি নাকি কখনই দাবি করেননি যে পতঞ্জলির নতুন ‘ক্লিনিক্যালি ট্রায়ালড” বটিকা করোনিল করোনা সারাতে পারে বা এই অষুধ খেয়ে করোনার রোগী সেরে গেছে।
ওনার ঘোষণা অনুসারে আয়ুষ মন্ত্রক ওদের তিনটি ওষুধের প্যাকেজ—দিব্য করোনিল,দিব্য শ্বাসারি বটি এবং দিব্য অনুতৈলকে ‘প্রতিরোধ ক্ষমতা’ বৃদ্ধির ওষূধ হিসেবে বিক্রি করার লাইসেন্স দিয়েছে।[7]
কিন্তু অ্যাডভোকেট তুষার আনন্দ দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন দিয়ে প্রার্থনা করেছেন যে উচ্চ আদালত মিথ্যা দাবি করে লোকের প্রাণ নিয়ে খেলা করার অপরাধে বাবা রামদেবের বিরুদ্ধে এফ আই আর করার নির্দেশ দিক।[8]
বাবার নানান কঠিন রোগ সারানোর দাবিঃ
বাবা রামদেবের ওষুধ নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। এর আগে উনি ক্যান্সার, এইডস (এইচ আই ভি), এমনকি সমকাম (!) সারানোর দিব্য আরোগ্যের দাবি করে হইচই ফেলেছিলেন। এঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের ৯৪% শতাংশের মালিক আচার্য বালকৃষ্ণও বিতর্কিত চরিত্র। ওঁর হাইস্কুল এবং সম্পূর্ণানন্দ সংস্কৃত ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করার কোন রেকর্ড পাওয়া যায়নি বলেও বলা যায়।সিবিআইওঁর বিরুদ্ধে নকল ডিগ্রির ভিত্তিতে পাসপোর্ট নেওয়ার অভিযোগে কেস করে।[9] পাসপোর্ট ২০১১ সালে বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। সাত বছর পরে হাইকোর্ট শর্ত সহ পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার আদেশ দেয় ।[10]
যোগগুরু থেকে ব্যবসায়ী?
২৩ জুন সন্ধ্যেয় ইন্ডিয়া টুডে টিভির সাক্ষাৎকারে বাবা রামদেব বলেন যে উনি ব্যবসা করেন না , জনতার সেবা করেন। অ্যাঙ্কর রাজদীপ সরদেশাই হেসে বলেন—ব্যবসা করছেন তো! এখন তেল টুথপেস্ট ঘি চাল ম্যাগি কোল্ড ড্রিংক এবং জিন্স—সবই তো বিক্রি করছেন।
ন্যাশনাল অ্যান্টি-প্রফিটিয়ারিং অথরিটি (এন এ এ) গত মার্চ ২০১২ তারিখে এক রায়ে বাবা ফরামদেবের পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ লিমিটেডকে ৭৫.০৮ কোটি টাকা পেনাল্টি জমা করতে বলে। ওঁর অপরাধ? জিএসটি (পণ্য এবং সেবা কর) দর কম হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী ওঁর কোম্পানির ওয়াশিং পাউডার বিক্রির সময় দাম কমানো উচিত ছিল। উনি তা না করে প্রডাক্টের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এটা কেব্দ্রীয় জিএস টি আইনের উল্লংঘন। এই পণ্যটির উপর জিএসটি আগে ২৮% ছিল । পরে কমে প্রথমে ১৮% তারপরে ১২% হয়ে যায় । তাহলে পতঞ্জলির উচিত ছিল সেই হিসেবে দাম কমিয়ে দেওয়া যাতে করহ্রাসের সুফল গ্রাহক পায় ।
রায়ে বলা হয়েছে ওই রাশি এবং ১৮% জিএসটি যোগ করে আগামী তিনমাসের মধ্যে কেন্দ্র ও রাজ্যসরকারের গ্রাহক কল্যাণ ফান্ডে জমা করতে হবে।[11] ডায়রেক্টর জেনারেল অ্যান্টি-প্রফিটিয়ারিংকে (ডিজিএপি) আগামী চারমাসের মধ্যে অনুপালন/ কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
বিগত ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ তারিখে ডায়রেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স বাবা রামদেবের চীনে রপ্তানি করার সময় ৫০ টন( ৫০,০০০ কিলোগ্রাম) রক্তচন্দনের কাঠ বাজেয়াপ্ত করে।[12] এর বিরুদ্ধে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি্ ২০১৮ তারিখে বাবা দিল্লি হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করে বলেন—ওঁর কাছে ডায়রেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেডের বৈধ অনুমতি আছে। আর এই কাঠ অন্ধ্রপ্রদেশের বনবিভাগের থেকে নীলামের মাধ্যমে কেনা।
বাবার পারমিট ছিল সি গ্রেড রক্তচন্দনের কাঠ রপ্তানি করার। রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স ওনার কনসাইনমেন্ট এই সন্দেহে জব্দ করে যে এতে গ্রেড এ এবং গ্রেড বি’র কাঠ রয়েছে। ঐ দুটো গ্রেড রপ্তানি করা নিষিদ্ধ।
ইকনমিক টাইমসের অনুসারে ২০১৪তে বিশ্ববাজারে এ গ্রেড রক্তচন্দনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম প্রতি টন ৩০ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ২ কোটি পৌঁছে যায়। হাইকোর্ট আগামী শুনানির তারিখ ১৮ই এপ্রিল ঠিক করেছিলেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ও ডি আর আইয়ের জবাবও চেয়ে পাঠিয়েছিলেন।[13]
ব্যাপারটা তক্ষুনি মেটেনি। ডায়রেক্টর অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডি আর আই) ১ অগাস্ট, ২০১৮ তারিখে পতঙজলি আয়ুর্বেদ, এবং তার চিফ ফিনানসিয়াল অফিসার সমেত আরও আটজনকে শোকজ নোটিস জারি করে বলে কাঠের গুঁড়িগুলোর সঙ্গে কাগজে বলা কোড মিলছে না – অর্থাৎ স্মাগলিংয়ের ইঙ্গিত ।[14]
হরিদ্বার কোর্ট বাবা রামদেবের কোম্পানি পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ লিমিটেডকে ‘মিসব্র্যান্ডিং’ এবং মিসলিডিং অ্যাড’ এর জন্যে১১ লক্ষ টাকা ফাইন[15] করেছিল। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মতে ‘অন্য কম্পানির তৈরি মাল নিজেদের লেবেল লাগিয়ে বিক্রি’ করা ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড ( প্যাকেজিং অ্যান্ড এবং লেবেলিং রেগুলেশন্স ২০১১) আইনের ধারা ৫২ (মিসব্র্যান্ডিং) এবং ধারা ৫৩ (মিস্লিডিং অ্যাড) এর উল্লংঘন।
এছাড়া পতঞ্জলির মধু, নুন, সরষের তেল, জ্যাম এবং বেসনের মান নিয়েও অভিযোগ ছিল। তার ভিত্তিতে ১৬ অগাস্ট, ২০১২ তারিখে কিছু স্যাম্পল জব্দ করে পরীক্ষা করা হয় , যা নির্ধারিত মানের চেয়ে কম পাওয়া যায়। পরীক্ষাটি উত্তরাখন্ডের একমাত্র অনুমোদিত রুদ্রপুর ল্যাবে করা হয়।আলাদা আলাদা করে ফাইন করলে মোট ১৮ লাখ টাকা ফাইন হত। ম্যাজিস্ট্রেট একসাথে ১১ লাখ টাকা ফাইন করে একমাসের মধ্যে জমা দিতে আদেশ দিয়েছেন। বলেছেন আবার যদি কোয়ালিটিতে খামতি পাওয়া যায় তাহলে আরও কড়া শাস্তি হবে।
সন ২০১৭তে একটি আর টি আই পিটিশনের উত্তরে জানা যায় যে পতঞ্জলির দিব্য আমলা জুস এবং শিবলিঙ্গি বীজ সরকারি ল্যাব পরীক্ষায় ফেল করেছে। শিবলিঙ্গি বীজে ৩১.৬৮% ‘ফরেন ম্যাটার’ (অন্য পদার্থ) পাওয়া গেছে। আর আমলার জুসের পি এইচ ভ্যালু নির্ধারিত মান ৭ এর চেয়ে কম পাওয়া গেছে। এর ফলে অ্যাসিডিটি হতে পারে।
এর একমাস আগে পশ্চিমবঙ্গের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় পতঞ্জলির আমলা জুস গুণমানের বিচারে পাস না করায় সেনাবাহিনীর ক্যান্টিন স্টোর্স ডিপার্টমেন্ট ( সি এস ডি) এক ব্যাচ আমলা জুস ওখানে বিক্রি স্থগিত করে।[16]
বৃন্দা কারাত ৩ জানুয়ারি, ২০০৬ তারিখে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী শিব বসন্তের একটি চিঠি নিয়ে দাবি করেন যে বাবা রামদেবের হার্বাল আয়ুর্বেদিক দিব্য ফার্মেসিতে তৈরি ওষুধে জড়িবুটি ভেষজ ছাড়া মানুষের হাড়ের গুড়ো এবং পশুর শরীরের অংশও মেশানো রয়েছে। কারাতের ইউনিয়নের সদস্য শ্রমিকেরা মে মাসে হরিদ্বারে দিব্য ফার্মেসির প্রেসকৃপশন এবং ওদের কাউন্টার থেকে কেনা ওষুধের রসিদ সহ স্যাম্পল নিয়ে সরকারি পরীক্ষার জন্যে জমা করে। ওরা জানায় যে একটি মৃগী সারানোর ওষুধে মানুষের খুলির হাড়ের গুড়ো এবং যৌনশক্তিবর্ধক ওষুধে (দিব্য যৌবনামৃতবটি) ভোঁদড়ের অন্ডকোষের পাউডার মেশানো হয়।[17]
তখন বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা -- শরদ পাওয়ার, লালুপ্রসাদ, মুলায়ম সিং, প্রকাশ জাবড়েকর, রাম মাধব এবং সুভাষ চক্রবর্তী--বাবার পক্ষে দাঁড়িয়ে যান;[18] বৃন্দা কারাতকে মাল্টিন্যাশনালের পয়সাখাওয়া দালাল বলে আক্রমণ করা হয় । ওঁর ইউনিয়ন অফিসে হামলা হয়। এদিকে বাবা বৃন্দার দেওয়া স্যম্পলের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করেন কেননা ওই স্যাম্পল কোন সরকারি কর্মচারি বাজেয়াপ্ত করেনি। উনি নিজে কিছু স্যাম্পল দেন তাতে ভেষজ ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যায় নি।
তখন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী অম্বুমনি রামদাস সংসদে জানান যে হায়দ্রাবাদের সরকারি ল্যাবে মানব ডিএনএ পাওয়া গেছে, অন্যগুলিতে পাওয়া যায়নি। আরও অনুসন্ধান দরকার। একমাস বাদে উত্তরাঞ্চল সরকার বাবাকে সকল অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়।[19]
উইকিপিডিয়া বলছে --পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ লিমিটেডে একটি ভোগ্যপণ্য উৎপাদক এবং বিতরক সংস্থা। এর ২০১৬-১৭ সালে ঘোষিত টার্ন ওভার (বছরের ব্যবসা) ১০২১৬ কোটি টাকা এবং ২০১৯ সালের হিসেবে এর সম্পদের মূল্য ৩০০০ কোটি টাকা।[20]
শেষকথাঃ
ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা আট লক্ষ ছুঁতে চলেছে। তবু বর্তমানে সর্বত্র শান্তিকল্যাণ বিরাজ করছে, কারণ আই সি এম আর ঘোষণা করেছে যে হায়দ্রাবাদের ভারত বায়োটেকের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন ১৫ই আগস্ট, ২০২০ নাগাদ বাজারে আসবে। এই ভ্যাকসিন ২৯শে জুন মানব ভলান্টিয়ারদের উপর পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু ২ জুলাই তারিখে এদের এক কর্তাব্যক্তি বিজ্ঞানীদের চিঠি ধরিয়েছেন -- মানুষের উপর পরীক্ষার তিনটে স্টেজ ( যা প্রোটোকল হিসেবে ছ’মাস লেগে যায় ) টপাটপ ছ’ সপ্তাহের মধ্যে শেষ করে ফেলতে হবে। যাতে ঘোষণা অনুযায়ী ১৫ আগস্ট নাগাদ বাজারে ভ্যাকসিন ছাড়া যায়। যদিও ৫ জুলাই রবিবারে ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এক বিবৃতি দিয়ে বলেছে—এই ভ্যাকসিনের ঘোষিত সময়সীমা অযৌক্তিক এবং অভুতপূর্ব।[21]
[1] ইকনমিক টাইমস, এবং পিটিআই, ২৮ মে, ২০২০।
[2] দ্য ওয়্যার, ২৪ জুন, ২০২০।
[3] গেজেট অফ ইন্ডিয়াঃ এক্সট্রাওর্ডিনারি, ভাগ-২, খন্ড-৩; ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০।
[4] ভারত সরকারের গেজেট ক্রমাংক জেড ২৫০২৩/০৯/২০১৮-২০২০-ডিসিসি( আয়ুষ) ১ এপ্রিল, ২০২০।
[5] দি হিন্দু, এবং ফ্রন্টলাইন, ২৪ জুন, ২০২০।
[6] এনডিটিভি, ২৪ জুন, ২০২০।
[7] ইকনমিক টাইমস, ২ জুলাই, ২০২০।
[8] ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২ জুলাই, ২০২০।
[9] দ্য কুইন্ট, ৩০ জুন, ২০২০।
[10] প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া এবং বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ১৮ জুলাই, ২০১৮।
[11] ইকনমিক টাইমস, ১৭ই মার্চ, ২০২০।
[12] বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, এবং ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮।
[13] ইকনমিক টাইমস, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮।
[14] সিএনবিসি টিভি ১৮ এর নিউজলেটার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮।
[15] টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ২০১৬।
[16] হিন্দুস্থান টাইমস, ৩০ মে, ২০১৭।
[17] ফ্রন্টলাইন, ২১ এপ্রিল, ২০০৬।
[18] উইকিপেডিয়া এবং ফিনানসিয়াল এক্সপ্রেস ৬ জানুয়ারি, ২০০৬।
[19] পিটিআই এবং রিডিফ ডটকম; ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৬।
[20] উইকিপিডিয়া।
[21] ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ৫ জুলাই, ২০২০।
ভোঁদড়ের অন্ডকোষ নিয়ে বৃন্দা র এতো মাথাব্যথা কেন পরিষ্কার হলোনা
রঞ্জনদার ব্লগ অ্যাক্সেস কী হল? কাজ করছে না?
বৃন্দা কারাতকে খুবই আক্রমণ করা হয়েছিল মনে পড়ল।
তথ্য সমৃদ্ধ লেখা, রঞ্জন। শেয়ার করলাম।
রঞ্জন, ১৮ নং রেফারেন্সে ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস ৬ই জানুয়ার, ২০০৬ এর জায়গায় ৯ই জানুয়ারী, ২০০৬ হবে বোধ হয়। একটু চেক করিস।
খুবই জরুরী লেখা
শেখর,
একদম ঠিক।
বিটিডব্লু, তোর কাছেদেবুর ফোন নাম্বার আছে রে?
@পিনাকী,
ভাই বুঝলাম না। আমি তো গুরু খুলতে এবং লিখতে পারছি।
@ রঞ্জ, না রে আমার কাছে দেবুর নং নেই। ওকে মেসেঞ্জারে লিখলাম নং টা পাঠাতে। তুই এখন কোথা??
আমি গুরগাঁওয়ে, ছোটমেয়ের কাছে--গৃহবন্দী।
আমিও তো দিল্লিতে ছেলে- বৌমার কাছে ঘরবন্দী হয়ে আছি সাড়ে চার মাস হলো।