১৪ বছরের জর্জ স্টিন্নি জুনিয়র, আমেরিকার সবচেয়ে কনিষ্টতম মৃত্যুদন্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামী। হ্যাঁ, মৃত্যুদন্ডের সময় ছেলেটির বয়স ছিলো ১৪।
১৯৪৪ সালের ২৩শে মার্চ ১১ বছরের বেট্টি এবং ৭ বছরের মেরি নামের দুটি শ্বেতাঙ্গ মেয়ে নিঁখোজ হয়। পরেরদিন অর্থাৎ ২৪শে মার্চ জর্জ স্টিন্নির বাড়ির পাশ থেকে ছোট্ট মেয়ে দুটির মৃতদেহ উদ্ধার হয়। হাতুড়ি জাতীয় ভারী কিছুর দ্বারা মেয়ে দুটির মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়েছিলো। এই হত্যাকান্ডের খুনী সন্দেহে পুলিশ জর্জ কে গ্রেপ্তার করে। প্রেপ্তারের কারণ ছিলো বেট্টি ও মেরি ২৩ তারিখ বিকেলবেলা সাইকেল চালিয়ে জর্জের বাড়ির পাশ দিয়ে ফুল কুড়োতে যাওয়ার সময় জর্জকে 'ম্যাপল' এর রাস্তা জিজ্ঞেস করেছিলো। এই কথোপকথনের কারণেই পুলিশ সন্দেহ করে জর্জ স্টিন্নিই তাদের হত্যা করেছে।
পুলিশ হেফাজতে জর্জ মোট ৮১ দিন ছিলো। এই ৮১ দিনের ৮০ দিন সে তার মা, বাবার সাথে দেখা করতে পারেনি। কৃষ্ণাঙ্গ যুবক দুজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করেছে, একী কম বড় ব্যাপার? জর্জের মা-বাবাও সামাজিক বয়কটের মুখে পড়ে ছেলের সাথে শেষের ৮০দিন আর দেখা করতে পারেননি।
১৯৪৪র ১৪ই জুন জর্জের বিচার শুরু হয়। মাত্র দুঘন্টার সেই বিচারসভায় সমস্ত শ্বেতাঙ্গ বিচারকদের নিয়ে তৈরি জুরি বোর্ড জর্জকে কোনরকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়নি, জর্জের পক্ষে কোন আইনজীবি, তার মা বাবা কেউ সেখানে উপস্থিত হতে পারেনি। এই বিচারপর্বে জর্জ স্টিন্নি কেবল একটি বাইবেল হাতে বার বার বলেছে সে নির্দোষ। জুরি বোর্ডের সদস্যরা তার কোন কথায় কর্ণপাত না করে তাকে বেট্টি ও মেরির হত্যাকান্ডে দোষী সাব্যস্ত করে ইলেকট্রিক চেয়ারে মৃত্যুদন্ডের নির্দেশ দেন।
আদালতের এই রায়ের পর জর্জের পরিবার, তার মা বাবা, কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারের জন্য তৈরি সংগঠন ছেলেটির বয়স মাথায় রেখে সেখানকার গভর্নরের কাছে মৃত্যুদন্ড রদের আবেদন করলে গভর্নর জনস্টন জানান
"আপনারা ওর প্রাণভিক্ষা করছেন? আপনারা জানেন না ও কী বিভৎস অন্যায় করেছে। বড়ো মেয়েটি ধর্ষণ করার উদ্দেশ্যে ও ছোট মেয়েটির হত্যা করে, কিন্তু বড় মেয়েটি সুযোগ না দেওয়ায় তাকেও হত্যা করে। এরপর মৃতদেহের সাথেই সঙ্গমে লিপ্ত হয়। প্রথমবার মৃত দেহটিকে ধর্ষণের ২০ মিনিট পর পুনরায় ফিরে এসে ও আবার ধর্ষণের চেষ্টা করতে যায় কিন্তু মেয়েটির দেহ খুব ঠান্ডা হওয়ায় আর ধর্ষণ করতে পারেনি। এই জঘন্য অপরাধের কোন ক্ষমা হয় না"
১৬ই জুন সন্ধ্যে ৭টা ২৫ এ জর্জকে সেল থেকে বের করে তার বাবার সাথে দেখা করানো হয়। তারপর জর্জকে ইলেকট্রিক চেয়ার বসানো হয়। ৫ ফুট ১ ইঞ্চির ছোট্ট অসহায় মানুষটার হাত বাঁধা হয় চেয়ারের সাথে, ইলেকট্রিক হেলমেট মাথায় পড়াতেই জর্জ কান্নায় ভেঙে পড়ে আবার বলে 'আমি নির্দোষ'। এরপর জর্জের মুখ কালো কাপড়ে ঢেকে ৭.৩০ এ ৫৩৪০ ভোল্টের ইলেকট্রক চার্জ করা হয় দুর্ভাগা কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরটি উপর। ৮ মিনিট পর জর্জকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তখন তার দাঁত গুলো ধোঁয়া হয়ে গেছে, চোখের কোন চিহ্ন নেই, গোটা শরীরটাই প্রায় ছাই সমান।
এই ঘটনার ঠিক ৬০ বছর পর ২০০৪ সালে পুরো কেস স্টাডি করে নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি স্কুল ওফ ল এর একদল আইনজীবি এই কেস পুনরায় রি-ওপেন করেন। ২০০৪-২০১৪ দীর্ঘ দশ বছর কেস চলার পর ২০১৪ সালে বিচারকদের জুরি বোর্ড ঘোষণা করেন জর্জ স্টিন্নি নির্দোষ। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের উল্লেখযোগ্য কোন প্রমাণ নেই। ঠিক যেমন তার ধর্ষণ করার সপক্ষেও পুলিশের কাছে কোন প্রমাণ নেই।
মারা যাওয়ার ৭০ বছর পর জর্জ স্টিন্নি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আর একবার প্রমাণ করে দিয়েছে সেই প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতেই কাঁদে চিরদিন ………
সব দোষ তো ট্রাম্পের ঘাড়ে চালালে চলবে না।বর্ণবাদ হলো আমেরিকার রাজনীতির মেরুদন্ড।ব্ল্যাক দের পার্সেন্টেজ 14শতাংশ।হিসপ্যানিক দের এর থেকে বেশী।কেন?
গত কয়েক দশক ধরে এদের ঢোকানো হয়েছে।ইচ্ছে করেই।মূলত ইলিগ্যাল উপায়ে।
এটা করে এক ঢিলে তিন পাখি শিকার করার চেষ্টা চলেছে।ইলিগ্যাল উপায়ে এলে,কম পয়সায় লেবার পাওয়া যাবে।দুই,সমস্ত রকম অত্যাচার,শোষণ মুখ বুজে সইবে কিন্তু প্রতিবাদ কম করবে।তিন,কালো দের থেকে সংখ্যায় বেশি হলে মাঝামাঝি বাফার এর কাজ করবে।
মনে রাখতে হবে,দিনের শেষে হিসপ্যানিক গণ নিজেদের কালো অপেক্ষা বর্ন শ্রেষ্ট মনে করিবে।
আর রেসিস্ট!সেটা তো সুপ্ত অাগ্নেয়োগিরি।সময় মতো জাগিয়ে তুললেই হলো।কে না নিজেকে শ্রেষ্ট তর ভাবতে চায়। অনেক টা আমাদের দেশের বর্ন বাদের মতন ব্যাপার আর কি!
যে প্রশ্ন টা ঘুরে ফিরে আসছে, তা হলো,এরা মিটিং মিছিল এর নামে ফিজিক্যাল ডিসটেন্স মানছে না কেন? একটা সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হলেই,আন্দোলন করি দের দিকে সঙ্গত কারণেই ট্রাম্প সরকার আঙুল তুলবে।
আর লুঠ পাঠের ঘটনা যতো বেশি দেখাবে,সহানুভূতি ততো কমে আসবে। এ আমাদের দেশ না।বাস, ট্রেন ক্ষতি করলেও লোকজন কিছু মাইন্ড করে না।এ হলো, আমেরিকা।এখানে প্রথম ও শেষ কথা হলো,ট্যাক্স পেয়ার মানি।
অর্থাৎ সরকারী সম্পত্তি নয়।ট্যাক্স পেয়ার মানি !!! বাবা রে বাবা!!ক্ষতি হলে,তখন যুক্তি বোধ উড়ে যায়।
কিন্তু এফ ওয়ার্ড ব্যবহার করলে অসুবিধে কি? এ ফ ওয়ার্ড ব্যবহার করলে কেন মিশতে নেই?
আমাদের দেশে গ্রামে প্রচুর গরীব মানুষ থাকে।হত দরিদ্র। ফর্মাল শিক্ষা বেশি পায় না। আর্থিক সঙ্গতি কম।অপরাধ করলে উকিলের পয়সা দিতে পারবে না।
পুলিশ কি এঁদের প্রচুর অত্যাচার করে।সময় অসময়ে মেরে ফেলে? এঁরা নিজেরা কি খুব বেশি করেন জড়িয়ে পড়ে?
আরে না ,না।এরকম ন্যাকা ন্যাকা প্রশ্ন বড় এস প্রায়শই করে থাকে বলে করলাম আর কি!
এই যেমন কিছুদিন আগে প্রবল তর্ক হয়েছিল,প্রাইম টাইমে দৃষ্টিকটূ ভাবে কনডমের এড দেখায় বলে আপত্তি জানিয়েছিলাম। অনেক সময় বাচ্চারা উপস্থিত থাকে।
তা,এমনি কিছু নিরীহ প্রশ্ন এসেছিল।কেন দেখাতে পারবে না?বাচ্চারা দেখলে অসুবিধে কি? ইত্যাদি প্রভৃতি।
আবার মজা দেখুন, বস্তি তে দুমাস থাকলেই নাকি ফ্ল্যাট এর ছেলে পিলে,বাজে কথা শিখে যাবে।বাজে অভ্যেস রপ্ত করে ফেলবে।মানে কি না,বস্তি মানেই এইসব চলে,প্রী ফিক্সড আইডিয়া।
গ্রামের কথা উল্লেখ করলাম,কারণ হত দরিদ্র গ্রাম বাসীরাও অধিকাংশই নিরুপদ্রব জীবন যাপন করে।খুব দরিদ্র হলেও,বিশেষ কোন অপরাধ মূলক কাজ কর্মে জড়িয়ে পড়ে না।দরিদ্র কে নিজের সঙ্গী ভেবে চালিয়ে নে য়।
আপনি যে গুলো উদাহরণ দেখলেন,সেগুলো অধিকাংশই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত।
আলোচনার মূল সূত্রে ফিরতে গেলে ভেবে দেখতে হয় রেসিজম এর গ্রোথ প্যাটার্ন কী আধুনিক বিশ্বে । প্রত্যক্ষ পরোক্ষ দুটো ব্যাপার ই থাকে
একী এমনিই হয় নাকি ? ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রত্যক্ষ কারণ ভাইরাস কিন্তু আপনি খালি গায়ে শীতের রাতে ঘুরে বেড়ালে , সেটাও কিন্তু একটা কারন । ওপেন মার্কেটের চেয়ে বড়ো শত্রু এই মুহূর্তে কেও নেই নেশন গুলোর কাছে । লিবারাল ইমিগ্রেশন পলিসি থেকে শুরু করে চীপ লেবার পাওয়ার লোভ , এগুলোকে আমরা দিনের পর দিন পুশ করি , করবোও । কিন্তু এর সাঈদ এফেক্ট জাস্ট চোখ বুজে থাকলেই বন্ধ হয়ে যাবে এমন নয় । ইটস আ ফ্যাক্ট দ্যাট আ পাওয়ারফুল মার্কেট ফোর্সেস মালটাকালচালিস্ম । যে ফোর্সটা নরমাল কোর্স এ , মানুষ যেভাবে ধীরে ধীরে একে ওপরের সঙ্গে সোশ্যাল এন্ড ইকোনোমিক স্পেস শেয়ার করে সেভাবে আসেনা । এটা একটা বাইরে থেকে তৈরী করা এক্সট্রা ফোর্স । মানুষকে দ্রুত সিভিলাইস্ড থুড়ি মার্কেট ফ্রেন্ডলি করার চেষ্টা । ইট ওয়র্কস বাট উইথ লট অফ সাইড এফেক্টস । রেসিজম যে সমাজে খুশখুশে কাশির মতো আগে থেকেই ছিল বা থিতিয়ে এসেছিলো , সেটাকেই বাড়িয়ে কয়েক শো হাজার গুন্ করে দেয় ।
দারিদ্র্য সহনশক্তি বাড়ায়,লড়াই করার শক্তি যোগায়।
আমেরিকা হলো বাইশ ট্রিলিয়নের দেশ।কালো লোকেরা অধিকাংশ সে দেশের পূর্ণ নাগরিক কয়েক পুরুষ ধরে বাস করছে। আমেরিকার সাধারণ স্কুল,কলেজ ,হাসপাতাল ভারতের সেরা ইনস্টিটিউশন গুলোকে টেক্কা দিতে পারে,এটাই জেনে এসেছি।
কালোদের একটাই অভাব।সেটা হলো এনসেস্ট্রাল প্রপার্টি বিশেষ কিছু পায় নি। সেটা এশিয়ান বা হিসপ্যানিক দের ও নেই।১৯৬০ সালের পর থেকে ইক্যুয়াল রাইটস চালু হওযায়,আইনগত বৈষম্য কমে গেছে।
নিজেদের উন্নতি তো নিজেদের ই করতে হবে না কি!?
সত্যি কথা বলার সমস্যা এই যে,তাতে মাছির মতো বিন বিন করে এটাকিং মন্তব্য চলে আসে।
স্পষ্ট ও সত্যি কথা এই যে কালো দের উন্নতি কালো দের,নারী দের উন্নতি নারী দের আর দলিত দের উন্নতি তাদের কেই করতে হবে।কিছু লোক এসে,আমি কি ভালো,আমি কি ভালো বলে ন্যাকামি করে যাবে।দিনের পর দিন করে যাবে।
বাইশ ট্রীলিয়নের দেশ আমেরিকা।এখানকার ন্যূনতম শিক্ষা,স্বাস্থ্য, বুনিয়াদী ব্যবস্থা পৃথিবীর মধ্যে ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট।যদি বাইশ ট্রিলিয়নে এর থেকে এক ট্রিলিয়ন ডলার কালোদের জন্য ব্যয় করা হয়,সেটাই পরিবার পিছু (৫জনের পরিবার)হিসাবে প্রায় এক কোটি টাকা হবে! সেটাই প্রথম দাবী হওয়া উচিত।
এলভিস প্রিসলের ঘেটোর গান না গেয়ে, সেখান থেকে বেরিয়ে মূল স্রোতে আসা উচিৎ।
এই যে লাখে লাখে লোক বেরিয়ে মিছিল করছে,তাকে সমর্থন করেন?এই জন্য হাজারে হাজারে মানুষ সংক্রমিত হলে কজনের পক্ষে সেটা প্রাণঘাতী হতে পারে,সেটা আন্দোলন কারী দের খেয়ালে আছে?প্রতিবাদ হাজার রকম উপায়ে করা যায়।
আজকেই অবপ তে একজন লিখলেন,ভারতে কোন প্রধান মন্ত্রী দলিত হবেন ভাবা যায় না।
হলেই বা কি?রাষ্ট্রপতি তো পিছড়ে বর্গের।কি হবে তাতে? ওবামা দুটো টার্মে ব্ল্যাক প্রেসিডেন্ট।কি উন্নতি হয়েছে ব্ল্যাক দের?
এই যে দেশ ভাগের পর এতো পাঞ্জাবি বা বাঙালি ছিন্ন মূল হ চলে এসেছিলেন।তাঁদের সম্পত্তি অধিকাংশ পড়ে রইলো,সে দেশে। আসতে আসতে নিজেরা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।
আইন করে মন থেকে বর্ণ বৈষম্য মুছে ফেলা যায় না।নিজেকে সমকক্ষ করে তুলতে হয় বা ছাপিয়ে যেতে হয়।তাহলেই অবজ্ঞা কমে আসে।তবে ঘৃণা মুছতে আরো বহু বহু যুগ লাগবে।