হাঙ্গেরি দুই : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ১৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ভালোয় মন্দয় মিলিয়ে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে অনেক বিচিত্র ঘটনা ঘটেছে, তবে এবার যা হলো তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমাদের আরেক প্রস্থ কফির অর্ডার দিয়ে ইস্তভান কিছু লিখলেন একটা কাগজে, তার পর বললেন ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে তিনি সিটি ব্যাঙ্ককে একটি আন্তর্জাতিক ঋণের মৌখিক ম্যানডেট দিতে আগ্রহী। আমরা যদি তাঁদের শর্ত মেনে নিই, ইস্তভান তাঁর বোর্ডের সম্মতি বিধায় আমাদের ফর্মাল চিঠি দেবেন, তাতে কিছু সময় লাগতে পারে।
এবার তিনি তাঁর টেবিলে লেখা চিরকুটে চোখ রেখে উইশ লিস্ট, চাহিদার তালিকা জানালেন-
এক। কাম্য ঋণের পরিমাণ তিরিশ মিলিয়ন ডলার।
দুই। মেয়াদ তিন বছর, আসলটা শোধ দেওয়া হবে ঋণচুক্তি সই করার তিন বছর বাদে, কোনো কিস্তিতে নয়।
তিন। সুদ প্রত্যর্পণ করা হবে প্রতি ছ মাস অন্তর।
চার। সুদের হার লন্ডনের ইন্টার ব্যাঙ্ক অফার রেট বা লাইবরের ওপরে ২%
(সে সময় ৪% প্লাস ২=৬%), ফিক্সড নয়, ফ্লোটিং, ছ মাস অন্তর নির্ধারিত হবে।
পাঁচ। আমাদের পারিশ্রমিক তিরিশ মিলিয়ন ডলারের ওপরে ১% অথবা ৩০০,০০০ ডলার, সেটি
ঋণচুক্তি সই হবার দিনে দেয়, আপ ফ্রন্ট।
সুখবর !
খদ্দেরের আজ্ঞাপত্র বা ম্যানডেট পেতে কত যে ঘোরাঘুরি করতে হয়, জুতোর সুখতলা খোয়াতে হয়! টাটা স্টিলের বর্তমান অধ্যক্ষ কৌশিক চাটুজ্জে তার সাক্ষী। তাঁর কোম্পানির ইংল্যান্ডের কোরাস স্টিল অধিগ্রহণের ডিলের সন্ধানে বম্বে হাউসের লবিতে, প্রয়াত রতন টাটার স্নেহধন্য সতত বিচরণরত কুকুরগুলিকে পাশ কাটিয়ে লিফটে চড়ে তিনতলায় কৌশিকের অফিসে কতদিন যে হত্যে দিয়ে বসে থেকেছি (তাঁর তৎকালীন সুযোগ্য সহকারী সন্দীপ অবশ্য আমাদের আপ্যায়নের কোন ত্রুটি রাখে নি)।
এই বুদাপেস্ট ব্যাঙ্ক পয়লা মিটিঙেই বললেন, চরৈবেতি? মানে আমাদের কপালে ডিল নাচছে,
না আমরা বোকার মতন বীরদর্পে কোন গভীর গাড্ডার দিকে এগুচ্ছি?
চ্যালেঞ্জের তালিকা নিম্নরূপ:
পূর্ব ইউরোপের বাজার খুলেছে সবে কিন্তু এই কয়েক বছরে কোনও দেশের কোনো ব্যাঙ্কই আন্তর্জাতিক ঋণ বাজারে আসে নি।
ব্যাঙ্কের বয়েস সাত বছর, ব্যবসার ফলাফল ভদ্রসমাজে বড়ো গলা করে বলার মতন নয়; লাভের মুখ কখনো দেখেনি, দেখছে লোকসানের মুখ।
মালিকানা সরকারি, জানি। কিন্তু ঋণের অনাদায়ের অপরাধে হাঙ্গেরি সরকারকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় না। সরকারের একটি কবচ-কুণ্ডল থাকে, তার নাম সভারেন ইমিউনিটি, সরকার অবধ্য।
ঋণের দর কি হবে ব্যাঙ্ক নিজেই স্থির করে দিয়েছে। সেটা তাদের ইচ্ছে, পাবলিক সেটা মানবে? বেচব কাকে?
কোনো তুলনামূলক বাজারি দর আমাদের অজ্ঞাত, ওয়াল স্ট্রিটের কেতাবি ভাষায় যার নাম মার্কেট রিড। মার্কেট কোনও ডিলই দেখে নি অতএব কোনো কিছু রিড করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব! জিজ্ঞেস করব কাকে? পশ্চিমে ঋণের বাজারে হাঙ্গেরি ও বুদাপেস্ট দুইই অপরিচিত।