সুটিয়ার কথা - পর্ব ১ : রিণিতা মজুমদার
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ২৪ আগস্ট ২০১৩ | ৫৯১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯০
১৯৯৮ সাল থেকে সুশান্ত চৌধুরির ক্ষমতা বাড়ে, তার দলে আরও কিছু দুষ্কৃতীদের দল যুক্ত হয়। দুই গুণ্ডা মিলেই তাদের তোলাবাজির কারবার জমিয়ে তোলে, স্থানীয় ব্যবসায়ী, দোকানদার এবং বাসিন্দা এদের কাছ থেকে এরা নিয়মিত তোলা আদায় করত এদের স্থানীয়ভাবে ব্যবসা করতে দেবার বিনিময়ে। দুজনেই বাইরের লোক হলেও অবিলম্বে এরা সুটিয়ায় জমিয়ে বসে, এবং নিজেদের দলে স্থানীয় হতাশ, কাজ-না-পাওয়া ছেলেপুলেদের ভেড়াতে শুরু করে। এই স্থানীয় ছেলেদের বেশির ভাগই এই সব দলের "ইনফর্মার" হিসেবে কাজ করত। দেখতে দেখতে ছোটখাটো তোলাবাজির ঘটনা বাড়তে বাড়তে ২০০০ সাল নাগাদ এই সব বড় আকার ধারণ করে, এবং এর সাথে যুক্ত হয় গণধর্ষণের মত ঘটনাবলী। এর মূলে ছিল এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চালুন্দি নদীর বন্যায় সুটিয়া এবং আশপাশের গ্রামের বহু মানুষ সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়েন। বেশ কয়েকটি গ্রাম হতশ্রী হয়ে পড়ে। এই সময়ে সরকারি এবং বেসরকারি ত্রাণসাহায্য এসে পৌঁছয় এবং সেইসব বিলিব্যবস্থার কাজে লাগে স্থানীয় ছেলেরা। এর পরে যা হয়, ধীরে ধীরে তারা নিজেরাই সেই সব রিলিফের মাল সরাতে থাকে, এবং সুশান্ত আর বীরেশ্বরের সহায়তায় তাদের গুণ্ডাবাহিনি এই সব গ্রামে তাদের দৌরাত্ম্য শুরু করে। গুন্ডাবাহিনি রিলিফের দখল নেয় এবং তারাই স্থানীয় স্কুল পালানো, কর্মহীন, হতাশ কমবয়েসী ছেলেদের নিজেদের দলে নিয়োগ করতে শুরু করে, ক্রমে সুটিয়া এবং আশপাশের সমস্ত গ্রামের রিলিফ সেন্টারের দখল তারা নিয়ে নেয়, এবং তাদের সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয় পুরো এলাকায়। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে তারা তোলাবাজি আর অত্যাচার চালাত, লোকাল ইনফর্মারদের সাহায্যে তারা স্থানীয় পরিবারগুলো সম্বন্ধে খবর জোগাড় করত, তারপরে বাইকবাহিনী নিয়ে চড়াও হত সেই পরিবারের ওপর, মহিলাদের অত্যাচার এবং ধর্ষণ করত, তারপরে টাকা দাবি করত। কখনও দাবির কম টাকা নিয়েই তারা খুশি হয়ে যেত, কখনও কখনও তারা বাধ্য করত পরিবারটিকে নিজেদের আংশিক জমিজিরেত বেচে টাকা তুলে দেবার জন্য। পুলিশে খবর দিলে মেরে ফেলার হুমকি দিত তারা। কখনও তারা লাগাতার কয়েক দিন ধরে কোনও একটি বাড়িকে ঘিরে থাকত, কাউকে বেরোতে দিত না যতক্ষণ না তাদের দাবি মানা হত। সবাই জানত, স্থানীয় পুলিশের সাথে তাদের যথেষ্ট বোঝাপড়া ছিল এবং দুই গুণ্ডাবাহিনির নেতাই বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় পুষ্ট ছিল, তাদের ধরা সোজা ছিল না। মেয়েদের তারা ধরে নিয়ে যেত নাগবাড়ি এলাকায় একটা ছোট পরিত্যক্ত ঘরে, তারপরে সেখানে তার ওপর অত্যাচার চালাত। একটিমাত্র কেসে আমি জনৈক সারভাইভারের নিজের মুখ থেকে শুনেছি সেই অত্যাচারের কাহিনি, বাকি কেসগুলো আমি শুনেছি অন্যদের মুখ থেকে এবং লোকাল থানার এফআইআর থেকে। আমি আবার সুটিয়া যাব আরও বিস্তারিত জানতে।