এক্সাম পেপার : মোহাম্মদ কাজী মামুন
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৬ অক্টোবর ২০২২ | ২৬৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
সর্বশেষ প্রশ্নপত্রটা বিলি করার পর পরীক্ষক যখন হলটির ডায়াসে এসে পৌঁছুলেন, চোখ পড়া মাত্রই দৌড়ে গেলেন দীপের দিকে, আর হাত থেকে বইটা প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে সেখানে একটা প্রশ্নপত্র গুঁজে দিলেন। খাতা আগে থেকেই রাখা ছিল, সামনের পকেটটা অনেকক্ষণ ধরে কামড়ে থাকা জ্যামিতি বক্সটা কোনমতে বের করে দীপ তার জন্য নির্ধারিত আসনে সটান বসে পড়ল। হাঁটতে হাঁটতেই এক ঝলক দেখে নিয়েছিল, এখন পুরো প্রশ্নপত্রটা দেখে তো সে আনন্দে আটখানা হয়ে উঠলো। শতভাগ কমন! এমনকি ‘অথবা’ দেয়া বিকল্প প্রশ্নগুলোও তার ঝাড়া মুখস্ত। কোনটা রাখবে, আর কোনটা ছাড়বে, এ নিয়ে বেশ কিছুটা সময় ভাবলো সে। পরে জ্যামিতি বক্সটা খুলে যুৎসই একটি কলম বেছে নিয়ে লিখতে শুরু করলো।
স্যাটেলাইট ট্রান্সফার : মোহাম্মদ কাজী মামুন
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : দোল | ০৭ মার্চ ২০২৩ | ১৬৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
চেম্বারটির সাথেই একটা জানালা ছিল, সে জানালাটা ধরে দাঁড়িয়ে ছিল মোরসালিন। শম্পা চলে যাওয়ার পর ফাইলগুলো নিয়ে বসেছিল, এর মধ্যে তো একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, একটি বিশাল বিজনেস প্লান, কোম্পানির এই শাখা অফিসটার চেহারা একাই বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু কিছুদূর যেয়ে মাথাটা গুলিয়ে গিয়েছিল! এত দিন ধরে মেহনত করেছে যার জন্য, যার পুরো রূপরেখাটা তার দেয়া, সেই কাঠামোটাই যেন খুব অচেনা লেগেছিল, আর মাথাটা ঘুরতে শুরু করেছিল। জানালাটার বাইরে তখন চলচ্চিত্রের রিলের মত ছুটে চলেছিল মানুষ, যানবাহন। এমনকি একটা নেড়ি কুকুরকেও রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ুতে দেখা গেল, কি এক গুরুত্বপূর্ণ মিশনে রয়েছে যেন সে, কিসের যেন এক তাড়া! এমনই এক তীব্র চলার স্রোত জানালার নীচের রাস্তাটিতে যে মনে হয়, জড় দোকানপাট ও বিপনিবিতানগুলোরও চাকা গজিয়েছে!
স্বয়ংক্রিয় শ্রমিক : মোহাম্মদ কাজী মামুন
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ২৫ এপ্রিল ২০২৩ | ৩২৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩০
ফ্যাশান ম্যাগাজিনটিতে পুরো ডুবে গিয়েছিলেন, তাই গাড়িটা গেইটের কাছে এসে যখন ধাক্কা খেল, তিনিও গাড়িটার সাথে শরিক হলেন, দু'জনে মিলে কিছুক্ষণ ভীষণ দুলে যখন থামলেন, তখন দু'জনেরই জল গড়িয়ে পড়ছে শরীর থেকে। অচিরেই দালানের ভিতর থেকে আসা একটা কানে তালা দেয়া আওয়াজ সেই জল পড়া থামিয়ে দিল। একই সঙ্গে তার স্বয়ংক্রিয় হৃদপিণ্ডটাও যেন থেমে যাওয়ার উপক্রম হল! ড্রাইভার আবুল একটুখানি ঘুরে এসে তা-ই জানালো যা তিনি আগেই জানতেন। দুইদিন পরপরই বদমাশগুলির মাথায় কী একটা কিরকিরা উঠে আর বেতন বাড়ানোর জিকির তুলে কা কা করতে থাকে সমস্বরে!
গুনাহ! গুনাহ! : মোহাম্মদ কাজী মামুন
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৭ অক্টোবর ২০২৩ | ২২৩৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
প্রথম প্রথম পরীক্ষা শেষে ঘটনাটা ঘটলেও, এক সময় এর ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ল। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেও মামার সাথে ঘুমোতে যাবার আবদার থাকতো মোরসালিনের! তবে লিটন নামের এই যুবকটি কিন্তু তার আপন মামা ছিল না। মায়ের এত দূর সম্পর্কের ভাই ছিল যে, মোরসালিন মনে রাখত পারত না ক্রমটা। লিটন মামা একটা বইয়ের দোকনে চাকরি করত, আর থাকত পুরনো ঢাকার একটি স্যাঁতসেতে মেসে, যার দোতলায় উঠতে উঠতে পিচ-কালো নোনা-ধরা দেয়াল, কড়িবর্গায় রাজত্ব করা ধুলোর পুরু আস্তর, আর পলেস্তরা খসে শ্যাওলা গজানো ইটের কংকালে উঁকি মারা অবশ্য দ্রষ্টব্য ছিল যে কোন পরিদর্শকের জন্য। এছাড়া রয়েছে কাঁথা বালিশের ম্যাড়মেড়ে বাসী গন্ধ। একটা পুরনো দিনের এলিয়ে পড়া আলনা, আর হাঁটু-ভাঙা রঙ-উঠা চৌকির তলা চেপে ধরা একটা ফেটে পড়া বিরস-বিবর্ণ ট্রাঙ্ক। সব মিলিয়ে দমবন্ধ অবস্থা!