সাইবার জগত থেকে হেফাজতঃ সমীকরণ সহজ নয় : ফিরোজ আহমেদ
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ১০ এপ্রিল ২০১৩ | ১৪০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
শাহবাগ জনতার সেই চেতনা, যে-চেতনা অনুমান করেছিলো জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের কোন আঁতাত তৈরি হয়েছে। ট্রাইবুন্যাল-রূপী প্রহসনের নাটকে জনগণের দাবীর যে অপমান ঘটেছে শাহাবাগ তারই বহিঃপ্রকাশ। শাহবাগ আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করেনি, কিন্তু শাহবাগে আওয়ামী লীগ একটা নেতৃত্বকে চাপিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতি বাকিদেরও সন্দ্বিগ্ধতার কারণে এরাও আবার একক নেতৃত্ব হতে পারেনি, কিছুটা হলেও যৌথ নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছিলো। বাকিরা যেহেতু সংগঠিত ছিলো না, তাই চাপিয়ে দেয়া নেতৃত্বের অগণতান্ত্রিকতা আর অস্বচ্ছতাও যথাসময়ে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। নীতিনির্ধারণী সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তও বদলে ফেলার মত গুরুতর ঘটনা শাহবাগে ঘটেছে। আবার, নেতৃত্বের যে কোন আপোষের ইঙ্গিত পাওয়া মাত্র সাধারণ জনতা ও কর্মীরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তাও নেতৃত্বের ভূমিকাকে বহুভাবে প্রভাবিত করেছে।
পূব-পশ্চিমের বাংলা ভাষা : ফিরোজ আহমেদ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৩ | ২৯৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
ভাষা তার নিজের সুবিধার্থেই অর্থের সীমা সম্প্রসারণ করে, প্রয়োজনের চাপে নতুন শব্দও নির্মাণ করে, প্রয়োজনের তাপে অশুদ্ধ শব্দকে শুদ্ধিকরণ করে নেয়। ব্যকরণের আদালতের রায় যাই হোক না কেন ‘সাহিত্যিক’ আর ‘ভাষাভাষী’ উভয়টির প্রয়োগ নিয়ে যেমন আজ আর কেউ প্রশ্ন করবেন না, তেমনি আদালতের নিয়োগপ্রাপ্ত সম্মানিত তদাকরকারীদের রায় যাই হোক না কেন, অন্যতম শব্দটির অর্থের যে সম্প্রসারণ ঘটে গেছে, তাকে আর পুরনো সীমায় বেধে রাখা যাবে না। কী ক্ষতি ‘অন্যতম ব্যক্তি’ বলতে ব্যক্তির বেলায় যেমনটা আমরা বুঝি, ‘অন্যতম গ্রন্থ’ বলে ব্যক্তির কীর্তিকে তেমনি আমরা বোঝাতে পারি? ভাষা এইভাবেই নিয়ত তার অর্থ সম্প্রসারণ করে চলে।
বরং বাংলা ভাষার সত্যিকারের বিপদ যদি কোনদিক দিয়ে থাকে, সেটা সমাজের উচ্চক্ষেত্রগুলোতে তার চর্চা না করার ফল। শৌখিন রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা দিয়ে তাকে সামান্যই রক্ষা করা যাবে। আমরা কি খেয়াল করছি রবীন্দ্র-নজরুলের ব্যবহার করা শব্দগুলোও তরুণতর প্রজন্মের কাছে অস্পষ্ট ঠেকছে, ক্রমে তারা ধূলিমলিন হয়ে পড়বে? জায়গীর বাদ যাক, কেন না প্রথাটাই নেই, কিন্তু বাংলাভাষা এখন শুধুমাত্র আটপৌরে জীবনেই ব্যবহৃত হচ্ছে, সমাজের-রাষ্ট্রের উচ্চস্থানগুলো থেকে সে কোন রসদ সরবরাহ পাচ্ছে না। উচ্চশ্রেণির সন্তানেরা যদি শিক্ষার প্রধান অংশ ইংরেজিতে সম্পন্ন করেন, আমলাতন্ত্র-সামরিকতন্ত্র-বনিকতন্ত্র সর্বত্র যদি ইংরেজিই দাপুটে ভাষা হয়ে থাকে, মায় আদালতে পর্যন্ত যদি প্রায় সমুদাংশ সওয়াল-জওয়াব মাতৃভাষায় না হয়; তো বাংলার ওপর ইংরেজির প্রভাব শুধু হুকুম বলে নড়ানো যাবে না, তার আগেই অজস্র হাকিম সরে যাবেন। কিন্তু যদি কোন হাকিমের হুকুমে যদি এই আদেশ কার্যকর করা যায় যে, বঙ্গদেশে আজ থেকে সরকারি-বেসরকারী কোন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ না দর্শিয়ে বাংলা ছাড়া আর কোন ভাষায় পরীক্ষা নেয়া যাবে না, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কোনো কর্মক্ষেত্রে-আদালতে সাধারণ মানুষের অবোধ্য কোন ভাষায় আলাপ করা যাবে না, সকল পাঠ্যগ্রন্থ অবিলম্বে বাংলায় প্রণয়ন করা হবে -- হুকুম করে ভাষাদূষণ বন্ধ করতে হবে না, আপনাতেই সেখানে প্রাণের স্রোত বইতে থাকবে।
চাপাতির নীচে বাক স্বাধীনতা : ফিরোজ আহমেদ
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ৩০ মার্চ ২০১৫ | ১২৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
চাপাতিধারীদের অতর্কিত হামলা আতঙ্কের যে সমাজে আমাদের বসবাস, তাতে নবতর সংযোজন এই ব্লগার খুন। যে গভীর পাপ আমাদের মানহীন শিক্ষাব্যবস্থায়, আমলাতন্ত্রের দাপটে, সংস্কৃতি চর্চায়, সামাজিক সংগঠনের ভূমিকাহীনতায়, দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতায়য় এত বছর ধরে চর্চা করে আসা হয়েছে, তার ফলাফল হাতেহাতে পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞান লেখকদের আড্ডা কি আর হবে এই দেশে? আইনস্টাইনের জন্মদিন পরের বছর কি পালন করা যাবে? শিশু-কিশোরদের মা বাবারা পাঠাবেন তো সাংস্কৃতিক আয়োজনে? সবশেষ ওয়াশিকুর রহমান বাবুর হত্যাকাণ্ড (৩০ মার্চ) এই ভীতির সংস্কৃতিকে আরও পাকাপোক্ত করার শয়তানি আযোজন।
আমরা জানি যারা আসছে, সেই নতুন প্রজন্মের জন্যই আমাদের লড়ে যেতে হবে। সহিষ্ণু-মানবিক একটা সমাজ নির্মাণের জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ চলবে।
মালোপাড়ার বাংলাদেশ : ফিরোজ আহমেদ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ২৩ জানুয়ারি ২০১৪ | ১৭১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মোটামুটি গ্রহণযোগ্য মত হলো সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সাধারণভাবে শান্তিপূর্ণই ছিলো, এমনকি হিন্দু-মুসলিম মিলন, পরস্পরের সংস্কৃতি সম্পর্কে শ্রদ্ধা ও উপভোগের অজস্র দৃষ্টান্তও ইতিহাসে পাওয়া যায়। মমতাজুর রহমান তরফদার ভাষায় "হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সম্পর্ক ছিল আন্তরিকতাপূর্ণ এবং ধর্মান্ধতার ঘটনা ছিল বিরল।" যদিও "সতর্কতার সাথে এসব গ্রন্থ পড়লে মনে হয় যে কিছু কিছু মুসলমান কর্মকর্তার ব্যক্তিগত খেয়াল ও ধর্মান্ধতা এসব সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের জন্য দায়ী ছিল। আবার, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার ঘটনাও ঘটেছিল" ( হোসেনশাহী বেঙ্গল)। অর্থাৎ প্রাকবৃটিশ আমলে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের তুলনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিই প্রধান প্রবণতা ছিলো, এই মতটি একভাবে মেনে নেয়া যায়, কিন্তু জিনিসটা ব্রিটিশরা আসার আগে এ দেশে ছিল না, এই মতটি মেনে নেয়ার মত না।
গাছপালা অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর পশুপাখি -- বুখাননের চট্টগ্রাম : ফিরোজ আহমেদ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ২৫ নভেম্বর ২০২০ | ২১৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
শুধু পাহাড়গুলো চাষের আওতায় আনলেই চলবে না, সব ঝোপঝাড়ও কেটে ফেলতে হবে, কেননা সেগুলো অপ্রয়োজনীয়। কেননা সেখানে স্থান নেয় নানান বুনো জানোয়ার। এই প্রাণীরা ফসলে ভাগ বসায়, কিংবা মাংসাশী হলে মানুষ আর গবাদি পশুর ওপরই হামলা চালায়। পাহাড়ে কোনো বুনো প্রাণীর প্রাকৃতিক আশ্রয় থাকা চলবে না।
পাহাড়ের মতোই সেই একই ভাবনার নমুনাই আমরা দেখতে পাবো উপকূলীয় অরণ্যের বেলাতেও। উপকূলীয় এই শ্বাসমূলীয় উদ্ভিদেরা এমনিতেও তখন মারা পড়ছে খাড়ি দিয়ে আসা জোয়ারের লোনা জল বন্ধ করায়, কিন্তু যেটুকু বাকি আছে, সেগুলোও কেটে ফেলার তাগিদ দিচ্ছেন বুখানন। এভাবেই ৯ এপ্রিলের ভুক্তিতে রামুর উপকূলে গজিয়ে ওঠা 'অপ্রয়োজনীয়' সুন্দরী গাছদের জন্যও মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বুখানন, নোনা জোয়ারের আগমনে সেগুলোর একটা বড় অংশের মৃত্যুদণ্ড ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়ে যাওয়ায় সন্তোষও প্রকাশ করছেন