ভ্যাকসিনের নীতি ও রাজনীতি : একটি বক্তৃতা : ডঃ অচিন চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ০৪ জুন ২০২১ | ২৫৪৮ বার পঠিত
আজকে ১৩৮ কোটি মানুষ প্রত্যেকেই মনে করবে টিকা নেওয়া দরকার যত টাকাই লাগুক না কেন, সেটা অসম্ভব। হাজার বারোশ টাকা খরচ করে টিকা নিতে যাবে ভারতের কত শতাংশ মানুষ? অনেকের ক্ষমতা নেই, কিন্তু এটা পুরোপুরি ক্রয় ক্ষমতার প্রশ্ন নয়। প্রশ্নটা হল আমি এতে খরচ করব কি করব না এটা অর্থনীতির নিয়ম। এর সঙ্গে ন্যায্যতার প্রশ্ন। অর্থনীতির প্রশ্ন আর ন্যায্যতার প্রশ্ন আলাদা করে বলতে চাইছি এই কারণে যে, আমেরিকাতে শোনা যাচ্ছে আমি ততক্ষণ সুরক্ষিত নই যতক্ষন না সবাই সুরক্ষিত। এটার মানে হচ্ছে আমার নিজের সুরক্ষার জন্য অন্যদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু এটা সংক্রমক রোগ, অতএব যতক্ষণ সেটা ঠেকাতে না পারছি আমি সুরক্ষিত নই। এখানে কিন্তু একটা সেল্ফ ইন্টারেস্ট-ই আমাকে এই কথা বলাচ্ছে। সরকারও একরকম ভাবে এই সেল্ফ ইন্টারেস্টটা মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, তোমার প্রয়োজনেই দরকার অন্যদের ফ্রিতে টিকা দেওয়ার। এটা আমরা অর্থনীতির যুক্তি দিয়ে বলতে পারি। এখানে প্রশ্ন হল, যদি রোগটা সংক্রমক না হয় তাহলে কি আমি প্রতিবেশীর থেকে সেই ইন্টারেস্টটা দেখতে পাব না? আমার যদি হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে আমি তো সংক্রমণ করছি না কাউকে, তাহলে কি পাশের বাড়ির মানুষটির কিছু এসে যাবে না? সেল্ফ ইন্টারেস্ট ছাড়া সমাজে আর কিছু আমাদের প্রণোদিত করবে না? তাহলে টিকার বন্টনের ক্ষেত্রে সব যুক্তিগুলোকে যদি শুধু সেল্ফ ইন্টারেস্টে নিয়ে আসি, যেটা এক্সটার্নিলিটির আর্গুমেন্ট, তাহলে ন্যায্যতার বা সমানুভুতির কোনও পরিসর থাকবে না? এই এক্সটার্নিলিটির জন্য অবশ্যই সরকারের ভূমিকা আছে। একজনও যদি সংক্রমিত থাকে তাহলে বাকিদের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। ফলে সরকার এই ভাবে বোঝাচ্ছে যে, যতক্ষণ না সবাই সুরক্ষিত হচ্ছে তুমিও সুরক্ষিত নও। এটা আমি আমার সেল্ফ ইন্টারেস্ট থেকেই চাইব সবাই সুরক্ষিত হোক। এমনকি দরকার হলে পাশের বাড়ির লোকের যদি পয়সা না থাকে, আমি তাকে পয়সা দিয়ে বলব টিকাটা নিতে। কারণ আমি নিজে সুরক্ষিত থাকতে চাই। কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের অন্য মোটিভেশন নিয়েও ভাবতে হবে।