প্রতিবাদ বা আন্দোলনের গানের কথা লিখতে গেলে বিখ্যাত জ্যাজ ট্রাম্পেটবাদক-কম্পোজার-গায়ক লুই আর্মস্ট্রং-এর একটা উক্তি মনে পড়ে যায়: ‘অল মিউজিক ইজ ফোক মিউজিক’, ‘সব সঙ্গীতই লোকসঙ্গীত’। ‘লোক’ ব্যতিরেকে সঙ্গীত সৃষ্টি হয় না। লোকসঙ্গীতের আন্দোলন অনেক ক্ষেত্রেই অপ্রচারিত; তার মিউজিক ভিডিও বড় একটা তৈরি হয় না। পৃথিবী জুড়ে লোকসঙ্গীতের উৎস নিপীড়িত মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। শোষণ-নির্যাতন-যন্ত্রণার ইতিহাস। আমেরিকায় ব্লুজ মিউজিকের আবির্ভাব হয় উনিশ শতকের মাঝামাঝি আফ্রিকান-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদের ‘কাজের গান’ (work songs), ভক্তিগান (spirituals), ‘চান্ট’ (chant) বা জপ এবং ব্যালাডস-এর সংমিশ্রণে তৈরি হয়ে ওঠে ব্লুজ। কৃষ্ণাঙ্গ লোককথা-উপকথার মৌখিক ধারায় যে গল্প-আখ্যান চলে এসেছে, তার ভিত্তিতে তৈরি লোকগীতি থেকে উপাদান টেনে সৃষ্টি আমেরিকার এই ... ...
কলকাতায় প্রেম হেঁটে বেড়ায় মাইলের পর মাইল, মনের আনন্দে। কত অজানা মন্দিরের অলিগলি, গুরুদ্বারের শান্ত পাঁচিল অথবা গির্জার নিরালা সেমেট্রি কিংবা জুম্মা পীরের দরগা সাক্ষী থেকে যায় প্রেমের কলকাতার ভালবাসার-মন্দবাসার কলকাতার। শহুরে হাওয়ায়, নীরব প্রেমের পথচলায় সঙ্গী হয় দূর থেকে ভেসে আসা আজানের সুর, কালীমন্দিরের আরতির ঘণ্টাধ্বনি যুগপত ভাবে। উত্তর কলকাতার হেদুয়ার পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যায় রোজ কত কত প্রেম-অপ্রেম। জীবনের চেয়ে বড় নেশা আর নেই। সে নেশায় পা টলোমলো করে, দৃষ্টি ঘনিয়ে আসে, আমরা তবু মুখ তুলে আকণ্ঠ পানের জন্য এই আকাশ থেকে মাটি, জল থেকে বাতাস, সবুজ থেকে ধূসর - সকলকে ডেকে বলি - আরো দাও, আরো, ... ...
১৭ জানুয়ারি ২০১০, জ্যোতি বসু মারা যাওয়ার পরে পাঞ্জাব জাতীয় শোক ঘোষণা করে, শীর্ষ নেতারা আপৎকালীন বিমানে কলকাতা চলে আসে। এমনকি কানাডা থেকেও। মাথা ঠেকে জ্যোতি বসুর নিথর দেহে। জ্যোতি বসু বাংলা ডকে তুলে দিয়েছে না দেয়নি, ৫০ বছর বাংলাকে পিছিয়ে দিয়েছে না প্রান্তিকের হাত মজবুত করেছে তাই নিয়ে বিতর্ক চলুক, কিন্তু আজ যে গল্প বলবো তার রাজনৈতিক অভিঘাত প্রশ্নাতীত। প্রথম গল্পটা ভবানীপুরের একটি পানশালার৷ এক যুগ আগে। যারা এই শতাব্দী প্রাচীন বারে যেতে অভ্যস্ত তারা দেখে থাকবেন এর ঠিক পাশেই একাধিক সরদারজীর দোকান আছে। এই সরদারজি কাজ সেরে ঠিক ন'টার সময় উপরে একটা টেবিলে এসে বসেন। ওয়েটার তিনটে হুইস্কির পেগ ... ...
মধ্যবিত্ত কারা? বিশেষ করে বাঙালি মধ্যবিত্ত। অর্থমন্ত্রী যা বলেছেন তাতে নিম্ন মধ্যবিত্তর আয়ের সীমা ছ লাখ থেকে সতেরো লাখ বছরে। তাহলে অর্থমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী মধ্যবিত্তর আয় আরো বেশী। কিন্তু বাঙালি মধ্যবিত্ত কি এতটাই রোজগেরে? ইতিহাস কি বলে? ১৮২৯ সালে বঙ্গদূত পত্রিকা প্রথম বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উল্লেখ করে। সেখানে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভবের জন্য চারটি কারন বলা হয়েছিলো, প্রথমত জমির দাম বেড়েছে, দ্বিতীয়ত অবাধ বানিজ্য, তৃতীয়ত ইউরোপীয়দের এদেশে আসার ফলে বাঙালির ধন বৃদ্ধি হয়েছে। আর চার নম্বর কারনটা হলো মুদ্রা নির্ভর অর্থনীতির বিস্তার। বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেনীর উদ্ভব রহস্য লুকিয়ে আছে উনিশ শতকের শিক্ষা বিস্তারে। মোটকথা শিক্ষা আস্তে আস্তে বাঙালিকে যেমন আত্মনির্ভরশীল করে তুললো তেমন ... ...
শিকাগো ধর্মমহাসভার কথা এলেই আমরা ভাবি ঐ তো 'Sisters and brothers of America', আর নাকি বিরাট হাততালি কিন্তু এর বাইরেও যে কিছু আছে তা এত তলিয়ে দেখি না। ১৯ শে সেপ্টেম্বর ধর্মমহাসভার নবম দিনে স্বামী বিবেকানন্দ একটি লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেন, বিষয়-হিন্দু ধর্ম। ধর্ম বললেই আমরা বুঝি তা যেন শুধুমাত্র সংসারত্যাগীদের জন্য বিশেষ করে যারা ঈশ্বর সাধনায় নিমগ্ন হয়েছেন তা তিনি আশ্রমেই থাকুন বা হিমালয়ের গিরিগুহায়, আর তা না হলে ধর্ম একেবারেই বৃদ্ধ বয়সের ব্যপার। কিন্তু ধর্মও যে একটা বিজ্ঞান, যা আমাদের অন্তর্নিহিত পূর্ণতার বিকাশ ও প্রকাশ ঘটায় (Science of human possibilities), তা আমরা সচরাচর ভেবে দেখি না। জীবনের কিছু বুনিয়াদী প্রশ্নের ... ...
শীত-বিকেলে মানুষের ঢল সাহেবপাড়ায়। যেন লন্ডনের রাস্তা। রঙিন বেলুন উড়ছে। হরেক খেলনা। কত রকমের শীতের খাবার। বুড়ির চুল। ঘটিগরম। শিশুদের নিয়ে বাবা-মা ঢুকে পড়ছে গির্জায়। প্রেমিক প্রেমিকারাও হাত ধরে। ঢং বাজল। পাখিরা উড়ে গেল। আকাশে ধোঁয়ার চাদর। সাদা কুয়াশা। দ্বিতীয় হুগলিতে আলো জ্বলল। ময়দানে ভিড়। গঙ্গার ধারে গা ঘেঁষে বসল যুগল। ডালহৌসি পাড়ায় অফিস ছুটি। এ বার প্রার্থনা শুরু হবে। শহরময় আলো। মদের দোকানে ভিড়। তিনতলার পুরনো সাহেব বারান্দায় মায়াবি হলুদ আলো স্ট্রিটল্যাম্পের। অদ্ভুত আভা! সাহেবপাড়ায় শীত এসেছে কালিঝুলি মাখা পোড়ো বাড়িগুলোয়.. নানা প্রজন্মের শিল্পীদের বোহেমিয়ান হওয়ার আবহমান আঁতুড়ঘর মধ্য কলকাতার এই সাহেবপাড়া। প্রখ্যাত চিত্রকর থেকে কবি বা পরিচালক, সকলেই কোনও-না-কোনও ... ...
Simanta Nandi আঁতেল হতে পারলেননা। তাঁর পড়ার উপযুক্ত বইঃ রক্তমাখা রুমাল ... ...
আরএসএস তার হাজার রকমের সহযোগী সংগঠন এবং রাজনৈতিক অঙ্গ বিজেপিকে নিয়ে '৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপ ঘিরে হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদি শিবিরের যে কাঙ্খিত অভিষ্পা ছিল, সেটি দেশের সর্বোচ্চ আদালত, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে তারা পেয়ে গেছে। গোটা বিশ্বের মতোই, আমাদের দেশ, ভারত যখন কোভিড ১৯ জনিত অতিমারীতে জর্জরিত, তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর তথাকথিত রামমন্দিরের ভিত স্থাপন করেছেন। আরএসএসের রাজনৈতিক কর্মসূচি 'সাম্প্রদায়িকতা'-র পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগের পথে এই ভাবে দেশের সরকার আত্মনিয়োগ করেছে। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে সম্পূর্ণ বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর এই তথাকথিত রামমন্দিরের ভিতপুজো আমাদের ... ...