'পৃথিবীতে আমরা যাদের জানি সবাইকেই ফুটকি লাইনে জানি -- অর্থাৎ মাঝে মাঝে অনেকখানি ফাঁক; সেই ফাঁকগুলো নিজের মনে যেমন তেমন করে ভরিয়ে নিতে হয়।...কত জায়গায় ঐক্যধারা ছিন্ন হয়, পথচিহ্ন লুপ্ত হয়, অনিশ্চিত অস্পষ্ট অন্ধকার থেকে যায়', লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, সেই কবে বাংলার কোন এক বিরামহীন নদিপথে ভেসে যেতে যেতে... আমরা যে আমাদের সর্বশক্তি উজাড় করে ভরিয়ে চলি, শুধু ভরিয়ে চলি চুন সুরকি বালি মশলা, বুজিয়ে গহ্বর প্রস্তুত করি দেওয়াল ... ...
কাঁধে হাত রেখে কারা বলে ওঠে বিকেলের বাসে:'দাদা, এদিকে কি সহযোগিতার হাত বাড়ানো যাবে?'অভ্যাস মত কাঁধ ঝাকিয়ে এড়িয়ে যাই অপরিচিতের হাত; যেমন করে হাত থেকে সরিয়ে নিই হাত, কাঁধে কাঁধ মেলাই শুধু ভিড়ের আচমকা অভ্যাসে। 'দাদা এদিকে কি সাহায্য পাওয়া যাবে?', চাইলো সাহায্য চাইতে অভ্যস্ত কয়েকটা ঠোঁট ও চাহনি; বিরক্তি ও নিরুত্তাপে অভ্যস্ত কিছু শ্বাস প্রশ্বাস। বিকেলের অন্ধ আলোয় তাদের কেমন দূতের মত ঠেকে, হাতে ফাইল, কাতর শিশুর চোখ তাতে; রক্তের ক্যান্সারের নিবারণ আজ শুধু তার মূল্য দশ টাকা। বাইপাসের আলোকিত ক্যান্সারের বিজ্ঞাপন মায়াময় রূপ নেয় তখন, কলকাতার হিমের পরশ ঝুলতে থাকে মাঝ আকাশে দূষণের ভার বয়ে।অসংখ্য নির্লিপ্ত মানুষের মাঝে ওরা ... ...
অনেক সময় রাত তিনটের আগমন হয় সরোদের ঝংকারে। মন এগিয়ে চলে দূরে, অন্ধ রাতের মধ্যে কি যেনো খোঁজে; দেহ থাকে অলস, কেদারা আঁকড়ে। অনেক শ্বেতপাথরের ধাপ, অনেক ঝলমলে দিঘী ভর্তি জল, শিউলির স্নিগ্ধতা উন্মুক্ত হয়ে পড়ে; তাদের ঘিরে থাকে গান, সুরের এক বিস্ময়কর সরণী স্থাপিত হতে থাকে, ভোরের লম্বা প্রতীক্ষায়। এ যেনো অন্যরকম এক জীবনের স্বাদ, শিল্পের অনুরণন। কারা এই জগতের অধীশ্বর? কিভাবে দিনের অসার মুহূর্তে, অবসরের ক্লান্তিময় লহমায় তাকে খুঁজে পাবো? প্রত্যেকটা সুর কিভাবে গান হয়ে যাবে? শব্দ শব্দের মোড়ক ত্যাগ করে, স্বপ্নে-জীবনে মিশে একাকার একটা কিছু সৃষ্টি করবে? অনেক রঙ, অনেক মাত্রা যেনো মিশে যাবে একসাথে কারোর খেয়ালের ... ...
জ্বরের ঘোর থেকে উঠলে যেমনি হয়, আমার তেমনি লাগছে। মুখটা একটানা বিস্বাদ; কালকের তেতো প্যারাসেটামল আর জলের স্বাদ যখন মুখের মধ্যে বিরাজমান, আগেরদিনের মদের গন্ধের মতো, কিন্তু বুক পেট ঘিরে প্রচন্ড ভাতের খিদে। আমার জ্বর হয়নি। বা হয়েও থাকতে পারে। সেটা বড় কথা নয়। এখন কোনো কথাই এই ভোরের বেলায় (ভোর না রাতের এক্সটেনশন, রাতের কালি বারুদ ফুরোবার বিষণ্ণতা?) তেমন কিছু নয়। সবই কেমন যেন নিস্তেজ, ম্রিয়মাণ; তেমন ভীষণ কোন ভাবের সঞ্চার নেই এই বাগানের গাছপালাগুলোদের মধ্যে, এই সকালের আলোয় ফিকে হয়ে আশা উল্টো দিকের একচিলতে পাঁচিলের মধ্যে। কিন্তু আমার মধ্যে একটা খুশি খুশি ভাব একটু একটু করে উঁকি দিচ্ছে, ... ...
আমি ঘর খুঁজছি। নিছক থাকবার জন্য কয়েকটা কামরা নয়। একটা আশ্রয়। মায়ের মত, কোল ভরে হাসি। মায়ের বাড়ি যেমন, কোনো পাহাড় বা টিলার ওপরে অবস্থিত। মিষ্টি ফুলগাছের ঝোপে ঢাকা পথ। চুনকাম করা ভরা আশ্রয়। গভীর মেঘের মত, অঢেল বিশ্রামের সৌজন্যে তৈরি। দিনের শেষপ্রান্তে টিলার ধারের কোনো জানালায় একটু আলো। কাঁচের ওপর আলো, বাইরে অনেকদূর পর্যন্ত তার বিকাশ। মনের মধ্যে বাড়ি, ঠিক একপেশে কামরা নয়। ... ...