সুচিত্রা সেনকে নিয়ে আমারো বেশ আগ্রহ আছে। তাঁর সিনেমা আমার ঠাকুরদা শেষবেলায় দেখেছেন। বলেছিলেন, বাহ, এই মাইয়াডা দেখি অভিনয় জানে! তাঁকে বাবাও পছন্দ করতেন। আমার ভাতিজা ভাগ্নেভাগ্নিনীরাও করে। সমগ্র বাঙালিরই প্রিয় প্রিয় নায়িকা সুচিত্রা সেন। আমি এই সুচিত্রা সেনকে নিয়ে একটি গল্প লিখেছি। যা হয় আরকি। আমি যেহেতু কোনো পত্র পত্রিকায়, বলা যায়, লিখি না। এক বৈঠকে লিখি না। ইচ্ছে হলে লিখি। ইচ্ছে হলে লিখি না। একটু একটু করে লিখি। শব্দ সংখ্যার ধারধারিনা। তাই গল্প বড়ো হয়ে যায়। গোপনে বলি আপনাকে, আমার ঠাকুরদা সুচিত্রা সেনকে কিডন্যাপ করেছিলেন। এটা সত্যি মনে করে মজা পাই। আরেকটা কথা। আমার গল্পের অনেক চরিত্র বাস্তব। আবার আমার পরিচিতিদের নামধামও অবলীলায় বসিয়ে দেই গল্পে। অনেকে এজন্য গোস্যা করেন। অনেকে খুশি হন। সে যাই হোক না কেনো যারা পড়বেন এটাকে গল্প হিসেবেই পড়বেন। এই গল্পের রবি ঠাকুরও একবার চরিত্র হয়ে এসেছেন। সুচিত্রার জন্য না এসে পারেননি। সুচিত্রা সেন বলে কথা। ... ...
বছর দশেক আগে জ্যামাইকা সেন্টার দিয়ে একটু সন্ধ্যারাত করে বাসায় ফিরতাম। সাবওয়ে থেকে বেরিয়ে পারসনস বুলেভার্ডে পা রাখলেই খুব পুরনো কবরখানা। আর গীর্জার উঁচু শীর্ষদেশে এই সময় চাঁদ ঝুকে পড়ত। একটা হাওয়া এসে পাক খেয়ে নিচে নামত, আবার একটু উপরে উঠে বাক খেয়ে ডানে চলে যেত। বেশ একটা আলো-আধার রেশমি চাদরের মতো চোখের নামনে বিছিয়ে যেত। বোঝা যেত কেউ কোথাও নেই। দূরে একটা এম্বুলেন্স যাচ্ছে।
একটু ঘোর কেটে গেলেই দেখা যেত, একজন বয়স্ক মোটাসোটা লোক ভোজবাজির মতো সাইড ওয়াকে দাঁড়িয়ে আছেন। দুহাত ঠেলাগাড়ির উপরে রাখা। ... ...
সোহরাব চাচার কাছেই প্রথম মধুশ্রীর কথা শুনেছিলাম। তখন তার বয়স অল্প। আমাদের বাড়িতে মাঝে মাঝে আসতেন। কোনো কোনো রবিবারে মুরগির ঝোল মাংস রাঁধতেন। তিনি ছিলেন এলাকার বিখ্যাত বাবুর্চি। নানা জায়গায় বিয়ে বা জেয়াফতের রান্নার ‘খ্যাপে’ যেতেন।
সেদিন সোহরাব চাচা মুরগি নয়—তিনটি দেশি হাঁস রান্না করছিলেন। আর মা রান্না করছিল পাবদা মাছ দিয়ে চুকাই শাকের শুক্তো। সোহরাব চাচা খেতে বায়না ধরেছেন। তিনি সেদিন বাগেরহাটের কচুয়া থেকে ফিরেছেন। খুব ক্লান্ত। রাঁধতে রাঁধতে মাকে বলছিলেন, জানেন বৌদি, কচুয়া থানার পুবদিকে আন ... ...
রুমা মোদক-এর গল্প : প্রসঙ্গটি বিব্রতকর
(রুমা মোদক বাংলা সাহিত্যের শিক্ষক। নাট্যকার। অভিনেত্রী। সংসারী মানুষ। থাকেন মফস্বলে। তার পঠন- পাঠনও ঈর্ষণীয়। নানাবিধ ব্যস্ততার মধ্যে নিয়মিত গল্প লিখছেন। নিচে গল্পটি পড়ুন)
-----------------------------------------------------------------------------------
রুমা মোদক-এর গল্প : প্রসঙ্গটি বিব্রতকর
---------------------------------------
সেইবার ভোটাভুটি হয়েছিল। সেইবার? সেইবার মানে কোনবার? এতো দিন তারিখের হিসাব তাদের জানার দরকার কী বাপু? ব ... ...
এখানে ইন্ডিয়ান গ্রোসারিতে মাঝে মাঝে লাউ পাওয়া যায়। তবে রান্ধুনি নামের মৌরি মসলা পাওয়া যায় না। রান্ধুনী ছাড়া লাউয়ের আসল স্বাদ আসে না। এটা নিয়ে আমার ক্ষোভ থাকলেও আমার স্ত্রীর ক্ষোভ অন্যত্র। তার দরকার কচি লাউ পাতা। লাউ পাতায় কই মাছ ভাতে সিদ্ধ করে খাবে। এটা শিখেছে আমার মায়ের কাছ থেকে। এর তুল্য সুস্বাদু খাবার এ জগতে নেই।
ফ্রজেন কই মাছ দেশ থেকে গ্রোসারিতে আসে। কিন্তু কচি লাউ পাতা পাওয়া যায় না।
আমার প্রতিবেশি উল্লাহ সাহেব করিতকর্মা লোক। তিনি বললেন, চিন্তা করবেন না। যোগাড় হয়ে যাবে ... ...
আমার একটা গল্পের বই বের হবে এবার। কোলকাতা থেকে। গল্পকার-ঔপন্যাসিক অমর মিত্র এই গল্পগুলো আমাকে দিয়ে লিখিয়েছেন। আনোয়ার শাহাদাত পই পই করে বলেছেন, নো এলিগোরি। পরী-টরীর গল্প লিখবেন না। আমি বলেছি--চিন্তা নাই। আমি গল্পই লিখবো না। ইতিহাস লিখবো।
ফলে যখন লেখা হল--তখন সেগুলো পরীর গল্পই হল। আমার দোষ নেই। অতি শিশুকালে আমাকে পরীতে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। সেটা একটা হৃদয় বিদারক ইতিহাস। আমাকে তারা সোজা তালগাছের উপরে তুলে রেখেছিল। আমার মা অনেক সাধ্য-সাধনা করে নিচে নামাতে পেরেছিল। পরীরা বলেছিল--এর বিনিময়ে কী ... ...
আমার বড় মেয়ে স্কুল থেকে ফিরেই বলল, বাবা, হাতি আসছে।
হাতি কথাটা বলার সময় মেয়ের চোখে-মুখে এক ধরণের শঙ্কা আর কৌতুহল ফুটে উঠেছে। ছোটো মেয়েছে বেশ হাটতে শিখেছে। দৌড়ে এসে বলল, বাবা, আত-তি। হাতি দেও--খাবো।
বড় মেয়েটা বোনকে ধরে বলল, ধুর বোকা। হাতি খায় না। হাতি মারে।
মার কথাটা শুনে ছোটো মেয়েটা ভয় পেয়ে কেঁদে কেটে অস্থির। চিৎকার করে মায়ের কাছে ছুটে গেল। বলল, ও মা, আত--তি মালবে।
গিন্নি রান্না ফেলে মেয়েকে কোলে নিয়ে এল। বলল, কে মারবে কইছে?
বড় মেয়ে বলল, আমি মারি নাই।
–তাইলে ... ...
কুলদা রায়
ক্লাস সিক্সে আমাদের যিনি বাংলা পড়াতে এলেন তাঁর পরণে সিল্কের পাঞ্জাবী। গলার দুধারে থেকে কারুকাজ। তবে এতো পুরনো যে সেটা আলাদা করে চেনা যায় না। আর সাদা চোস পাজামা ভাজে ভাজে নেমে গেছে। মাথার পিছনে ঢেউ করা চুল। বাম হাতে কালো একটা ছড়ি। ছড়িটা এমনভাবে ঘুরাতে ঘুরাতে তিনি এলেন যে দেখে কম্প লাগে।
ডান হাত দিয়ে একটা বই বুকের সঙ্গে ধরে রেখেছেন। বইটি অতি যত্নের সঙ্গে টেবিলের উপর রাখলেন। প্রচ্ছদে বড় বড় করে লেখা—মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রণীত মেঘনাদ বধ।
তিনি আমাদের দিকে তাকালেন কি তাক ... ...