গত কয়েক দশকে বারবার বদলে যাচ্ছে অতিপ্রচলিত কিছু শব্দের সংজ্ঞা। মধ্যবিত্ত কে, মফস্বল কোথায়, গরীব আদমিই বা আসলে কি চিজ --- এসব নিয়ে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের কনফিউশন আর অপরাধবোধের সীমা নেই। ফল হয়েছে এই -- যে উচ্চবিত্ত/উচ্চমধ্যবিত্ত বলে কেউ নেই। যাপনে প্রোমোশন না পেলে কি হবে, লেবেলে চমৎকার প্রোমোশন পেয়ে গেছে অনিশ্চিৎ ভবিষ্যতের বিভিন্ন স্পেকট্রামে পড়ে থাকা মানুষ। যাদের কাজে অকাজে কাজের অভাবে মল যেতে হয়, আর যাদের সেই মল সর্বার্থেই বহন করতে হয় তারা সবাই একই ছকের ভিন্ন পিঠে অবস্থান করেন - কেউ বাস্তবে তো কেউ ... ...
গল্পের বই হিসেবে "পাড়াতুতো চাঁদ" নাম একটু মিস্টিক। প্ল্যাটফর্মের কৌলিন্য না বিচার করে যেসব লেখক অকপটে গভীর ভাবনার ফসল প্রকাশ করে চলেন , ইন্দ্রাণী সেই গোত্রের লেখক। আন্তর্জালে বহু গল্প প্রকাশিত, যার অধিকাংশই উচ্চ প্রশংসিত হলে যা হয়, সেসব কিছুই না করে ইন্দ্রাণী আরো ভালো লেখার চেষ্টা, বলা ভালো আরো ভালো আঁকার চেষ্টা করে গেছেন। নিজের লেখা নিয়ে কঠোর সমালোচক হওয়ার একটা ভালো দিক হলো, তাতে সত্যিই লেখা ভালো হয়। কিন্তু খারাপ দিক হলো লেখক ও লেখাগুলো (যাদের মজা করে লেখক "টেখা" বলে থাকেন) ক্রমশ অজস্র বাজারি ছ ... ...
দময়ন্তী লেখালেখি করছেন অনেকদিন। গুরুচন্ডা৯ অনলাইন পত্রিকার একেবারে জন্মলগ্ন থেকেই সম্ভবত, হিসেব করলে বছর পনেরো পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে আমরা আন্তর্জালেই পড়ে ফেলেছি বিভিন্ন সময়ে লেখা গল্প, আত্মজীবনীমূলক রচনা, ছোট প্রবন্ধ। এই বিভিন্ন ফর্ম ও কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে করতে দময়ন্তী একবারও বিচ্যুত হন নি তাঁর লেখালেখির প্রধান উদ্দেশ্যগুলো থেকে। অবশ্যই এ আমার নিজের ইন্টারপ্রিটেশন, কী উদ্দেশ্যে দময়ন্তী লেখেন তা নিয়ে আমরা নিশ্চয়ই আগ্রহের সঙ্গে লেখকের নিজের কথাই শুনবো। একজন পাঠক হিসেবে এই লেখাগুলো আমার কাছে ধরা ... ...
কলেজ স্ট্রীটের দিগ্বিদিক ঘুরে বইপত্তর কিনে একটু সরবত খাব বলে হাঁটছি, এমন সময় বললে বিশ্বাস করবেন না, রাস্তা হারিয়ে গেল। কিচ্ছু চেনা যাচ্ছেনা, ঠা ঠা মে মাসের রোদ, একটা ঠেলাওয়ালা বসে বসে খৈনি টিপছে -- এছাড়া জনপ্রাণী নেই। রাস্তা বাতলাতে পারে ভেবে তার কাছে গিয়ে দেখি লোকটার মুখে কালো চাপদাড়ি বগলে একটা চামড়ার ব্যাগ। তারপরই আমার সব কেমন গুলিয়ে গেল (মা পরে শুনে বলেছিলো রোদ লেগে গেছে), আমি থমকে চেয়ে জিগ্যেস করে ফেললাম ঐ ব্যাগে কী আছে? শুনে লোকটা জুলজুল করে খানিকক্ষণ দেখে ব্যাগটা ভাঁজ করে চিকলেটের মত মুখে ... ...
আলাস্কা পার্ট ওয়ানঃ উইন্টার ২০১৫।
স্থান, কাল, ইত্যাদিঃ
ফেয়ারব্যাঙ্কস। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ (২৪-২৮)। উদ্দেশ্যঃ মূলত অরোরা বোরিয়ালিস খুঁজে দেখা, পারলে ছবি তোলা, এবং আর্কটিক সার্কল পর্যন্ত রোডট্রিপ। চেনা হট স্প্রিং, নর্থ পোল বলে একটা গ্রামে সাজিয়ে রাখা স্যান্টার বাড়ি এগুলো ফাউ।
---------------------------------
(১)
অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো আলাস্কা যাব। বাঘার যেমন ছেলেবেলার সাধ ছিলো রাজকন্যা বিয়ে করবে, সেরকম। কিন্তু রাজকন্যা কিনা গুলিসুতো খেয়ে ফেলেছে, সেই ইস্তক তার দেখা পাওয়া ভ ... ...
এই লেখার যা পটভূমিকা বেশ দীর্ঘ, জটিল, এবং মোটেই সরলরৈখিক নয়। এই মুহূর্তে ভারতে রাজনৈতিক অস্থিরতা জেএনইউ তে ঘটে চলা ছাত্র আন্দোলন ও তার অভিঘাতে তুঙ্গে। একই সঙ্গে নানা স্তরে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে, এবং তার মোটের ওপর নানান ডাইমেনশন পাওয়া যাচ্ছে। এক, অবশ্যই যে ছাত্র সংগঠনেই আন্দোলনের পুরোভাগে। দুই, শাসক বিজেপি এবং তার অনুগত দলগুলি। তিন, ভারতীয় মিডিয়া। চার, এবং এরাই ক্রমশ বেশি করে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, বিপুল সংখ্যক মানুষ, যারা আপাতদৃষ্টিতে অরাজনৈতিক। যদিও আমি মনে করিনা অরাজনৈতিক মানুষ হতে পারে, কিন ... ...
হাওয়াই চটির স্ট্র্যাপ সেফটিপিনে লাগানো হয়েছে। উঠোনের ঝাঁটপাট শেষ হয়ে বেড়ার কঞ্চি মেরামত সেরে কলতলায় হাত পা ধুয়ে আসেন নগেনবাবু। জামগাছের তলাটা আজ আর পরিষ্কার করা হলোনা, সন্ধ্যে নেমে আসছে। কলতলায় আলো নেই, সেখানে জোনাকি ওড়াউড়ি করে, অন্ধকার জাঁকিয়ে বসার আগে সামান্য কিছু সরলরেখা তৈরী হয়। শাঁখ বাজে, পাশের বাড়িতে হারমোনিয়াম বেরোয়, আর অলকেন্দু মাইতি বাড়ির ঠিক বাইরেই, দেওয়াল ঘেঁষে পেচ্ছাপ করতে বসেন, প্রায় একইসঙ্গে। নগেনবাবু ঘরে আসেন, পরনের গামছাটাতেই হাত মুছে লুঙ্গি পরে মেঝেতে বসে হাতপাখায় হাওয়া খান, এবং ... ...
বিহারের ভোটের ফলাফল বেরোতে শুরু করার সাথে সাথেই, যখন বিজেপির রাজনৈতিক দর্শনের সাথে সহমত নন যেসব বন্ধুরা, তাঁদের খুশিতে সামিল হয়ে পড়ছি, তখনই আচমকা অন্য কথা মনে পড়লো। এবং যে প্রসঙ্গে এই লেখার সূত্রপাত, তা হলো, সাময়িকভাবে আমার রাজনৈতিক চেতনাকে সরিয়ে রেখে, সেই "অন্য কথা"। ঊনিশশো তিরানব্বই সালের কথা।
ভোটের ফলে খুশি হয়ে একটা লাগসই মত স্ট্যাটাস দেব ভাবতেই প্রথমে যা মনে এলো তা হলো পান। তো সেই চক্করে একটা ডায়লগ মনে এলো। সেই ডায়লগ ঠিক মনে আছে কিনা দেখে নিতে গিয়ে খেয়াল হলো সালটা '৯৩। মুনদির বিয়ের বছর। ... ...
উৎসবের দিন, মানেই পালিয়ে বেড়ানোর সময়। ছুটির সময়। ছোটবেলা থেকেই শুনতাম পুজোর ছুটিতে অনেকে বেড়াতে যায়, তখনও আদিখ্যেতা করে "উফ পুজোয় কলকাতায় থাকা যায়না" মার্কা উন্নাসিকতা চালু হয়নি। লোকে বেড়াতে যেত বেড়াতে যাওয়ার জন্যেই, কলকাতা ছেড়ে পালাতে হলে তো গ্রামে গিয়ে কাটিয়ে আসতো। সে যাহোক, আমি কোনদিনই কলকাতা ছেড়ে নড়তে চাইতাম না পুজোর সময়। একবারের কথা বাদ দিলে হয়ওনি। সে কথা অন্যত্র। যেটা বলার, এই কিস্তিতে সেই উৎসবের মরসুমে কলকাতা ছেড়ে পালানোর গল্প লিখতে বসিনি।
দেশের বাইরে এখন বাধ্যতামূলকভাবেই থাকতে হ ... ...
আমাদের জীবন অসংখ্য সমাপতন জুড়ে জুড়ে তৈরী এক কোলাজ। যে সমাপতনে মানুষ জন্মায়, বড়ো হয়ে স্কুলে পড়ে, ভালো রেজাল্ট করে অথবা করেনা, প্রেম করে, অপ্রেমে থাকে... সেই সমাপতনের জালের মত ঘটনাপ্রবাহের এক একটিতে আমরা হঠাৎ কখনো উদ্বুদ্ধ হই কলম তুলে নিতে। কলম তুলে নেওয়া আজকালকার যুগে অচল, এখন কীবোর্ডের দিন, কিন্তু বলতে ভালো লাগলো। বিশেষ করে, উগনার গল্প বলতে গিয়ে। শিরোনামে যেহেতু উট আছে, বোঝাই যাচ্ছে
গল্পে উটও আছে। ছোটবেলায় যখন রচনা লিখতে হতো, আমরা বিদ্যের জাহাজেরা, কায়দা করে লিখেছি উট হলো মরুভূমির জাহাজ। আরো ... ...