এমনই এক ঘরোয়া আড্ডার ফাঁকে আর একটি গান তাঁর গলায় শুনে চমকে উঠেছিলাম - এ যে মোর আবরণ ঘুচাতে কতক্ষণ। গানটি পরবর্তীকালে জামশেদপুরে কোন আসরেও গেয়েছিলেন। পূজাপর্যায়ের গানটি গীতবিতানে ঠাঁই পেলেও এর সুর সম্ভবত রবীন্দ্রনাথের আরো বেশ কিছু গানের মত হারিয়ে গিয়েছে কালের গর্ভে। তাই হঠাৎ জর্জদার কন্ঠে গনটি শুনে কৌতূহল জেগেছিল সুরের উৎসকে ঘিরে। হঠাৎ করে মনে হতেই পারে এ সুর রবীন্দ্রনাথের গানের চেনা চলনের সঙ্গে একেবারেই মেলে না। কিন্তু,পরমুহূর্তেই মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের এমন কিছু গানও তো আছে যা শুনলে মনে হয় নিজের গড়ে তোলা সুরের ধ্রুপদী জাল ছিঁড়ে যেন বেরিয়ে আসতে চাইছেন নতুন এক রবীন্দ্রনাথ। এই মুহূর্তে যে গানটির কথা মনে আসছে সেটি হল "ধূসর জীবনের গোধুলিতে ক্লান্ত মলিন যেই স্মৃতি।' অনেকেই যাঁরা গানটি শুনেছেন তাঁরা স্বীকার করবেন এ এক নতুন জাতের সুর। তেমনি এক অসাধারণ গতিময়, ঝকঝকে নাটকীয় উপস্থাপনা শুনেছিলাম জর্জদার কণ্ঠে। একেবারে প্রথম স্বরোচ্চারণের সঙ্গে গানটি শ্রোতাদের মাতিয়ে দিতে পারে ... ...
এই গুরুগম্ভীর কার্যক্রমের মধ্যেই নিছক আড্ডাও জায়গা করে নিত কোন কোন সময়ে। এই রকম কোন আড্ডায় একবার প্ল্যানচেটে স্বর্গগত মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের কথা ওঠে। পরপর বেশ কয়েকটি প্ল্যানচেটের আসর বসেছিল সে সময়ে - যে সমস্ত মৃত ব্যক্তিদের আত্মার সঙ্গে প্ল্যানচেটে যোগাযোগ করা গিয়েছিল তাঁদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলেন রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। প্ল্যানচেটে রবীন্দ্রনাথের আত্মার সঙ্গে কথপোকথনের কালে কেউ দেবব্রত বিশ্বাসের গায়ন সম্পর্কে রবীন্দ্রানাথের আত্মার অভিমত জানতে চাইলে জবাব পাওয় গিয়েছিল যে তৎকালীন রবীন্দ্র সংগীত শিল্পীদের মধ্যে দেবব্রত বিশ্বাসই হলেন সর্বোৎকৃষ্ট গায়ক। সংবাদটি বাবা চিঠি লিখে জর্জদাকে জানালে উত্তরে জর্জদা একটি দীর্ঘ চিঠি লেখেন । চিঠিটির প্রতিলিপি তুলে দিলাম পাঠক পাঠিকাদের জন্য। ... ...
বেজায় ঘাবড়ে গিয়েছিলাম মায়াদির প্রস্তাবে। এমন একজন প্রথমসারির জনপ্রিয় শিল্পীর সামনে বসে তাঁকে গান শোনানোটা খুবই চাপের কাজ বলে মনে হয়েছিল। কী জানি হয়ত আমার মত এক অখ্যাত শিল্পী যশপ্রার্থী নবযুবকের গান তেমন মন দিয়ে শুনবেন না অথবা শুনলেও "বাহ, বেশ হয়েছে, অথবা কিস্যু হয়নি' জাতীয় কোন সাধারণ মন্তব্য করে দায় সারবেন। কিন্তু এমন একটা অশ্রদ্ধেয় চিন্তা মাথায় এসেছিল জর্জদাকে চিনতামনা বলেই। তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হবার পর তাঁরই মুখে গল্প শুনেছিলাম ঢাকায় কোন একটি আসরে গাইতে বসে কলকাতার মোটামুটি জনপ্রিয় এক গায়িকাকে শ্রোতাদের একাংশের অসৌজন্যমূলক ব্যবহারের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। জর্জদারও সেই আসরে গান গাইবার কথা ছিল। কিন্তু একজন শিল্পীর প্রতি দর্শক-শ্রোতাদের এ হেন দুর্ব্যবহারে ক্ষুব্ধ জর্জদা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। আয়োজকদের বলেছিলেন যে আসরে শিল্পীদের এভাবে অপমানিত হতে হয় সে আসরে তিনি গান গাইবেন না। জর্জদার প্রতিবাদে কাজ হয়েছিল - অনুষ্ঠনের উদ্যোক্তারা সংশ্লিষ্ট গায়িকার কাছে মার্জনা চেয়ে নিয়ে কোনমতে অনুষ্ঠানটি চালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। ... ...