এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • গন্যমিডিস

    Binary
    অন্যান্য | ০৭ মার্চ ২০০৯ | ১০০৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Binary | 70.64.***.*** | ০৭ মার্চ ২০০৯ ১১:৫২407455
  • মনে হল একটা ভোগবাদী গল্পলিখি। নস্টালজিয়া ফস্টালজিয়া নয়। একটু লিখি শহুরে লোকের শহুরে জীবনের কথা। একটু লিখি চকচকে জীবনের কথা। সাটিনের চেয়ারে একলা বিলাসীর দু:খের কথা। একটা দুটো মুখের কথা। মুখোষের পেছনের বা সামনের। ম্যানিকিওর করা জীবনের চোরাবালির কথা।

    নতুন প্রজেক্ট টীম যখন ঠিক হয়েছিলো, যারা পরের গ্রুপে এই শহরে এসে কুন্তলদের সাথে যোগ দেবে, টেলিফোনে তাদের সাথে কিছু আলাপ আলোচনা হয়েছিলো কুন্তলের। সবই অফিস সংক্রান্ত, কাছাকাছি বন্ধুত্বের সম্পর্ক টেলিফোনে হয় না, কুন্তল সে আশাও করেনি। কিন্তু সেই গ্রুপে বিবেক যে অন্যরকম, কুন্তল বোঝেনি তখন। কুন্তল আর মূর্তি ছাড়া এই নতুন যে চারটি ছেলে আসবে তারা ভারতের ভিন্ন প্রান্তিক। বিবেক বম্বের ছেলে। উঙ্কÄল ক্যারিয়ার। অত্যন্ত সুভদ্র। বয়স সাতাশ-আঠাশ। লম্বাটে ধরনের, শ্যামলা, পরিপাটি আঁচড়ানো চুল, চশমা, বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। বিবেক আর মুকুন্দ, সোজা এয়ারপোর্ট থেকে এসে, ওদের থাকার অ্যাপার্টমেন্টের চাবি নিয়ে গেছিলো, কুন্তলের কাছথেকে । সেটা ছিলো রবিবার। রেন্টাল এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে আগের সপ্তাহে বাড়ীটা ঠিক করে কুন্তল। প্রথম চেনায় ভালই লেগেছিলো বিবেক-কে।

    অফিসে, একটা কেবিন ভাগাভাগি করে কুন্তল আর মূর্তি। নতুন চারজনের জন্য, আরেকটা অপেক্ষাক্‌ত বড় ঘর বরাদ্দ হয়েছে, চারজনের আলাদা আলাদা খুপরি, মানে ওয়ার্ক স্টেশন। নতুন শহর, তায় বেবাক অপরিচিত, নতুন দেশ। তাই সকলের-ই কিছুদিন সময় লাগে থিতু হতে। আর জরুরী দপ্তরী কাজকর্ম, যেমন নতুন 'সমজিক সুরক্ষা চক্র' (সোসল সিকিউরিটি কার্ড), ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট, এসব তৈরী করতে-ও কিছুদিন যায়। কয়েক বছর এই শহরে থাকার সুবাদে, কুন্তল নতুনদের এসব ব্যাপারে সাহায্য-টাহায্য করে থাকে। সাহায্য করে এমনি-ই, বন্ধুত্বের খাতিরে। প্রথমদিন, অফিশের অন্যান্য সহকর্মীদের, মানে ভীনদেশিয় সহকর্মীদের সাথে পরিচয়, আনুষ্ঠানিক প্রোজেক্ট মিটি-ংএর পরে, বিবেক-ই আসে কুন্তলের কাছে।

    - 'বস, চলিয়ে থোড়া কফি লেঁতে'।
    দিব্যি স্মার্ট। নতুন আলাপে ভীনদেশি সহকর্মীদের সাথে-ও সাবলীল। যাকে বলে, আর্বান পালিশ, শহুরে, কিন্তু ভারতীয়। কফি নিতে নিতে টুকটাক আলাপ হয়, চার বছর চাকুরি করছে, দুই দিদি তারা বিবাহিত, বাবা সরকারী পদস্থ চাকুরে ছিলেন, এখন অবসর প্রাপ্ত, ভাসীতে পারিবারিক ফ্ল্যাট। কুন্তল ইয়ার্কিচ্ছলে জিজ্ঞাষা করে বান্ধবী-টান্ধবীর কথা। একটু গম্ভীর, একটু ব্লাস করে বলে, - 'স্টিল সার্চিং'। কেন যেন এই কথাটায় একটু অন্যমনস্কতা টের পায় কুন্তল।
    পরদিন, এই নতুন চারজনকে নিয়ে টাউনহল যাওয়ার প্ল্যান হয়, ঐ সোসাল-ইন্সিওরেন্স রেজীস্ট্রেশনের জন্য, আরো যা যা, কাজ জরুরী, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু পরদিন অফিসের কাজ সংক্রান্ত সমস্যায় আটকে পড়ে কুন্তল, যেহেতু টাউনহলের সময়নির্ঘন্ট, আর দশটা-পাঁচটার অফিস নির্ঘন্টের সাথে একই, তাই নতুনদের নিয়ে যাওয়া হয় না টাউন হলে। মুর্তি, অনেকটা খালি ছিলো সেদিন। তাই মুর্তি-ই নিয়ে যায় ওদের। তবে চারজনকেই নয়, বিবেক থেকে যায়। কুন্তলকে বলে,
    - 'ইতনা জলদি কিঁউ, লেট্‌স গো টুমরো, ইউ উইল টেক মি টুমরো, রিইট কুন্তল ?'
    না, কলকে গেলে ক্ষতি নেই, তাহলে কালকেই ওকে নিয়ে যাবে, কুন্তল ভাবে।
    তখন গ্রীষ্মের শুরু। ফুর্তির সময়। ঘন সবুজ ঘাসের লন, বিএমডাব্লু, বেন্টলে, অডি থেকে মিত্‌সুবিসি,পোর্সে-র পার্কিং লট, বেলজিয়ান গ্লাসের সদর দরজা, দোতালা, অনেকটা ছাড়ানো মনোরম সাদানীল বাড়ী, কুন্তলদের অফিস। স্বেতাঙ্গরা আপাদমস্তক প্রফেশনাল এবং সময়ানুবর্তী। অফিস আসার সময়-ও আবার ছুটির সময়-ও। গ্রীষ্মকালে-তো কথাই নেই। সাড়ে চারটের মধ্যে অফিস হাঁহাঁ খালি। সাড়ে পাঁচটায় নিজের ডেস্কের লাইটটা নেভায় কুন্তল। আজকের মত টেনশন শেষ। বাড়ী যেতে হবে, এবার। অফিস প্রায় শুনশান, দু একজন ক্লিনিংএর মহিলা এদিক ওদিক, ভ্যাকুমের যান্ত্রিক শব্দ ভেসে আসছে। পাশের ঘর থেকে বিবেক আসে, কু্‌ন্তল একটু অবাক-ই হয়, এতক্ষন ওকে দেখে,

    -- 'ওহ, ইউ আর স্টিল অ্যারাউন্ড ?'
    -- ' অ্যাকচুয়ালি, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট-কা টাইমিং পতা নেহী, দ্যাটস হোয়াই আই অ্যাম ওয়েটিং ফর ইউ'।

    কুন্তল-ও যাতায়াত করে পাবলিকে। দেশের মতো উঠতে বসতে অটো-বাস-ট্যাকসি নেই বটে, তবে ঘড়ি ধরা সময় জানা থাকলে, পাবলিক ট্রার্ন্সপোর্ট কম্ফর্টেবল। নিজের প্রতিবিম্ব দেখা যায়, এমন পালিশকরা মার্বেলের মেঝের রিসেপশন, বেলজিয়ান গ্লাসের সদর দরজা, একশ মিটার মত ফুলের বাগান আর লন পেরিয়ে সিকিউরিট এ¾ট্রান্স, কীবোর্ডে চারডিজিটের সংখ্যা পাঞ্চ করে বন্ধ করতে হয় বাইরে থেকে, তারপর বাসরাস্তা, আর সামান্য এগিয়ে বাসস্টপ। রাস্তার দুধারে ছবির মত সুন্দর বাগান ঘেরা বাড়ী, পর পর। রাস্তায় মানুষজন নেই বললেই চলে, বিটুমিন-কংক্রিটের মস্‌ন রাস্তা দুদিকে ধু ধু করে, পাঁচমিনিটে হয়তো একটা গাড়ী যায়, অনেকদূর থেকে শোনা যায় টায়ার আর রাস্তায় ঘর্ষনের সাঁআঁআঁআঁ শব্দ, বাকি সময় নি:ঝুম । এ-জায়াগাটা শহরথেকে একটু দুরে, মানে মফ:স্বল, কাছেই খুব বড় ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস, আর কিছু কলকারখানা। এখানথেকে বাসে কাছাকাছির রেলস্টেশনে যেতে হয়, তারপর সাবার্বান ট্রেনে শহরে বা অন্য শহরতলীতে। ওরা যখন, স্টপে এসে দাঁড়ায়, পাঁচমিনিট বাকি ছটা বাজতে। জুন মাসের ছটা মানে কনে দেখা আলো নয়, প্রায় উঙ্কÄল রোদ, গরম, মানে কুন্তলদের দেশীয় ত্বকে কিছুই না, কিন্তু, সাদাচামড়ার এদেশের মানুষের কাছে প্রবল। রাস্তার ওপারে স্টীলের জাল আর নিখুঁত ট্রিম করা অ্যালপাইন হেজে ঘেরা বাগনের ভেতরে দুটো পাঁচ/ছয় বছরের বাচ্চা খালিগায়ে দৌড়াদৌড়ি করছে, পাঁশুটে রং কটাচুল, কটাচোখ আর ওদের সঙ্গে দৌড়ে বেড়াচ্ছে প্রমান সাইজের বাদামি জার্মান সেপার্ড। বাস আসে ঠিক ছটায়। হলদে র-ংএর বাস, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। ভেতরে বসার জায়গা থেকে দাঁড়ানোর যায়গা বেশী। বেল্ট দেওয়া, বাচ্চাদের স্ট্রলার আর বয়স্কদের হুইলচেয়ার রাখার জায়গা। বাসে কিছু কথা হয় ওদের, মামুলি, পুরোনো চাকরি/প্রোজেক্টের কথা, এদেশের কিছু সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনায় কুন্তল। আর কোথায় কোন বাজারে দেশি সব্জি-মশলা পাওয়া যাবে, এইসব।

    স্টেশনের বাইরে, একটা দাড়িওয়ালা, টুপি, খালি গায়ে জিনসের সেমি-ওভারল, চশমা পড়া, হাসিখুসি বুড়ো, ঠেলা গাড়িতে হটডগ বিক্রি করে। তার পাশে কাঁচের শোকেসওয়ালা বেকারীর কাউন্টার। ঘনকরে জেলী মাখানো প্যাস্ট্রী আর ক্রিমচীজের ক্রোসেন্ট। রোজই এখানথেকে কিছু-না-কিছু কেনে কুন্তল। তারপর তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ায়, ডাঊনট্রেনের অপেক্ষায়। দুইনম্বর প্ল্যাটফর্মে আসবে বিবেকের ট্রেন। নিজের প্ল্যাটফর্মের সিঁড়িতে ওঠার আগে, ঘুরে দাঁড়িয়ে একটু অসোয়াস্তি নিয়ে বিবেক বলে,
    -- 'আজ, আপ মেরে সাথ থোড়া কোম্পানী দেগা, টিল মাই প্লেস?'

    কুন্তল একটু আশ্চর্য্য হয়, একটু বিরক্ত-ও। বিবেক আর মুকুন্দের থাকার জায়গা, ওর বাড়ীর সম্পূর্ণ বিপরীত। সারাদিনে টেনশনের পর কুন্তল বেশ ক্লান্তি অনুভব করছে, এমনিতেই। একটু কষ্ট করে, ভদ্রতা রেখে, না বলে, তারপর তিনের প্ল্যাটফর্মে উঠে, পেছনফিরে একবার দ্যাখে, কিরকম অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে আছে বিবেক, পকেট হাত, কাঁধে ভারি ল্যাপটপটা ঝুলে আছে, একটু কুঁজো। কিছুটা অবাক লাগে, খারাপ-ও লাগে কিছুটা, কেন যেন মনে হয় খানিকটা অন্যরকম ছেলেটা, কেন ?

    আভান্টেসিয়া ........
  • a | 121.245.***.*** | ০৭ মার্চ ২০০৯ ১৯:৩৫407456
  • বেড়ে শুরুটা হয়েছে। চলুক চলুক জলদি করে।

    একটা কতা...আপনার বেলজিয়ান গ্লাসের দরজা বেজায় ভালো লাগে বুঝি :)
  • siki | 122.162.***.*** | ০৮ মার্চ ২০০৯ ১৩:১৯407457
  • বেশ হচ্ছে।

    ইয়ে, শীততাপ নয়, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত।
  • dipu | 207.179.***.*** | ২০ মার্চ ২০০৯ ১৩:২৭407458
  • এই গল্পটা থেমে গেল কেন? বেশ তো শুরুটা।
  • ranjan roy | 122.168.***.*** | ২০ মার্চ ২০০৯ ১৮:৫৭407459
  • বাইনারি, দু'সপ্তাহ হতে চললো।
  • Binary | 198.169.***.*** | ২১ মার্চ ২০০৯ ০০:১৩407460
  • হবে হবে, আরে এটা তো মাসিক সংখ্যা :))
  • Binary | 70.64.***.*** | ২৬ মার্চ ২০০৯ ১০:১০407461
  • শহরের পুর্ব প্রান্তে বন্দরের জেটি। সমুদ্র এখানে শহরের মধ্যে ঢুকে এসেছে, খাঁড়ির চেহারায়। স্থানীয় ভাষায় এই যায়গাটার নাম 'নতুন বন্দর'। একটূ ভেতরে, ঘোড়ায় চড়া রাজার মূর্তি (বর্তমান রাজার কোনো পূর্বপুরুষ) কালো পাথরের, চারিদিকে কালো লোহার রেলিং দেওয়া ফুলের বাগান। ড্রাগনক্রেস, ব্ল্যাকফরেস্ট, টিউলিপ। তার-ও চারিদিকে, লাল ইঁটের পায়ে চলার চত্তর, ছিমছাম কাঠের বেঞ্চ, পথচারিদের বিশ্রামের জন্য। তার-ও বাইরে গাড়ি চলার রাস্তা। অনেকটা শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড়ের মতন, বেশী শুধু ফুলের বাগান আর বেঞ্চ, কম শুধু বাস-ট্রাম-ট্যক্সি-মানুষ-হকার-হট্টোগোল-ধুলো-গরম। আর এই জায়গাটার নাম, মানে ঐ স্থানীয় ভাষায়, 'রাজার নতুনচত্তর'।

    পাঁচমাথার মতন-ই পাঁচ রাস্তার মোড়। একটা রাস্তা চলে গেছে, 'নতুন বন্দরের' দিকে। সেই রাস্তায় পাঁচমিনিট হাঁটলেই, সানবাঁধানো চাতালে বিশালাকার পুরোনো নোঙর আর এক অচেনা নাবিকের মূর্তি। তারপর রাস্তা দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে, ভেতরে-ঢুকে-আসা জলের দুপাশ দিয়ে। চলে গেছে, বন্দরের কিনারা পর্যন্ত, প্রায় পাঁচশো মিটার। এ-রাস্তায় গাড়ী চলেনা, জলের ধার বরাবর রাস্তায় রেলিং দেওয়া, দু-একটা সিঁড়ি নেমে গেছে জলে, যেখানে কাঁচঢাকা-বিলাসবহুল নৌকা দাঁড়িয়ে থাকে, টুরিস্ট-দের খাঁড়িতে-খাঁড়িতে আর সমুদ্রের ধারে ধারে নৌভ্রমন করানোর জন্য। রেলিংএর ধারে বসার জায়গা, আর রাস্তার উল্টোদিকের ধারে, পুরোনো বাড়ি, পাথরের দেওয়াল, গায়ে গায়ে লাগানো, নীচের তলায় রেস্তোঁরা ইটালিয়ান-স্প্যনিস-ফাস্টফুড, পাব-বার, গিফট সপ, চকোলেট-আইসক্রিমের দোকান আর দু-একটা স্ট্রিপবার। পাথর সিমেন্টের চকচকে রাস্তায়, সারি সারি ফাইবার-স্টীলের টেবিল চেয়ার, রেস্তোঁরা বা বারের খদ্দেরদের এক্সটেন্ডেড বসার জায়াগা। গরমের দুপুর-বিকেলে, রোদের ওম আর বীয়ার একসঙ্গে এনজয় করার জন্য। টেবিলের পাশে পাশে ক্যানভাসের রঙ্গীন ছাতা। স্ট্রিপবারের ওপর, স্বল্পবাস তরুণীর লাস্যময়ী কাটাআউট, সন্ধ্যে হলে কাট-আউটের চারিদিকে লালহলুদ আলো, জ্বলে-নেভে।

    জলের ধারে রেলিংএর গায়, সবসময় কমবয়সী ছেলেমেয়েদের ভীড়। বীয়ার পেটে হুল্লোড়। থেকে থেকে হাসির হররা। ছেলেগুলো প্রায় সবাই খালি গায়ে, মেয়ে গুলোর কারো কারো উর্ধাঙ্গে খালি অন্তর্বাস। দুএকটা ভবঘুরে-ও আছে এদিক ওদিক। একটা লোক, দাঁড়িওয়ালা, রেলিংএ ঠেস দিয়ে, টুলের ওপর বসে সুরেলা হাতে ব্যাঞ্জো বাজায়, রেলিংএর থামের সঙ্গে আর ওর পায়ের সঙ্গে সুতো বাঁধা পুতুল, সুরের তালে তালে পা-নাচে, পুতুল-ও, ইয়াসিকা ক্যামেরা দিয়ে ওর ছবি তোলে জাপানী টুরিস্ট। রেস্তোঁরা গুলোতে অবশ্য মিশ্র ক্রাউড। তবে পরিবার নিয়ে খুব একটা কেউ নেই। প্রায় সবাই মাঝবয়সী থেকে প্রৌড়, পুরুষ মহিলা। সামনে ওয়াইনের গ্লাস আর বীয়ার মগ। বেশীর ভাগ প্রেমিক-প্রেমিকা। এদেশে প্রেমের কোনো বয়স নেই। বীয়ার মগ নিয়ে হাতেহাতে স্পর্শকরে, চোখেচোখে তাকিয়ে থাকে বুড়োবুড়ি। একটু সন্ধ্যে হলে, সাদাজামা-কালোস্কার্ট পরা সুবেশা ওয়েট্রেস, টেবিলে রেখে যায় মোমবাতি।

    খুশীর লাগাম ছাড়ায়, ছোটোখাটো মারপিট-ও হয় মঝেমাঝে। মিখাইল, এদেশে কুন্তলের সহকর্মী, একদিন সোমবারে অপিশে আসে, বাঁ চোখের চারিদিকে কালসীটে। ব্ল্যাক-আই। হাসি হাসি মুখ। কুন্তল বলে,
    -- 'হু লিকড ইয়োর আই ?'
    -- 'নাথিং, আই হ্যাব বিন টু, নিউহাভেন (নতুন বন্দর, সেই জলের ধার, বীয়ার পাব ইত্যাদি), ইয়েসটার্ডে'
    -- 'সো ?'
    মিখাইল বলে, ও কিছু না, ওরা বন্ধু বান্ধব মিলে আড্ডা, দিচ্ছিলো, আর এদিকে, পাশে দুতিনটে কলেজের ছেলে, দারুণ চিল্লাচ্ছিলো। তো, মিখাইল, গিয়ে ওদের বলেছিলো,
    -- 'ডু ইউ গাইজ নো , পীটার, দ্য ফুল, হু ওয়াজ সাউটিং ফর নাথিং'
    এরপর নাকি ওদের মধ্যে একজন, এগিয়ে এসে বলে
    -- 'ইয়েস, উই নো পীটার, অ্যান্ড হি পাঞ্চস এনিবডি, হু কাম্‌স ইন হিস ওয়ে', বলে দড়াম করে মিখাইলের চোখে ঘুসি বসিয়ে দেয়। তবে হাতাহাতি শুরু হয়নি অবশ্য। মিখাইল একটু ধাতস্থ হলে, সেই ছেলেটাই একটা বীয়ার দিয়ে, 'সরি, অ্যান্ড দিস ওয়ান, ইস অন মি' বলে নেয়।

    নতুন টীম কাজ সুরু করার কিছুদিন পরে, এক উইকএন্ড-এ শনিবার, সক্কলে মিলে নিউহাভেন-এ সন্ধ্যে কাটানোর প্ল্যান হয়। বীয়ার, নৌভ্রমন, আড্ডা এইসব আরকি। কুন্তলের অবশ্য যোগ দেওয়া হয় না। প্রোজেক্ট সংক্রান্ত আর কিছু ব্যক্তিগত কাজ ছিলো ওর। শনিবারে একটু দেরি করে ঘুমথেকে উঠে, ধুমায়িত কফি মগ নিয়ে সোফায় পা-গুটিয়ে বসেছে কুন্তল, তখন মোবাইল বাজে। ওপ্রান্তে বিবেক।
    -- 'কুন্তল, ম্যায়ভি গ্রু্‌প-সে ড্রপ-আউট কিয়া, আই অ্যাম নট গোয়িং উইথ দেম'।
    -- 'সো, তেরা আজ দুসরা কুছ প্ল্যান হ্যায় ?'
    -- 'নো, আই মিন, লেট্‌স গো টুগেদার, ওন্‌লি ইউ-অ্যান্ড-মি, এনজয় সাম ড্রিঙ্ক, কুছ বাত থি আপকে সাথ, প্লিজ ?'
    এবারেও কুন্তল-কে না করতে হয়। আজ সত্যি একটু ব্যস্ত কুন্তল। আর তাছাড়া, বিবেক কেন সবার থেকে আলাদা হতে চায় সে নিয়ে-ও একটু বিরক্ত-ই লাগে। এ কথা সে কথা-র পর ফোন রেখে দেয়। বিবেকের গলায় একটু বিমর্ষতা।

    সোমবার, সক্কলে অপিশে আসে। সব্বাই ফুর্তিতে। সক্কলে শনিবার রাত প্রায় পুরোটাই কাটিয়েছে নিউহাভেন-এ। গনেশ আর মুর্তি, রসগোল্লার মত মুখ করে বললে,
    -- 'স্যটারডে হামলোগ স্ট্রীপবার গ্যঁয়ে থে'
    -- 'শালে, ক্যায়সা .......' সমবেত হাসি
    -- 'আশি টাক্কা (অবশ্য-ই টাকা নয়, এদেশের কারেন্সি), এϾট্র ফি লিয়া ......' আবার সমবেত হাসি
    -- 'ফির অন্দর বীয়ার লেনা-ই পড়েগা, অর এক বীয়ার পনরো টাক্কা, শালে ..... (বাইরে বীয়ারের দাম গড়ে ৬/৭)'
    -- 'মাইরি, ইয়া চেহারার বাউন্সার ভেতরে, এক হাতে ক্যাঁক করে ধরলে ছিবড়ে হয়ে যাব ......' এটা বলল অভীক, কলকাতার ছেলে
    -- 'ড্যান্সার লড়কিলোক, ইধার উধার ঘুমেঙ্গে, অ্যান্ড ইফ ইউ ওয়ান্ট টু টক টু দেম, বীয়ার পিলানা পড়ে গা ......' আবার সমবেত হাসি
    -- 'লেকিন, শালা জুসি সফেদ লড়িকি য়্যাদা নেহি থি, সব কালা-কালা (মানে ব্ল্যাক ওয়ার্কিং মেয়েরা, এদের সংখ্যা শহরে কম, আর এরাই বেশী আসে দেহ ব্যবসায়), ইভন ইউ কান্ট সি দেয়ার ফা...ং বু...' এটা বলল গনেশ, আর কিছু শোনার মত ধৈর্য্য কুন্তলের ছিলো না। শিরায় শিরায় অশিক্ষা, ফুর্তির রাতে সাদা কালো।

    যেটা পরে জানতে পারে, কুন্তল, যে, বিবেক ওদের সঙ্গে ছিলোনা, মানে ওদের সাথে গেছিলো, কিন্তু স্ট্রীপবার পজ্জন্ত নয়। জিজ্ঞাসা করায় আরো জানতে পারে, সেদিন বেশী রাত পর্য্যন্ত, বিবেক কাটিয়েছে, 'স্যামসনস বার'-এ। এটাও একটু অবাক করা খবর। স্যামসনস বারে মুলত: বয়স্ক একেলা পুরুষদের ভীড়, উচ্ছলতা কম, উদ্দাম মিউসিক নেই, বিবেকের মত কম বয়সীরা সেখানে যায়-ই না পারতপক্ষে। স্ট্রীপবার সহ্য হয়নি হয়তো, কিন্তু স্যামসনস বার -ও বিবেকের পক্ষে স্বাভাবিক নয়। ছেলেটা হয়তো এরকম-ই ......

    অ্যাভান্টেসিয়া ......

    ** সব ইংরাজী কথোপকথন, ইংরাজী নয়
    ** ভুল হিন্দী হলে সেটা হিন্দী নয়
  • r.h | 203.132.***.*** | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১৬:৪৩407462

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন