এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বৌদ্ধ | ***:*** | ১৯ জুলাই ২০১৯ ২০:১৩384609
  • -সরো... সরো...

    - হ্যাঁ মা...

    - এদিকে আয়...

    - বলো...

    - কথাটা কি সত্যি?

    - কোন্‌ কথাটা মা?

    - এই লোকটা আত্মজীবনীতে যা লিখেছে...

    - কে লিখেছে? কী?

    - কে লিখেছে পরে হচ্ছে, আগে বল যা লিখেছে সেটা কি সত্যি? তোর সাথে কি সত্যিই এরকম কোন ঘটনা ঘটেছিল?

    - মানে... কোন্‌ ঘটনার কথা বলছ?

    - আজ থেকে অনেক বছর আগে... তোর পুজোর সময়... পুজোর আগের দিন রাতে তোর মূর্তিতে কি কেউ...

    - মা...

    - না কেঁদে বল সরো...

    - প্রতিবারের মতো সেবারও অনেক বাড়ি, ক্লাব, স্কুল, বিভিন্ন সংস্থা―সব জায়গাতেই আমার পুজো হবার কথা ছিল। এইরকমই একটা ছোট সংগঠন... মূলত কিশোর বয়সের, সদ্য বয়ঃসন্ধি পার হওয়া ছেলেদের একটা গ্রুপ―ওই সাহিত্যসভা গোছের। “শুভকামী মনিমেলা” না কী একটা নাম ছিল... সেখানে পুজোর আগের রাতে...

    - বল... কিচ্ছু না লুকিয়ে সব বল...

    - ওখানকার আয়োজক ছেলেরা, পুজোর জোগাড় করতে করতে একটা ছেলেকে সবকিছুর পাহারায় রেখে যে যার বাড়িতে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিল। ওই ছেলেটা আগে খেয়ে এসেছিল, তাই ও যায়নি...

    - তারপর...

    - ছেলেটা অনেকক্ষণ একা বসে থাকতে থাকতে, হঠাৎ করে দেখলাম, আমার দিকে কীরকম একটা করে তাকাচ্ছে। আমাকে বাচ্চা থেকে প্রবীণ, সবাই মা বলে পুজো করে, শ্রদ্ধা করে, তাই আমার দিকে কেউ ওরকম অসভ্যভাবে তাকাতে পারে, সেটা আমার ধারণার বাইরে ছিল। তারপর...

    - কী?

    - আমি বলতে পারবো না...

    - সরো... তুই আমার মেয়ে... না কেঁদে বল।

    - ওই ছেলেটা এগিয়ে এসে আমার বুকের ওপর হাত রেখে, আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁট লাগিয়ে… ঠিক সেই সময় সিঁড়িতে কারুর একটা পায়ের শব্দ হল... ওই বাকী ছেলেদের কেউ একজন খেয়ে ফিরে এসেছিল। সেই শব্দ শুনে সাথে সাথে সরে গিয়ে আবার এমন ভাল ছেলে সেজে বসে থাকল, যেন ও কিছুই করেনি...

    - এই কথাগুলো আগে বলিস নি কেন?

    - জানো মা, ও পড়েনি বলে বাংলায় নম্বর কম পেয়েছিল, কিন্তু রেজাল্ট হাতে পেয়ে বলেছিল, অন্য আরেকটা মেয়েকে চুমু খেয়েছে বলে নাকি আমি হিংসে করে ওকে কম নম্বর দিয়েছি।

    - পারভার্ট! ও তো আমাদের মানেও না কোনদিন।

    - না। বলে, “খড়-মাটি কিংবা পাথরের মূর্তি আমাকে কী দেবে?”... তারপর ওর স্কুলে আমার পুজোর জন্যে তোলা চাঁদার টাকা থেকেও একবার চুরি করেছিল।

    - আর এই সবকিছু ওর বইতে বেরোবার পরও ওকে তোর নামের সম্মান দেওয়া হয়েছে... অদ্ভুত!

    - মা, আমি এগুলো তোমাকে এতদিন লজ্জায় বলিনি।

    - কীসের লজ্জা তোর? তাও আমার কাছে বলাতে? তোদের এই লজ্জার জন্যই অপরাধীগুলো সব অধরা থেকে যায়। ওর তো মেয়েদের নিয়ে আরও অপকর্ম আছে... বাসে, আদিবাসী এলাকায়...

    - তাই?

    - হ্যাঁ। লজ্জাটা ওর পাওয়া উচিত, তোদের নয়। সেখানে ও এইসব নোংরা কাজ করে, সেগুলো আবার গর্ব করে বইতে লিখছে... সেই বই দেশসুদ্ধু লোক পড়ছে... এবং পড়ার পরও ওকে মহান সাহিত্য প্রতিভা বলে ধন্য ধন্য করছে... আশ্চর্য! আর ওই ছেলেটা, “দহন” তুলেছিল... সে তো বিখ্যাত পড়ুয়া... নারী অধিকার নিয়ে একের পর এক সিনেমা করেছে... সে কী করে এইসব বইয়ের পর একটা বড় মঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে, ওকে জড়িয়ে ধরে, “কিংবদন্তী” আখ্যা দিয়ে গদগদপণা করে? মানুষ কি স্বভাবতই হিপোক্রিট?

    - আচ্ছা মা, রবিও তো অত বড় কবি-সাহিত্যিক বল... সেও তো মূর্তিপূজা পছন্দ করত না... কিন্তু সে এরকম কিছু কোনদিন স্বপ্নেও ভেবেছে?

    - এই আপদটা তো রবিকেও ছাড়ে নি। সাহিত্যের স্বাধীনতার নাম করে তাকেও পিডোফাইল বানিয়ে দিয়েছে। আর লোকে সেসব অথেনটিক ইতিহাস বলে বিশ্বাস করেছে!

    - আমার বোধহয় এগুলো তোমাকে তখনই বলা উচিত ছিল...

    - হ্যাঁ। অপরাধী খোলা ঘুরে বেড়াবে, অপরাধের কথা গর্ব করে সবাইকে বলবে, আর যার ওপর অপরাধ হল, সে লজ্জায় মুখ লুকিয়ে থাকবে... এসব আর কতদিন?

    - ঠিকই বলেছ...

    - মনে রাখবি, সব মায়ের মধ্যেই একটা করে আমি আছি। সন্তানের সাথে এরকম কিছু হয়েছে শুনলে, দশভূজা, কালী, চামুণ্ডা, ছিন্নমস্তা যে কোন রূপ ধারণ করে তার বিচার করতে পারি। এই বই বেরোবার দশ বছর পর আমি এর অপকীর্তির কথা জানতে পেরেছি। এবার এরও বিচার হবে। আমি বাপের বাড়ি যাই...

    - কী বিচার?

    - আমার পুজোয় বলি কবে হয়?

    - নবমীতে...

    *****

    অষ্টমীর রাতের ঠাকুর দেখার ভিড়ে কলকাতা তখন ভেসে যাচ্ছে। তিথি হিসেবে অষ্টমী পেরিয়ে নবমী পড়ে গেছে। সেইসময় কলকাতার কোন একটি বাড়িতে...

    - ঘুমিয়ে পড়েছিস?

    - কে?

    - খড়-মাটি কিংবা পাথরের মূর্তি...

    - কে আপনি? এইভাবে এত রাতে আমার ঘরে ঢুকলেন কীভাবে?

    - কিছু শুনতে পাচ্ছিস?

    - হ্যাঁ... একটা সংস্কৃত শ্লোক... “রক্তবীজবধে দেবী চণ্ডমুণ্ডবিনাশিনি”... কিন্তু এসব কী? কীভাবে?

    - আমি সরস্বতীর মা... সরস্বতীকে মনে পড়ে? দশ বছর আগেও তোর আত্মজীবনীতে কত গর্ব করে লিখেছিস ওকে মলেস্ট করার কথা...

    - এই... কে আছিস... এ কী... আমার গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছে না কেন!

    - বেরোবে না। তবে মহিষাসুরের মতো আমি তোকে বাইরে থেকে ত্রিশূল বিঁধিয়ে মারব না। যা হবে সব ভেতর থেকে।

    - কী হবে?

    - তোর শাস্তি। যা অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল।

    - আহ্‌... বুকে আবার ব্যথা শুরু হল কেন?

    - হিপোক্রিট সাহিত্যবোদ্ধারা তোকে নিয়ে যতই নাচানাচি করুক, তুই যে আদতে একটা গর্বিত মলেস্টার, সেই সত্যিটা কোনদিন পাল্টাবে না...

    - বুকের ব্যথাটা বাড়ছে...

    - চললাম... সন্তানদের মলেস্টেশনের সত্যি ঘটনা জানার পর, সব মায়েরা এইভাবেই মলেস্টারদের শাস্তিবিধান করতে শিখুন।

    *****

    পরদিন সকালে বাংলার সব সংবাদমাধ্যমের শোকস্তব্ধ শিরোনাম ছিল―“নবমী তিথিতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিজের বাড়িতেই প্রয়াত হলেন প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।”

    [বিঃদ্রঃ মহান প্রগতিশীল, বিদগ্ধ, সাহিত্যপ্রেমীগণ আমাকে খিস্তি করার আগে এবং আমার পিতৃকুল-মাতৃকুল উদ্ধার করার যেন অনুগ্রহ করে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত “অর্ধেক জীবন”-এর (“আনন্দ পাবলিশার্স”, প্রথম সংস্করণ, ২০০২) দ্বাদশ অধ্যায়ের পৃষ্ঠাঃ ৯০-৯২ এবং সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের লেখা “সমবেত প্রতিদ্বন্দ্বী ও অন্যান্য” গ্রন্থের (“অধুনা প্রকাশন”, প্রথম সংস্করণ, ১৯৬১) “চাইবাসা চাইবাসা” অধ্যায়ের পৃষ্ঠাঃ ৯০-৯২, পড়ে নেন। দ্বিতীয়টিতে শুধু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নন, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কেও অনেক আলো আছে।]

    #দেবীপক্ষ

    Deep Chatterjee

    (সংগৃহীত)
  • rivu | ***:*** | ২১ জুলাই ২০১৯ ২১:০১384610
  • হাহা এটা কি কমিক লেখা মাইরি
  • ম্যনডেভিল মানে কী? | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৯ ০৫:৫৪384613
  • ম্যানডেভিল মানে কী?? মানুষ শয়তান?
  • dc | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৯ ১১:২৪384614
  • ডিমের ডেভিল যেমন ডিম দিয়ে বানানো হয়, পুরুষমানুষ দিয়ে তেমনি ম্যানডেভিল বানানো হয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন