এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Indralekha Cleopatra Bhattacharya | ২৮ জুন ২০১৯ ২২:৪০383167
  • #ফেরো_কিরাতিনী_শিকারের_খোঁজে

    #ইন্দ্রলেখা_ভট্টাচার্য

    "বলিহারি তোমার বুদ্ধি খোকনবাবা, নিশি বৌমণিকে বে করি এনি তুললে কিনা শ্যাষে এই ধ্যাপধেড়ে গোবিন্দপুরে?! এই শুনশান পাড়ায়?! বলি শুধু বড় বাড়ি হলিই হলো?! আমরা মনিষ্যে তো মোটে তিনটে। তোমার ওই জিমি কুকুর তো আর মানষের দলে গুনতি হতি পারেনি। তা সে অবদি এবাড়িতে ঢুকিই কেমন রাগে গরগর করতিচে দেকো!"
    আমাদের এই সবুজপল্লীর নতুন বাড়িতে পা রেখেই হরিকাকা গজগজ শুরু করল। মলো যা ! এই বুড়ো হরিকাকাকে নিয়ে আর পারা যায়না! সবকিছুতে খুঁত বার করা, আর তাই নিয়ে খিটখিট করা ওর একটা রোগে দাঁড়িয়েছে। আরে এই জিমি, থাম দিকিনি! এই এক কুকুর জুটেছে আমার! আদরে একেবারে বাঁদর। পান থেকে চুন খসলেই হ'ল, চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় করবে।
    যাই হোক নতুন বাড়িতে নিশি, মানে আমার বউকে নিয়ে এবাড়িতে ঢোকার দিন আমার বাড়ির বাকি দুই সদস্য হরিকাকা আর জিমিকে আনিনি। তার কারণ যেমন একদিকে নতুন বাড়ির গোছগাছের ব্যস্ততা, তেমন ওবাড়ির পাট চুকোনোর হাঙ্গামাও তো কম ছিলোনা। সবাই মিলে একেবারে একসাথে এসে পড়লে অসুবিধা। সব কাজকর্ম গোছগাছ শেষ করে, আমাদের ঠিক একহপ্তা পরে হরিকাকা একেবারে জিমি সুদ্দু নতুন বাড়িতে এসে ঢুকবে এমনটাই ঠিক ছিল। যাইহোক, সবাই এসে গেছে। এবারে একেবারে নিশ্চিন্ত।
    হরিকাকাকে বাড়ি দেখাতে ভেতরে নিয়ে যাওয়ার আগে জিমিকে কোলে করে গায়েমাথায় হাত বুলিয়ে নানাবিধ আদরে শান্ত করে বাড়ির সামনের প্রশস্ত বাগানে খেলতে ছেড়ে দিই। ও ছটফট করে আমার কোল থেকে নেমেই সারা বাগান জুড়ে ছোটাছুটি করে নতুন মাটি আর হাওয়ায় কী যেন শোঁকাশুঁকি করতে থাকে। থাক। আমি আর বেশি আমল দিইনা। গত কালীপূজার দিন বাড়িতে যখন চোর এসেছিল, তখন বাবু না ঘুমিয়ে যদি এতোটাই তৎপরতা দেখাতেন তো কাজ হত। আচ্ছা মুডি কুকুর বটে।
    যাহোক, জিমিকে বাগানে ছেড়ে হরিকাকাকে নিয়ে চেঁচিয়ে নিশিকে ডাকতে ডাকতে ভিতরবাড়িতে যাই। "কইগো, কোথায় গেলে? সবাই এসে গেছে দেখো। জলদি নামো।" আমার হাঁকডাকে কাজ হ'ল। দোতলা থেকে নিশি ছুটে এলো। ও কেষ্টকাকাকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার জন্য ঝুঁকতেই ওর দুহাত ধরে নিয়ে আটকালো কেষ্টকাকা। "ছি, বৌমণি, আমাকে নয়। তুমি হ'লে গে আমার নতুন মনিবনী। আমার পা ছুঁতি আছে? কত্তাবাবুর নুন খেইচি গো বৌমণি। এ হরিদাস গায়েনের আশীব্বাদ বলো, বিশ্বেস বলো তোমাদের পরিবারের সেথেই আচে। আমাকে শুদ্দু হুকুম করবে, হুকুম।"
    আমি এবার লজ্জা পেয়ে কথা পাল্টাবার জন্য কাকাকে মৃদু ধমক লাগাই, "আচ্ছা কাকা, খুব হয়েছে, এবার হাতমুখ ধুয়ে আগে একটু রেস্ট নেবে চলোতো। ধকল তো কম যায়নি। আজ তোমার বৌমণির বানানো চা জলখাবার খাও। কাজকম্ম নাহয় কাল থেকেই শুরু হবে।" হরিকাকা আমাদের বাড়িতে সবসময়কার কাজ করে আসছে সেই আমার ছোটবেলা থেকে। ও এখন ঠিক আমাদের পরিবারেরই একজন হয়ে গেছে। যাকে বলে ফ্যামিলির অল ইন অল। তাই ওকে ঠিক কাজের মানুষ বলে ভাবতে, বা তেমন ব্যবহার করতে আমি লজ্জা পাই। আর আমার কাছ থেকে এক'দিনে নিশিও সেটা শিখে গেছে।
    নিশি হরিকাকাকে চা জলখাবার খাওয়াতে উপরতলায় নিয়ে যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আমাকেও জিজ্ঞাসা করে, "তুমিও চা খাবে তো?" আমিও ঠোঁট টিপে হেসে কাকার কান বাঁচিয়ে বলি, "মনিবনীর হাতে চা খাওয়ার সুখ কি কোনো গোলামই মিস করতে চাইবে!" পিংক টপ আর ডেনিম হটপ্যান্টস পরিহিতা আমার মিষ্টি নতুন বউও ঠোঁট সরু করে টিপে, নীচুস্বরে আমাকে "ভেরি নটি", বলে, কাকার চোখ এড়িয়ে আমার গালে ওর তর্জ্জনীর ম্যানিকিওরড নখের খোঁচা মেরে চলে যায়। আমি আবার বাগানের দিকে চলে যাই জিমিকে আনতে। এবাড়িতে ও কতক্ষণে অভ্যস্ত হবে সেটা আমার কাছে একটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
    পরদিন সকালে হরিকাকা জানালো রাতে তার ভালোই ঘুম হয়েছে। কিন্তু মাঝে একবার জিমির চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেছিলো। তার গম্ভীর মুখ আর কালিপড়া চোখের দিকে তাকিয়ে প্রথম কথাটা সত্যি কিনা বুঝলামনা। কিন্তু এটা সত্যি যে বাঁধা থাকা অবস্থাতেও সে রাতে জিমি অত ঘাউ ঘাউ করে না চেঁচালে রাতটা আরো ভালো কাটতে পারত আমারও। অফিস থেকে ফিরে বেচারাকে নিয়ে আজ একবার আমাদের পুরনো পাড়ার ভেটের কাছে যেতে হবে। শরীরটা মনে হয় ঠিক নেই ওর।
    আগের মালিক মিঃ বর্মণের কাছে অপেক্ষাকৃত অল্প দরে এতোবড় বাড়ি কেনা কি সত্যিই সার্থক হ'ল! নাকি সেইসব কি যেন বলে, হ্যাঁ বাস্তুদোষ, তেমন কিছু আছে! সন্দেহের আলতো রেশটা কোথা থেকে আবার যেন মাথায় ঢুকে পড়ছে। আচ্ছা এতোবড় সুন্দর দোতলা বাড়িটায় বাড়িওয়ালা নিজে না বাস করে আমাকে বেচে দিলো কেন?!
    উপরের ঘরগুলো বেশ বড়, আর খোলামেলা বলে যেমন ভালো লাগে, তেমন একটু খটকাও লাগে একটা ঘরের ছ'টা বড় বড় জানালার মধ্যে উত্তরদিকের দুটো জানালা সিল্ড দেখে। বাড়ি কেনার সময় যেটা আমার কাছে একটু আশ্চর্য মনে হলেও, শেষপর্যন্ত এই তুচ্ছ ব্যাপারটা বাড়ির অন্যসব সৌন্দর্য ও সুবিধা, এবং সর্বোপরি আশাতীত সুবিধাজনক দামের কাছে তুলনায় ফিকে হয়ে যায়। অবশ্য এটাও ঠিক, মিঃ বর্মণকে জিজ্ঞাসা করে ওই সিল্ড জানালার কোনো জোরদার ব্যাখ্যাও পাইনি। ধুস, হঠাৎ করে এসব কী আলতু ফালতু ভাবছি! একেই বলে সঙ্গদোষ। ওসব নিয়ে এখনও অবধি আমাদের কোনো অসুবিধাই হয়নি। "হ্যাঁগো খোকনবাবা, গেহপরবিশে পূজোআচ্চা ভালো করি করিচিলে তো?" -সেরেছে! আজ আবার হরিকাকার জেরা চালু! তাও অফিস বেরোবার মুখে! এবার একটু বিরক্তই হই আমি। "ওসব ছাড়ো দেখি কাকা! ওসব পূজোটুজোয় কি কখনো বিশ্বাস করতে দেখেছো আমাকে? তোমার বউমণিও করেনা বিশ্বাস। বিয়েই সারলাম সই মেরে, আবার গৃহপ্রবেশের পূজো! এখন বেরোলাম। বিকেলে একটু জলদি ফিরবো আজ। জিমিকে সামলিও একটু। ওকে আজ ডাক্তার দেখাবো।" - "দুগগা দুগগা। সাবধেনে যেও খোকনবাবা।"
    দোতলার ব্যাল্কনি থেকে নিশির উড়ন্ত চুমু, আর নীচে বাড়ির মেন গেটে হরিকাকার গভীর চিন্তান্বিত, স্নেহময় দুই চোখের দৃষ্টির মায়া বুকে নিয়ে অফিসের উদ্দেশে বাইক স্টার্ট করি। জিমিটাকে সি অফ করা হ'লনা আজ। বাড়ির ভিতরে বাঁধা আছে মনেহয়। থাক। কাকা থাকতে ওর কোনো অযত্ন হতে পারেনা। একবুক ঘরে ফেরার অপেক্ষা জমা করে আমি দ্রুহ রায় আমার সদ্য কেনা সবুজপল্লীর নতুন বাড়ি থেকে অফিস পাড়ি দিই।

    ফোনটা প্রথমে করলো নিশি। কাঁপা গলায় দুঃসংবাদটা দিলো ওই প্রথম। তারপরে ওর হাত থেকে ফোন নিয়ে হরিকাকার হাহাকার। তখন এমনিতেই দিন ফুরিয়ে এসেছে। খারাপ খবরের প্রথম ধাক্কাটা কাটিয়ে অতিকষ্টে মাথা ঠাণ্ডা করে নিজের কিউবিকলে বসে এপর্যন্ত দিনের কাজের রিপোর্ট বসকে পাঠিয়ে, তারপর তাঁকে ঘটনা জানিয়ে তাঁর অনুমতি নিয়ে অফিস থেকে আমার দৈনিক নির্ধারিত সময়ের একটু আগে বেরোতে যে সময়টুকু লাগলো সেটুকুই স্পষ্ট মনে আছে। কিন্ত তারপরে বাকি পথটা কীভাবে কোন স্পিডে বাইক চালিয়ে...না না, উড়িয়ে ফিরেছি তার আর কোনো হুঁশ ছিলনা আমার।

    -ক্রমশ-
  • ...... | ***:*** | ২৯ জুন ২০১৯ ১০:২৭383176
  • তারপর?
  • শঙ্খ | ***:*** | ২৯ জুন ২০১৯ ১২:০৬383177
  • আসুন আসুন, লিখুন লিখুন। পড়ছি
  • Indralekha Cleopatra Bhattacharya | ০১ জুলাই ২০১৯ ০৪:৩৯383178
  • #ফেরো_কিরাতিনী_শিকারের_খোঁজে_২য়_পর্ব

    #ইন্দ্রলেখা_ভট্টাচার্য

    বাড়ি পৌঁছতে না পৌঁছতেই আমার দিকে ছুটে এলো হরিকাকা। তার চোখমুখ উদভ্রান্ত, ভয়বিহ্বল।তার পিছনে থমথমে, গম্ভীর মুখে নিশি। "এ কী হ'ল খোকনবাবা!!" আমার দুটো হাত জড়িয়ে কেঁদে ফেলল হরিকাকা। আমার হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে গেলো বাগানের দিকে। পিছন থেকে এসে আমার কাঁধে হাত রাখলো নিশি। সামনের সবুজ ঘাসের উপর নিথর হয়ে পড়ে থাকা জিমির ফুটফুটে সাদা শরীরটা দেখার পর আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না।
    "কীকরে কী হয়ে গেলো আমি আর হরিকাকা, দু'জনের কেউই বুঝতে পারলাম না দ্রুহ। কাকা ছিল কিচেনের কাজে ব্যস্ত। আমি উপরের কোনের ঘরে একটু ল্যাপটপটা নিয়ে বসেছিলাম। এমন সময় জিমির চীৎকার আমাদের দুজনেরই কানে যায়। আমি আগে ছুটে আসি। কিন্তু কিছুই করতে পারলামনা। ততোক্ষণে যা হবার হয়ে গেছে। কিন্তু কাউকে দেখতেও পেলামনা। তবে এবাড়ির ঘর থেকে বাইরে বেরোতে এতো বেশি সময় লাগে যে, কাজটা যেই করে থাকুক, সে ইজিলি পালিয়েছে।" দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিশি। হরিকাকা শুধু মাঝে মাঝে চোখ মুছছে, নিজের মনে মাথা চাপড়াচ্ছে, আর কীসব বিড়বিড় করছে। আমি চোখ মুছে দু'হাঁটু মুড়ে বসলাম জিমির মৃতদেহের সামনে, ঘাসের উপর। ওর ঘাড়টা যেন মুচড়ে ভেঙ্গে দিয়েছে কেউ। মুখের একধার থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তের ধারা ভিজিয়ে দিয়েছে সংলগ্ন ঘাস। জিমি, মাই সান! মাই লিটল এঞ্জেল! কার কী এমন ক্ষতি করেছিল আমার এই ছোট্ট মিষ্টি সোনাটা?! ওকে আর ডাক্তার দেখানোর সুযোগ টুকুও পেলামনা।
    বহুকষ্টে নিজেকে একটু সামলে, নিশি আর হরিকাকার সাথে মিলে জিমির ছোট্ট শরীরটাকে একটা পরিষ্কার কাপড়ে মুড়ে কবরস্থ করলাম বাগানের এককোনের একটা শিউলিগাছের নীচে। আমার ছোট্ট জিমি আমাকে ছেড়ে বেশী দূরে থাকতে কষ্ট পাবে। তার চেয়ে এই ভালো।
    মনটা ভেঙ্গে পড়েছিল আমার। কিন্তু সেই সঙ্গে অবচেতনে গুঁড়ি মেরে এগিয়ে আসছিল একটা অন্যরকম ভয়। আততায়ীর লক্ষ্য কি ছিল শুধুই জিমি, নাকি আমি বা আমার পরিবারের কেউ, নাকি আমরা সবাই!
    প্রায় কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার আশঙ্কার প্রতিধ্বনি শুনলাম হরিকাকার কথায়। "কাল একবার লোকাল থানায় খপর করে দিয়ো খোকনবাবা। আমি কিন্তু ভালো বুঝচিনে!"
    ভালো বুঝিনি আমিও। তাই লোকাল থানায় ফোন করলাম। দুদিন চললো থানাপুলিশ, খুচখাচ তদন্ত। কিন্তু বিশেষ কোনা সুরাহা হলোনা। ওরা আমাদের বাড়ির চারপাশে কটাদিন ভালো মতন নজর রাখার প্রতিশ্রুতি দিলো। এমনিতেও আমাদের এই নতুন পাড়ায় পাহারার ব্যবস্থা প্রথম দিন থেকেই ভালোই দেখেছি। যাইহোক, অন্যসব স্বজন হারানোর কষ্টের মতোই আমার মনের ভিতর জিমিকে হারানোর কষ্টটাও একেকটা দিন কাটার সাথে আস্তে আস্তে থিতিয়ে গেলো।
    ওদিকে আমার নতুন জীবনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার তাগিদ, নতুন জীবনসঙ্গিনীর সাহচর্য আর অফিসের উত্তরোত্তর বাড়তে থাকা কাজের চাপ ইত্যাদি ব্যাপারগুলো আমার ব্যস্ততা দশগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিলো। আমার ও নিশির সাথে হাতে হাত মিলিয়ে আমার নতুন সংসার গুছিয়ে তুলতে গিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল হরিকাকাও। কিন্তু অফিস বেরোনোর আর ফেরার সময়গুলোতে জিমিকে খুব মিস করতাম আমি। যাইহোক সুখেদুঃখে চলে যাচ্ছিল আমার জীবন। কিন্তু এর মাঝে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। ভয় পেলো এবার নিশি। ওর মুখ থেকে যা শুনলাম, বলি।
    সেদিন রাতে আমি আর নিশি একটু শপিংএ গেছিলাম। নিশি আর আমি, কেউই ভীড়ভাড় বেশী পছন্দ করিনা বলে শপিংমল ব্যাপারটা এড়িয়ে চলি। আমাদের এলাকার থেকে দুটো স্টপ পরে একটা ছোটখাটো তথাকথিত সুপার বাজার আছে, যেটার উপরতলায় আবার একটা টিমটিমে কফিশপও আছে। মলের তুলনায় ঢের বেশী শান্ত আর নির্জন পরিবেশ। ওখানেই বাড়ির যাবতীয় বাজারহাট করতাম আমরা। তারপর বাজারহাটের শেষে উপরতলায় বসে ফাঁকায় ফাঁকায়, বেশ একটা রোম্যান্টিক কফি সেশন। বেশ চলছিলো।
    কিন্তু সেই রবিবার রাতে যখন আমরা বাজার করে, কফি আর পেস্ট্রি খেয়ে বিল মিটিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে সবে বাইক স্টার্ট দিয়ে সুপার বাজারের দোকানটা ছাড়িয়েছি, এমন সময় পিছনে বসা নিশি আমাকে যেন সভয়ে জাপটে ধরেই "দ্রুহ" বলে একটা চাপা আর্তনাদ করে উঠলো। চমকে উঠে আচমকা ব্রেক কষি। ভাগ্যে বাইকের গতি বেশী ছিলনা। পিছনে ঘুরে কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করতে ও বলে ওকে কেউ পিছন থেকে টানছে। "সেকি!! কে?? চলন্ত বাইকে কী তা টানা সম্ভব?!" "থেমোনা দ্রুহ! স্পিড তোলো। তাড়াতাড়ি চলো।"
    স্পর্শে অনুভব করি নিশি ভয়ে একটু কাঁপছে। যাচ্চলে!
    বলে কী! তবু স্পিড বাড়িয়ে আবার চলতে থাকি।

    -ক্রমশ-
  • aranya | ***:*** | ০১ জুলাই ২০১৯ ০৮:৫৬383179
  • বেশ হচ্ছে। হাত চালিয়ে
  • SD | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৯ ১৬:৩৩383180
  • ব্যাপক হচ্ছে, যাকে বলে পুরো জমাটি লেখা। লিখুন লিখুন ।।হাপিত্যেশ করে বসে আছি, এটাও আগেরটার মতন বা তার থেকেও ভাল হবে মনে হচ্ছে।

    একটা সামান্য অসঙ্গতি। কেষ্টকাকা হয়্ত নিছ্কই ভুলবশত লেখা হয়েছে। এটা উপেক্ষা করাই যায়, এবং করলামও।
  • Indralekha Cleopatra Bhattacharya | ০৪ জুলাই ২০১৯ ১৬:১৮383181
  • #ফেরো_কিরাতিনী_শিকারের_খোঁজে__৩য়_পর্ব

    #ইন্দ্রলেখা_ভট্টাচার্য

    একেবারে বাড়ির কাছাকাছি এসে গেছি যখন, গলির মুখে হরিকাকার সাথে দেখা। পাড়ার রতন মুদির দোকানে নুনের প্যাকেট কিনছিল। রান্না করতে করতে ফুরিয়ে গেছে নিশ্চয়ই। 'কাকা' বলে ছোট্ট করে হাঁক পাড়তেই ফিরে তাকালো। "এসে গেছো তোমরা!" একগাল হাসি। "এই বাজারের জিনিস গুলো, আর তোমার বৌমণিকে নিয়ে বাড়ি চলে যাও। আমি একটা কাজ সেরে একটু আসছি।" আসলে তখনি ফস করে মনে পড়েছে পাড়ার বিশেষ বন্ধু ও সুহৃদ প্রতিবেশী ঘোষদা ওনার বাড়িতে একবার অল্পসময়ের জন্য দেখা করতে বলেছিলেন। কী নাকি বলবেন! বাজারের মাল সমেত নিশিকে নামিয়ে দিয়ে কাকার সাথে বাড়ি পাঠিয়ে বাইক টার্ন করালাম। নামাবার সময় ওর পিঠে আদরের চাপড় মেরে কানে কানে ব্রেভ গার্ল- টার্ল ইত্যাদি বলে আশ্বস্ত করেছিলাম বলেই কিনা জানিনা, ওকে আমাকে -ছাড়া একা বাড়ি যেতে বিশেষ আপত্তি করতে দেখলাম না। কেমন অন্যমনস্ক হয়ে তাড়াতাড়ি করে কাকার সাথে চলে গেলো। আসলে যে ভয়টা তখন পেয়েছিল সেটা এখনো মাথায় চেপে আছে মনে হয়। তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ঢুকতে চাচ্ছে। আচ্ছা ও কি ভাবছে, সেই অদৃশ্য আকর্ষণকারী এখনো ওকে ফলো করছে!! দূর, কীসব যে উল্টোপালটা ভাবে মেয়েটা! আমি তাড়াতাড়ি ঘোষদার বাড়ির দিকে বাইক এগোই। কিন্তু হঠাৎ কে যেন আমার মনের ভিতর থেকে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো একবার একটু পিছনে মাথা ঘুরিয়ে সদ্য ফেলে আসা আমার বাড়ির গলির মোড়টার দিকে তাকাতে। আর সেই অদৃশ্য সত্ত্বার ইচ্ছাশক্তিতে আমি তখনি তাই করলামও। ব্যস, অমনি বুকের মধ্যে যেন ছ্যাঁত করে উঠল। গলির মোড়ের মাথার কৃষ্ণচূড়ার নীচে আবছায়ায় কে ও? যেন আলো আঁধারিতে একটি মেয়ের অবয়বের মতো লাগছে। মুক্তকেশিনী এক নারী যেন দাঁড়িয়ে আছে আমারই দিকে চেয়ে। অথচ মাত্র একটু আগেই ওখান দিয়ে বাইক নিয়ে যাতায়াত করলাম! কেউ তো ছিলনা! তৎক্ষণাৎ মনে পড়ে নিশির কথা। ওকে কেউ পিছন থেকে টানছিল। তবে কি সে আসে পিছু পিছু?! নিজের অজান্তেই কখন বাইক থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছি। আর একবার পিছন ফিরে ভালো করে দেখলাম। নাহ্। কেউ নেই ওখানে। বুঝলাম, ভয় সংক্রামক। যাইহোক, অদৃশ্য বা অস্তিত্ববিহীনা অনুসরণকারিণীকে পিছনে ফেলে তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেলাম। ঘোষদার বাড়িতে গিয়ে বেল বাজাতেই বেরিয়ে এলেন। আমাকে দেখে খুব খুশী হলেন। অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওনার পীড়াপীড়িতে ভিতরে একটু বসতে ও ঘোষবৌদির দেওয়া চা খেতেই হল। কুশল বিনিময়ের পরে পাড়ার ক্লাবের ও পূজো কমিটির কিছু ফর্ম্যালিটির ব্যাপারে আলোচনা করলেন। আমি যেহেতু পাড়ায় নতুন সেহেতু ক্লাব থেকে কিছু তথ্য আমাকে জানাতে বলা হয়েছিল ওনাকে। এখানে একটু বলে রাখি উনি কিন্তু ঠিক আমার নতুন বন্ধু নন। ওনার সাথে আলাপ আমার এখানে আসার আগে থেকেই। বরং বলা যায়, ওনার সূত্রেই আমার এ পাড়ায় আসা। মানুষ হিসাবে বেশ। যাইহোক, টুকটাক কাজের কথা বলার পরেই ঘোষদা হঠাৎ ফস করে বললেন, আপনার বাড়িতে সবসময়ের দেখাশুনোর জন্য যে নতুন কাজের মহিলাটিকে রেখেছেন সে কি রাতে না ঘুমিয়ে বাগানে আর ছাদে হাঁটাহাঁটি করে চোর পাহারা দেয় নাকি! বেশ চটপটে সতর্ক লোক পেয়েছেন তো। আচমকা কথাটা শুনে আমি প্রায় চেয়ার উলটে পড়তে পড়তে বাঁচি।

    -ক্রমশ-
  • .... | ***:*** | ০৮ জুলাই ২০১৯ ২২:৪৩383182
  • এতদিন হয়ে গেল???
  • Amit | ***:*** | ০৯ জুলাই ২০১৯ ০৪:০৬383183
  • পড়ছি, ভালো হচ্ছে। চলুক লেখাটা, আস্তে আস্তে সাসপেন্স বিল্ট আপ হচ্ছে।

    তবে কিছু মনে করবেন না, কিন্তু কিন্তু করে ভাবলাম বলেই ফেলি, এর আগের বড়ো গল্পটা একদম অন্য লেভেল এর মাস্টারপিস ছিল। শুধু গল্পটা তো ছেড়েই দিচ্ছি, কিন্তু গল্পের পটভূমি, ওই ১৮-১৯ শতকের গ্রামবাংলার সময়কালের ল্যাঙ্গুয়েজে, প্রতিটা চরিত্রের ডায়লগ, তাদের ম্যানারিজম, ওই সময়ের সামাজিক বিহেভিয়ার, গল্পের সাসপেন্স বিল্ট- আপ, সব কিছু মিলিয়ে একটা দারুন গায়ে কাটা দেওয়া অভিজ্ঞতা হয়েছিল। বিশেষ করে বেশ কিছু চরিত্রের মুখে এমন ভাবে কথা বসানো হয়েছিল যে আমার পড়ে মনে হচ্ছিলো দূর, গভীর অন্ধকার থেকে কথাগুলো ভেসে আসছে।

    ওই গল্পটা এখনো আমার একা রাত্রিবেলা পড়তে ভয় লাগবে। অবশ্য আমি এমনিতেই ভীতু মানুষ। :) :)

    প্রথম লেখাটাতে এরকম লেভেল এ তুলে দিলে পরের লেখাগুলোতে পাঠকের আশা ও বেড়ে যায়। একেবারে বিরাট কোহলি বা তেন্ডুলকরের মতো অবস্থা আর কি। দারুন খেলে ৫০-৬০ রান তুলে দিলেও সেঞ্চুরি না হলে ঠিক মন ভরছে না। কি একটা যেন বাকি থেকে যাচ্ছে ।
  • Amit | ***:*** | ০৯ জুলাই ২০১৯ ০৪:১৩383168
  • প্লিজ ভাববেন না আমি এই গল্পটাকে ডিসকরেজ করছি, একেবারেই না। এটাও ভালো লাগছে।

    জাস্ট আগের টা এতটাই ভালো লেগেছিলো যে তুলনাটা হটাৎ করে এসে গেলো, এখন ভাবছি ওসব না লিখলেও হতো। আপনি লিখতে থাকুন। পড়ছি আমরা সবাই।
  • dc | ***:*** | ০৯ জুলাই ২০১৯ ০৭:৪৯383169
  • অমিতের সাথে একমত। আগের গল্পটা ভয়ানক রকমের ভালো হয়েছিল। তবে এটাও আস্তে আস্তে জমে উঠছে।

    আর আমিও ভুতের গল্প সকালের মধ্যেই পড়ে শেষ করে ফেলি, সন্ধ্যের পর এসব টইতে ভুলেও ঢুকি না।
  • Du | ***:*** | ১০ জুলাই ২০১৯ ০৫:২৭383170
  • আমার তো টইতে লিখেছেন এর ইন্দুলেখা --- দেখলেই গা ছমছম করে ঃ)
  • Ela | ***:*** | ২৯ জুলাই ২০১৯ ১৮:৩৪383171
  • আর এগোবে না?
  • rivu | ***:*** | ০২ আগস্ট ২০১৯ ০২:০৮383172
  • পরের কিস্তি :(
  • Pm | ***:*** | ০২ আগস্ট ২০১৯ ০৬:৩৯383173
  • আগের গল্প কোনটা?
  • PM | ***:*** | ০২ আগস্ট ২০১৯ ১০:৩৭383175
  • অনেক ধন্যবাদ অমিত, পড়বো রাতে ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন