এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • গুজবের ফলে সাম্প্রতিক কিছু মৃত্যু প্রসঙ্গে জনগণের আচরণ সংক্রান্ত লেখা।

    Rumjhum Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২৩ মার্চ ২০১৯ | ২৫৬৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Rumjhum Bhattacharya | ২৩ মার্চ ২০১৯ ১৮:৪৮382993
  • শহর ও শহরতলিতে সম্প্রতিকালে ঘটে যাওয়া কয়েকটি গণপ্রহারে মৃত্যুর ঘটনা মনে করিয়ে দিল অক্সফোর্ড অভিধান কতৃপক্ষের মতে গত বছর পৃথিবী জুড়ে সব চেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দ হল 'টক্সিক'। গণপ্রহারে মৃত্যুর ঘটনা পক্ষান্তরে, আমাদের সমাজের বিষাক্ত মানসিকতার পরিচয়ই সর্বসমক্ষে তুলে ধরছে। সেই অর্থে দেখতে গেলে এই শব্দচয়ন এই মুহুর্তে শুধু বিশ্ব নয় আমাদের পাড়ায় পাড়ায় অর্থবহ হয়ে উঠেছে। যদি দেখি আমার আপনার নাকের ডগায় চোর সন্দেহে কোন যুবককে পিটিয়ে খুন করা হচ্ছে, কিংবা গলির মোড়ে কোন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে ছেলে ধরা সন্দেহে পিটিয়ে মারা হচ্ছে তখন সেই ঘটনা যে কোন সুস্থ নাগরিক সমাজের পক্ষে টক্সিক হতে বাধ্য। জ্ঞানী বলেছেন যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত তাই নাকি বিষ। তবে কি এই বিষোদগারের পিছনে কাজ করছে জনগণের মধ্যে চারিত হওয়া প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘৃণা, ভয়, সন্দেহ? কোথা থেকে তৈরি হল এই অতিরিক্ত নেতিবাচক প্রেষণা? এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করতে হলে হিংসাত্মক গণ আচরনের বৈশিষ্টের প্রাথমিক পর্যালোচনা অত্যাবশ্যকীয় ও অনিবার্য। ব্যক্তির একক আচরণ ও তার গোষ্ঠী আচরণ ভিন্নধর্মী। ব্যক্তি যখন আর পাঁচজনের সাথে মিশে 'গণ' তে পরিনত হয় তখন তার ব্যাক্তিগত সত্ত্বা নিশ্চিহ্ন হয়ে এক সম্মিলিত পরিচয় গড়ে ওঠে, হয়তো দমদমের চাষিপাড়ার বাসিন্দা বা ডালিমতলা লেনের বাসিন্দাবৃন্দ।কাজেই ব্যক্তিমানুষের পরিচয়ের সাথে সাথে লুপ্ত হয় তার বিচারবোধ ও যুক্তিবাদী সত্ত্বা। সামাজিক মূল্যায়নের ঝুঁকি থাকে না। ব্যাক্তিগতভাবে অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত হবার ভয় থাকে না তাই তখন আমার আপনার সব্বার মধ্যে লুকিয়ে থাকা হিংস্র হোমো স্যাপিয়েন্সটা নখ দাঁত বের করে প্রকট হয়। খসে পড়ে সামাজিকতার মুখোশ। আদিম অসামাজিক আচরণে ফিরে যাওয়ার আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ি আমরা।
    তার বিষাক্ত ফল এই গণপ্রহারেরর মতো ঘটনা। স্বভাবতই পরবর্তী প্রশ্ন যা ভাবায় তা হল যখন ব্যক্তির আত্মপরিচয় লুপ্ত হয়ে এক নতুন গোষ্ঠীর উদ্ভব হচ্ছে তখন নিশ্চয় সেই গোষ্ঠীর সমস্ত সদস্যের একটি সাধারণ লক্ষ্য থাকবে। যেমন ছেলেধরা সন্দেহে এলাকায় গণপ্রহারেরর ঘটনা ঘটলে বলা চলতে পারে সেই হিংসায় জড়িত সমগ্র গোষ্ঠীর সাধারণ লক্ষ্য একটি গুজবকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল, যে গুজবের বাস্তব ভিত্তি পরীক্ষিত সত্যের নয়, একটা কাল্পনিক আশংকার ওপর প্রতিষ্ঠিত, অতিরিক্ত ভয় বা অতিরিক্ত ঘৃণার থেকে জন্ম হয়েছে যে গুজবের আর যে গুজব আমাদের সংস্কৃতিকে করে তুলেছে 'টক্সিক'। কোন অপরীক্ষিত সত্য তথ্যের আকারে রটনার মাধ্যমে জনজীবনে প্রবেশ করল আর মানুষ সেই তথ্যের সত্যতা সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র সন্দেহ প্রকাশ না করে সে তথ্যকে বিশ্বাস করতে আরম্ভ করল এবং কালক্রমে সেই বিশ্বাসের জেরে গণপিটুনির মতো ঘটনা ঘটল। এই সম্পুর্ণ চক্রের মূলগত ভিত্তি কিন্তু গোষ্টী মনস্তত্বের মধ্যে নিহিত আছে।
    সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আজকের সমাজ যুক্তি, বা মুল্যবোধের থেকেও বিশ্বাসের ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করছে। যেহেতু বিশ্বাস অনেকাংশে কল্পনাশ্রিত ও লব্ধ তাই বাস্তবের সঙ্গে তার ফারাক থাকার সম্ভাবনা প্রবল। যে বিশ্বাসের বাস্তবের সঙ্গে ফারাক যত বেশি তা তত ভ্রান্ত হতে বাধ্য। বিশ্বাস যখন মনের ভিতর গেঁড়ে বসে তখন সেই বিশ্বাসের চালিকাশক্তি ব্যাক্তির আচরণের ওপর কি প্রভাব ফেলতে পারে তা অনুমানযোগ্য। আর যদি ভ্রান্ত বিশ্বাস রটনার মাধ্যমে জনমানসে গেঁড়ে বসে এবং প্রধান চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করে তখন সেই গণআচরণ  সভ্যতার পরিপন্থী হবে তা নিয়ে দ্বিমত থাকে না। মধ্যযুগীয় বিভিন্ন কু সংস্কারের ও বর্বর আচরণের ভিত্তি ছিল বিভিন্ন লব্ধ বিশ্বাস। ইতিহাস তার সাক্ষ্য বয়ে চলেছে। দেখা গেছে সচরাচর জনমানসে যখন অস্থিরতা ও নিরাপত্তার অভাববোধ দেখা যায় তখন বিশেষত খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে এমন ধরণের গুজব খুব সহজে জনসাধারণকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই সময় এসেছে তলিয়ে ভাবার। দেশের আম জনতার মানসিক অস্থিরতার সূচকগুলো চিহ্নিত করার আশু প্রয়োজন। নচেৎ বারবার সমাজের পক্ষে 'টক্সিক' হয়ে উঠবে জন আচরণ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন